‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Saturday, March 1, 2008
# ‘খোকার জানালা’-০১ (কিশোর কবিতাগুচ্ছ)
‘খোকার জানালা’- (কিশোর কবিতাগুচ্ছ)
- রণদীপম বসু
স্বপ্ন রাখাল
টুপ করে যেই ঘুম কেটে যায়
ভেসে কি ওঠে ছেলেবেলা ?
আমি তো নই, সেই খোকাটি
দাবড়ে বেড়ায় সারাবেলা
নদীর বুকে।
বউ টুনটুন পাখির ছানার
কান্না কি আর বাজে বুকে
মনটা যে তার মগডালেতে
ভাঙছে বাদাড় মনের সুখে
গন্ধ শুঁকে।
স্বপ্ন-রাখাল যায় উড়িয়ে সন্ধ্যারাঙা ধুলোর ঢেউ
আকাশ গাঙের খেয়ায় চড়ে রঙ ছড়িয়ে যায় যে কেউ
বাড়ির পাশের জামির গাছে কাচের চুঁড়ি বাঁধলো কে
দূর অজানায় বাজলে বাঁশি মন উড়ে যায় কোন লোকে।
স্বপ্নলোকের কল্পপুরে
ডুব দিয়ে ফের ভাসলো কে
রঙ মেখে!
আমি তো নই, সেই খোকাটি
মায়ের কোলে ঘুমায় যে। #
(০৫/১০/২০০৬)
ধরবে খোকন আকাশটায়
আকাশ যেথায় মাঠ ছুঁয়ে যায়
সবাই বলে দিগন্ত
না জানি কি মজাই হতো
যদি খোকন ধরতে পারে
আকাশটার ওই নীলন্ত।
মায়ের চোখের কোন সে ছোঁয়ায়
আকাশ এমন হয় যা নীল !
মেঘপরীদের ডানায় চড়ে
দিনের আকাশ পাড়ি দিতেই
সুয্যিমামা খুব কাহিল।
রাতের আকাশ মন ভরে দেয়
তারার আঁচল বিছিয়ে গায়
চরকা কাটা থামিয়ে বুড়ি
রূপকথার ওই গল্প নিয়ে
ভেসে আসে চাঁদের না’য়।
যেদিন অঝোর বৃষ্টি ঝরে
খোকন সোনার কান্না পায়-
কেন আকাশ কাঁদবে এমন!
যে বকেছে আচ্ছা পাজি
দেবেই আড়ি এক কথায়।
হাত বাড়িয়ে দেখবে ছুঁয়ে
কেমনে আকাশ চোখ টাটায়
এবার ভারী মজাই হবে
দিগন্তের ওই মাঠ পেরিয়ে
খোকন
ধরবে যখন আকাশটায়। #
(২০/১১/২০০৬)
আমার কিছু কষ্ট ছিলো
আমার একটা আকাশ ছিলো
সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
সারা দুপুর উড়ে উড়ে
আকাশটাকে আলতো ছেটে
ভাঁজ করে নিই বুকপকেটে
কেউ জানেনা পকেটে এক স্বপ্ন ছিলো।
আমার কিছু জোছনা ছিলো
সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
জোনাক রাতে ঘুরে ঘুরে
জোছনাগুলো মেখে নিতাম
শরীরটাকে ডুবিয়ে নিতাম
কেউ জানেনা বুকের ভেতর কষ্ট ছিলো।
আমার একটা নদী ছিলো
সবাই যখন ঘুমের পাড়ে
হারিয়ে যেতো চুপিসারে
তখন আমি-
নদীটাকে ঘুম পাড়াতাম
কেউ জানেনা চোখের তারায় বৃষ্টি ছিলো।
আমার কিছু দুঃখ ছিলো
কেউ জানেনা কখন কেমন
দুঃখরা সব বৃষ্টি হয়ে
সবুজ পাতায় ছড়িয়ে গেলো। #
(০৩/১২/২০০৬)
খোকা নদী ও চিল
একদিন
আকাশের চিলটা মেলে দিয়ে ডানা তার
কী যেন সে খুঁজছে
টিপ টিপ চোখ মেলে দেখছে-
ওই নিচে খোকা এক ধুড়ধাড় পাড়ে বসে
ছিপ ফেলে নদীটাকে
খুলছে
নদী চোখ মেলছে, নদী চোখ মেলছে।
কী- যেন খোকা তার বড়শিতে গেঁথে গেঁথে
নদীটাতে ফেলছে
নদীও-তা গিলছে, গিলছে
তারপর
ঝলমলে মাছগুলো
লাফ দিয়ে পাড়ে এসে নাচছে ;
মাছ দেখে চিলটার ুধাটাও
নড়েচড়ে ওঠছে, ওঠছে,
ছোঁ মেরে নেবে কী ?
তার আগে নদীটাই জ্বলজ্বলে চোখ তুলে
নিষেধের ঢেউ ভেঙে টলছে
আর আর
কী যেন সে বলছে।
বাঁক ঘুরে চিল তাই
ভয়ে ভয়ে উড়ে উড়ে চলছে চলছে ;
হঠাৎ কী হলো যেনো
ফিরে দেখে- খোকা কই !
কিছু নাই দূরে অই-
শাদা শাদা কাশবন
বাতাসের ছোঁয়া পেয়ে দুলছে
দুলছে
নিরিবিলি ঘুম নদী
ঢুলছে
ঢুলছে
ঢুলছে। #
(১৬/০৮/২০০৭)
এক দুই তিন
এক ডুব
দুই ডুব
তিন ডুবে দিঘি পার
আমি কি দস্যি খোকা-
আমাকে যায় না রোখা ?
আমি তো মাছের সাথে
ডুবজলে খেলি আর
জলের অতলে খুঁজি জলের পাহাড়।
এক লাফ
দুই লাফ
তিন লাফে মগডাল ;
আমি কি বিচ্ছু খোকা ?
কেউ বলে গাছ পোকা;
গাছেরা মিতালী করে
শাখায় শাখায়
আমি তো স্বপ্ন মাখি
সবুজ পাতায়।
এক বার
দুই বার
তিন বারে একাকার,
বইটাকে মেলে ধরে
মনটা কি থাকে ঘরে?-
আকাশের ঝুলে পড়া
নীলিমার ধার
ওইখানে খেলে বুঝি
ইচ্ছে আমার।
এক দুই তিন
ইচ্ছে-স্বাধীন
ওই দেখ চেয়ে ওই
জলপিপি গাছগুলো
আকাশে বিলীন। #
(০৫/০৯/২০০৭)
কেউ জানেনা
সবাই বলে কষ্ট পেলে
মন হয়ে যায় ভীষণ নীল
আকাশও কি কষ্ট পায় ?
দুষ্টুরা সব পাখির বাসায়
যখন তখন মারলে ঢিল
পাখিরা যায় কোন্ বাসায় ?
কেউ জানে না-
পাখিরা কি আকাশ হয়ে
ডানা মেলে হারিয়ে যায় ?
সবাই বলে দুঃখ পেলে
নদীর বুকটা কালো হয়,
রাতটাও কি দুখি খুব ?
গাছশিশুরা খেলতে গিয়ে
বিকেল ভেঙে সন্ধ্যে হয়
কোন বনে যে দিলে ডুব !
কেউ জানে না-
গাছের সাথে নিঝুম নদী
রাতবিরেতে কী যে কয়।
তন্দ্রাচোখে খোকন সোনা
উড়ে উড়ে মেঘ হবে কি
বৃষ্টি ঝরার অপোয় ?
কী কষ্ট তার বুকের কোণে?-
কল্পকথা বুনে বুনে
আপন মনে গাছ পাখি আর
আকাশ নদীর স্রোত মাখায়-
কেউ জানে না। #
(১৭/১২/২০০৬)
Image from N_C and
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment