Friday, March 14, 2008

# মায়াবী জলের খেলায়-০১ (কবিতাগুচ্ছ)


মায়াবী জলের খেলায়-০১ (কবিতাগুচ্ছ)

-রণদীপম বসু


যেখানে লজ্জারা


তোমাকে যা দিতে পারি
আড়ালবিহীন এ লোকালয়ে তা
বেমানান খুবই;
তার চেয়ে চলো যাই
সেই সে অরণ্যের কাছে-
আশরীর মন মোহ ঢেলে দেবো সব,
যেখানে লজ্জারা এখনো অচেনা ভীষণ!

তুমি কি নেবে তা? #
R_d_B


আচ্ছন্ন অবয়ব

মুগ্ধ শরীরে এই ললিত অন্ধকার মেখে
কতোটা অদৃশ্য হবে?
বৈরী দেহেই তোমার সংগুপ্ত মন্ত্রের স্বর
থেকে থেকে বেজে ওঠে দীপ্যমান সুরে-
কোথায় লুকোবে বলো!
আলেয়ার সাথে যেটুকু জীবনপাত-
না পাওয়ার ক্ষতচিহ্ন বুকে
উৎকীর্ণ হয়েই আছে স্পর্শতার মোহাচ্ছন্ন শোক।

আজ শুধু শরীরে শরীর মেখে বিলীন হবার কাল
মুছে যাবে অবয়ব সব-
দ্রবীত জীবনের নাব্যতার স্রোতে;
চলো না মুছে যাই, সব কিছু মুছে মুছে-
মুছে মুছে সব।
(০৬/০২/২০০৫)


বৃষ্টির গল্প

বৃষ্টিরা ভীষণ গল্পের পোকা;
মেঘের সঙ্গত পেলে তো কথাই নেই-
সব কিছু ছেড়েছুড়ে বুঁদ হয়ে বসে
ঠিক নিজেরাই হয়ে ওঠে নির্ঘাৎ গল্প একেক।

আকাশের উঠোনে যেদিন কথক বজ্রেরা এলো
সারা বাড়ি রোল উঠলো-
‘আসর হবে আজ, অবিরল গল্পের আসর!’
ঈশাণ বারান্দা জুড়ে কাজল মাদুর পেতে
বসে পড়লো উৎকর্ণ শ্রোতারা সব।
তারপর রাতভর
মেঘের সঙ্গতে বোনা একটানা বৃষ্টির গল্প।

রাত শেষে যারা নাকি চলেই যাবে
খিড়কীর আড়ালে থেকে সেইসব জ্যোৎস্না রমণীরা
হয়তো বা ফেলে গেছে দীঘল নিশ্বাস কতো-
আরেকটি মোহন রাত
এভাবেই হয়ে গেলো অনাহুত গল্পের খোরাক!

মেঘেরা জানলো না-
কিছু গল্প আর কখনোই গল্প হবে না,
বৃষ্টি হয়েই ঝরে গেছে সব। #
(২৫/১০/২০০৫)


কবিতা, অনঙ্গ শরীরী নদী

(এক)
কাব্যের দেহলি ভেঙে
অক্ষরের মর্মর গায়ে
মেলে কি পঙক্তির প্রাণ?
নির্বান্ধব শব্দেরাই
ধরে রাখে মৈথুনের ঘ্রাণ।

(দুই)
নদীরা যৌবনা হলে সারা গায়ে
রমণীয় জলের গন্ধ ছড়ায;
কবিতাও তাই।
শব্দের প্রতিরূপে নদীই দাঁড়ায় এসে
প্রিয়তার চোখে-
এবং তখনি মনে হয়
অনঙ্গ-শরীরী নদী কেবলি জরায়ুময়। #
(৩১/১০/২০০৫)


শুদ্ধতম মুহূর্ত

কাব্যের জরায়ু ছেনে
যদি না স্নাতই হলো পঙক্তির জলে
মোহন সংলাপ ছেড়ে
ফিরে তো যাবেই সে ঘাতক প্রেমিক;
মুখর চুম্বনে আর ঝরবে না কবিতার ঘ্রাণ।

কষ্টের নোনাজলে ভিজে
ভিজে এমন একান্ত পঙক্তির খোঁজে
বোধের ভেতরে এক অবোধ্য পাথর
মাঝেমধ্যেই নড়ে ওঠে অবাধ্য তৃষ্ণায়।
আত্মঘাতি প্রেমিকের মন
কতোটা দুর্বোধ্য হলে
অনঙ্গ তৃষ্ণারা খোঁজে স্বচ্ছতার জল?

প্রকরণ জানা নেই-
তবু কাব্যের নাব্যতায় ভেসে
সুলুক-সন্ধানী চোখ
অপেক্ষার ছিপ ফেলে বসে থাকে
শুদ্ধতম মুহূর্তের আশায়।

কী সে মুহূর্ত!- কাছে এলে
আত্মঘাতি হয়ে ওঠে
ঘাতক প্রেমিক সব
অদ্ভুত অনায়াসে খুব! #
(০৫/১১/২০০৫)

No comments: