Thursday, May 1, 2008

# জলের অক্ষরে - ০৩ (কবিতাগুচ্ছ)








জলের অক্ষরে - (০৩)
-রণদীপম বসু



কবিরা ঘুমায় না

মানুষ ঘুমিয়ে গেলে জেগে ওঠে পৃথিবী,
কবিরা ঘুমায় না-
যখন নিদ্রিত থাকে,
তখনো সে অধিক সজাগ।

ওই যে কোলাহল, চারদিকে,
ওগুলো মানুষের ; সাথে কিছু যন্ত্রের হুঙ্কার
আর পৃথিবীর পাঁজর-ভাঙা ল্যাপ্টানো আর্তনাদ-

মানুষের সঙ্গ পেলে প্রকৃতিও অস্থির হয় !

ঘুমের অঘোরে ডুবে এতোসব ঘুমহীন কোলাহল নিয়ে
কবিরা ঘুমাতে পারে না-

মানুষের পৃথিবীতে
কবিরা ঘুমায় না কখনো।
(২৯/০৪/২০০৮)
[sachalayatan]


নক্ষত্রে আদিম স্রোত

চোখের ক্যাপসুলে ব্ল্যাকহোল ! ওটা কি পৃথিবীর ঘ্রাণ ?
সীমাহীন কসমিক জোনে পাখির আকাশ নেই,
শর্ত শিথিল করো-
অজ্ঞাত সময়-রেখায় উড়ে যাই চলো ;
সন্তাপের পাখিরা উন্মুক্ত হলে
ডিজিটাল আকাশে মিশে
ওগুলো পাখিও থাকবে না।
পড়ে থাকা খড়-কুটো ধরে স্মৃতির কাতর হবে ?
সাইবার যুগে বাতিল জঞ্জাল সব,
নাক্ষত্রিক শূন্যপথে কোথায় খুঁজবে !

পৃথিবী নামের যে গ্রহ, তুমিও অবশিষ্ট এর ;
গণিতের সূত্রটাকে পুরনো রেখে
ভাগশেষ না হয় কিছু রেখেই দিলে-
নিবিড় চুম্বনে টেনে রক্তের সিঞ্চন পেলে
কসমিক-মানবের রক্তনীল দেহে
হয়তোবা খেলে যাবে লাল লাল পার্থিব বাতাস !

শর্ত শিথিল করো
টেকনো-শরীরে মুড়ে যেটুকু দেহের বাকি
তাকে আজ রূপকথা শোনাও- যখন
বহুকাল চলে গেলেও তুখোড় প্রণয়-পর্বে
পৃথিবীটা অস্থির ছিলো
শুধু শুধু রক্তপাত ভিজে ওঠা আদিম স্রোতে ;
এলোমেলো হিসেবের ভুলে ভরা পাণ্ডুলিপি জুড়ে
ওখানে অদ্ভুত এক মায়াবী রহস্যও ছিলো-
প্রেম !
(২৯/০৪/২০০৮)
R_d_B


দুপুরের পদ্য

কবিতাকে খুঁজতে গিয়ে
এলোচুলে যাকেই পেয়েছি
দৌঁড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছি ঠায়, মুখোমুখি ;
সদ্য-উন্মাদ ভেবে পাশ কেটে গেছে,
কেউ কেউ বসিয়েছে ঘৃণার থাপ্পড়।
কবিতা কি এলোকেশি নয় !

তনুলতা দেহলীর খাঁজে
ক্ষীণকটি সাগরের তুমুল ঢেউয়ের স্রোতে
একে একে দিয়ে গেছি অবাধ্য নির্বোধ ঝাঁপ-
তীব্র-ক্ষার নোনাজলে রয়ে গেছে শেষতক
জলেরই অভাব।
ঢেউ-ভাঙা বুকে বুকে
কবিতা কি ক্ষীণকটি কায়াদেহি নয় !

তুখোড় বৃক্ষের মতো পল্লবিত সবুজের মোহে
আকাশকে বেঁধে রাখা উন্মনা চোখে
যতই রেখেছি চোখ-
গনগনে দুপুরের লাভা-ঢালা রোদ
বুকের জমিনটাকে পুড়ে পুড়ে করে গেছে
নিদাঘ বৈশাখ।
আকাশে-বৃক্ষে মাখা কবিতা কি স্বপ্নজীবী নয় !

খলবলে জ্যোৎস্নায় হেঁটে যাওয়া ছায়াদের ভীড়ে
কী করে বুঝবো আর
ঈষৎ কটাক্ষ ছুঁড়ে ওই দূরে চলে গেছে কে ?
বিদ্রূপ-স্পৃষ্টতায় জেনে যাই-
কবিতাকে চেনে না কেউ।
তবু বলে যাই জনে জনে চিৎকার করে
কবিতা আমার সেই অদেখা প্রেয়সীর নাম !

নিজে এসে না দেয় ঠিকানা যদি
কীভাবে খুঁজবো তাঁকে, কোথায় ?
R_d_B

(০১/০৫/২০০৮)


অনুলিপি

যে যাই বলুক, আমি জানি
এটা কোন কবিতা নয়।
প্রকৃতই, কবিতা কি লেখা যায় ?
লিখবো বলে কতো অক্ষর-মুহূর্তের গায়ে
সময়ের পলি মেখে গুঁড়িয়েছি অনুভব-
শ্যাওলায় ভরে গেছে বুক !

চাঁদের বিষণ্ন হাতে লুকানো জ্যোৎস্নার খোঁজে
যে পাখি উড়ে গেছে প্রথম সন্ধ্যায়-
বিস্মৃতির নদীটাকে বাঁয়ে রেখে যেতে যেতে
তাকেও পাইনি আর !
কার জন্যে এই ফেরার পসরা সাজাই ?

প্রণয়ের গন্ধ পেলে গাছেরা সরব হয়-
মুখর বৃক্ষের খোঁজে শৈশবের ঘুড়িটাতে
জলের বাঁধনে এটে সেটেছি জলল চোখ,
দৃশ্যের আকাশে উড়ে ঘুড়িটাও আজো সেই
উড়ছে তো উড়ছেই !
উড়ার ঠিকানা পেলে মাটিতে কি নামে না কেউ ?
কার জন্যে এই অপেক্ষা আমার ?

অনুবাদও নয়-
অনুলিপি করে করে এমন গার্হস্থ্য-জীবন !
ভালোবেসে কাছে না এলে
কবিতা কি লেখা হয় আদৌ ?
নাভির সমান দৈর্ঘ্যে পরিচয় চিহ্নিত বলে
মানুষের ঠিকানা আজো আদিম শেকড়।
কবিতাই এলো না যদি
কার জন্যে এই কাব্যহীন জীবন যাপন ?

কবিতা লেখা যায় না !
মানুষ কি লেখা যায় ?
(২৮/০৪/২০০৮)
R_d_B


ম্যাডোনা

ভাস্কর্য দেখে না কেউ ; দেখে তার ভাস্কর্য-শরীর।
ম্যাডোনার প্রথম মডেল হয়েছিলো যে,
সে কি নির্বোধ ছিলো,
না কি মা হয়ে বসে থাকা দুরন্ত রমণী কোনো ?
চোখের মন্ত্রের ভাষা আদৌ বোঝে না সে-
শিল্পী কি নপুংষক হয় ? না কি মাতৃহন্থা !

ম্যাডোনার প্রথম মডেল হতে এসেছিলো যে,
সত্যি কি মা হতেই এসেছিলো ?
না কি শিল্পের আত্ম-হন্তারিকা !

ভাস্কর্য দেখে না কেউ ; দেখে তার ভাস্কর্য-শরীর !
(০৬/০৫/২০০৮)

No comments: