Thursday, May 15, 2008

# যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(১৩)







যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(১৩)

তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল,১৯৯৩)


‘লুৎফ্ উসকে বদন কা কুছ নহ্ পূছো,
কেয়া জানীয়ে, জান হ্যয় কেহ্ তন হ্যয়।’


(ঐ বরতনুর স্পর্শে কী যে অবর্ণনীয় সুখ, কি জানি, সে কী প্রাণ, সে কী দেহ !) --- মীর তকী মীর।

রূপা, দেহকে মন থেকে বিচ্যুত করা যায় কিনা আমার জানা নেই। ঐ যুবকও জানে না। সে শুধু বিশ্বাস করে দেহ ও মন দুয়ে মিলে একই অখণ্ড সত্তা। এদের আলাদা কোন স্বার্থক অস্তিত্ব নেই। থাকতে পারে না। দেহ বিনে মন যেমন অলীক কল্পনা, মন বিনে দেহ শুধুই নিথর নিস্প্রাণ একটা পুতুল মাত্র। দেহ যদি চাঁদ হয়, মন তার জ্যোৎস্না। এই অখণ্ডতার নামই তো চাঁদনীর স্নিগ্ধতা। চাঁদনীকে পেতে হলে সমগ্র অখণ্ডতাকেই চাইতে হয়। যুবকটি তো তার প্রেয়সীকে সমগ্র সত্তা দিয়ে এভাবেই চায়। ভীষণভাবে চায় !

মন যদি উষ্ণ আত্মা হয়, দেহ তার মোহন আধার। বিচিত্র গতিময় মনটা সকল গ্রাহ্যের উর্ধ্বে বলে, যে কোন ইন্দ্রীয়ের অনায়ত্তে বলেই প্রকাশিত দেহের ইঙ্গিতময়তায় আমরা মনের বিচিত্রতা অনুভব করার প্রয়াস পাই। তাই বুঝি একটা দেহ আরেকটা দেহকে নিবিড় জড়িয়ে ঐ মনেরই উষ্ণতা খোঁজে ! রূপা, একে তুমি কী বলবে ; ঐ যুবকটি যখন তার প্রেয়সীকে তার দেহের সাথে এমোন নিবিড় জড়িয়ে রাখতে চায় !
‘গরমিয়াঁ মুওসিল রহেঁ বাহম
নে ত সাহিল হো, নে ত গাফিল হো।’


(এসো আমরা পরস্পরে আসক্ত থাকি চিরদিন, না যেন হারাই আগ্রহ, না আসে উদাসীনতা।)--- মীর।

রূপা, যেখানে ভালোবাসা, সেখানেই বিরহ। একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। ভালোবাসা যেখানে নেই, বিরহের প্রশ্ন সেখানে অবান্তর। কারো উপর থেকে মন ওঠে গেলে ভালোবাসা থাকে না বলে দেহ তার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু ভালোবেসে প্রিয়তমকে দেহসমেত একেবারে সশরীরে না পেলে বিরহ-যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খায়। এজন্যেই বুঝি বিরহ-যন্ত্রণা কাতর মধ্যযুগীয় কবি গেয়েছেন-

‘রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর,
প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর।
... (জ্ঞানদাস/ বৈষ্ণব পদাবলী )।

যুগে যুগে ভালোবেসে মরে যাওয়া বিরহী-বিরহিনীরা তো রক্ত মাংশেরই গড়া মানুষ। পার্থিব চাওয়া-পাওয়ার মধ্য দিয়েই তো এঁরা অপার্থিবকে খুঁজে ফিরেছেন। একালের মানব মন, সেও তো গেয়ে ওঠে একই সুরে- ‘মোহনায় মিশে নদী মরন বলে তাকে, বিচ্ছেদে ভালোবাসা চিরদিন বেঁচে থাকে।’ কেউ কি তা চায় বলো ? ‘কারো মনে চিরদিন বিরহ সয় না।’

কালের ব্যবধান আর যা কিছু পার্থক্যই টানুক, জীবনের অন্তর্নিহিত এই চাওয়াটুকুর অপরিবর্তনীয়তায় এতটুকু প্রভেদ এনেছে এমন দৃষ্টান্ত আজো মেলে নি। আমি তো রক্ত মাংশেই গড়া একজন, ঐ যুবকও তাই। তুমিও কি তা-ই নও !

‘সরাপা আরজু হোনে নে বন্দহ কর দিয়া হমকো,
বগরনহ্ হম খুদা থে গর দিল বেমুদ্দোয়া হোতা।’


(আপাদমস্তক যাচনা বলেই আমি মানুষ মাত্র, নইলে আমি তো ঈশ্বরই হতাম, হৃদয় যদি বাসনারহিত হতো।)-... মীর তকী মীর।


চলবে...

আগের পর্ব (১২):
পরের পর্ব (১৪):
R_d_B

No comments: