Friday, April 18, 2008

# থুক্কু - ০৩ (ছড়াগুচ্ছ)




থুক্কু - ০৩ (ছড়াগুচ্ছ)
-রণদীপম বসু





চেক-আপ

মাথাটা সুস্থ কি ? নিশ্চিত ভাবনায় -
বৈশাখে চলো যাই ঘুরে আসি পাবনায়।
বিল ঝিল মাছ দই মন্ডাটা নামী তার
যতো পারো ডুবে খাও
নিয়ে যাবে ? হবে তাও
সাথে শুধু নিতে হবে ইয়া এক দামী ‘কার’।

তবে ভাই যাই বলো, কেন নাম ডাক তার
জানো কি ?
আছে নাকি ওখানেই বড় বড় ডাক্তার।
তাও এরা যে-সে নয়,
মুখ দেখে চিনে লয়
ক’টা তার ছিঁড়ে গেছে, ক’টা ঠিকঠাক তার
অতএব;
রোগীটার দরকার কতটুকু ধাক্কার।

পথে ঘাটে হাঁটি কতো আদমের চেহারায়
কে-যে কোন্ ধান্দায়! কে হারে, কে হারায়
জানো কি ?
যাকে জানো সুস্থ
ভেতরে কী পোষতো
জানো কি ?
মাথাটার হাড়িটায় টোকা দিয়ে দেখো না!
জোড়াজাড়া আছে ঠিক ? সন্দেহ রেখো না।

তার চেয়ে চলো যাই ঘুরে আসি পাবনা
যার যতো ব্যাক-আপ
করে আসি চেক-আপ
বছরটা ভালো যাক্ তা কি কেউ চাব না ?
(০৮/০৪/২০০৮)
[sachalayatan]
[khabor.com]
[sa7rong]


কাজের কথা,বিশটি


এলোমেলো বিষ্টি
সংক্ষেপে বলি কথা
মাত্র বিশটি।

প্রথমে বলবো যা
কেউ বলে বাজে সব
হক কথা একটাই
বাকি সব বাজে রব।

কোন্ কথা হক কথা
ঠিক করে কোন্ জন
মুরগী না ডিম আগে
কোনটা যে মূলধন।

তার চেয়ে ভালো হয়
ঘোড়া নিয়ে চিন্তা
কদমে ছুটাও ঘোড়া
বেজে যাক্ ধিন তা।

কথা যদি ঘোড়া হয়
এসে যাবে ডিমটাও
কোনটা আসল হবে
কোনটা যে হবে ফাও।

তার চেয়ে ভালো হয়
চুপ করে চেয়ে রই
কী হবে বোবার মুখে
ফুটিয়ে কথার খই!

গুরগুর কথা-মেঘে
এলোমেলো বিষ্টি
একটাও বলবো না
কথা ছিলো বিশটি।
(০৭/০২/২০০৮)
[sachalayatan]


আয়না

দেখতে যে যায়, চমকে ওঠে- এই চেহারা কার !
কোত্থেকে এক আয়না এলো বিদঘুটে কারবার !
করিম সাহেব আঁৎকে ওঠেন ছাগল বিম্ব দেখে,
নাকের আগায় শিং দেখে কি অবশেষে
বসলো হোসেন বেঁকে -
এই ছবিই আমার ?
থলথলে এই ঝুল-চামড়ায় আমি কি গণ্ডার !

আহারে তুই থাম্ না হোসেন, মীম’কে দেখতে দে-
দুই-মুখো এক সাপ দেখে মীম ফিচকে ওঠে কেঁদে।
যদুটাকে জানতো গাধা সবাই মোটামুটি
তাই বলে কি
শেয়ালমুখো টম’কে দেখে হেসেই কুটি কুটি !

আঙুল দিয়ে দেখায় যদু আয়নাটার এক কোণে
চেয়ারটাতে গা এলিয়ে
ধবধবে এক সাহেব গাধা কান তোলে কী শোনে !
আরে আরে ! এ তো দেখি হেড কেরাণি বসের পিএ
খাশ পেয়ারা লোক
নিমেষে যে মারতে পারে রাজা উজির অথবা যেই হোক !

পাশ দিয়ে কোন্ বলদ গেলো, হেলেদুলে,
শিং দুটো তার কই !
কোথাও কি ফের গোল বেঁধেছে
ভুল ঠিকানায় গুঁতো দিয়ে বাঁধালো হৈ চৈ ?
কী দেখতে কী দেখছে সবাই চমকে ওঠে ভুতও
আয়নাটার এই তেলেসমাতির খবর ছড়ায় দ্রুত।

দলে দলে আসলো ছুটে উজির নাজির বরপেয়াদা সব
অফিসটা কি আজব খোয়াড় ভুতুরে উৎসব !
কোথায় গেলো দুবৃত্তটা, আনো ধরে ! রাজার দূতে কয়-
ছুঁড়ে ফেলো এক্ষুণি তা
নইলে ওটা
গুড়িয়ে দেবে শৃঙ্খলা সব ডুবাবে নিশ্চয় !

এই না ভেবে-
আছড়ে দিতে আয়নাটাকে দু’হাত দিয়ে তুলে
অবাক হয়ে দেখলো সবাই
এ কী আজব ছবিরে ভাই-
ইয়া বড় কুষ্মাণ্ড এক বোঁটার নীচে ঝুলে!
(১১-০২-২০০৯)
[sachalayatan]



আব্রু

দামটা যতই চড়ুক ঈদে পার্বণে
ধাম করে আর যাবেন কোথায় কার বনে !
ঘাম ঝরিয়ে যেতেই হবে মার্কেটে
জানবেনও না- বসে আছেন কার পেটে !

ঘুরবে মাথা ভনভনভন
তাইলে এখন...!

লজ্জা ঢাকার পোশাক কেনার ভেট ধরে
দানা-পানিই না পান যদি পেট ভরে
লাভ কী তবে !
তার চেয়ে কি এই ভালো নয়, দিলাম সালাম ওয়ালাইকুম-
পোশাক তোমায় দিলাম বাদ
দিগম্বরই জিন্দাবাদ,
সমস্যা নেই !
হাঁটুন সোজা পথ ধরেই,
কে তাকাবে !
আঁৎকে ওঠে লজ্জা পেয়ে উল্টো সবাই ছুটবে ধুম !

হাহ্ হাহ্ হা ! এক ঢিলে দুই পাখি মারা, দারুণ নয় !
বাঁচবে টাকা, আব্রুটাও রক্ষা হয় !!
(১৩/০৪/২০০৯)
[sachalayatan]


কারা এতো চিল্লায়..!
-রণদীপম বসু

ইহা জ্ঞানী পোস্ট নয়। নিতান্তই অগভীর ক্ষুদ্র একটা না-ছড়া।
এই কয়েক লাখ পাবলিক মরে গেলেও রাষ্ট্রের কিছু যায় আসে না, একটা লোমও খসে পড়বে না। তবে মন্ত্রী বাহাদুরদের কিঞ্চিৎ গলা শুকালেও রাষ্ট্রের অনেক কিছুই যায় আসে। তাই মন্ত্রী বাঁচলে দেশ বাঁচবে- এই অনুসিদ্ধান্তে যারা একমত হবেন তারা এই পোস্টের ভেতরে ঢুকতে পারেন। যারা এই প্রতিপাদ্যে বিশ্বাসী নন, তার নিজ দায়িত্বে পোস্টে ঢুকুন। অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য নিজে ছাড়া অন্য কাউকে দায়ী করা যাবে না।


পাবলিক পাজি খুব, শুধু সমালোচনা
মন্ত্রীরা যন্ত্র কি ? মুখ পেট আছে না !
তাদেরও তো ক্ষুধা পায়, মন চায় কতো কী !
মন্ত্রী হয়েছে বলে বন্ধ ওসব কি ?

চামড়ার মুখ দিয়ে নিন্দুক পাবলিক
বলবেই কতো কথা, তা কি শুনা হবে ঠিক ?
মন্ত্রী না বাঁচে যদি দেশ যাবে গোল্লায়
এইসব না বুঝে কারা এতো চিল্লায় !

বিদ্যুৎ গ্যাস চাও ? দেশ জুড়ে কাজ চাও ?
নাকি আর কিছু চাও ?
হয়ে যাবে সবকিছু, ছড়াবেই রোশনা
ফালতু প্যাঁচাল ছেড়ে পাবলিক অফ যাও,
শুধু তাড়াতাড়ি দাও
মন্ত্রীর বেতনের বৃদ্ধির ঘোষণা !
(০৬-০৪-২০১০)


| এবার দেখি কওতো বাপু !
-রণদীপম বসু

[শিল্পীরা এমনি এমনি নমস্য হন না ! ইন্টারনেট থেকে আহরিত ও ব্যবহৃত যে ভাস্কর্য-ছবিটা দেখছেন এখানে, ভাবতেই অবাক হই, আমার বর্তমান অবস্থাটা শিল্পী আগেভাগে বুঝলেন কী করে ! বিদ্যুৎ সমাচার নিয়ে আমার কোন কথা নাই। কেবল আরেকজন নমস্য ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানাতেই এবারের না-ছড়াটার জন্ম। সেই মহাজন ব্যক্তির প্রচারিত বাণীটিকে স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান করছি। তিনি নাকি ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুতের আসা-যাওয়া নিয়ে পাবলিকের মুখপ্যাদানি খেয়ে প্রচারযন্ত্রে শ্রীমুখ প্রদর্শন করে বলেছিলেন- এখন থেকে বিদ্যুৎ যাবে একনাগাড়ে দু'ঘণ্টার জন্য, তাহলে আর কেউ বলতে পারবে না যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যায়।  আহা, কী অমৃত বচন ! তাঁর সাথে বিদ্যুৎও বুঝি অগস্ত্যযাত্রায় গেছে ! সত্যি কি এমন কথা বলেছিলেন কেউ !]

ঠা ঠা রোদে দৌঁড়ে এসে  ফ্যানের তলে বসবো যেই
একটু আগেই ঘুরছিলো তা, এখন নাকি বিদ্যুৎ নেই !

বাইরে আগুন ভিত্রে আগুন  আগুন মাথার চান্দিটায়
দিনের আজাব কী বলবো আর ! সিদ্ধ বানায় রাত তিনটায় !

আগে না হয় ঘণ্টা মেপে  গেলেও তিনি আসতেন ঠিক
হুজুররা কি বেঠিক করেন ! বুঝলো না ভুদাই পাবলিক !

ঘণ্টায় ঘণ্টায় আসা যাওয়ার শৃঙ্খলা যার পোষায় নাই
বুঝো এখন ঠেলার মজা ! পালাইবা কই ! উপায় নাই !

এলে না হয় যাওয়ার হিসাব ! কিন্তু কী কার পড়ছে দায় !
এবার দেখি কওতো বাপু- ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যায় !?
(০৫-০৪-২০১০)

No comments: