Monday, July 28, 2008

গার্লফ্রেন্ড...! (অনুগল্প)







গার্লফ্রেন্ড...!
-রণদীপম বসু


ল্যান্ডফোনটা বেজে ওঠতেই ছিদ্দিক সাহেব ছো মেরে রিসিভারটা তুলে নিলেন। খুব মিষ্টি করে ‘হ্যা-ল্লো’ শব্দের একটা মিহি তরঙ্গ ছড়িয়ে দিলেন। কিন্তু কোথায় যেন একটা ভুল হয়ে গেলো। অবতারমার্কা হাসিমুখটা চোখ-চোয়ালসহ ক্রমেই কঠিন হয়ে ওঠতে লাগলো।

অফিসটার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটাকে অফিস বলেই মনে হয় না। প্রতিটা সহকর্মীর পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার সমন্বিত প্রক্রিয়াটির সাথে একটা পারিবারিক আবহ মিশে থাকে নিবিড়ভাবে। ভাব বিনিময়ের মুক্ত পরিবেশ এতোটাই আন্তরিক, একটা পরিবারই যেন। এবং অফিসটার সবচেয়ে বড় অসুবিধাটাও হচ্ছে এটাকে অফিস বলে মনে হয় না, এটাই।

তবু ছিদ্দিক সাহেবকে আজ খুবই অসহিষ্ণু দেখালো। ‘ কী বললে ? ছেলে বৃত্তির টেস্টে টেকে নাই ! তুমি কি ঘোড়ার ঘাস কাটো নাকি ? যত্তোসব... ! ওই সব টিউশন ফি টি আমি দিতে পারবো না !’ বলেই রিসিভারটা ঠাশ করে রেখে দিলেন।

বিষয়টা পাশের ডেস্কের অরুণবাবুর চোখ এড়ালো না। হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে লাগোয়া সামনের ডেস্ক ঘেঁষে দাঁড়ালেন।
রহমান ভাই, একটা কৌতুক বলি ?
রহমান সাহেব কম্পিউটারের মনিটর থেকে চোখ ঘুরিয়ে সাগ্রহ সম্মতিতে চেয়ে রইলেন।

ভিক্ষুক: স্যার, দশটা টাকা দেন, চা খামু।
ব্যক্তি: দশ টাকা দেন মানে ! ঐ মিয়া, চা’র কাপ কতো ?
ভিক্ষুক: পাঁচ টাকা !
ব্যক্তি: তয় তুমি দশ টাকা চাইলা যে ?
ভিক্ষুক: স্যার, গার্লফ্রেন্ডরে নিয়া খামু।
ব্যক্তি: (বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে) অ্যাঁ! বলো কী ! ভিক্ষা কইরা আবার গার্লফ্রেন্ডও জুটাইয়া ফালাইছো নাকি !
ভিক্ষুক: জী না। ঐ গার্লফ্রেন্ডই তো আমারে ভিক্ষুক বানাইছে !...

হা হা হা ! শ্রোতারা মজা পেলেও ছিদ্দিক সাহেব তার কুতকুতে চোখ দুটো বড় বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ণ বানিয়ে চেয়ে রইলেন রহমান সাহেবের দিকে। রহমান সাহেব আড় চোখে খেয়াল করলেন কি না কে জানে। হাসতে হাসতে বললেন, দারুণ বানিয়েছেন তো বাবু !
আরে নাহ্ ! অরুণবাবুর উত্তর। আমি বানাইমু কী ? এই যে ডাকে এসেছে। বলেই সীলগালা ছেঁড়া খামটা দেখিয়ে দিলেন।

অতি গোপন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মধ্যবয়সী ছিদ্দিক সাহেব তার স্ফীত শরীরটাকে চেয়ারে এলিয়ে দিলেন।
(২৮/০৭/২০০৮)
[Image: tiz_judith by Titian]

(sachalayatan)

No comments: