Friday, March 14, 2008

# অদৃশ্য বাতিঘর-০১ (কবিতাগুচ্ছ)


অদৃশ্য বাতিঘর-০১ (কবিতাগুচ্ছ)

-রণদীপম বসু



অদৃশ্য বাতিঘর


মনে পড়ে সমুদ্রের কথা...
অদৃশ্য বাতিঘর এক পেছনে নিমগ্ন রেখে
পেরিয়েছি ক্ষয়িষ্ণু বিকেল কতো
নোনাজল গায়ে মেখে তরুণী বৃক্ষ এক
দিয়েছিল সঙ্গ কেবল
এঁকেছিল বুকে তার আর কারো মন্থন ব্যথা।

এখনো ভুলে কোন জলাশয় এলে
ইতিউতি খুঁজে ফিরি বিপণ্ন বাতিঘর এক;
অদৃশ্য ক্ষরণ নামে মগ্নতার জলে
হায়, কোথায় সেই বৃক্ষ আজ?

সমুদ্রের কথা মনে পড়ে যায়...। #
(১৯৯৬)
[somewherein]


রূপাবলী


ভেতরে আমার সতেরোশ’ ডাহুক ডাকে
হতে পারে শুধুই সতেরো, অথবা সতেরো হাজার-
এমন নির্জনে এলে যার কথা মনে পড়ে খুব
যে আমার কষ্টের ক্ষরণ মুছে মুছে বাড়ায় কেবল
সেই তো সে রূপাবলী...
চেনা চেনা অক্ষরে এতো যে অচেনা সে-
নাম তার রেখেছিলাম ‘রূপাবলী দে’। #
(১৯৯৬)
[somewherein]
[sachalayatan]


নষ্ট কাব্য


এবং নষ্ট হয়ে গেছি আমি
তোমাদের ভালোবাসার গণ্ডি ছেড়ে কোন এক
অস্থির সীমানায়...
প্রতিজ্ঞা করিনি কোন দিন,
আজো করবো না তাই
তবুও বলছি আমি সত্যিই নষ্ট হয়ে গেছি।

চৈতের কাঠফাটা দুপুরে কোন মায়ের ভেজা গণ্ডে
যে হাতের পরশ জাগিয়ে তুলতো
শরতের নির্মেঘ আকাশ
চোখে শুভ্র কপোত
সে-হাতের স্পর্শে এখন নীরবে ঝরে যায়
যে কোন সুহাসিকা ফুল।
এই সে ক্লান্ত দৃষ্টি জানি না কেমন আমার
অথচ অনায়াসে থেমে যায়
আনমনা যে কোন পাখির গান
শিশুর হাসি... হয়তো কান্নাও;
তবুও হেঁটে যাই দিব্যি আমি
সবার চোখের ওপর দিয়ে
এক কালে যেখানে বেড়াতাম এমনি।

যখন কোন নারী
আমার দিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়
অবাক হই না মোটেও
শুধু বুকের ভেতর জমে ওঠে একটা অচিন বালুরচর-
অসংখ্য তৃষ্ণার্ত পাখিরা খুঁড়ে খুঁড়ে
চুষে নেয়
আশার উন্মাদ স্রোত
এবং কেউ আমার দিকে তাকালে-
অবাক হয়ে তাকালে
নিঃশ্বাসে নিমেষে জন্ম নেয় প্রচণ্ড কালবৈশাখ;
ইচ্ছে হয় চিৎকার করে বলি- দু’হাতে বুক চিরে বলি
এই দেখো এই দেখো নষ্ট আমি
কেমোন নষ্ট হয়ে গেছি!
অথচ নিশ্চল সমাধিস্থ সাধকের মতো
হয়তো তখন নিরেট স্বগতোক্তিই বেরিয়ে আসে-
আমি নষ্ট হয়ে গেছি
শুধু তোমরা ভালো থাকবে বলেই... #
(১৯৮৫)
[somewherein]


বৃক্ষ সংলাপ

- আচ্ছা, বলতে পারো
এরকম মাতাল জ্যোৎস্নায় চাঁদেরা উচ্ছল হলে
বৃক্ষেরা এতো বেশী নুয়ে পড়ে কেনো?
- বৃক্ষরমণীর বুকে রাতেরা সরব হয়, তাই
- বুঝতে পারি না যে...
- তুমি তো বৃক্ষ নও
- তবে তুমি কী?
- আমি যে আর জন্মে বৃক্ষই ছিলাম
- তুমি জন্মান্তরে বিশ্বাস করো!
- একটা জীবন মানে অসংখ্য জন্মের ফল
- হেঁয়ালি করছো?
- মানুষের মন হেঁয়ালির বিমূর্ত পিণ্ড এক
নিরন্তর ডুব দেয় ভেসে উঠে-
আবার ডুবে যায়...
- বুঝিয়ে বলো
- গর্ভিণী রাতের কাছে জানতে নেই স্বচ্ছতার নাম
- আহা, আমি যদি
চন্দ্রাতপ বৃক্ষ হতে পারতাম!
- তুমি হবে বোধিবৃক্ষ
অথবা জননী গাছ...
- তারপর...
- কোন এক ভয়াল রাতের উদ্ভ্রান্ত ঝড়ে
তুমিও মাতাল হবে...
- দ্যাখো, কেমোন শিরশির করছে আমার!
- শিকড়হারা বৃক্ষপুরুষ এক সোহাগের লাল চিহ্ন
এঁকে দেবে দুর্দান্ত আঘাতে...
- আমার ভয় করছে!...
- তোমার অস্থির শীৎকারে জেগে উঠবে রাত,
চাঁদেরা গলে যাবে, থেমে যাবে
নিশাচর প্রাণীদের তাবৎ চিৎকার...
- চুপ করো তুমি
- জীবনের স্রোত কখনো থামে না আর...
- আমার কান্না আসছে!
- এটাই জীবন...!! #
(১৬/১০/২০০৩)
[sachalayatan]


সমান্তরাল

পাখিরা ঘুমাবে বলে
আকাশকে বলেছিলো যেনো না গুটায় বুক,
জেগেছিলো আকাশেরা রাতভর
বুকের দরোজা খুলে।

মাটির পাঁজর ছুঁয়ে বৃক্ষেরা বলেছিলো
স্বপ্ন-দ্বৈরথে যাবে,
চাঁদনীর শীৎকারে প্রবল সাগর-বুক থর থর
সারা রাত মাটি তাই কেঁদেছিলো
শিকড়-সংগমে খুব।

অথচ এ কাতর উন্মুক্ত বুকে
যখোনি চেয়েছি আমি তোমাকেই বিঁধে নিতে খুব
তখোনি গিয়েছো সরে বারে বারে
কুয়াশার হিম জলে আমাকে একাকী ফেলে
একান্ত নিশ্চুপ... ...! #
(১৭/১০/২০০৩)

No comments: