‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Monday, March 17, 2008
# ‘খোকার জানালা’-০২ (কিশোর কবিতাগুচ্ছ)
‘খোকার জানালা’- (কিশোর কবিতাগুচ্ছ)
- রণদীপম বসু
জানালা
জানালাটা প্রিয় খুব খোকনের ঘরটায়
মা এসে খুলে দিলে
সোনারোদ খেলা করে প্রতিদিন ভোরটায়;
সাথে নাচে বাতাসের আনচান হিল্লোল
ছায়া ছায়া মাখা ওই
আকাশটা ফুটে থাকে যেন এক নীল ফুল।
ফুলের হাসি দেখলে খোকন
নেচে ওঠে মনটা তার
কিচির মিচির পাখিরা সব
মুখর করে বনবাদাড়।
তাইতো খোকন ইচ্ছে-খুশি
জানালাটায় মুখ বাড়ায়
স্বপ্নগুলো ছবি হয়ে
বুকের ভিতর ঘুম পাড়ায়।
একদিন কেন জানি জানালাটা খোলে না
খোকনের মন ভারি
কেউ বুঝি কেড়ে নিলো ঘুম-ঘুম ঘুম-ঘুম
স্বপ্নের আলোবাড়ি।
ভুললো সে ইশকুল, ভুললো কি সব?
আঁধারের ভেজা চোখে নেই কলরব !
মা- এসে মুখ টিপে
জানালার হুড়কোটা খুলে দিলো যেই
লাফ দিয়ে ওঠে সে-
চোখে ফের হুল্লোড় তাধেই তা ধেই। #
(২০/১২/২০০৬)
খোকার জানালা
খোকার জানালা
সোনারোদ মাখা
মনভোলা এক কবি
রঙ ও রেখায়
মাখামাখি করে
প্রভাতের জলছবি।
সারি সারি গাছ
সবুজ আদর
কুয়াশা আঁচলে ঘেরা
ভোরের পাখিরা
কাকলি ছড়ায়
নেচে ওঠে বাতাসেরা।
খোকার জানালা
ধুলো মাখা পথ
ছুঁইবে নদীর কূল
শিশিরে জড়ানো
দূর্বা-ঘাসের
ফাঁকে ফাঁকে ভেজা ফুল।
ঘুঘু ডাকা মন
কান্ত দুপুরে
ডাক দিয়ে যায় কারে
মুখর বিকেল
ডানপিঠে চোখে
ফিরে আসে বারে বারে।
খোকার জানালা
আলোর ফোয়ারা
ছায়া মাখা ভিটে ঘর
দেয়ালের গায়ে
লুকোচুরি খেলে
খোকনের অন্তর।
অন্তর তলে
আরো এক খোকা
পিটপিটে চোখে যেন
হরেক প্রশ্নের
জানালা খোলে-
‘এটা কেন ওটা কেন।’
খোকার জানালা
মুক্ত আকাশ
রোদে জলে কথা কয়,
একটা জানালা
হাজারটা হয়ে
আকাশেই আঁকা রয়। #
(২১/১২/২০০৬)
গ্রামের কাব্য
‘গ্রাম নিয়ে দশ বাক্য লিখ’-
বাড়ির পড়া নিয়ে
দুর্ভাবনায় পড়লো খোকন রচনায় হাত দিয়ে।
গ্রাম তো হবে গাছগাছালি ফসলি মাঠ
পুকুর ঘেরা ঘর,
শীর্ণ নদী একেবেঁকে ছুটবে তেপান্তর।
কোথায় পাবে তালের সারি দিতে পাড়ি
দূর অজানার পাখা
রাখাল ছেলের স্বপ্নগুলো বাঁশির সুরে মাখা।
সন্ধ্যা আবার কেমন করে রঙ-গোধুলি হয়,
কিন্তু খোকার চোখ দুটো যে
পাশের ফাটের গ্রিলেই বিঁধে রয়;
চোখ ফেরালেই বদ্ধ দেয়াল কানাগলি
আলোর হাহাকার,
জট পাকানো রিকশা গাড়ি মানুষ ফানুস
অসহ্য সব ভেঁপুরই চিৎকার।
দেখেনি সে জোনাকি রাত ফসল কাটা
নবান্নের উৎসব,
বৃষ্টিভেজা নতুন জলে মাছের কলরব।
পাখির গানে মিষ্টি তানে ছড়ায় ছবি এঁকে
মুখস্থ সে গাঁয়ের কাব্য
শিখছে রেখে ঢেকে।
সারি সারি উঁচু উঁচু দালান কোঠার ভীড়ে
আকাশহারা নগর শিশু
গ্রাম নিয়ে দশ বাক্য লিখে গ্রাম কি পাবে ফিরে #
(২২/০১/২০০৭)
আকাশের ইশকুল
জোছনা বুনে রাতটা নাকি
ফোটায় তারার ফুল
একটি রাতের তারা গুনে
সব হয়ে যায় ভুল!
একটি রাতের ফুলতারাদের
মিটিমিটি হাসি
দেখবে নাকি গুনবে তাদের-
হয় না পাশাপাশি;
গুনতে গেলে হয়না দেখা
নামতাগুলো যতই শেখা
মন হয়ে যায় পাখি,
ঘুম-তাড়–য়া ইচ্ছেগুলো
মা’র চোখে দেয় ফাঁকি।
সবাই যখন ঘুমের পাড়ে
খোকন তখন চুপিসারে
আকাশটাকে খুলেই দেখে- একী!
রঙের মাখামাখি !
কে যেন আজ নতুন করে
করলো আঁকাআঁকি।
নতুন রাতের নতুন আকাশ
নতুন দেখার ফুল
নামতা ভুলে খোকন খোঁজে
আকাশের ইশকুল। #
(২৮/০২/২০০৭)
[somewherein]
রোদ বালিকা
আলোর দুপুর উল্টে দিয়ে
আগুন জামা গায়
বোশেখ এলেই রোদ বালিকার দুষ্টু নাচন
তপ্ত নূপুর পায়।
ও বালিকা দুষ্টু কেন,
এই আমাকে তুমি চেন ?
মেঘ ভাইয়ারা আরো ভালো
তোমার মতো নয়
তবুও ভালোবাসি তোমায়-
আর কে এমন হয়!
আমি যখন চুপটি করে
খেলতে চলি ভরদুপুরে
তুমিও না হয় অমনি আমার
খেলার সঙ্গী হয়ো
শুধু, ওই জামাটা পাল্টে তোমার
অন্য জামা নিও।
তখন মা আর বকবে না
যেতে বারণ করবে না
কত্তো খেলা শিখিয়ে দেবো
খেলবে গিয়ে ঘরে,
মেঘ ভাইয়াকেও সঙ্গে এনো
খেলার সাথি করে। #
(২১/০৩/২০০৭)
Images from
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment