‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Friday, April 18, 2008
# থুক্কু - ০২ (ছড়াগুচ্ছ)
থুক্কু - ০২ (ছড়াগুচ্ছ)
- রণদীপম বসু
দুই বাবা
অদ্ভুতুরে কাণ্ডটা যে
ঘটেই গেলো শেষে
মেয়েটা কি হয়েই গেলো
ছেলেই অবশেষে!
হরমোনেরই কারসাজি তা
গবেষণায় এলো
ঘটতে পারে উল্টোটাও
হলেই এলোমেলো!
মেয়েটা যে ছেলে হলো
সমস্যা তা নয়
আর যা কিছু সামলানো যায়,
গোঁফ-দাড়িতেই ভয়!
মা’টা এমন বাবার ধাচে
বদলে যাবার পর
ভাবুন দেখি-
বাচ্চাগুলোর দশাটা কী?
দু’টো বাবা’র ঘর! #
(০২/০৭/২০০৭)
হাজী বকর
সাতসকালে বের হবো যেই
ধরলে আবু বক্করে
কপালটা কি সত্যি খারাপ
দিন যাবে বক্ বক্ করে?
বসের ঝাড়ি পড়লে মনে
বুকটা ওঠে ধক্ করে
অফিস কি আর শ্বশুরবাড়ি-
রাখবে কে অদক্ষরে?
কেটে পড়ার সুযোগ পেতে
ফাঁক খোঁজা সার চক্করে
কিন্তু বকর মৌজে ভারি
সাফল্য চক্ চক্ করে!
ব্যবসা ছিলো সেদিনও তার
পুরান লোহার লক্করে
এখন ‘তিনি’ হাজী বকর
টয়োটা কার লক্ করে।
দেখলে তারেই পিত্তি জ্বলে
হাসলে সে ফক্ ফক্ করে
কেমনে পালাই, পড়েছি যে
ধান্ধাবাজীর ফক্করে! #
(২৫/০৬/২০০৭)
sachalayatan
ন্যাংটা ছড়া
দুশ্শালা এই জীবনটারে
লাত্থি মারি পাছায়
যে দিকে চাই উল্টো মানুষ
সুড়সুড়িয়ে ঢুকছে দেখো
শূকর গরুর খাঁচায়,
আমিও শালা ভণ্ড-ফকির
ভাগ না পেয়ে গোস্ত রুটির
নিজের কানা উদলা রেখে
টান মারি কার কাছায়!
উটকো জীবন দারুণ জীবন
কে যে কারে নাচায়
আহা মানুষ উল্টো মানুষ
ঠিকানাটা পাছায়! #
(২৭/০৫/২০০৭)
গণ্ডার
ছুতো পেলে গুঁতো মারে
নাকটাই শিং তার
চেহারাটা থলথলে
কিম্ভুত কিমাকার
যেন তার-
ইয়া বপু চলে না
গুঁতোলেও টলে না
চামড়াটা এতো পুরু
নাম তার গণ্ডার।
জু’তে গেলে দেখা মেলে
আফ্রিকা বাড়ি তার
হয়ে গেলে লুপ্ত
খুঁজে পাওয়া হবে ভার
তাই বুঝি-
স্বভাবটা ধরে রেখে
বহুরূপে রূপ ঢেকে
মানুষের ভীড়ে না কি
ইদানিং একাকার! #
(২৬/১১/২০০৬)
[sachalayatan]
তিন মশ্করা
(কদর)
অফিস ফিরেই বুঝেন বাবু
আজকে ঘরে উঠবে ঝড়
গণ্ডা-কড়ায় উসুল হবে
গিন্নীরানীর রূপের দর
এ সংসারের টেনে ধামা
শরীরটা তার হলো তামা
সাধে কি আর চেঁচায় লোকে
টাকা ছাড়া নেই কদর!
(অন্যায়)
দিনমান হাড়ি ঠেলা
এ কী ঘর-কন্নায়
আহ্লাদে ফুঁটো শত
অভাবের বন্যায়
দেহ আছে মন নেই
ঠিকানাটা শূন্যেই
লাশ হয়ে বেঁচে থাকা
নয় কি তা অন্যায়?
(ছন্নছাড়া)
মাস ছ’মাসে অতিথ এলে
গিন্নী পড়েন লজ্জায়
দায়ে পড়ে সংসারী যে
তার কী হবে সজ্জায়?
কর্তাবাবু ঘর-বিবাগী
কোনো দায়ে হয় না ভাগী
ছন্নছাড়া পুরুষগুলোর
এ কোন্ রীতি মজ্জায়! #
(০৯/১০/২০০৬)
আজকের ছড়া
দেশটাতে আজ হচ্ছে কী সব
চর দখলের জবরদার
যার যা খুশি তাই সে করে
দিনটাকে চাই রাত্রি করে
কি পেয়েছে?
উল্টা সিধা এক কাতারে,
দেশটা কারো বাপ-দাদার?
বক-দরদী ধার্মিকেরা
দিচ্ছে জ্ঞান এই ফাঁকে
কেউ বা ধীরে কেউ বা জোরে
আগুন ঝরায় কথার তোড়ে
লজ্জাও নেই!
চোরের মায়ের বড় গলা
জানে সবাই এক ডাকে।
লুটেপুটে পেট মুটিয়ে
পাবলিকেরে বচন দেয়
আড়াল থেকে ঘুটি নেড়ে
ভাবছে যেন কে চিনে রে
হা বাছাধন!
মুখোশটা যে পিছলে গেছে
সেটার কি আর খবর নেয়!
আজকে যারা জনগণের
মুখোমুখি হচ্ছো খুব
সময় কি আর রুখতে পারো?
চামচা নয় যে পোষতে পারো
সেদিন গেছে আসছে সময়-
কড়ায় গণ্ডায় হিসেব হবে
বুঝবে তখন কার কী রূপ! #
(২৮/১১/২০০৬)
ইয়াবা সুন্দরী
সুন্দরী হতে হলে
চলে শুধু চেহারায়?
ফিগারটা সাথে হলে
তাকে আর কে হারায়!
এর সাথে মিলে যদি
ছিটেফোটা বুদ্ধি
ইয়াবা তো রয়েছেই
করে দিতে শুদ্ধি।
ইয়াবা রে ইয়াবা
করলি রে কী বাবা
এ কেমন শখ করে
খেললি
তুই ছাড়া গতি নাই
কি যে পরিণতিটাই
এ যে কোন্ চক্করে
ফেললি!
(৩১/১০/২০০৭)
হার্ট-থ্রব
ছেষট্টি বা ষোলই বলো-
শিকার কে-না হয়!
ষোড়শিনীর বাঁকা হাসি-?
পেলেই ‘খবর’ হয়!
বয়সটা হয় ছেলের যদি
ষোলো কি আঠারো-
শর্ট সার্কিটে হাসির ওয়েভ-!
বাজলো ছেলের বারো!
আর যদি হয় এলোমেলো
বয়সটা চব্বিশ,
খুইয়ে যাবে দিশ-
হাসির ভেতর পাবেই খুঁজে
পুটলি ভরা বিষ!
কিন্তু যদি কানে কানে
বয়সটা হয় ত্রিশ-
বুক করে নিশপিশ
কড়কড়ে নোট থাকলে জেবে
হাসি তো কিসমিস!
ছত্তিরিশ আর বেয়াল্লিশে
কোনই ফারাক নাই
হাসির খোঁচায় চমকে পিলে
বুকে মারে ঘাঁই!
আটচল্লিশের চালশে চোখে
খাইলে হাসির হুল
হঠাৎ-ই হন ফিলোসফার-
‘জীবন মানেই ভুল’!
চুয়ান্নতে ভাবনা জুড়ে-
দেখেন টানা ভুরু-
‘আহা!
যায় না করা জীবনটারে
নতুন করেই শুরু?’
ষাটে নাকি ঘাটের মরা,
তবু গণ্ডগোল-
শেষ বয়সের জোয়ানকিতে
‘চান্দে’ বাজায় ঢোল!
ষোড়শিনীর কেচকি হাসি
মানে কি আর ট্র্যাক
ক’জন পারে সামাল দিতে
হার্ট-টা হ’লে ব্রেক!
দোহাই লাগে ষোড়শিনী
থামাও হাসির ‘স্ট্রোক’
এই বয়সে(!) জীবনটারে
কোরো না আর ‘ক্রোক’! #
(১৭/০৭/২০০৭)
[sachalayatan]
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment