Tuesday, April 22, 2008

# অদৃশ্য বাতিঘর -০২ (কবিতাগুচ্ছ)





অদৃশ্য বাতিঘর -০২ (কবিতাগুচ্ছ)
- রণদীপম বসু


অন্তরা

এখানে থেকেই যা সহেলী তুই
চোখের ডানায় নিঝ্ঝুম উড়ে চলা
নিজে নিজে কতোটা সইবি আর,
বুকটা তো ফাঁকাই কেবল
অনাদর হবে না তোর
এখানেই থেকে যা।

বুদবুদের মতোন ডুবে থাকা জলের অতল তলে
সপ্ত আকাশে তোর পাবিনে এমোন করে
আলো-আঁধারির খেলা-
থেকে যা এখানে তুই
শৈবাল গুল্মের লতানো ছায়ার ফাঁকে
তোকে নিয়ে সাঁতরে যাবো
জল-পাহাড়ের খাঁজে
রূপসী মাছেদের কেলিরত চোখে তোর
অধর-আবীর মেখে চলে যাবো
রূপোলী ঝিনুকের খোঁজে
মুক্তোয় ভরে দেবো তোকে।

পাখির পালকে আকাশটা গুঁজে রেখে
এখানেই চলে আয় তুই-
জলেও অরণ্য আছে
তোকে নিয়ে ছুঁয়ে যাবো আদিম পাথর
অরণ্যের ধার ঘেষে
পড়ে থাকা হেলায় ভীষণ ;
স্বপ্নে তোর মুগ্ধ ছোঁয়ায়
ওখানে ফুটবে হেসে পাথুরে জলের ফুল-
তোর বুকে গুঁজে দেবো।
চাইলে সহেলী তোকে নিয়ে যাবো অরণ্যে গভীর
শেখাবো গাছেদের ভাষা-
দুলিয়ে বল্লরী-শাখা গাছেরাও বলতে জানে
প্রিয়তম কথা।

থেকে যা সহেলী তুই,
দু-চোখে যা কিছু ধরে
আমার যা সবকিছুই তোকে দেবো-
চাইলে শরীরটাও খুলে দেবো তোকে
শুধুই তোকে। #
(১২/১০/১৯৯৫)
R_d_B


জলল ভাস্কর্য

জ্যোৎস্নার সাথে সঙ্গম শেষে
রাতেরা কান্ত হলে
আড়মোড়া ভেঙে বলে ওঠো তুমি-
এখনো অনেক বাকী দিনের শুরু
চলো না বেরিয়ে আসি হ্রদের কিনার,
জলল ভাস্কর্য হবো।
কিছুই বলি না আমি-
অনিচ্ছে পকেটে পুরে তোমাতেই
চলমান হই।

অরণ্য-কালোয় জলে
কে যেনো ধোয়ে দেয় চাঁদের নেংটো শরীর;
ডুবিয়ে রতিতদেহ তুমিও নেমে গেলে
জলের স্বচ্ছতায়
যুগল জ্যোৎস্না নামে
এবং রাতের শরীর হয়ে যে দেহ জড়িয়ে ধরি
সেটা কি তোমার, নাকি...
জানা হয় না আমার।

তখনো দিনের শুরু অ-নে-ক বাকি। #
(২৬/০১/১৯৯৬)
R_d_B


পাথর স্তবক

(১)
অনেক বর্ষণে মৃত্তিকা গলে যায়
পাথরেরা বদলায় না একটুও;
তুমি তো পাথরই-
ইচ্ছে হয় কান পেতে শুনি
ঐ বুকে
ভাঙনের শব্দ হয় কিনা।

(২)
কিছু কিছু মুহূর্ত আসে
পাথরও মৃত্তিকার মতো গলে যায়,
বুঝি না কেবল আমি-
কতোটা অমিল থাকে পাথর তোমাতে
আর পাথরে তোমার ?

(৩)
পাথরে কি ফোটে ফুল
দৈবাৎ কখনো ?
এটুকু জানার বাকি থাক না পড়ে;
তোমার মুখেই যখোন হাসির মঞ্জরি দেখি
থাকে না জানার বাকি-
পাথরও ফোটায় ফুল কখনো কখনো। #
(০৯/০৪/১৯৯৬)
R_d_B


স্বপ্ন-বচন

(১)
জলের চোখে চোখ রেখেছো
বুঝোনি তাও চোখের জলও হাসতে জানে,
কষ্ট বুকের গোপন ছোঁয়ায় বুঝবে কি আর
কষ্ট পেতেই কষ্টেরা যে গোপন সুরে স্বপ্ন বোনে !

(২)
গাছের কাছে মাছের কাছে
স্বপ্ন-কথা ছড়াতে নেই,
জন্মান্ধতার শতদ্রু চোখ
বুনবে কেবল অন্ধতাকেই !

(৩)
স্বপ্ন দিয়ে স্বপ্ন কেনা
জগৎ জুড়ে কী আর এমন রহস্য তায়,
মাটির বুকের স্বপ্ন-কথা বুঝবে কে আর-
ভেঙে ভেঙে স্বপ্নতাকে ছড়াতে চায় কোন্ ভাষায় !

(৪)
স্বপ্নতা আর স্বপ্নহীনায়
আছে কি আর প্রভেদ কোনো ?
স্বপ্নেরই তো আসা-যাওয়া
রূপের ভেদেই ভাসছে দুনো ! #
(১৯৯৭)
R_d_B



আবর্তন
(মা'কে মনে পড়ে)

শৈশবে মায়ের মুখে শুনেছিলাম
জীবনের গান-
বুঝিনি কিছুই
শুধু রূপকথা সুরে সুরে
ঘুমের ডানায় ভেসে চলে গেছি দূর থেকে দূরে ;
মায়ের দীঘল হাত তখনো ছড়িয়ে ছিলো
অদ্ভুত মায়ায়।

সময়ের পালকেরা তারপর উড়ে গেছে কতো !
পড়ন্ত দুপুরে এখনো সুনসান নির্জনে
কতো না কান পাতি
শৈশবে আমার-
বুকের গহীন থেকে নিশুতির কান্না কিছু
উঠে আসে ছলকে যেন প্রত্নহীন লাভায়।
সেই গান সেই সুর কোথায় হারিয়ে গেছে-
কেবল মায়ের সেই সে বাহু
এখনো জড়িয়ে রাখে নিবিষ্টে আমায়।

আসলে মানুষেরা পারে না
কখনো ছাড়িয়ে যেতে শৈশবের বন্ধন কোনো।
শৈশবেরা যায় কি ফেলে মানুষকে কখনো ?
(২৫/০৯/১৯৯৬)
R_d_B



Image

No comments: