‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Monday, March 17, 2008
# ‘খোকার জানালা’-০৩ (কিশোর কবিতাগুচ্ছ)
‘খোকার জানালা’- (কিশোর কবিতাগুচ্ছ)
- রণদীপম বসু
ঝড়ো হাওয়া সঙ্গী হবে
ডাক দেয় কে? ক্রুদ্ধ আকাশ
বদ্ধ বাতাস
কইগো খোকা, জানলা খুলে দাও
কালবোশেখির মত্ত হাতি
খুঁজছে সাথি
দিগবিদিকে বাইবে ঝড়ো নাও।
এ নাও যাবে হাট বাজারে
বন বাদাড়ে
জলে কিংবা ডাঙায় বাধা নেই,
ইচ্ছে হলে মাড়িয়ে যাবে
কে থামাবে ?-
ভেঙেচুরে ঘরবাড়িও পড়বে যেখানেই।
ঝড়ো নায়ের মাল্লা মাঝি
ভীষণ পাজি
কোথাও বুঝি থামতে জানে না,
হবে তুমি সঙ্গী তাদের ?
হবে না ফের-
এমন সুযোগ আর তো পাবে না।
স্বপ্নগুলো থমকে আছে
বুকের মাঝে ?
এবার তবে পাল্লা খুলে দাও
বোশেখ হবে সঙ্গী তোমার,
ঝড়ো হাওয়ার
ইচ্ছেগুলোয় নিজের মতো
রঙ মাখিয়ে নাও। #
(১৬/০৪/২০০৭)
স্বপ্নদিঘি
বুকের ভেতর দুলছে আমার
কোন সে দিঘির ঢেউ,
কেউ কি জানো
মায়ের বারণ না মেনেও
ঝাপ দিলো কি কেউ ?
ঝাঁপ দিয়েছে কোন খোকারা
ডুব সাঁতারে দিনটি সারা
সরল জলের তরল বুকে
এধার ওধার করে
ঝুপুর ঝাপুর ভাঙছে সে জল
দিঘির জলল ঘরে।
ভাঙছে জলের স্বচ্ছ কিনার
ভাঙছে কি তার
মাছরাঙা এ মন ?
আকাশ মাখায় পাখির ছায়া
কাঁপায় সবুজ বন।
সপ্নরঙা মাছের চোখে
মিটিমিটি তারা
আকাশও কি ঝাপ দিয়েছে ?
ইচ্ছেগুলো মুক্ত স্বাধীন
হয়ে পাগলপারা।
কেউ জানে না কেউ জানে না
বুকটা হলো জল-ঠিকানা
কখন কেমন করে
কার ছোঁয়াতে দিঘির বুকে
স্বপ্ন আবীর ঝরে ?
বুকের ভিতর দুলছে দিঘি
দুলছে দিঘির জলে
কেউ কি জানো
মেঘলা হাতে রোদ গুলিয়ে
কে দিলো তার জল ঘুলিয়ে
কে খুঁজে তল হাত বাড়িয়ে
নাম খোঁজারই ছলে
কোন আঁধারের পর্দা ছিঁড়ে
আলোর জোনাক জ্বলে!
দুলছে দিঘি বুকের ভিতর অথৈ কথার
স্বপ্ন ধোয়া জলে
কাজলাও নয় পদ্মও নয়
নাম হারা এই বুকের দিঘি
থাকুক বুকের তলে। #
(২৭/০৪/২০০৭)
মায়ের সঙ্গে আড়ি
কোন কথাই বলবে না
সে মায়ের সঙ্গে আড়ি তার
তাকে সাথে না নিয়ে
কাউকেও না জানিয়ে
অমনি হঠাৎ হারিয়ে গেলো?
আসুক ফিরে মা এবার!
খেতে বললে খাবে না সে,
বসতে বললে লাফাবে
যা ইচ্ছে তা করবে খোকা
যেমন ইচ্ছে দাপাবে।
কারো কথা শুনবে না সে,
খোকা কারো বাধ্য নয়
বুকের ভিতর ঝড়টি হঠাৎ
মেঘের ভারে সিক্ত হয়-
মা কি তবে আসবে না,
খোকা বলে ডাকবে না?
চুপটি করে চাঁদটা ধরে
রাত পরীদের আলো কেড়ে
খোকার চোখে মাখবে না?
ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসির
স্বপ্নছবি আঁকবে না?
বলো আকাশ রাতের তারা
মাকে খোকা খুঁজবে কই?
ভোরের আলোর মিষ্টি পাখি
দাওনা তোমার ডানার মই।
আহা খোকা নীরব খোকা
বুকটা জুড়ে হাহাকার
কে নিয়েছে বুকের নদী
কে ভেঙেছে বুকের পাড়?
ভাল্লাগেনা ফুলের হাসি
সবুজ পাতার নরম মুখ
একটি মুখের হাসি খোকার
সারতে পারে সব অসুখ।
তাই তো খোকা দিব্যি করে-
‘মাগো তুমি একটিবার
কাছে এসে নাওনা কোলে,
মাথা ছুঁয়ে বলছি মাগো
হবো না অবাধ্য আর।’ #
(২৭/০৫/২০০৭)
এক নদীর গল্প
রাত দুপুরে নদীটা কি
হেঁটে আসে জানলাটায়
কি যে কথা বলতে চায়
খোকা তখন মায়ের কোলে
স্বপ্ন নামের আয়না খুলে
ঘুমের নদী বইয়ে যায়।
সাত সকালে বাইরে এসে
ভেজা পায়ের ছাপ দেখে
পায় না ভেবে-
কাল রাতে কি মেঘ ছিলো?
আকাশও তো বলে না তা; একেবেঁকে
নদীর মতো স্বপ্নরেখা
কোথায় গিয়ে ডুব দিলো!
মেঘ-শিশিরের চুপি কথা-
এসছিলো ভাই এসছিলো
কাল রাতে এক নদী এসে
তোমায় ভালোবাসছিলো।
নদীর গল্প জানে না সে-
কেন ভালোবাসতে চায়,
ভাবতে ভাবতে মনটাও এক
অচিন নদী হয়ে যায়! #
(২৬/০৬/২০০৭)
বৌ কথা কয়
ডাকে যখন বৌ কথা কও,
পাখি তো নয়
খুকুর পুতুল- বৌ কথা কয় ;
সে বৌ থাকে খুকুর মনে
সঙ্গোপনে
টুকটুকে লাল স্বপ্ন বুনে
তুলতুলে নীল চোখের কোণে
একটি আকাশ ভাঁজ হয়ে রয়
ওই, আকাশটারে খুঁজে খুঁজে
কথারাই কি পাখি হয় ?
পাখি কথা বলে না,
আমরা কেবল পাখির মুখে
বসাই কথা মনের সুখে
পাখির মুখে না বসালে
আমাদের কি চলে না?
পাখির ঠোঁটে পাখির ভাষায়
মন কি কথা বলে না ? #
(২৭/০৬/২০০৭)
Images from
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment