Sunday, June 22, 2008

# অদৃশ্য বাতিঘর-০৬ (কবিতাগুচ্ছ)





অদৃশ্য বাতিঘর-০৬ (কবিতাগুচ্ছ)
- রণদীপম বসু

অপেক্ষা

সময়েরা অনড় পাথর হয়ে
জেঁকে আছে বুকের গভীরে খুব-
কে তাকে সরাবে বলো,
সেও কি অপেক্ষায় কারো
ফিরে পেতে আর কোনো যন্ত্রণার
দীঘল হাতের ছোঁয়া...?


পথ চললেই পথের হিসাব

পথ চললেই পথের হিসাব
নইলে কে যায় খুঁজতে এসব পথ-পথিকের প্রাণঠিকুঁজি
আদুর গায়ের মেঠোপথের কোথায় ছিলো খন্দখানা
কোন বছরের ভয়াল বানে মুছে গেছে নাম নিশানা
সুরকী-ভাঙা ঝকর-মকর রাখছে ধরে কার অবদান
পথ হারিয়ে কে দিয়েছে পথের মাঝেই জীবন পুঁজি।

কোন গাঁ থেকে ইষ্টিশানে সড়ক পথে নাই যোগাযোগ
বাস টেম্পো রিক্সাভ্যানে যায় না পাওয়া সময়-সুযোগ
রেলসড়কের টাইম-টেবলে নেইতো কোনো ঠিকঠিকানা
নদীতো নেই
জলের পথের নাব্যতারা উঠছে হয়ে ঘোর-অজানা
কোন্ সেতুটি ধ্বসে গেলো বিকল্প পথ হয়নি বুঝি
পথ চললেই পথের হিসাব নইলে কেন খোঁজাখুজি ?

দেশ-দুনিয়ার পথেঘাটে হার কিসিমের মানুষ ঘোরে
কার ভেতরে কোন্ ঠিকানা না দেখে কে চিনতে পারে ?
কোন্ সে পথে যায় যে খোঁজা কারো বুকে সাগর ফুঁসে
কারো বুকে মেঘলা আকাশ কারো বুকে জ্যোৎস্না হাসে
অনাদি কোন্ বৃক্ষ প্রাচীন কারো বুকে পাতা ঝরায়
রূপ-অরূপের বিচিত্রতায় পথ খুঁজে কে পথটি হারায়
হাজার পথের জটিল মানুষ কারে ফেলে কারে টানি
কাছে আসলেই মানুষ চিনি
নইলে কি আর উপর-ভেতর ভিন্নতাকে বুঝতে পারি ?
(১২/০৫/২০০৩)

একটাই আকাশ

বিশ্বাসেরা মরে গেছে কবেই
তবু তার শবদেহ ছুঁয়ে নতজানু স্বভাব
আমরণ খুঁজে যাবে নিরন্তর প্রাণের আশ্বাস।
এতো প্রেম রক্তপাত আবেগ উচ্ছ্বাস
একান্তে পেরিয়ে তবু
আত্মগত নারী বুঝে না কি
মানুষের বাঁচার সাধ দীর্ঘ খুবই জীবনের চেয়ে ?

বালিয়াড়ি বুকে ধরে
কতোটা দীর্ঘ হয় প্রিয়তম স্বপ্নের স্পন্দন
অজস্র স্বপ্নপাতে
কতোটা বিস্তৃত হয় মানুষের নিজস্ব আকাশ
কেউ কি জানে তা ?
কখনো ঝরে না আকাশ, ঝরায় স্বপ্ন শুধুই ;
একটাই আকাশ, কী হবে গুটিয়ে তাকে-
আনোখি স্বপ্ন হয়ে চোখই ঝরলো না হয়...!
(২০/০২/১৯৯৯)


প্রত্ন-বাউল
(কবি আবু হাসান শাহরিয়ার-কে)

চর্যাপদের কাল ক্ষয়ে গেছে কবে সেই
কাহ্নপা’রা জাদুঘরে
স্বপ্নের নাব্যতা বেয়ে কাদের ললনা তুমি
উদ্ভিন্ন কাঁচুলী খুলে উড়িয়ে পয়ার ধ্বজা
অজন্তার আলগুহায় মজে ওঠো অভিসারে আজো ?

এখন বাংকার ব্লাস্টারের কাল
ব্যাবিলন বুঝে গেছে ক্লাস্টারের লয়
বসরার গোলাপেরা চিকন বিকিনি পড়ে
হুমড়ি খাবে লাল-নীল ক্যাবারের তালে
এইসব ডলারের জয়কার ছেড়ে কে তুমি প্রত্ন-বাউল
সিকস্তির আঁকিবুকি খুঁজে খুঁজে ক্ষয়িষ্ণু বাঙলার তটে
শুধু শুধু অবসন্ন কেবল ?
(২৩/০৪/২০০৩)


শুধু বীজমন্ত্র জানি না বলে
(কবি জয়দুল হোসেন-কে)

একটা যৌবন নষ্ট হয়ে গেছে বলে
নিরন্তর চিৎকারে জেগে থাকেন যৌবনোত্তর যে কবি
তিনি তো জরাগ্রস্ত নন,
জরায় আকণ্ঠ মজ্জিত আমরাই, যারা
যৌবন এসেছিলো কবে জানতে পারিনি বলে
পারিনি হতে কোন মাতঙ্গী প্লাবন।

নষ্ট এই পৃথিবীতে একটাই নষ্ট জীবন
প্রেম তো নষ্ট নয়- নষ্ট নয় কামনার টান
শুধু বীজমন্ত্র জানি না বলে
পারিনি জাগাতে এই জীবনের প্রাণ।

আজ আর বিভ্রান্ত নই-
কোথায় অমিত যৌবনা কবি আদিম কৃষক
ছায়া দাও মন্ত্র দাও ঢালো অমর্ত্য মৌতাত-
চিরকার নতজানু বুক দৃঢ় হোক ভিন্ন ঋজুতায়
নতুন চরের বুকে যৌবনের আদি ভ্রূণ
বুনে যাক তবে এই মন্ত্রপুত হাত।
(১৬/১০/২০০৩)

No comments: