Tuesday, May 27, 2008

# পাথর (অণুগল্প)









পাথর (অণুগল্প)

-রণদীপম বসু


আঠারো তলা টাওয়ারটার সামনে এসে অটোটা ব্রেক করতেই হাতটা আবারো চোখের সামনে তুলে ধরলো রূপা। দশটা বাজতে মাত্র তিন মিনিট বাকি আর ! ইশ্, কেন যে আরেকটু আগে রওয়ানা দিলো না ! ভাড়া মিটিয়ে হুড়মুড় করে নেমেই গেটের দিকে হাঁটা ধরলো। পাশেই আরেকটা উঁচু টাওয়ার। গেটে ঢুকেই মনে হলো- আচ্ছা ঠিক ঠিক এসেছে তো ? রিসেপশান কাউণ্টারে কার্ডটা দেখাতেই ইশারায় লিফট দেখিয়ে দিলো দায়িত্বরত মেয়েটি- তেরোতে নেমে ডানে। হেয়ারস্টাইলটা এমন গেঁয়ো গেঁয়ো করলো কেন ? আর্টিফিসিয়াল তিলের যুগ এখনো আছে নাকি ! লিফটের পাল্লা বন্ধ হতে শুরু করেছে। ছুট লাগালো সে।

তেরো তলায় নেমে রুমটা খুঁজে পেতে এক মিনিট ওভার। দরজাটা খুলে গেলো। চুলের ভাঁজ ঠিক করতে করতে যে আগুনে মেয়েটি বেরিয়ে গেলো, সে কি প্রাইভেট সেক্রেটারি ? একটু ইতস্ততঃ করে অবশেষে ঢুকে গেলো রুমে।

হাই বেবি ! কাম ইন, কাম ইন ! বি সিটেড।

চমকে ওঠলো রূপা ! আশ্চর্য হয়ে লোকটার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। মধ্যবয়সটাকে অন্তত দশ বছর লুকিয়ে রাখায় লোকটার দক্ষতাকে প্রশংসা করতেই হয়। কাঁপা কাঁপা হাতে ইণ্টারভ্যু কার্ডটা এগিয়ে দিলো। ডান হাতে কার্ডটা নিতে নিতে এক্সিকিউটিভ মি. আরমানের বাঁ হাতের নিপুণ আঙুলগুলো শার্টের কুচকানো দাগটাকে একটু একটু ঝেড়ে ফেলছে। রূপা কি ঘামছে ! স্বাভাবিক থাকার উইকেটগুলো একে একে পড়তে শুরু করেছে। নইলে বারবার এ কোজশর্টটা ঘুরেফিরে আসছে কেন ! দাগটা কি এখনো যায় নি ?

বুকের ঠেলে ওঠা শীর্ষবিন্দুটা তিরতির করে লাফাচ্ছে। এলার্মটা নতুন নয়, পুরুষের দৃষ্টিবিদ্ধতা। শেষ উইকেটটা এখনো বাকি। নিশ্চিত হবার জন্যে আবার পূর্ণদৃষ্টিতে চাইলো। ধাম করে উঠে গেলো সে। পেছনের বিস্মিত দৃষ্টি হজম করতে করতে আঠার বছরের শরীরটা নিয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেলো।

ঝড় নিয়ে বাসায় ঢুকেই সোজা মা’র রুমে। চেয়ারটা টেনে উপরে উঠে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে দশবছর আগের বাঁধানো সেই ছবিটা নামিয়ে আনছে সে ; মা’র লুকিয়ে রাখা ঘৃণার প্রতীক।

কী আশ্চর্য ! দরজায় দাঁড়ানো স্কুল-শিয়িত্রী মা’র চোখে এখন সেই ঘৃণা বা বিস্ময় কিছুই নেই ! অন্য কিছু। তবে কি এতোকালের চেপে থাকা পাথরটা সরিয়ে ফেলার নির্ভার প্রশ্রয় !

(২৭/০৫/২০০৮)

No comments: