Wednesday, February 10, 2010

| দুই-মেগাপিক্সেল | একুশে বইমেলা ২০১০ | পর্ব-০৩ |

| দুই-মেগাপিক্সেল | একুশে বইমেলা ২০১০ | পর্ব-০৩ |
-রণদীপম বসু

যে কোনো মেলার ক্ষেত্রেই হয়তো দর্শক হিসেবে প্রথমবার আমাদের একটা মনস্তাত্ত্বিক সঙ্কট তৈরি হয়। অবশ্য এটা কোনো জটিলতা নয়, অত্যন্ত সাধারণ একটা ব্যাপার। আমাদের মানসিক চাওয়া হয়- মেলা থাকবে সুশৃঙ্খল, গোছানো। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, আমাদের মনটাই থাকে সবচাইতে অস্থির, গোলমেলে। কৌতুহল আর আগ্রহের আতিশয্যে আমরা নিজেরাই যেকোনো শৃঙ্খলা মানতে খুব অজান্তেই নারাজ হয়ে যাই। আর এই প্রবণতাটা অতি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বলেই মেলার আয়োজকদেরও নাস্তানাবুদ হয়ে শৃঙ্খলা রক্ষার নানান ফন্দি ফিকির খুঁজতে হয়। আর বইমেলার ক্ষেত্রে তো এটা আমাদের বড় মধুর স্ববিরোধিতা। শৃঙ্খলা মেনে চলার দায়িত্ব সবার ক্ষেত্রে ঠিক রাখা চাই, শুধু আমার জন্যে তা প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়। হা হা হা !


বিক্ষিপ্ত দৃশ্য:
প্রিয় পাঠক, মেলায় যখন ঢুকেই পড়েছি, চলুন উৎক্ষিপ্ত মনে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘোরাঘুরি সেরেই ফেলি !

ছবি ০১-০২:
বাংলা একাডেমীর দক্ষিণ গেট দিয়ে মেলায় ঢুকার রাস্তা। এর এক পার্শ্বের দৃশ্যে শোভা পাচ্ছে ভাষা আন্দোলনের সেই সব দিনগুলোর চিত্র সম্বলিত পোস্টার।

ঠিক অপর পার্শ্বে চলছে বাংলা একাডেমী আয়োজিত মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার নিয়মিত উপস্থাপনা।
.


ছবি ০৩-০৪:
বইমেলার শুরুর দিককার কথা। আমাদের দেশীয় প্রকাশনা জগতের অগ্রজ পুরুষ প্রয়াত চিত্তরঞ্জন সাহা তাঁর মুক্তধারা প্রকাশনীর (স্বাধীনতা পূর্বকালের পুঁথিঘর প্রকাশনী) বইগুলো নিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারির আবেগময় দিনে বাংলা একাডেমী চত্বরে ছালার চট বিছিয়ে যখন নিজেই বসে পড়তেন এক দূরবর্তী স্বপ্নকে পুঁজি করে, তিনি কি ভেবেছিলেন কখনো, তাঁর সেই চটের উপরই আজকের এই বিশাল মেলাটা বাঙালি সংস্কৃতির অত্যাবশ্যকীয় অংশ হয়ে আগামীর আবাহনে এমন ঝলমল করবে !

মুক্তধারা প্রকাশনীর মেলাচলাকালীন অস্থায়ী স্টলটির অপর পার্শ্বেই স্থায়ী স্থাপনা নজরুল মঞ্চ, সারাক্ষণ নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে সরগরম রাখছে মেলাটিকে।
.


ছবি ০৫-০৬:
বাংলা একাডেমীর নির্মানাধীন একুশে ভবনের স্থাপিত ভিত্তিপ্রস্তর।
তার সামনে অদূরেই ঐতিহ্যবাহী বর্ধমান হাউসের লাগোয়া মেলার উদ্দেশ্যে বানানো বৃহদাকৃতির একটি বইয়ের অস্থায়ী প্রতিকৃতি।
.


ছবি ০৭-০৮:
শুধু এবারের মেলাতেই অর্ধশতাধিক চমৎকার মননশীল সব বইয়ের প্রকাশনাসহ বহু বইয়ের গর্বিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বর-কে এই দু’হাজার দশ সালে এসে সিঙ্গেল-স্টলে দেখতে বড়ই বেমানান ঠেকে। যেখানে বেশ কিছু সাধারণ প্রকাশনীও ডাবল-স্টলে পসরা সাজিয়ে বসেছে, সেখানে শুদ্ধস্বরের জন্য এটা খুব অন্যায্য বঞ্চনা তো বটেই। মেলা-কর্তৃপক্ষ এমন যাচাইবিমুখ হলেও পাঠকপ্রিয়তা তা পুষিয়ে দিতে কার্পণ্য করবে না হয়তো।

শুদ্ধস্বরের ঠিক বিপরীতপার্শ্বেই ছোট্ট বারান্দাটিতে উচ্ছল নবীন লিখিয়েদের এমন অকৃত্রিম অন্তর্জালিক আড্ডা গোটা মেলায় আর কোথাও এভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।
.


ছবি ০৯-১০:
শুদ্ধস্বরের সামনেই এটা কি তাৎক্ষণিক টক-শো আয়োজন ! প্রবাসি লেখিকা রানা মেহের এবং দুদেল লেখক মাহবুব লীলেনের দেহভাষা কী বলে ?

আর তা-ই পর্যবেক্ষণে তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠেছে আরেক প্রবাসি লেখক ‘কাঠের সেনাপতি’র তারেক নূরুল হাসান ওরফে কনফুসিয়াসের শিল্পীত চাউনি !
.


ছবি ১১-১২:
প্রবাসি ব্লগার নিঘাত তিথী কাকে কী বলছেন ! ‘লুহার তালা’র লেখক আবু মুস্তাফিজ ওরফে সবুজ বাঘ কি আদৌ ভবে আছেন ? না কি চোখে তালা মেরেছেন !

তবে দর্শনার্থী রূপসী হলে ব্লগার অন্যমনস্ক শরৎ-এর পাপ্পারাজ্জি ক্যামেরার চোখ যে ভীষণ মনস্ক হয়ে ওঠে তা বোধ করি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন আরেক ব্লগার কৌশিক আহমেদ।
.


ছবি ১৩-১৪:
লেখক-কলামিস্টরাও যে দারুণ মডেল হতে পারেন, মঞ্জুরুল হকের ফটোসেশন দেখলে তাতে কি আর সন্দেহ থাকে ! কৌশিক আহমেদও যে কম যান না তা দেখাতে কসুর করলেন না তিনিও।

তবে পরের ছবিতে লেখক-সাংবাদিক মুস্তাফিজ সফি’র কাছে অন্যেরা হয়তো পাত্তাই পাবে না !
.


ছবি ১৫-১৬:
নির্মানাধীন একুশে ভবন সংলগ্ন কবি সুফিয়া কামাল নামাংকিত নির্জন কর্ণারটি দেখে হয়তো মনে হতে পারে বইমেলা এমন জনশূণ্য হয় কী করে ! শিশু-সাহিত্যের কর্ণার হিসেবে স্থান নির্বাচনে মেলা কর্তৃপক্ষের এই বিবেচনাকে কি প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত বলা যায় ?

ঠিক তার সামনেই ক’হাত দূরে শিশু-কিশোরদের প্রিয় পত্রিকা ‘টইটম্বুরে’র মনকাড়া ঝলমলে স্টল।
.


ছবি ১৭-১৮:
আগেরবার যেখানে ছিলো জমজমাট লিটল-ম্যাগাজিন চত্বর, সে জায়গাটাকে এবার সাজানো হয়েছে লেখককুঞ্জ হিসেবে।

আর লেখককুঞ্জের ওপাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে লিটল-ম্যাগ স্টলগুলো। যদিও প্রথাবিরোধী সাহিত্য আন্দোলন হিসেবে লিটল-ম্যাগ স্টলগুলোর পরিসর চাপাতে চাপাতে এমন চাপাই দেয়া হয়েছে যে একটা স্টলের সামনে একজনের বেশি পাঠককে দাঁড়াতে হলে আগেভাগে রীতিমতো একটা মল্লযুদ্ধ সেরে নিতে হবে।
.

বইমেলার সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, মেলায় ঢোকার সাথে সাথেই একজন পাঠকের নিজস্ব রুচিবোধে গড়া সত্তাটা নিমেষেই সার্বভৌমত্ব জারি করে নেয়। তাই একে অন্যের সাথে যতই লেপ্টালেপ্টি থাকুক, ওখানে গেলে নিজ নিজ পছন্দসই ঘোরাঘুরির স্বাধীনতা ভোগ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন সবাই। অতএব, স্বাধীন পাঠক হিসেবে আপনাদেরকে এ মুহূর্তে আর আটকে রাখা আমার জন্যে খুব নিরাপদ হবে না মনে হয়। তাহলে আজকের জন্যে এবার যে যার মতো ইচ্ছেখুশি ছড়িয়ে পড়ি, কী বলেন !

(চলবে…)

পর্ব: [০২][*] [০৪]

No comments: