‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Saturday, May 24, 2008
# মায়াবী জলের খেলায়-০৫ (কবিতাগুচ্ছ)
মায়াবী জলের খেলায়-০৫ (কবিতাগুচ্ছ)
-রণদীপম বসু
মায়াবী জলের খেলা
মানুষের চেহারায় কতোটা নীরবতা থাকে
আদৌ কি থাকে কিছু, না কি অনিবার্য খুব ?
করোজ্জ্বল দুপুর ভেঙে
কিছু কিছু চেহারায় সারাক্ষণ খেলা করে
অদ্ভুত এক নীরবতা।
স্তব্ধতা নয় বিষাদ নয়
জলবন্দি মেঘেদের ছায়াচ্ছন্ন আকুতিও নয়,
নির্মাল্যের নিকানো উঠোন পেরিয়ে
প্রতি পদে উন্মোচিত
বিস্ময়ের ঘোর লাগা অচেনা বদ্বীপ যেমন
জলের খোঁড়ল বেয়ে নেমে যাওয়া
শর্তহীন এক মায়াবী জলের খেলায়।
নীরব চেহারা আর চেহারায় নীরবতা
উভয়ে কি এক ?
প্রতিটি চেহারাতেই কিছু না কিছু নীরবতা থাকে-
ওটুকু যার যার একান্ত প্রকাশ,
না কি তার উল্টোটাই ঠিক ?
মায়াবী জলের খেলায় কেউ ডুবে কেউ ভাসে
কেউ কেউ শুধুই হা-পিত্যেশ !
(১৭/১১/২০০৬)
নদীরা ভুলেনা কিছুই
নদীরা ভুলেনা কিছুই, তবু
বাঁক ফিরেই
ভুলে গেলো নদী তার ফেলে আসা
পেছনের নাম।
সোমত্ত সংসার ফেলে সুবাস্তু শরীরে কার
ফুটেছে তৃষ্ণার ফুল-
খোঁজে খোঁজে নদী কি সেখানেই যায় ?
কী দামে কিনেছে সে
ঘাসফুল রঙে আঁকা লালনের সাজানো সংসার ?
ঘরে এক নদী ছিলো পৈঠায় সিঁদুর মাখা
মাঝে মাঝে ফুঁসে ওঠে অদৃশ্য বাতাসে খুব
মাস্তুল খুলে গেলে নিরীহ বৈঠায় ভাঙি
উপচানো কূল।
নদীরা ভুলে না কিছুই
ঘর ভেঙে বাঁধে ঘর, তবু
এঘর ওঘরে থাকে দুস্তর অমিল !
R_d_B
ত্রিপদী পঙক্তিমালা
(১)
পেছনের দরোজায় নকশা কাটে না কেউ,
বানানের রীতিগুলো ভাঙতে ভাঙতে দেখি
সামনেই ঝুলে আছে দুষ্মন্ত সময়।
(২)
খণ্ড‘ত’-কে ‘ত’ মেনে কেটে গেছে আধেক সংসার,
প্রবল শীৎকারে চেঁচায় কে ? খুঁজে দেখি
বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে আদিনগ্ন শরীর আমার !
(৩)
রাতজাগা পাখিরা দিনে কি ঘুমায় খুব, না কি স্বপ্ন দেখে ?
আকাশটা ছিঁড়ে-খুঁড়ে মোহন বৃষ্টির তোড়ে
বৃক্ষের পরিতলে অরণ্য ঘুমিয়ে থাকে, ঘুমায় না বৃক্ষ।
(৪)
চিমটি কাটা-ই যদি হতে হয় স্বপ্নের পারদ মিটার
উত্তুঙ্গ সময়ে এলে কবিতা দাঁড়াবে ঠিক
স্বপ্ন আর জীবনের মাঝামাঝি বিচূর্ণ রেখায়।
নিরুদ্দেশ
নির্জন বৃক্ষের কাছে হাত পাতে না কেউ
ঝরাপাতা মারিয়ে যেতেই ভালোবাসে
বিপন্ন মানুষ
এবং সহজেই ভুলে যায় প্রপিতামহের নাম।
পথে নামলেও মানুষ একাকীই থাকে
যদি না চলিষ্ণু হয়, তবু
পথের চিহ্ন মুছে কেউ কেউ হয়ে যায় নিরুদ্দেশ-
অনিচ্ছের ক্ষতগুলো পড়ে থাকে
জ্যামিতিক রঙ ও রেখায়।
প্রিয়তম মুখের আদল
মানুষ কখনোই গড়তে পারে না,
শুধু চিহ্ন আর রঙের সমূহ সম্ভার নিয়ে
পথে নামে অবিরাম-
গন্তব্য তখনো নিরুদ্দেশ !
(০৩/০১/২০০৭)
ধীবর
না হয় আরেকটা শতাব্দি যাবে- তোমাকে পেতে পেতে
আশ্লেষার তামাদি দেনা পুষ্ট হবে আরো
যা কিছু নৈরাশ্য সব ব্যক্তিগত করে
অরণ্যের শুদ্ধঝড়ে বাতাসের প্রতিগামি হবো, নিশ্চিন্তে।
তোমাকে কি পেতেই হবে ?
ঠিকানা জানি না বলে আকাঙ্ক্ষার সখ্যতা ছেটে
এখনো নির্লিপ্ত নই ;
ভাবনার জরায়ুগাত্রে বসে বসে ক্ষণ গুনি
ভাগ্যের গোল্লাছুট খেলায়- কে এসে লুফে নেবে
আপাত জীবনঘন স্বপ্নাতুর ভেলায়।
যে কটা শতাব্দি যাবে যাক্, তুমি কি আমারই হবে ?
নৈরাশ্যের জঘন চেপে শুষে নেবো লালসার জল
যদি প্রতিশ্রুতি দাও
স্তনপাত্রে ভরে দেবো শব্দকল্প
বহ্নিছোঁয়া তৃষ্ণার ভাপ
মোহন শীৎকারে দেবো ছিটিয়ে ছিটিয়ে সব
মুখর বীজের কষ্ট ! নির্মিতির জলাশয়ে
রয়ে যাবো সঙ্গিহীন নীরব ধীবর ।
(১৩/০৪/২০০৭)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment