Saturday, August 23, 2008

@ ছড়াসাহিত্যে লিটল ম্যাগাজিন [Little Magazin]




ছড়াসাহিত্যে লিটল ম্যাগাজিন
- রণদীপম বসু

দৈর্ঘ্য-প্রস্থে কলেবর বাড়িয়ে দিলেই যেমন ‘বড়-কাগজ’ হয় না, বিপরীতক্রমে কমিয়ে দিয়েও তা ‘ছোট-কাগজ’ হয়ে যায় না। নতুন স্বর ও সাহসী উচ্চারণে এস্টাব্লিশম্যান্টের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যে সত্যনিষ্ঠ উদারতায় চোখে আঙুল দিয়ে অসারতা চিহ্ণিত করে দেখিয়ে দিতে পারে সে’টাই ‘ছোট-কাগজ’। প্রকৃত অর্থে লিটল ম্যাগাজিনের চরিত্রই হচ্ছে প্রতিবাদী ও প্রতিষ্ঠান বিরোধী। আর তাই প্রথাবিরোধী মেধাবী সৃষ্টিশীলদের সাহিত্যচর্চার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে এই লিটল ম্যাগ। এর মাধ্যমেই সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি, তরুণ লিখিয়েদের আনকোরা উপস্থাপন ও সাহিত্যের নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে। আর আমাদের বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে লিটল ম্যাগাজিনের সম্পর্ক তো এক কথায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো। তাই লিটল ম্যাগাজিনের আলোচনা আসলেই বাংলাভাষার অন্যতম খ্যাতিমান লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু’র নামটিও অবিচ্ছেদ্যভাবেই চলে আসে। চারিত্র্য বিশ্লেষণে লিটল ম্যাগাজিনের স্বরূপ কী হবে এ ব্যাপারে তাঁর ব্যাখ্যাকেই মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ‘দেশ’ পত্রিকার মে ১৯৫৩ সংখ্যায় ‘সাহিত্যপত্র’ প্রবন্ধে বুদ্ধদেব বসু লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লেখেন-

“এক রকমের পত্রিকা আছে যা আমরা রেলগাড়িতে সময় কাটাবার জন্য কিনি, আর গন্তব্য স্টেশনে নামার সময় ইচ্ছে করে গাড়িতে ফেলে যাই- যদি না কোনো সতর্ক সহযাত্রী সেটি আবার আমাদের হাতে তুলে দিয়ে বাধিত এবং বিব্রত করেন আমাদের। আর এক রকমের পত্রিকা আছে যা স্টেশনে পাওয়া যায় না, ফুটপাতে কিনতে হলেও বিস্তর ঘুরতে হয়, কিন্তু যা একবার হাতে এলে আমরা চোখ বুলিয়ে সরিয়ে রাখি না, চেয়ে-চেয়ে আস্তে আস্তে পড়ি, আর পড়া হয়ে গেলে গরম কাপড়ের ভাঁজের মধ্যে ন্যাপথলিন-গন্ধী তোরঙ্গে তুলে রাখি- জল, পোকা, আর অপহারকের আক্রমণ থেকে বাঁচবার জন্য। যে সব পত্রিকা এই দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্গত হতে চায়- কৃতিত্ব যেইটুকুই হোক, অন্ততপক্ষে নজরটা যাদের উঁচুর দিকে, তাদের জন্য নতুন একটা নাম বেরিয়েছে মার্কিন দেশে; চলতি কালের ইংরেজি বুলিতে এদের বলা হয়ে থাকে লিটল ম্যাগাজিন।”

মূল সাহিত্য ধারায় আমাদের দেশে প্রচুর লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হলেও এমন বিশিষ্টতার ঔজ্জ্বল্য নিয়ে তেমন কোন ছোট কাগজ আমাদের শিশু-সাহিত্য বা ছড়া-কবিতা’র অঙ্গনে খুব একটা চোখে পড়ে না। আর থেকে থাকলেও এর খিন্ন আয়ু এবং এর প্রাসঙ্গিক অনিবার্যতায় কৌতূহলী সাধারণ পাঠকের কাছে সহজলভ্য থাকে না। তারপরেও কিছু কিছু কাগজ তার চোখ-ধাধানো ঝিলিক দিয়ে স্বাতন্ত্র্যটুকু জানান দিয়ে যায় বৈকি। এরকম কয়েকটি কাগজ হচ্ছে- ছড়াপত্রিকা, প্রতীকী, অন্ত্যমিল, ছড়াড্ডা, চমচম, একফর্মা ছড়াপত্র ইত্যাদি।





ছড়াপত্রিকা

বর্তমান ছড়া-কবিতা অঙ্গনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত আছেন অথচ ‘ছড়াপত্রিকা’র নাম শুনেন নি এমন কেউ সম্ভবত নেই। দু’বাংলায় সমাদৃত মাহবুবুল হাসান সম্পাদিত ছড়া বিষয়ক অত্যন্ত জনপ্রিয় লিটল ম্যাগাজিন ‘ছড়াপত্রিকা’ ত্রয়োদশ সংখ্যা: ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সংখ্যাটি এখন পর্যন্ত সর্বশেষ সংখ্যা। উৎকৃষ্ট ছড়ার মতোই কড়কড়ে আমেজ আর নজরকাড়া অঙ্গসৌষ্টব, অনেক ম্যাগাজিনের ভিড়েও আলাদাভাবে চেনা যায়। সুরুচির উৎকর্ষতা শুধু এর চেহারাতেই নয়, ভেতরেও এর সমৃদ্ধি উল্লেখ করার মতো। এজন্যে সম্পাদকীয় যোগ্যতায় মেধা, মনন, সাহস আর পরিমিতবোধের যে সমন্বয় থাকতে হয় তার একশ’ ভাগই রয়েছে মাহবুবুল হাসানের মধ্যে। সদ্য প্রকাশিত এই ত্রয়োদশ সংখ্যাটির সূচিপত্র ওল্টালেই এর নমূনা আন্দাজ করতে পারি আমরা।

কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক মুহাম্মদ নিযামুদ্দীনের লেখা স্মারক গদ্য ‘শামসুর রাহমান; ছড়াতেও যিনি শক্তিমান’, ছড়াকার নূরুল ইসলাম খানের ফিচার ‘একান্ত অনুরোধ’, এখ্লাস উদ্দিন আহমদের বৈঠকী ছড়া নিয়ে ছড়াকার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিনের একটি মিঠেকড়া আলোচনা ‘বৈঠকী ছড়া’, ছড়ার বৈশিষ্ট্য নিয়ে শিশুসাহিত্যিক প্রাবন্ধিক এমরান চৌধুরীর নিবন্ধ ‘ছড়া হয়ে ওঠা’, কিশোর কবিতার অতীত, গতিপ্রকৃতি ও বর্তমান প্রবণতা এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়াবলি নিয়ে রণদীপম বসুর গদ্য ‘চারুপাঠের মগ্নকিশোর ও আমাদের কিশোর কবিতা’, সতীশ বিশ্বাসের ছোট্ট গদ্য ‘উত্তর-আধুনিক ছড়া’, ছড়াকার প্রাবন্ধিক চন্দন চৌধুরীর নিবন্ধ ‘প্রকৃত ছড়া- ইঙ্গিতময়তা ও প্রতীকায়নেরই একটি ক্ষেত্র’, ছড়াকার গোফরান উদ্দীন টিটুর নিজস্ব ভাবনা ‘ছড়াশিল্পীর খাতা থেকে’, প্রাবন্ধিক মনজু রহমানের আলোচনা ‘পরিলেখ প্রকাশনী: ছড়াগ্রন্থের ছড়াকার ও প্রসঙ্গাদি’, ছড়াকার সৈয়দা সেলিমা আক্তারের স্মৃতিচারণমূলক খোলাচিঠি ‘বিনি সুতোর মালা’, কবি জুলফিকার শাহাদাৎ-এর বারোটি কবিতা নিয়ে ‘জুলফিকার শাহাদাৎ এবং তাঁর কিশোরকবিতার দ্বাদশ ক্যানভাস’ শিরোনামে একটি মনোজ্ঞ আলোচনা করেছেন প্রাবন্ধিক গদ্যশিল্পী চন্দন কৃষ্ণ পাল এবং দু’টো ছড়াগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেছেন শান্তি মেহ্জাবিন ও নরেন্দ্র সুসন্ধ্যা। তবে এ সংখ্যার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মননশীল দীর্ঘ লেখাটি লিখেছেন প্রাবন্ধিক-কবি-ছড়াকার-সমালোচক ইলতুৎ আলীদ।

ছড়াপত্রিকার সম্পাদকীয়তে যদিও উল্লেখ করা হয়েছে- ‘সম্পাদকের বরাবরে লেখক-পাঠকের গুনগান করে লেখা চিঠিগুলো চিঠিপত্র বিভাগে ছাপানোর একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় লিটল ম্যাগাজিনগুলোতে। আমরা সেই লোভ সংবরণ করেছি বরাবরই। বরং সম্পাদক বরাবরে লেখা কড়া সমালোচনার একটি চিঠি আমরা প্রকাশ করেছি চলতি সংখ্যায়; যেই চিঠিতে পত্রলেখক সম্পাদককেও ছেড়ে কথা বলেন নি মোটেই। সম্পাদক হবার বিড়ম্বনা যে কত!’ মূলত এটাকে চিঠি হিসেবে বিবেচনা করার দুর্মতি হবে না পাঠকের। কেননা ওটা আসলে চিঠির ঘোমটায় গুণ্ঠিত একটি সমালোচনামূলক দীর্ঘ প্রবন্ধপত্র, তীর্যক মেধাবী দৃষ্টি আর মননশীলতায় ঋদ্ধ।

নবীন প্রবীন অনেক প্রখ্যাত ছড়াকারের অনেকগুলো ছড়া, কেরিহিউ, ছড়াক্কা রয়েছে ম্যাগাজিনটিতে পাঠকের ভাব ও ভাবনার খোরাক হিসেবে। এতে যাঁরা বিভিন্ন বিষয়ের উপর ছড়া লিখে সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ হ’তে সহায়তা করেছেন তাঁরা হলেন- খালেক বিন জয়েন উদ্দীন, আইউব সৈয়দ, সৈয়দ খালেদুল আনোয়ার, জ্যোতির্ময় মল্লিক, ফারুক নওয়াজ, সনাতন চক্রবর্তী, খালেদ হোসাইন, আবুল হোসেন আজাদ, বিপুল বড়ুয়া, সৈয়দ আমির উদ্দিন, সিতাংশু কর, শফিক ইমতিয়াজ, উৎপল কান্তি বড়ুয়া, জসীম মেহবুব, রমজান আলী মামুন, ইকবাল করিম রিপন, মিজানুর রহমান শামীম, জুবাইদা গুলশান আরা ফেন্সী, মানসুর মুজাম্মিল, জুলফিকার শাহাদাৎ, জাহাঙ্গীর আলম জাহান, জাহিদ মুস্তাফা, জামান সৈয়দী, ফারুক হাসান, মাহফুজুর রহমান আকন্দ, আদিত্য রুপু, সাজ্জাদ বিপ্লব, সমীর গোলদার, আল রাহমান, মাসুদ কামাল, সনজিত দে, আরিফ বখতিয়ার, টি. এম. পলাশ, আবদুল মতিন রিপন, তুষার আহাসান, মাসুম আওয়াল ও প্রতীক ওমর।
এছাড়া মগ্ন পাঠকের গ্রন্থনায় সন্দেশ বিভাগে রয়েছে ছড়া ও ছড়াকার সংবাদ। তবে ছড়াপত্রিকার উল্লেখযোগ্যম নিয়মিত সংযোজনা গুনী ছড়াকার ও সম্পাদক মাহবুবুল হাসানের শ্রমলব্ধ গ্রন্থনায় বিভিন্ন ছড়াকারের এ পর্যন্ত প্রকাশিত ছড়ার বইয়ের তালিকা। যা আগামী দিনের ছড়া গবেষকদের জন্য নিঃসন্দেহে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।





প্রতীকী

ছড়া সাহিত্য বিষয়ক ষান্মাসিক লিটল ম্যাগাজিন ছড়াকার মিজানুর রহমান শামীম সম্পাদিত ‘প্রতীকী’ প্রকাশিত হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকেই। প্রতীকী’র চলমান সংখ্যাটি অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি/মার্চ ২০০৮ সংখ্যাটিকে দু’টো অংশে ভাগ করা হয়েছে। ছড়াসাহিত্যে যাঁর বিশেষ অবদান অনস্বীকার্য, স্বনামধন্য ছড়াকার ফারুক নওয়াজের পঞ্চাশে পা দেয়াকে প্রয়োজনীয় সম্মান দেখানোর প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে তাঁর সাহিত্য কীর্তি নিয়ে আলোচনা সাক্ষাৎকার ফারুক নওয়াজ অংশ এবং সামগ্রিক ছড়াসাহিত্যের উপর আলোচনা পর্যালোচনা ছড়া কবিতা ইত্যাদি নিয়ে সাধারণ অংশ।
ফারুক নওয়াজ অংশে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের যেসব রচনালেখ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা থেকে একজন ফারুক নওয়াজের বিস্তৃত প্রোফাইল পাই আমরা। এ অংশে তাঁকে নিয়ে গদ্য লিখেছেন ছড়াকার ফারুক হোসেন, জ্যোতির্ময় মল্লিক, মনি হায়দার, রফিকুর রশীদ, আবু সালেহ, জাকির আবু জাফর এবং নিবেদিত ছড়া রচনা করেছেন নাসের মাহমুদ, জিয়া হক, চন্দন কৃষ্ণ পাল, মানসুর মুজাম্মিল, আবু জুবায়ের ও মুহিব নেছার। আদিত্য রুপুর নেয়া ফারুক নওয়াজের একটি সাক্ষাৎকারও রয়েছে এ অংশে।
তবে এ ম্যাগাজিনের সমৃদ্ধ অংশ হলো এর সাধারণ অংশ। এতে রয়েছে ছড়া-কবিতা নিয়ে বেশ কয়েকটা চিন্তাশীল ও বৈচিত্র্যময় গদ্য ও প্রবন্ধ। লেখা ও লেখকরা হলেন ‘শিশুতোষ লোকছড়া: ঐতিহ্যে ও অধুনায়’/ চন্দন চৌধুরী, ‘ছড়া-কবিতায় নজরুলের শিশু কিশোর’/ কমরুদ্দিন আহমদ, ‘কিশোর কবিতা নিয়ে ভাবনা’/ তপন বাগচী, ‘ছড়া নিয়ে ছোট্ট কথা, কিশোরগঞ্জের বাস্তবতা’/ জাহাঙ্গীর আলম জাহান, ‘ছড়া-কবিতায় ছন্দের শাসন ও দুঃশাসন’/ রণদীপম বসু এবং ‘রাজশাহীর ছড়া: সাম্প্রতিক পাঠ’/ নাজিব ওয়াদুদ। ছড়া-কবিতার বই নিয়ে আলোচনা ও স্মৃতিচারণ করেছেন ‘মেঘ দিয়ে সাঁকো বাঁধা যায়’/ইলতুৎ আলীদ, ‘আয়রে আয় তুতুয়া আহমেদ জসিমের মজার ছড়াগ্রন্থ’/ জসীম মেহবুব, ‘প্রিয় বই গোফরান উদ্দীন টিটুর আমার ছড়া কইবে কথা’/ শাহানা শাহীন অমি, ‘চঞ্চলা চঞ্চুর লিমেরিক’/ মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন, ‘বাক্সে ভরা মজার ছড়া’/ গোফরান উদ্দীন টিটু এবং একটি স্মৃতিকথা ‘চার বেহারার পালকি ও অমলিন কিছু স্মৃতি’/ কেশব চৌধুরী। এছাড়া ছড়া কবিতা ও লিমেরিক রচনা করেছেন ৪১ জন ছড়াকার। এরা হলেন আহমেদ জসিম, সৈয়দ খালেদুল আনোয়ার, দেলোয়ার বিন রশিদ, আহসান মালেক, উৎপল কান্তি বড়ুয়া, জসীম মেহবুব, বিশ্বজিৎ সেন, বিপুল বিশ্বাস, অরুণ শীল, শফিক ইমতিয়াজ, তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী, ফারুক হাসান, সিতাংশু কর, অপু বড়ুয়া, রমজান আলী মামুন, গোফরান উদ্দীন টিটু, নজরুল জাহান, বাহারুল হক লিটন, গোলাম নবী পান্না, অবিনাশ আচার্য, মুহিব নেছার, প্রদীপ ব্যানার্জী, নজরুল ইসলাম শান্ত, আবিদ আজম, আহসান সাব্বির, আদিত্য রুপু, আক্তারুজ্জামান রকিব, নার্গিস চমন, কাজী বর্ণাঢ্য, মাহমুদুল হাসান নিজামী, সনজিত দে, তালুকদার হালিম, মোক্তারুজামান, সোহেল সৌকর্য, ওসমান গনি এনু, মামুন আল-রশীদ, সৈয়দা সেলিমা আক্তার, সুজন সাজু, আবদুল গফুর, আবদুল কাইয়ুম, রুপন সিকদার।





অন্ত্যমিল

রহমান তাওহীদ সম্পাদিত ‘অন্ত্যমিল’ কিশোর-কবিতা সংখ্যাটি বগুড়া থেকে প্রকাশিত ৪র্থ বর্ষ ৩য় সংখ্যা। হাতে রাখার মতো এ সংখ্যাটি ইতোমধ্যেই শিশু-কিশোর-সাহিত্যের অঙ্গনে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। চারুপিন্টুর দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদের দুই মলাটের ভেতরে আট ফর্মার মোটা তাজা ও কড়কড়ে অবয়বে আগাগোড়া সুশৃঙ্খল সম্পাদনার চারুময় ছাপ এর উলেখযোগ্য আকর্ষণ। তবে প্রধান আকর্ষণ ভেতরের লেখা সমেত গোটা কাগজটিই। এতগুলো মননশীল প্রবন্ধ, গদ্য, আলোচনা, ছড়া-পদ্য-কবিতা’র সাম্প্রতিক পাঠ একসাথে পাওয়া বিশাল ব্যাপার বৈকি। এ অঙ্গনের বর্তমান হালচালটা একটু পরখ করে নিতে কৌতূহলী পাঠকের জন্য এ সংখ্যাটা অত্যন্ত সহায়ক হবে। এতে প্রবন্ধ লিখেছেন- হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী, ইলতুৎ আলীদ, মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন, জাকির আবু জাফর, জুলফিকার শাহাদাৎ ও মাহ্ফুজুর রহমান আকন্দ। বই নিয়ে আলোচনা করেছেন- সেলিনা শেলী, আদিত্য রুপু, আফসার নিজাম, এফ শাহজাহান ও মিজান আহসান। ‘অন্ত্যমিল’ পূর্বসংখ্যা নিয়ে মতামত লিখেছেন- ইলতুৎ আলীদ, মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন, মাহফুজ ফারুক ও তপন বাগচী। আর পদ্য কবিতা লিখেছেন- রাশেদ রউফ, অরুন শীল, জুলফিকার শাহাদাৎ, নাসিরুদ্দীন তুসী, সাজ্জাদ বিপব, ফারুক হোসেন, মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন, জসীম মেহবুব, উৎপল কান্তি বড়ুয়া, নাজিব ওয়াদুদ, মিজানুর রহমান শামীম, বিপুল বড়ুয়া, মাসুদ আনোয়ার, কামাল হোসাইন, আবুল কালাম বেলাল, মন্জু রহমান, নূরুল ইসলাম খান, সনজিত দে, এম এ কাইউম, রণদীপম বসু, শাকিল ফারুক, মাসুদ কামাল, ফজলুল হক তুহিন, জুবাইদা গুলশান আরা ফেন্সী, সৈয়দ আমির উদ্দিন, আরিফ বখতিয়ার, শামীম হাসনাইন, মামুন সারওয়ার, মামুন-আল-রশীদ, জোবায়ের আসাদ, আসাদুজ্জামান খোকন, মাসুম আওয়াল, আবদুল মতিন রিপণ, সাইফ মাহাদী, জালাল খান ইউসুফী, মাহফুজ ফারুক ও গোলাম নবী পান্না। তবে সংখ্যাটির বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে আদিত্য রুপু’র নেয়া এ অঙ্গনের ভিন্ন ভিন্ন বয়সী চার কবির এক ব্যতিক্রমী সমন্বিত সাক্ষাৎকার। এই এক্সকুসিভ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আখতার হুসেন, সুজন বড়ুয়া, রাশেদ রউফ ও জুলফিকার শাহাদাৎ।





ছড়াড্ডা

রাজশাহী থেকে প্রকাশিত আরিফ বখতিয়ার সম্পাদিত ছড়া বিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন ‘ছড়াড্ডা’। চারুপিন্টু’র চারুময় চমৎকার প্রচ্ছদে মোড়ানো চার ফর্মার এই ছোট কাগজটি দেখলেই হাতে নিতে ইচ্ছে করবে। ঠাসবুনুনি লেখা-সমৃদ্ধ এ কাগজটিও ইতোমধ্যে বেশ আলোচিত হয়ে ওঠেছে এর ভেতরে রাখা মশলার কারণেই। হাতে রাখার মতো এ কাগজে প্রবন্ধ, গদ্য ও পাঠ-আলোচনা লিখেছেন- মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন, জসীম মেহবুব, মন্জু রহমান, মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন, ইলতুৎ আলীদ, মাহফুজুর রহমান আকন্দ, জুলফিকার শাহাদাৎ, মাসুদ কামাল, ফজলুল হক তুহিন, সতীশ বিশ্বাস, রহমান তাওহীদ, মাসুম আওয়াল ও সাইফুল হক সিরাজী। রয়েছে সাজ্জাদ বিপবের নেয়া ছড়াকার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন-এর একটি সুন্দর সাক্ষাৎকার। যাঁদের ছড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে সংখ্যাটি, তাঁরা হলেন- শফিক ইমতিয়াজ, সাজ্জাদ বিপব, ইমরান পরশ, মঈন মুরসালিন, নূরুল ইসলাম খান, মিজানুর রহমান শামীম, মাসুম হামিদ, মানসুর মুজাম্মিল, কমলেশ সরকার, বিপুল বড়ুয়া, সুজিত মণ্ডল, হাসান তানভীর, মামুন সারওয়ার, উৎপল কান্তি বড়ুয়া, বিশ্বজিৎ সেন, নাজিব ওয়াদুদ, আসাদুজ্জামান খোকন, আবিদ আজম, মাহফুজ ফারুক, এম এ কাইউম, গিয়াস উদ্দিন রূপম, জাইদুর রহমান, গোলাম নবী পান্না, আতাউলাহ রুনু, আদিত্য রুপু, প্রতীক ওমর ও আহমাদ মোবাশ্বির।





চমচম

গাইবান্ধা থেকে প্রকাশিত প্রতীক ওমরের সম্পাদনায় দুই ফর্মা আয়তনের ছড়া বিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন ‘চমচম’-এর দ্বিতীয় সংখ্যা জুন’২০০৭ কাগজটির মেটে-রং প্রচ্ছদ-কভারের ভেতরে সাধারণ কাগজ দেখে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। বরং চোখ অশিক্ষিত হলেই ঘাবড়ে যাবার সম্ভাবনা বেশি। কেননা ওখানে ভারী ভারী প্রবন্ধ গদ্য আলোচনা লিখেছেন- ইলতুৎ আলীদ, এফ শাহজাহান, অমিয় কুমার সেনগুপ্ত, ড.মাহফুজুর রহমান আখন্দ, প্রতীক ওমর ও এহসান হায়দার। ইলতুৎ আলীদের মুখোমুখি হয়েছেন মাহফুজ ফারুক এবং ছড়া লিখেছেন- জসীম মেহবুব, জোবায়ের আসাদ, মিজান আহসান, শাহীন সজল, বিকর্ণ রায়, জুলফিকার শাহাদাৎ, ডাঃ আর এ এম তারেক, মোস্তফা কামাল, গোলাম নবী পান্না, বিশ্বজিৎ সেন, এম সেলিম রেজা, রুহুল আমিন মুকুল ও এইচ এম জুয়েল মণ্ডল।





একফর্মা ছড়াপত্র

শ্রীমঙ্গল থেকে অবিনাশ আচার্য ও চন্দন কৃষ্ণ পাল সম্পাদিত একফর্মা ছড়াপত্র পঞ্চম সংখ্যা (বৈশাখ ১৪১৫) টি আগের সংখ্যাগুলোর সাথে একটু তফাৎ রয়েছে। নামে একফর্মা হলেও চলতি সংখ্যায় আর একফর্মা নেই, বেড়ে গেছে। তিন ফর্মায় এসে দাঁড়িয়েছে। তার এই ছোট্ট উঠোনে তিনটি গদ্য আর গুচ্ছ গুচ্ছ ছড়া ও পদ্যের সমাহার ! গদ্যগুলো হচ্ছে- ‘ছড়া আর অছড়া’/ জুলফিকার শাহাদাৎ, ‘ছড়া পত্রিকা’ ত্রয়োদশ সংখ্যা- ‘উল্টা বুঝলি রাম’!/ রণদীপম বসু এবং যে বই পড়েছি’তে ‘ব্যবচ্ছেদ : টাকুম টুকুম’/ কমলকলি চৌধুরী। প্রকাশিত ছড়া পদ্যগুলোতে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী সহ নবীন প্রবীন মিলিয়ে আটত্রিশ জন ছড়াকারের ছড়া পদ্য ও ছড়াগুচ্ছ রয়েছে, যাঁরা বর্তমান ছড়াসাহিত্যের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে বিবেচিত। এরা হলেন কাইয়ুম চৌধুরী, সিরাজুল ফরিদ, মহিউদ্দিন শীরু, রায়হান সেলিম, প্রভাস তীর্থ, ফারুক নওয়াজ, শফিক ইমতিয়াজ, আবিদ আজম, সোহেল সৌকর্য, ফারুক হাসান, জগলুল হায়দার, মোঃ আলমগীর শিমুল, গাজী আবু হানিফ, কাজী বর্ণাঢ্য, শহীদ মহাজন, মৃধা মোঃ সাহেব আলী, রমজান আলী মামুন, মতিউর রহমান মনির, গোলাম নবী পান্না, রতন চন্দ্র নাথ, মুর্শিদা আহমেদ, মুহিব নেছার, বিপুল বড়ুয়া, চন্দন কৃষ্ণ পাল, মানসুর মুজাম্মিল, নাসের মাহমুদ, আহমেদ জসিম, আতিক হেলাল, আবদুল হামিদ মাহবুব, ইমরান পরশ, আদিত্য রুপু, সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী, সব্যসাচী পাহাড়ী, নৃপেন্দ্রলাল দাশ, অবিনাশ আচার্য, সায়েক আহমদ ও অনিন্দ্য বড়ুয়া।


সম্পাদক আহমেদ মোবাশ্বির এর ‘চমক’, ফারুক রহমানের ‘নকশি’, মনির হোসেনের ‘ধাক্কা’, নাজমুল হাসানের ‘ছড়ার ডাক’, জ্যোতির্ময় মল্লিকের ‘কুটুম পাখি’, রুদ্র মুর্শিদের ‘ছন্দ’, মুহাম্মদ নাসির উদ্দিনের ‘ছড়া সাম্প্রতিক’ সহ পাঁপড়, ছড়ার আসর ইত্যাদি আরো বেশ কিছু ছড়া-সাহিত্য বিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছেও। এ মুহূর্তে হাতের কাছে না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও এই সব ম্যাগাজিন নিয়ে আলোচনা করা গেলো না, এটা এ নিবন্ধকারের অনৈচ্ছিক সীমাবদ্ধতা হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে যেগুলো উপস্থাপন করা হলো, তা যে লিটল ম্যাগিয় চিন্তাসূত্রকে পুরোপুরি ধারণ করতে পেরেছে তাও নিশ্চয় করে বলা যাবে না।

তবু ব্যক্তির চিন্তারাজ্যের সার্বভৌমত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার যেমন কোন উপায় থাকে না, তেমনি ব্যক্তিক চিন্তা-বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করারও কোন উপায় নেই। অভিন্ন আদর্শ লালন করেও এই ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য অত্যন্ত বাস্তব ও সতত ক্রিয়াশীল। এটাই সৃষ্টি-স্রোতের অনিবার্যতা। তাই ভিন্নমতের অবকাশ যত বেশি বাধাহীন উন্মুক্ত হবে, সৃষ্টি-বৈচিত্র্যও ততোধিক আকর্ষণীয় মৌলিক ও সুদূরপ্রসারী আশির্বাদ হয়ে আমাদের সমৃদ্ধিকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করে যাবে। তাই ছড়া-সাহিত্যের সৃজনস্রোতে উদ্দীপনা সৃষ্টির জন্যেই এসব লিটল ম্যাগাজিন যত বেশি প্রকাশ হবে ততই সৃষ্টির অনুরণনও আমরা বেশি করে উপলব্ধি করতে পারবো। আর বোদ্ধা পাঠকও ঠিকই খুঁজে নেবেন তাঁর প্রয়োজনীয় লেখাটি।

[Little Magazin on Rhymes/Ranadipam Basu]

[Daily_Naya_Diganta]

No comments: