Friday, May 23, 2008

# মায়াবী জলের খেলায়- ০৪ (কবিতাগুচ্ছ)








মায়াবী জলের খেলায়- ০৪ (কবিতাগুচ্ছ)
-রণদীপম বসু


যতিচিহ্ন
[প্রয়াত গল্পকার মোঃ সিরাজ স্মরণে]

একটা কলম হাঁটতে হাঁটতে বলা নেই কওয়া নেই
আচমকা এঁকে দিলো অনড় যতিচিহ্ন এক !
এখনো তো ফুরোয় নি কথা-
পায়ের চিহ্নে চিহ্নে এখনো হয়নি তো
মঙ্গল আল্পনা আঁকা
অথচ এ চিহ্নেরা আছে বলেই
বসে যাবে নির্দ্বিধায় যত্রতত্র এমোন !
এতোটা খামখেয়ালি ভালো নয়।

ভালোবাসলেই
পূর্ণতার জন্য যেতে হবে বিচ্ছেদের অবিচ্ছেদ্য চূঁড়ায়-
এমোন তো কথা নেই।
আটপৌরে চাওয়া-পাওয়ার প্রথাগত জলেও
নাব্যতা থাকে-
রৌদ্রদগ্ধ শরীরসমেত
অনায়াসে দেয়া যেতো তুমুল সাঁতার,
অথচ এসব বিশ্বাসের আপতিক স্রোত
এভাবেই থেমে যাবে উৎসমুখ ঢেকে !
পারতো তো বয়ে যেতে বিভক্ত ধারায় ধারায়।

অনিবার্য বিরতি মানুষকে এমোনই
প্রথাহীন করে দেয় !
(১৩/০১/২০০৬)

মুহাম্মদ ইউনূস
[নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি]

পায়ে হেঁটে বেরিয়ে এলেন তিনি
ছন্দময় সহজাত উদ্ধত ভঙ্গিতে
বিক্ষিপ্ত হল্লাগুলো নিমেষেই চঞ্চল ভীষণ
মুহূর্তেই মিলিত উল্লাস হয়ে ফেটে পড়ে মহান উৎসবে এক
চারদিকে ক্লিক ক্লিক ক্যামেরার ছুটাছুটি এদিক ওদিক
কে কার আগেই ছোঁবে লুফে নেবে এক্সকুসিভ বাক্য কিছু
প্রকম্পিত ক্যাম্পাসে তখন সবকিছু একাকার
ফুলে আঁকা মানুষের ঢল !

অপেক্ষায় জেগে থাকা আগ্রাসী দুচোখ আমার
খুঁজেফিরে একটুকু সুযোগ শুধু কেড়ে নিতে
আকাশমাখানো ঐ বুকের দখল
ভেঙেপড়া সমূহ পাহাড় ঠেলে সদম্ভে কারা এরা
নতুন চরের মতো যে যার ঠিকানা গারে ?
কাদাজল রোদেপোড়া বামন মানুষ আমি
তবে কি অসহায় এতো ! তিনি তো আমাদেরই লোক,
সবেগে ঝাঁপ দেই জমিন-বিস্তৃত বুকে
অনন্য মানব তিনি, না কি আর কিছু ?
পলকেই হয়ে যান আহা
সুখেদুখে ভাঙাচোরা এইমতো মানুষের সমান !

স্বাপ্নিক আকাশটা সত্যি সেদিন
ছোঁয়ার দূরত্বে এসে নেমেছিলো
মাটির কাছাকাছি খুব।
(১৫/১০/২০০৬)

‘১০ ডিসেম্বর ২০০৬’

তাসলিমার হাতে নোবেল পদক দেখে
নড়েচড়ে বসতেই পারেন কেউ,
কিন্তু তাসলিমা নড়েন না একটুও-
অবিচল দাঁড়িয়ে ঠায়
কারণ, পাশেই রয়েছে যে মহীরুহ !
নোবেল পুরুষ মুহাম্মদ ইউনূস।

অসলোর সিটি হল
এবার কি সেজেছিলো ভিন্ন কোন সাজে ?
নরওয়েবাসিই তা জানে,
আমরা জানি
বাংলাদেশ হেসেছিলো অন্য এক হাসি-
আর কখনোই পারে নি যা !
(০৩/০১/২০০৭)

বিনয় মজুমদার
[প্রয়াত কবি-কে শ্রদ্ধাঞ্জলি]

সীমানা ? প্রশ্নটাই অহেতুক।
বিনয় তা মানেন না একেবারেই-
মানতেন না।
সীমানাবিহীন তাঁর বুকের স্তব্ধতার সীমায়
আপূর্ণ শ্লেষসিক্ত প্রাত্যহিক গাছপালা ঝিলের খোঁজে
ঝেঁটিয়ে বিদেয় করেছেন যতো উষর মরু,
অথচ জানতেন ঠিকই
মরুভূমি সীমান্ত মানে না, মানবেও না।

জ্যামিতিক শব্দরেখার আঁকিবুকি ঠেলে
কৌণিক উপপাদ্য, না কি উঁকি দেবে চক্রাকার
প্রকৃত সারসের মুখ-
সাক্ষ্য দেবে শিমূলপুরের বিনোদিনী কুঠি আর
ক্লান্ত বিকেল থেকে খুটে নেয়া
বনগাঁ স্টেশনের ফাঁকা প্ল্যাটফরমে হল্লা করা
পরিত্যক্ত শব্দ কিছু ;
আসবেনা জেনেও
অপেক্ষায় থেকে থেকে যা নিরন্তর বিড়বিড় করে
-ফিরে এসো
ফিরে এসো, চাকা।

বিনয় সীমানা মানে না,
চক্রের পরিধিপথে কোন সীমান্ত থাকে না।
(১৬/১২/২০০৬)

নিবেদিত পঙক্তি
[প্রয়াত সাহিত্যিক সিদ্দিকুর রহমান-কে]

আমার ঋণগুলো এখোন শুধুই কৃতজ্ঞ কষ্ট কিছু
শোধের উর্ধ্বে ওঠে নিঃসঙ্গ চাতক
অসম্ভব তৃষ্ণায় কাতড়াবে বহুকাল।
কেউ জানবে না
অনুপুঙ্খ পাঠে পাঠে ঋদ্ধ হয়েও
যে কবিতা আজীবন খসড়াই থেকে যাবে
তার বুকে অক্ষরে অক্ষরে বিনম্র শিশিরে জমে
কতো বিনিদ্র জোনাকিরা স্বপ্নরহিত হবে,
নিরুদ্দিষ্ট হয়ে যাবে আসঙ্গলিপ্সু কিছু বেয়ারা শব্দ, আর
স্থানে স্থানে মজে যাওয়া চিহ্নগুলো
ভুলে যাবে একে একে নিজস্ব সংকেত সব-
কারণ ওখানে আর তুমুল বৃষ্টি হবে না কোনোদিন।

স্পর্শতা হারালে আপন ছায়ারাও উদ্বায়ী হয়
তবু তাঁর বাকরহিত কলমটা
আরেক অন্ধ চশমার অসহায় সঙ্গি হয়ে
আমৃত্যু খুঁজে যাবে দুরন্ত প্রেমিককে শুধু-
নিবিড় স্পর্শসুখে যে নাকি একান্তই ছিলো
তাদের নিজস্ব পুরুষ।

শুধু জানা হবে না
ঋণগুলো আমার বিনয়ী কষ্ট হয়ে
কতোকাল ঝরবে আর !
(০১/০৫/২০০৬)

No comments: