Monday, May 19, 2008

# অদৃশ্য বাতিঘর- ০৪ (কবিতাগুচ্ছ)







অদৃশ্য বাতিঘর- ০৪ (কবিতাগুচ্ছ)
-রণদীপম বসু



তুমি আর কবিতা
(রূপা-কে)

নিঃসঙ্গ দুপুরেরা বুঝে ফেলে
ঘরে নেই তুমি,
মন্থর প্রহরগুলো দুর্বোধ্য বিলাপ হয়ে
কী যেনো খুঁজে আর
নিঃশব্দ সংলাপ কিছু এঘর-ওঘর করে
ভরে তোলে নিপাট শূন্যতা সবই।
তুমি নেই
তবু অন্য এক তুমি এই বুকের কোটরে শুয়ে
প্রথাহীন সঙ্গমে আমাকে কাতর করে
তোমারই প্রতিরূপে
ফিরে আসে প্রিয়তমা কবিতা আমার।

এবং বিরতির রেশ কেটে
সকালের সোনারোদে অকস্মাৎ ফিরে এলে তুমি,
অবিকল তোমার ধারায়
ঈর্ষাময় চোখে তার নেমে আসে অভিমান ;
বেসাতির পাট তুলে
বিস্রস্ত শরীরটাকে ছুঁড়ে দেয় সুদীর্ঘ আড়ালে আবার।
অতঃপর
আরেক শূন্যতা ভুলে
ডুবে যাই আমি ফের গভীর শীৎকারে তোমার।

তুমি আর কবিতা, দুঃসহ সতীন আমার-
একই ঘরে পাশাপাশি
তবু দুর্লঙ্ঘ্য ব্যবধান খুব !
(২২/১১/২০০৩)
R_d_B


মেঘ ও বৃষ্টি

এখোন কি বৃষ্টি হবে ?
অসমাপ্ত সঙ্গমে রেখে
মন তার চলে গেছে অন্য কোনো আকাশের খোঁজে ;
রোদ নেই বৃষ্টি নেই মেঘ-ঘন আকাশের ভারে
ন্যুব্জ আমি
গলে গলে এ কোন্ ঝরার প্রতীক্ষায় থাকি ?
আহারে অবোধ্যা নারী, জানে না সে
আকাশেরা পরম্পরাহীন নয়-
ঝরার উৎস খুঁজে মেঘেদের আর্দ্রতারা
অবিরাম ছড়িয়ে পড়ে
আকাশ থেকে আকাশের পারে।

তীব্রদাহ খরায় খরায়
যে আকাশ পুড়ে যায় মাটির হৃদয়
প্রবল বৃষ্টির তোড়ে
সেই তো ভাসাতে জানে দীঘল শরীর-
সঙ্গম-নিরত নারী জানে না কি
পুরুষের ভালোবাসা মিশে থাকে
খরায় বন্যায় ?
(২২/১১/২০০৩)
R_d_B

নদী ও স্বপ্ন

(১)
দুর্মর আবেগ ভেঙে যে মেয়েটি হেঁটে যায়
তার কাছে প্রশ্ন রাখি
কোথায় পেয়েছে সে এরকম বিস্মরিত নদীমাখা স্রোত ?
বৃক্ষের আয়নায় দ্যাখো-
চকিত কটাক্ষে হেসে বাঁক ফিরে বলে সে ;
মানুষ তো বৃক্ষই কেবল- পর্ণপত্র নদী এক
চলমান শুধু তার স্বপ্নমাখা অন্তর্লীন চোখ !

(২)
ঐ বুকে হাত রাখি
অন্য কিছু তেতে ওঠে তালুর গভীরে খুব ;
এর কোন ব্যাখ্যা নেই- শুধু
শীতল আগুনে পুড়ে
স্বপ্নেরা চুঁইয়ে পড়ে স্বপ্নবান পঙক্তির গহ্বরে...।
(২০/০২/১৯৯৯)
R_d_B

কবি ও পাথর

খেয়ালীর নগ্নতাকে খুঁজেছিলো কবি ও পাথর,
ওরা আজ বনবাসে ;
আর যারা রয়ে গেলো সম্ভ্রান্ত নগরে সব
শোভিত পাথর চাপা রতিমগ্ন চোখে শুধু
বিনগ্ন সুন্দর খোঁজে খেয়ালীর দেহে।

তুমিও খেয়ালী এক,
আমার জন্মান্ধ চোখে অরণ্য নগরে আর কিসের প্রভেদ,
তবু শব্দময় ঘ্রাণে ভেঙে উন্মুক্ত শরীরী তুমি
যখন নিবিড় স্পর্শতা মাখো
মনে হয় ভীষণ চক্ষুষ্মান আমি নিমেষেই জেগে উঠি
কোন এক অন্ধকার ঘুমেল গভীর থেকে ;
এবং মুখোমুখি ব্যাপ্ত হয় তোমার বাঙ্ময় সুন্দর
আর স্বচ্ছতম মগ্নতা আমার।

আমি তো কবি নই, অথবা পাথর ;
তবু মনে হয় তোমাকেই খুঁজে খুঁজে
বনবাসে গেছে আজ কবি ও পাথর সব।
রয়ে গেছি আমিই কেবল,
হয়তো বা জন্মান্ধ বলেই...!
(২২/১২/২০০১)
[prothomaloblog]


স্বপ্ন-মিথুন

মোহন আঁধারে এসো,
জলকেলি রত হবো তুমি আর আমি আর
হৃদয়-চন্দনে গুলে স্বপ্ন-মিথুন হবো।
তুমি ছুঁবে জল, তোমাকে আমি
দুজন দুজনে রবো
জলে জলে ছুঁয়ে যাবো জলল হৃদয়।

চন্দ্রিকা ফুলেই যদি ছেয়ে যায়
পিয়ালের ডাল
জোছনার ঘ্রাণ মেখে দুজনে মদির হবো ;
বনেল ছায়ারা এসে দীঘিরে ছোঁয়ার আগে
ডুব কেটে চলে যাবো অতলে তাহার-
ওখানে বুনবো তোমায়
শরীরী চাদর হয়ে জড়িয়ে আমাকে তুমি
ওমে ওমে চলে যাবে রূপকথা ভোরে।

মোহন আঁধারে এসো-
না হয় কল্লোলি দেহে তোমার
গাছেরাও পেতে পারে লজ্জা ভীষণ !
(২২/০৩/১৯৯৬)

No comments: