‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Thursday, February 28, 2008
# প্রথম আকাশ -০১ (কবিতাগুচ্ছ)
রণদীপম বসু’র
কবিতাগুচ্ছ
উঠোন
নারীর নিজস্ব উঠোনে- কোন গাছ নেই-
শিকড়ের ছড়াছড়ি,
গভীর সুষুম্নায় ভেসে নিরন্তর বহমান ক্রোধ
নিবিষ্টে জড়িয়ে রাখে গার্হস্থ্য বৈভব।
নিকানো উঠোনে এলে
পুরুষের উন্মুল সত্তায় বাজে শিকড়ের টান-
বিষণ্ন নদীরা খোঁজে অদেখা জলের ভাড়ার।
নারীর নিজস্ব উঠোনে এলে
পুরুষেরা বৃক্ষ হয় ;
নারী কি তখনো থাকে- শিকড়-বিহীন ? #
(০৭/০৯/২০০৭)
শিকড়-স্বভাব
অমন গাছ-পলীতে অবেলায় যেতে নেই-
রমণীর গন্ধ সেটে উত্তুরে বাতাসে বাজে
পাতার বিষাদ ;
আবিষ্ট মদির আলোয়
ঋতুমতি গাছেরা তখন বৃক্ষশূন্যতায় ভোগে।
এই অবসন্ন বেলায় এসে ঘাতক পুরুষ-চোখ
যদি বা নাড়িয়ে দেয়- ভেঙে দেয়
সুষুপ্তির মগ্ন বিলাপ,
কখনো বাজবে কি ফের
নীল নীল গাছেদের বালিকা-নূপুর ?
এমন ডুবন্ত বেলায় এসে
গাছেদের বয়সও জানতে নেই-
ঘুমোতে যাবার আগে পরস্পর বদলে নেয় এরা
নিজেদের শিকড়-স্বভাব। #
(০৭/০৯/২০০৭)
অহল্যা
ওখানে অহল্যা ছিলো-
দিনের অলক্ষ্যে এসে
শিলাজীবী রাত নাকি নিয়ে গেছে তাঁকে,
মর্মর উত্তুরে হাওয়া
সে কথাই ছড়িয়ে দেয়
গাছেদের কানে-কানে।
ওখানে কি অহল্যাই ছিলো ?
বৃক্ষ-নীল মাছেদের স্বচ্ছ-সজল চোখে
অবিরাম চোখ রেখে
জলজ্যান্ত নদীটাও বিশ্বাস করেনি তা-
জলল শরীরে তার এখনো যে লেগে আছে দাগ!
এটা কার জন্মকোষ্ঠী তবে ?
মাটিরা চিরকাল নিরুত্তর থাকে,
অহল্যা-ই শিখিয়ে গেছে-
মৃত্তিকার গভীরে থাকা পাথরের ভাষা...। #
(০৩/০৯/২০০৭)
[somewherein]
প্রশ্ন
‘তুমি কি তুমি, নাকি অন্য কেউ ?’
সৃষ্টির প্রথম প্রশ্নটি শুনেই
চমকে ওঠি! -
মেয়েটি কি জানলো-
সে ঠিক কী জানতে চাইলো ?
মানুষের প্রশ্নগুলো আদৌ কি প্রশ্ন হয়,
না কি দ্যর্থ উত্তর হয়ে
ইথারে ঘনত্ব বাড়ায় শুধু ?
অথচ উত্তরগুলো
একেকটা প্রশ্নবিদ্ধ জিজ্ঞাসা হয়ে
অবিরাম ঘাঁই মারে
আমাদের কৌতুকময় অস্তিত্বের নড়বড়ে দরমায়।
প্রকৃতই মানুষ কি প্রশ্ন করে কখনো, না উত্তর দেয় ?
এবং এটাও কোন সংগত প্রশ্ন কিনা-
ভাবতে ভাবতে
কেউ কেউ
নিজেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে নেয়- চিরকাল। #
(৩১/০৭/২০০৭)
সেই ডায়েরীটা
যে মেয়েটিকে প্রথম চুমু খেয়েছিলাম-
কেনো যে তাঁর নামটা লিখেছিলাম ডায়েরীতে,
আজ আর মনে নেই ;
প্রেম কি কেউ ডায়েরীতে লিখে !
এতোগুলো খিন্ন বছর পর-
ওল্টাতে ওল্টাতে
এখোন আর ফিরতে পারি না- স্মৃতিতেও।
মনে আসে-
সিদ্ধান্তহীনতার চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে একদিন
হয়তো বা বেছে নিয়েছিলাম এক মায়াবী আত্মহনন ;
কে তোমার ফরমালিন ছোঁয়ায়
নিষ্প্রাণ দেহটা শেষে
অন্য কারো স্পন্দন নিয়ে ঘুরেফিরে আজো ?
ওল্টাতে ওল্টাতে... কী আশ্চর্য,
ডায়েরীর বাদ-পড়া পাতাগুলো
এখনো খালিই আছে !
ওখানে কি লেখার ছিলোনা কিছুই ? #
(১৮/০৮/২০০৭)
[amarblog]
কবি
সম্ভোগে সন্তান চায় কবিই প্রথম, প্রতিবার ;
দিব্যকান্তি সন্তানের বাৎসল্য-লিপ্সায় নেমে
উপগত হতে হতে-
গর্ভধারী দেহলিও ছেড়ে যায় তাকে।
এবং কাম-নগ্ন নির্বোধ মোহের শেষে
নির্বিকার ফেঁসে যায় যে-
কবি কি জন্মাতে পারে সেইসব জন্মচক্র উপেক্ষার
অন্ধ-কাব্য-শোক ?
অবশেষে স্বমেহনে লিপ্ত হন যিনি,
তিনি কোন কবি নন-
জনৈক উজবুক। #
(২০/০৭/২০০৭)
চিহ্ন
প্ল্যাটফরমটা
কী বিশ্রীরকম ফাঁকা !
ট্রেনটা কি আসবে ? নির্জন বেঞ্চিতে বসে
নিরূপায় অপেক্ষার হিলিত প্রহরগুলো
ধরে- বেঁধে,
বানাচ্ছিলাম কবিতাটা ;
অথচ একে অবলীলায় পদ্য বানিয়ে
আচম্বিতে
কোত্থেকে তুমি ছুটে এসে বললে-
‘এ কী করছো! কবিতা কি বানায় কেউ!
যে আসার সে এমনিতেই আসে!’
এবং বুঝে ওঠতে না ওঠতে কিছুই
চলেও গেলে ফের।- কে তুমি ?
কেনই বা এসেছিলে ? এটুকু বলতেই শুধু ?
সম্বিৎ ফিরে চমকে দাঁড়াতেই
ঝুরঝুর পঙক্তিগুলো
ঝরে পড়লো নীচে-
তোমার ফেলে যাওয়া অভব্য চিহ্ন কিছু। #
(১৭/০৮/২০০৭)
[somewherein]
ওখানে কান্নাই ছিলো
মানুষের মতো-
তোমারও
কান্না কেমন,
দেখিনি কখনো ;
কান্নার নামে দেখিয়েছো যা
ওগুলো কান্না ছিলো না!
প্রকৃত কান্নাগুলো- নিভৃতের,
কেউ দেখে না-
আড়াল করা লুকনোটাই চোখে পড়ে ;
এই যেমন
তোমার শুকনো হাসি-
আমি জানি,
ওখানে কান্নাই ছিলো। #
(১১/০৬/২০০৭)
[somewherein]
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment