‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Wednesday, April 2, 2008
# জলের অক্ষরে- ০১ (কবিতাগুচ্ছ)
পাথরের গান
চোখের মুদ্রায় তুমি যতই আকাশ আঁকো
আমি জানি ওখানে সাগর ;
ভ্রান্তনীল আকাশের ফাঁদে যে পাখিরা
ঝাপ দেবে শূন্যতার ক্ষুধায়,
জানবে না
একে একে ডুবে যাবে ওরা।
ভেসে যাওয়া পালকের স্রোতে
ডুবুরি মাছেরা যদি জেনে যায়-
ওটা তো সাগরও নয়
জলল কল্পনায় গড়া নীল-বিভ্রম শুধু !
চোখের কোটরে রাখা নীল দুই পাথরের
প্রাণহীন চকমকি ঘষে
কী হবে আগুন জ্বেলে আর,
তুমিই পুড়বে তাতে।
মাটির জরায়ু ফুঁড়ে শিশুনীল বৃক্ষের
যে কুঁড়ি উঁকি দেবে সবুজ আশায়
ওখানে যে জরা ক্ষয় প্লাবন খরায় নামে
অনার্য আদিম সুর
ঠিকানা গাঁড়বো বলে
বুকের জমিন খুঁড়ে বেঁধেছি নতুন পাড়-
ইচ্ছে হয়
তুমিও দিতে পারো অবাধ সাঁতার। #
(০১/০৪/২০০৮)
[somewherein]
[sachalayatan]
হতচ্ছাড়া কবিতা
তিনি একজন ডাকসাইটে কবিতা বিশ্লেষক;
ব্যবচ্ছিন্ন করতে করতে কী এক অদ্ভুত দক্ষতায়
গোটা শরীরটাকে খুলে ফেলেন অনায়াসে,
প্রতিটা বাক্যের খাঁজে খাঁজে সেটে থাকা শব্দ অক্ষর এবং
রূপ রস গন্ধ বর্ণ মাত্রা তাল ছন্দ আর
সংযোজিত অনামিক উপকরণ যতো
পলকেই ছিন্ন ভিন্ন করে
অলৌকিক বিজ্ঞতার আঙুলে দেখিয়ে দেন তিনি
কবিতার রহস্য তন্ত্র মন্ত্র সব !
গণিতের সূত্র টেনে আমরা যারা দর্শক
অর্থাৎ ইতোমধ্যেই শ্রোতা থেকে দর্শকের কাতারে হাজির
এক অভূতপূর্ব বিস্ময়ে বুঝে ফেলি-
চিত্রকল্প মানেই কি তবে অযাচিত কতকগুলো
যুক্তিহীন অক্ষরের নির্বোধ বিন্যাস !
যুক্তিতে অবজ্ঞা এলে মানুষ কি সুস্থতা হারায় !
তুমুল বিশ্লেষণে সেদিন
শ্রোতা থেকে আগাগোড়া দর্শক হয়েছিলাম যারা-
সেই থেকে কবিতার খাতাটা- কী আশ্চর্য-
রয়ে গেলো ফাঁকাই ! #
(৩১/০৩/২০০৮)
[somewherein]
বলেছিলো এনে দেবে
দিব্যি দিয়ে বলেছিলো
পরেরবার এসে আমাকে সে নিয়ে যাবে
সুতন্বির পাড়ে
সেই বনসাই নদী
আটকে থাকা ছেলেবেলার জলছবি বুকে
এখনো কি কুলকুল করে
শিমুলের তুলোপাখি খুঁজে খুঁজে
মাঠ ঘাট তেপান্তর ছুঁয়ে
যেতে যেতে ?
সোনাই মাঝির গান কতোকাল কাঁদিয়েছে মেঘ
বিষণ্ন দুপুর খুলে মেলে দেয়া ঘুঘুদের ডাক
ছুটির ঘণ্টার মতো চাপা পড়া কোলাহল
সুনসান পাড়ে এসে হয়ে যাওয়া নতজানু গাছ
আর
শালিখের ঝোপভাঙা দাড়াশের ফণা হয়ে
পালানো কৈশোর
আজ ভুল বিস্মরণ !
দিব্যি দিয়ে বলেছিলো
আমাকে সে এনে দেবে কাদামাটি মাখা সেই
বনসাই ছাপ
পুড়ে পুড়ে খাঁ-খাঁ গ্রাম হা-হা বিল
জরায়ুর অথৈ চিৎকারে ছাপা
আমার সে মৃত একাত্তর ;
বলেছিলো এনে দেবে হৈ হৈ স্মৃতি খুলে
না ফেরা আমার কই হারানো মায়ের লাশ। #
(০১/০৪/২০০৮)
[amarblog]
অর্থহীন
মালিবাগ মোড় ফেলে ডানে ঘুরে আরেকটু এগুলেই
বায়ে যে সুদৃশ্য ভবন, মেয়েটির বুকের মতোই
টান টান উঁচু হয়ে আছে,
তার বুক বরাবর চয়িতার বাস।
ওটা যে আসল ঠিকানা নয়-
হয়তো সে জানে, হয়তো জানে না।
লিফটের বাটন চেপে উদ্ভ্রান্ত বেরিয়ে এলে
তখুনি সে হয়ে ওঠে নারী, না অপূর্ণ রমণী
কী করে জানবে সে ? কখনো কি এসেছে তার
এলোমেলো করে দেয়া
লুঠেরা সময় ভাঙা তুখোড় বিকেল ?
পাখির সবুজ শীষে ওঠেনি কেঁপে যার গোপন শরীর
বৃক্ষের বাকল ছুঁয়ে পায়নি যে শিকড়ের ছুঁয়ে থাকা মোহন গরল
বা
আয়নার জলভাষা এখনো খোলেনি যার আপন বিস্ময়
সে কি জানে ?-
লুণ্ঠন স্পৃহাতেই শুধু পুরুষেরা হয়ে ওঠে আকণ্ঠ প্রেমিক,
আর প্রেমিকা হবে তো সেই-
রক্তে যার জেগে ওঠে লুণ্ঠিত হবার সাধ !
এসব না জানলেও
লিফটের বাটন চেপে কতোবার উঠে যাবে সে,
অথবা নামবে আরো নীচে আরো নীচে আরো নীচে !
মাটির সমান্তরাল কখনো হবে কি সে আর ...?
(০২/০৪/২০০৮)
[somewherein]
সাঁতার
যে জলে ঝাঁপ দিয়েছো
ওটা কি শুধুই জল ?
জানো না তাও !
তোমার হবে না সাঁতার শেখা।
জলের স্বভাবে যার গাঁথা নেই জলল শেকড়
মেলে দেয়া ডাল-পালা হাত-পা
জলের বিরূদ্ধে সে তো ভাসাবেই শুধু,
হবে না সাঁতার শেখা।
যেতে পারুক বা না পারুক
গন্তব্যবিহীন কোন স্বপ্নের ঠিকানা নেই।
সাঁতার না জানলে
প্লাবনের শুদ্ধ নিয়মে ভেসে কই যাবে, একা !
প্রথাগত জলে জলে কে যে ভাসে
আর কে যে সাঁতরায়
জলে না নামলে কী করে বুঝবে তা ?
মানুষ জলের সন্তান –
জলের প্রকৃতি বুঝে না যে
তাকে তো ডুবতেই হয়।
(০৩/০৪/২০০৮)
[somewherein]
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
hi!i am ilyass from morocco and i want to know you better and you can e-mail me in jaha_ilyass_7@hotmail.com or leave a comment on my blog http://ilyassd.blogspot.com/ thanks
Post a Comment