Wednesday, March 5, 2008

# থু-ক্কু - ০১ (ছড়াগুচ্ছ)


থু-ক্কু (ছড়াগুচ্ছ)


- রণদীপম বসু






‘রিউমার’


তিনি
কথায় কথায় তত্ত্ব ঝাড়েন
‘ফুঁকো’, ‘দেকার্ত’ ‘হিউম’ আর
ভাঁড়ামোটা অসহ্য তাঁর
এক ফোটা নেই ‘হিউমার’!

তবু
দুর্মুখেরা ছড়ায় কেন
তাঁর নামে এই ‘রিউমার’-
ড্যাবড্যাবিয়ে খোঁজেন নাকি
মেয়েগুলোর ‘টিউমার’!! #

(১৬/০৭/২০০৭


গোলের গোল

‘গোলপাতা লম্বা’
নয় তা অদ্ভুত-
বলে যান ছড়াকার
না-সের মাহমুদ।

পাতা যদি নয় গোল
নামে কেন এতো গোল-
বুঝতে কি হলে তবে
যেতে হবে দক্ষিণ?


হা হা এরা কী কয়
লম্বা কি গোল হয়!


গুল মেরে কবি হবে!
পেরেছে তা কে- কবে?
বলেন খালেক বিন-
সাথে জয়নুদ্দীন। #

(১৫/০১/২০০৮)


হাঁদারামের ছড়া


(এক)

যে গাধাটার দু’কান ধরে
টানছে মেয়ের দলে
সে ‘গাধা’টাই আসল পুরুষ
‘কান’টা টাকার থলে!

(দুই)

হাঁদারাম ছেলেদের এই এক গুন
কখনোই করে না সে হাঁদামুখ চুন,
মোহিনীরা যতো পারে
যে-ভাবে ছিলাক্ তারে
না হয় করুক ফুঁটো দিয়ে ছ্যাকা নুন!

(তিন)

শোনো বাবা’রা
বলতে পারো কি এতিম কারা?-

সংসারে যার নেই নির্ভর
হতাশা দোলায় সারা দিনভর
যতোই তাদের এতিম বলো
আসল এতিম তারা’ই
গার্ল-ফ্রেণ্ড যার সামনে খাড়া
মানিব্যাগে ‘ঝোল-’ নাই! #

(১৬/০৭/২০০৭)



ভুঁড়ি

ভুঁড়িটা তার চলে আগে
কেউ বলে দুই হাত
গজের ফিতায় দেখেন মেপে
এক ফুট আর
ইঞ্চি মাত্র সাত।
বাড়িয়ে বলা লোকের স্বভাব
কাণ্ডজ্ঞানের বড়ই অভাব
এমনি এমনি করেন কি আর
সবার মুণ্ডুপাত!

ইলেকশানে এমপি হবেন
ইচ্ছে আরো মন্ত্রী হবেন
কতো কষ্ট করে যে তাই
বাগিয়েছেন ভুঁড়ি,
জমি জিরাত বাড়ি গাড়ি
ব্যাংক-বীমা-ঋণ টাকার কাঁড়ি
কী ভয়ানক!
ওটায় না কি খুব গোপনে
জমছে ভূরি ভূরি!

এমন কথা ছড়ায় যারা
দেখেই নেবেন এরা কারা-
কাপড় খোলে চামড়া ছিলে
খোড়াবেন কবর,
কিন্তু মনে শান্তি নেই
কানকথা সব ঠিক মেনেই
পড়ে যদি ভুঁড়িটাতেই
দুদকের নজর! #

(৩০/০৯/২০০৭)


অবদান

রাষ্ট্রে আমার অবদানে
আঁৎকে ওঠে যারা
নাদান ওরা মুরতাদ্ই সব,
রাষ্ট্রিয় ফ্ল্যাট বাড়ি এসব
পুরস্কার না পেলে আমি
পাবে কি আর তারা?

পাকজমিনের খেদমতিদের
দিচ্ছে গালাগাল!
নাবালেগ ওই দেশপ্রেমীরা
বুঝবে, আসুক ‘কাল’;
নাপাক এদের ছোঁয়ায় থেকেও
সুরত-মোবারক
কতো কষ্টে রাখছি ধরে
কে বোঝে তার হক!

পাক-ঈমানে বুঝলে মানে
স্বাধীনতা কী-
এত্তোগুলো বছর এতো
ছবক দিয়েছি!
দিলদরদী আল্লাহ্’পাকে
রাখেন মানীর মান-
খাস্ দিলে তাই রাষ্ট্র ঠিকই
বুঝলো অবদান। #

[১৫/০৮/২০০৭] তারিখে দৈনিক ‘সমকাল’র হেড লাইন-‘রাষ্ট্রে অবদানের জন্য জোট সরকারের আমলে মোজাহিদ-নিজামী’কে সরকারি জমি দিয়ে পুরস্কৃত’]


দিনকাল

চারজনে রোজ টেনেটুনে
ভাড়াবাসার সংসারে
এক কেজি চা’ল এক পা’ আটা
তার চেয়ে কি কম সারে?

আধ পোয়া ডাল এক চিমটে মাছ
বেগুন কচু পটলটা
না হলেই নয় আর যা লাগে
বাদ রাখো দুধ আসলটা।

ওষুধ-বড়ি ছেলের পড়া
মেহমানদারী নাই হলো
ছ’কিলো পথ হেঁটেই অফিস
বাস ভাড়া কই পাই বলো?

এই হালে দিন পাড়ি দিয়েও
ছা-পোষা মাস কাবারে
মাইনে করে মশ্কারি আর
পিলে চটকে বাজারে! #

(১৪/০৮/২০০৭)
[amra-bondhu]
...


ইলশে পয়ার!

বর্ষা এলেই বৃষ্টি হবে
এইটারে কি কৃষ্টি কয়?
কৃষ্টি হলো ওটাই, যখন
ইলশেগুড়ি সৃষ্টি হয়।

এইপারে সব ঝরছে গুড়ি
ইলশেরা সব ওইপারে
‘পাচ্ছি তো তাই খাচ্ছি’ বলে
খবর যখন কেউ ছাড়ে।

রফতানি তার বন্ধ হলে
ইলশেগুলো করছে কী?
এইপারে সব বাষ্প হয়ে
ওপার গিয়ে ঝরছে কি?


তবুও ভালো হয় যদি শেষ
ইলশে দিয়ে বৃষ্টিটাও
মাছ কারে কয় যাচ্ছে ভুলে
এই আমাদের দৃষ্টিটাও! #

(২৯/০৭/২০০৭)

[দৈনিক ‘সমকাল’/ ০৪-০৮-২০০৭]


মালগাড়িটা

ভেতরের কলকব্জাগুলো
অকেজো যা অদরকার
ওইগুলো সব তেমনি রেখে
বাইরে পালিশ মলম মেখে
সুরতখানা পাল্টে দিলেই
হয় রে কি আর সংস্কার?

এমন ধারা ভাবছে যারা
তাদের হাঁড়ির খবর নাও
ভূতগুলো সব ওইখানে রয়
ওসব আগে তাড়াও, না হয়
ধেড়ধেড়ে এই মালগাড়িটাও
হবেই শেষে অচল ফাও! #

(১৩/০৮/২০০৭)

[দৈনিক ‘সমকাল’/ ২৫-০৯-২০০৭]



বিফলে মূল্য ফেরৎ

বিফলে তার মূল্য ফেরৎ
গ্যারাণ্টি তার নামে
সেই ভরসায় চান্দুমামা
নিলেন চড়া দামে।

স্বপ্নে পাওয়া তাবিজ নাকি
দারুণ কার্যকর
কার্যসিদ্ধি করেই ছাড়ে
ঝেঁটে শরম ডর।
মামী একটা হবেই এবার
কেমনে ফস্কে আর
জমবে খেলা দেখবে সবাই
আসছে মঙ্গলবার।

দিনটা হলো কৃষ্ণপক্ষের
অমাবস্যা তিথি
এক দমে তা বাঁধতে হবে
এ-ই তাবিজের রীতি।
সুড়সুড়িয়ে না এসে পার
কেমনে পাবে শুনি
চুলের গোড়ায় তাবিজ বাঁধা-
কই যাবি টুনটুনি!


ভেবেই আগাম বিভোর মামা
মনটা যে আঁইটাই
নেড়েচেড়ে ঠিক বুঝেছেন
জিনিস তো এইটাই!
অমাবস্যায় নীরব পাড়া
তিন প্রহরের রাতে
চুপি চুপি বেরোয় মামা
তাবিজ নিয়ে হাতে-


টুনটুনিদের বাড়ির পাঁচিল
টপকে হবেন পার
হ্যাঁচকা টানে কানটা ধরে
লাগালো তোলপাড়

কে? পাড়ার চৌকিদার! #
(০৫/০৭/২০০৭)
[sachalayatan]
[দৈনিক ‘ডেসটিনি’/ ২৮-০৭-২০০৭]

No comments: