| কালের স্মৃতিচিহ্ন | ঢাকা: রোজ গার্ডেন |
-রণদীপম বসু
…
দেয়াল ঘেরা বেশ বড় বাগানবাড়ির মাঝখানে চমৎকার কারুকাজ সমৃদ্ধ ধবধবে সাদা জমকালো এক অট্টালিকা, যার নাম ‘রোজ গার্ডেন’ (Rose Garden)। বোঝাই যাচ্ছে এককালে হয়তো গোলাপের বিখ্যাত বাগান ছিলো বাড়িটিকে ঘিরে। এর ছিটেফোটা চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। বাঁধানো পাকা ঘাট সমেত চমৎকার পুকুরটি এখনো মন টানে। অট্টালিকাটি ঘিরে কতকগুলো আকর্ষণীয় মর্মর মূর্তি এই বাড়ি নির্মাতার রুচি ও রসবোধের সাক্ষ্য বহন করছে আজো। বর্তমানে জীর্ণ হলেও বাড়িটির নির্মাণশৈলী এতো মনোহর যে, চোখ ফেরাতেই ইচ্ছে করে না।
-রণদীপম বসু
…
দেয়াল ঘেরা বেশ বড় বাগানবাড়ির মাঝখানে চমৎকার কারুকাজ সমৃদ্ধ ধবধবে সাদা জমকালো এক অট্টালিকা, যার নাম ‘রোজ গার্ডেন’ (Rose Garden)। বোঝাই যাচ্ছে এককালে হয়তো গোলাপের বিখ্যাত বাগান ছিলো বাড়িটিকে ঘিরে। এর ছিটেফোটা চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। বাঁধানো পাকা ঘাট সমেত চমৎকার পুকুরটি এখনো মন টানে। অট্টালিকাটি ঘিরে কতকগুলো আকর্ষণীয় মর্মর মূর্তি এই বাড়ি নির্মাতার রুচি ও রসবোধের সাক্ষ্য বহন করছে আজো। বর্তমানে জীর্ণ হলেও বাড়িটির নির্মাণশৈলী এতো মনোহর যে, চোখ ফেরাতেই ইচ্ছে করে না।
.
.
মজার বিষয় হলো, ঢাকার টিকাটুলি থেকে রামকৃষ্ণ মিশন রোডে অবস্থিত ‘রোজ গার্ডেন’-এ যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলে রিক্সাচালকদের ভাবলেশহীন মুখ দেখে আন্দাজ করতে বেগ পেতে হয় না যে তারা হয়তো ‘রোজ গার্ডেন’ কী চিনে ওঠতে পারে না। যদি বলা হয় হুমায়ুন কবিরের বাড়ি, তৎক্ষণাৎ চিনতে অসুবিধা হয় না একটুও। এ থেকে ধারণা হয়, কবি হুমায়ুন কবিরের সাথে রোজ গার্ডেনের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এই হুমায়ুন কবির হচ্ছেন সেই বিখ্যাত লেখক ও স্কুল-পাঠ্য ‘মেঘনার ঢল’ কবিতার কবি হুমায়ুন কবির, যিনি একাধারে রাজনীতিক ও এককালে বিভিন্ন মেয়াদে ভারতের একাধিক মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। সাম্প্রতিককালের ভারতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেজ হচ্ছেন তাঁরই জামাতা। কিন্তু ‘রোজ গার্ডেন’-এর সাথে হুমায়ুন কবিরের সংশ্লিষ্টতা লোকমুখে প্রচলিত হলেও ঢাকা-কোষগ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত লেখক-গবেষক মুনতাসীর মামুনের ‘ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ গ্রন্থে রোজ গার্ডেন বিষয়ক বর্ণনায় ও তথ্যে হুমায়ুন কবিরের উল্লেখ নেই।
.
.
মুনতাসীর মামুনের বর্ণনা থেকে জানতে পারি, রোজ গার্ডেনের অট্টালিকাটি নির্মাণ করেন হৃষিকেশ দাস। অট্টালিকা সংলগ্ন গোলাপ বাগানটিও তাঁর তৈরি। এ কারণে অট্টালিকা সমেত পুরো বাগানটি খ্যাত হয়ে ওঠে ‘রোজ গার্ডেন’ নামে। উনিশ শতকের শেষের দিকে বলধার জমিদারের বাগান ও বাড়ি (যা বর্তমানে বলধা গার্ডেন নামে পরিচিত) উচ্চবিত্তদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বলধার জমিদার নিজে নাট্যকার ছিলেন এবং তাঁর বাড়িতে নিয়মিত গান বাজনার আসর বসতো। ঢাকার একজন ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে হৃষিকেশ দাস একদিন বলধার এক জলসায় গেলে সেখানে নিম্ন বর্ণের হওয়ায় তাঁকে অপমান করা হয়। এরই ফলশ্রুতিতে একই রকম বাগান ও বাড়ি নির্মাণ করে এর প্রতিশোধ নিতে তিনি দৃঢপ্রতিজ্ঞ হন বলে কাহিনী প্রচলিত আছে। এভাবেই নির্মিত হয় রোজ গার্ডেন, এবং হৃষিকেশ দাস এ বাড়ি ও বাগানেই জলসার আয়োজন করতে লাগলেন। জাঁকজমকের সাথে চলতে গিয়ে তিনি আর ব্যবসায় মনোযোগ দিতে পারলেন না। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই ঋণের কারণে জনৈক কাজী আবদুর রশীদকে ‘রোজ গার্ডেন’ দিয়ে দিতে বাধ্য হন। সত্তর সালের দিকে ‘রোজ গার্ডেন’ লীজ দেয়া হয় ‘বেঙ্গল স্টুডিও’কে। ১৯৮৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ‘রোজ গার্ডেন’কে সংরক্ষিত ভবন বলে ঘোষণা করলেও পর্যাপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থার চিহ্ন চোখে পড়ে না এখনো।
.
.
অমূল্য হেরিটেজ বা প্রত্নসম্পদ হিসেবে যথাযথ সংরক্ষণের ঘাটতি ও অবহেলা যে প্রকারান্তরে ঐতিহ্য সংহারের নামান্তর, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করি এটা ভুলে যাবেন না। আর স্থানীয়ভাবে হুমায়ুন কবিরের বাড়ি হিসেবে পরিচিত এই রোজ গার্ডেনের সাথে তাঁর ঐতিহাসিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও কীভাবে কতটুকু সত্যি, আশা করি কৌতুহলি গবেষকরা নিশ্চয়ই তা খুঁজে বের করবেন।
.
…
( ‘রোজ গার্ডেন’-এর আরো ছবি এখানে )
…[ The Daily Ittefaq - April 2, 2011 ]
...
No comments:
Post a Comment