রণদীপম বসু
...
হঠাৎ করেই সুযোগ হলো বঙ্গভবনে যাওয়ার। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ত্রিসীমানায় আমার মতো নটু-ফটুর প্রবেশাধিকার পাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। মূলত একজন সিনিয়র বন্ধুর সঙ্গি হয়ে যাচ্ছি। পকেটে দুই-মেগাপিক্সেলটা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমার ভাগ্য যে সুপ্রসন্ন হয় না তার প্রমাণ এই ছবি। গাড়ির ভেতর বসেই সামনের দিকে তাক করা। অঝোর বৃষ্টিতে কাজীপাড়া রাস্তার পানি হাটুর মাপ পেরিয়ে উপরের দিকে উঠছে।
প্রথমে কাজ ছিলো দৈনিক ইত্তেফাকে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দোতলার প্যাসেজের দেয়ালে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ম্যুরালটা চোখে পড়লো। দিলাম ক্লিক।
এরপর বঙ্গভবনের দিকে। বৃষ্টি ঝরছেই। সর্বোচ্চ সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে নিশ্চয়ই ছবি-টবি তোলা সম্ভব হবে না। ভাবতে ভাবতেই বঙ্গভবনের গেটে পৌঁছে গেলাম। ভেতরে ঢোকার পাশ নেয়ার ফর্মালিটিজের ফাঁকে আমি গাড়িতে বসেই জানালা দিয়ে গেটের দিকে দুই-মেগাপিক্সেল তাক করে দিলাম ক্লিক। ছবিটা আংশিক এলো, একটু অন্যরকম ভাবে।
গেটের পাশেই কামানের প্রতিকৃতি। ওটা আর দোষ করলো কী ! ছোট বলে অবহেলা করতে নেই। তাকেও অবহেলা করলাম না। সবই কিন্তু গাড়িতে বসে।
বিশাল প্রকাণ্ড রাস্তা। গেটের বিপরীত পাশেই কারুকার্যময় দেয়াল ঘেষে সিঁড়ির মতো দেখতে একটা স্থাপনা চোখে পড়লো। একেতো দুই-মেগাপিক্সেল, তার উপরে রোদ নেই। অপেক্ষমান গাড়ি থেকে জানালা দিয়ে ওটাও এক ক্লিকে ধরলাম।
গেটপাস এসে গেছে। কর্তব্যরত রক্ষীরা বিশাল ফটক হা করে ধরতেই আমাদের গাড়ি ঢুকে গেলো ভেতরে। ঢুকতেই বাঁ-পাশে একটা গম্ভুজ ধরনের ছোট্ট স্থাপনা। কোন এক হযরত খাজা বাবার কবরস্থান। বৃষ্টি আর আলোক-স্বল্পতায় গাড়ির গতিতে খাজাবাবার নামটা ঠিকভাবে পড়া হলো না। কেননা পড়ার চাইতে তখন ক্লিক করাটাকেই অগ্রাধিকার মনে করেছি।
অল্পদূরে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয় কাম বাসভবনের সামনেটা দেখা যাচ্ছে। বেশ বড়ো গোলাকার আয়ল্যান্ডের ফুলবাগানের মাঝখানে ফোয়ারাই হবে, আকাশের দিকে গলা বাড়িয়ে রাখা পাখি বা বকের মনোরম ধাতব ভাস্কর্যটা দেখেই মনটা উলুকঝুলুক করে উঠলো। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তা পাশ কেটে হালকা ডানে বেঁকে এগিয়ে সচিবালয়ের গেট। গাড়ি থেকে নেমে সিঁড়ি বেয়ে উঠে নিরাপত্তারীদের জিম্মায়। চেকিং ও গেটপাশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি রুটিনকর্ম সেরে যথারীতি ভেতরে ঢুকলাম। কাজ সেরে বেরিয়েই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। বৃষ্টি চলছেই। আর কখন এখানে ঢুকার সুযোগ পাই না পাই, একটা আলোকস্মৃতি থাকবে না ! পার্কিং থেকে গাড়িটা স্টার্ট নিয়েছে। তার আগেই আমি বৃষ্টির মধ্যেই ছুটতে লাগলাম ভাস্কর্য-দ্বীপটার দিকে।
বঙ্গভবনকে মুখোমুখি রেখে ক্লিক করলাম। দুই-মেগাপিক্সেল মোবাইল-ক্যামেরায় ওযাইড শট আশা করা বৃথা। ভবনের একাংশ ধরা পড়লো। ওদিকে সেনাপোশাকধারী নিরাপত্তারীরা খেয়াল করলো কিনা কে জানে। আর ছবি তোলা আদৌ নিষেধ কি অবারিত তাও জানি না। পূর্ব অভিজ্ঞতায় ফরেন সার্ভিস একাডেমি গিয়ে ছবি তোলার অনুমতি নিতে গিয়ে গাধার মতো অপরাধী বনে সুযোগ হারানোর রিস্ক অন্তত এক্ষেত্রে নেয়া যায় না। বাকি জীবনে এখানে ঢুকার সুযোগ নাও মিলতে পারে।
গাড়িটা এসে পাশে ব্রেক কষলো। উঠতে উঠতে বঙ্গভবনের সামনের দিকে অর্থাৎ যেদিক দিয়ে ঢুকেছিলাম এবং এখন রেরোচ্ছি, দূর থেকে সেই গেট তাক করে আরেকটা কিক মারলাম। বৃষ্টি ম্যাদা ম্যাদা ছবি উপহার দিয়ে যে ক্ষতিটা করলো, হয়তো উপকারও করলো, ছবি তোলার সুযোগ করে দিয়ে। অথবা এ সবই আমার কষ্ট-কল্পনা। হয়তো ছবি তোলায় কোন বাধা-নিষেধ নেই। আসলে এ ব্যাপারে কিছুই জানি না আমি। কাউকে জিজ্ঞেস করতেও যাই নি- উত্তর যদি নিগেটিভ হয় ! তারচে’ পরে সম্ভাব্য ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটাই খোলা থাক। গেটে এসে গেটপাসগুলো ফেরৎ দিয়ে আমাদের গাড়ি বেরিয়ে গেলো এবং যেতে যেতে আরেকটা ক্লিক।
এবারে চেয়েছি ভেতরে দূরে বঙ্গভবন ফোকাসে রেখে গেটটাকে ধরতে। কিন্তু চলতি গাড়িতে যা হয়- আম নেই, কেবল ছালার একাংশ ! হা হা হা ! গাবর আর কাকে বলে !
...
No comments:
Post a Comment