‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Thursday, May 15, 2008
# জলের অক্ষরে- ০৪ (কবিতাগুচ্ছ)
জলের অক্ষরে- ০৪ (কবিতাগুচ্ছ)
-রণদীপম বসু
শুধু একটা গোলাপের দূরত্বে
নদীটার পাশে দাঁড়াতেই হাত বাড়িয়ে দিলো সে,
সত্যি কি নেমে যাবে ? অথবা নামবেই যদি
ভুল করে কিছু কি এসেছো ফেলে ?
ভেজা পায়ে যতই শুভ্রতা ছড়াক
ডুব দেবার আগের পৃথিবী বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে
কোথায় পৌঁছুবে আর ?
যা কিছু সঞ্চয় ছিলো, পুরনো,
ওরা কি আদৌ চিনবে ? অন্তত এটুকু বলবে কি-
তুমি আমাদের ছিলে ?
একটা গোলাপের দূরত্বে দাঁড়িয়ে
ডুব দেবার পরের পৃথিবী তোমাকে ডাকছে !
ওই পেছনে দূরে বেণীর সম্ভ্রম খুলে
মিঠে রোদ সেঁকে নেয় পুরনো পৃথিবী ;
শুধু একটা গোলাপের দূরত্বে তুমি-
আবারো কি ঝুলে যাবে বেণীর ডগায় ?
অথবা নেমেই যাবে ?
পরের পৃথিবী থেকে ঠিকরে আসা
রোদের ঝঙ্কার বাজে কুলকুল কুলকুল...
নদীটা হাত বাড়িয়েই থাকে,
মাঝে একটা গোলাপের দূরত্ব শুধু !
(১৪/০৫/২০০৮)
R_d_B
বসুর অক্ষরগুলো
পঙক্তির নাভিমূলে অচেনা খোড়ল দেখে
বিস্মিত হচ্ছো কেন !
অভিধান কেটে গেছে অনিচ্ছের উঁই ;
অক্ষরেরা আপাতত স্বাধীন এখন।
আরেকটু উপরে দেখো-
যন্ত্রণার ঢিবি দুটো নরোম পাথর হয়ে
অবাধ্য মাথা নেড়ে না না নয়,
ডাকছে কাকে !
দুঃসহ নারীবেলা ভ্যাপসা গরমে খোঁজে
উদোম সৈকত।
শব্দগুলো গেথে আছে নিঃশব্দের ডোবায়,
অভিধান ঘেটে ঘেটে এখন কি পঙক্তি হবে ?
ওরা তো ঘুরতেই গেছে রমণীয় নাভির ডগায় ;
একটু ফুরসৎ পেলে, কী আশ্চর্য,
বসুর অক্ষরগুলো শুধু কি নারীকে সাজায় !
(২১/০৫/২০০৮)
R_d_B
[pechal]
কান্নার মুহূর্ত এলে
কান্নার মুহূর্ত এলে
কেউ কেউ এতো বেশি হেসে ওঠে যে,
কান্নার বিভ্রান্তি নিয়েই অবশেষে
ঘুমোতে যায়।
অথচ স্বপ্নে কান্নার কোন অপশন নেই !
ওখান হাসি আছে, আনন্দ আছে, দুঃখ আছে,
আছে আশঙ্কা, ভয়,
দৌঁড়তে না পারার দৌঁড়বাজ ইচ্ছা
আরো কতো শতো পিনফুটা বিষন্নতা আর
স্মৃতির বিভ্রম ;
শুধু হৃদয়ধোয়া কান্না নেই !
হাসির প্রস্তুতি নিয়েও
প্রস্তুতিহীন কান্নার খোঁজে কেউ কেউ হাসতেই থাকে ;
হেসে যায়, নাকি কাঁদে ?
একেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের চরায় হাঁটছে সবাই
নিঃসঙ্গ, একা...
পেছনে জলের বন্ধন শুধু...!
(২৩/০৫/২০০৮)
R_d_B
গুপ্ত সমুদ্র
[মুমূর্ষু কবি সমুদ্র গুপ্তের জন্য এলিজি]
ঘুটঘুটে অন্ধকার বলে আদৌ কি আছে কিছু ?
অন্ধ চোখের ফ্রেমে ভাঙা অক্ষরে মাখা
টুকরো জানালা দিয়ে
আমি তো পষ্টই দেখছি সব-
চারদিকে ঘিরে থাকা অলৌকিক অক্ষমতা,
আলোহীন দৈবিক পৌরুষ
ছিটেফোটা বেদনার কৌটা পোরা টুপটাপ বৃষ্টি
আর ওল্টে পড়ে ভিজে যাওয়া চেনা চেনা নাম
যাকে নাকি কেউ কেউ ভালোবাসা বলেই ডাকে !
বাতাসের বিপরীতে কী নিঃস্ব ফুসফুসগুলো
খিল এঁটে বুঝে নেয় বাতাসের দাম্পত্য কলহ !
আমি তো দেখছি সবই-
ঘুটঘুটে অন্ধকার বলে আদৌ কি আছে কিছু ?
নদীটা কখন যে লুকিয়েছিলো বুকে
উৎস থেকে নিয়েছে সে বিনাশের জল
গুপ্ত সমুদ্র হয়ে ফুঁসলো কখন ! বুকের নিথর পাড়
কী এমোন এসে যায় তাতে ! নদীর গন্তব্য থাকে,
ল্ক্ষ্যহীন সমুদ্র যদি খুঁজে ফেরে পাখির আবাস
লোকালয় নতজানু হলোই না হয় !
পাড়ে বসে কাঁহার আরোগ্য চাও ? পাখিদের হাসপাতাল নেই
থাকেনা আরোগ্যের আগাম চিকিৎসার বিল !
ওগুলো মানুষের যাপনের অংশীদার কেবল ;
কবি তো মানুষ নয়, অন্য কিছু,
অন্যকোন অনুষঙ্গেই মানানসই এরা !
তবু
অমরত্বের এই অসহ নির্বাসন
কবিকেই কেন পোহাতে হয় বার বার !
(০১/০৬/২০০৮)
R_d_B
নিঝুম
মৃত্যুর কাছে দিয়ে খুব হেঁটে যায় যারা
এরা তো মৃত্যুকে চিনেই ফেলে ঠিক !
আর মৃত্যুও আপন ভেবে ভুলে যায়
অনিবার্য ধ্বংসের গ্রাস, ভাবে-
সে তো আমারই লোক।
অতঃপর হয়ে ওঠা মৃত্যুঞ্জয় এরা অমর্ত্যের খাম খুলে
তুলে নেয় ভাঁজ করা সেই সব চিঠির বাণ্ডিল-
নামহীন বর্ণহীন নিঃসঙ্গ আকাশের মতো
ভাঁজের পর ভাঁজ খুলে টুকে যায় শুধু
টুকে যায় স্মৃতির ন্যাপথলিনে রাখা প্রিয় সব
নামের আড়াল।
মৃত্যুর কাছে দিয়ে হেঁটে যায় যারা-
কেবল তারাই পারে
বহুদূর বৃক্ষের কালো কালো চোখে
নির্দ্বিধায় মেখে নিতে সতেজ সবুজ গান।
(১১/০৬/২০০৮)
R_d_B
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment