Saturday, August 16, 2008

# আগস্ট পনেরো, কাঁদো বাঙালি কাঁদো...![Remembering Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman]










কাঁদো বাঙালি কাঁদো ![বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে](কবিতাগুচ্ছ)
- রণদীপম বসু



এটা বধ্যভূমি নয়

আমাদের সব কথা মিশে যায়
বিশ্বস্ত এই মাটিতেই শেষে, মিশে না অন্ধকার-
কেমোন আলগা হয়ে জুড়ে থাকে
প্রতিটা আলোর গায়ে দেখো,
কারণ ওগুলো শোকের ছায়া।

আমাদের সব দুঃখ ডুবে যায় বুকের গভীরে কোথাও
ডোবে না কষ্টের পাথর কিছু-
নির্ণিমেষ অভিমান পারে না ভাঙতে কোনো জড়ল বিষাদ
কারণ ওখানেই ছুঁয়ে থাকে আমাদের অন্তরীণ আহত নিঃশ্বাস।

হয়তো বা আমাদের সব স্মৃতি ধুয়ে যাবে একদিন
আরো কতো স্মৃতিময় বিস্মৃতির প্রাত্যহিক জলে
শুধু জাগবে গভীর ক্ষত
চর হয়ে জেগে ওঠা স্রোতস্বী পথের বুকে অমল ধারায়
কারণ জীবনের শেষ চুম্বনে মিশে ওইখানে
আমাদের প্রিয়তম মানুষেরা কিছু
এই মাটিকেই আঁকড়ে বুকে
রয়েছিলো পড়ে এক অদ্ভুত নিমগ্নতায়...

তাই ভুল করে কেউ যেনো একে
বধ্যভূমি বলো না আর ;
মায়ের কোলে কোনো বধ্যভূমি থাকে না-
ওটাই হৃদপিণ্ড আমাদের... ।
(১৪/০৯/১৯৯৬)


কালান্তক শবদেহ

এই শবদেহ নিয়ে কোথায় যাবে তুমি ? পোড়াবে ?
আজন্ম বিষের জ্বালা অন্তর্লীন দ্রোহ হয়ে
যে নাকি নিজেই এক হয়ে গেছে প্রজ্জ্বলিত শিখা
আগুনের সাধ্য কি পোড়ায় তাকে !
কেবল বিষের বিষে ছেয়ে যাবে তোমাদের নিঃশ্বাসী আকাশ
লুটানো পাখিদের গাছেদের পত্রহীন অভিশাপে
পুড়ে যাবে সব যতো স্বপ্নের বসত।
এই দেহ ছুঁয়ে যাবে এতো বেশী দীর্ঘ নয় আগুনের হাত।

এই শবদেহ নিয়ে কোথায় যাবে তুমি ? কবর দেবে ?
মাটিকেই জিজ্ঞেস করো-
অন্তহীন প্রত্যাশার বিপন্ন অক্ষর বুকে প্রতীক্ষায়
যে নাকি তিলে তিলে হয়ে গেছে প্রত্নময় অনঙ্গ শরীর
মৃত্তিকা কি করে গলাবে তাকে ?
মাটিও নেতিয়ে যাবে দীর্ঘতম প্রতীক্ষার তাপে।

কুলপ্লাবী স্রোতে জলে
নদীও পারে না নিতে একপেশে বিষাদের ভার ;
যে সুখ আসেনি ফিরে যে প্রেম থাকেনি ছুঁয়ে
আর কোনো বুক জুড়ে যে কষ্ট কখনো বাজেনি সুরে
সেই শোক শিলাদেহে নিরন্তর গেঁথে আছে দুর্বহ ভারে।
এই শবদেহ নিয়ে কোথায় যাবে তুমি ?
কতোকাল বইবে এই দুর্বহ পাথর ?
তার চেয়ে খুঁজে দেখো সে-ই কোনো প্রিয়তম মানুষেরই বুক-
নিমেষেই মিশে যাবে তাতে
যেভাবে মিশে থাকে রক্তের ভেতরে জাগা রক্তাক্ত শপথ !
(sachalayatan)
[mukto-mona]
[sa7rong]


দর্পিত আঙুল তাঁর

একটাই দর্পিত আঙুল তাঁর
উদ্যত স্বাধীন...
সাত কোটি স্বপ্নের জমাট প্রতীক্ষা মেখে
উঠে গ্যাছে এতো যে উঁচুতে তা
গেঁথে গ্যাছে উত্তাল আকাশের বুকে বিশাল... !
একটাই আঙুল তাঁর
তবু সে আঙুল নয়
বজ্র-নির্ঘোষে আঁকা উদ্যত সঙ্গীন এক-
পৃথিবীর সমস্ত মারণাস্ত্র নীচে এসে তার
হয়ে যায় নতজানু খুব
আর সময় চৌচির হয় সন্ত্রস্ত ব্যথায়।

বিচ্ছুরিত আলোকেরা
নিমেষে পেরিয়ে যায় নগর বন্দর সব
সোনার ফসল ছুঁয়ে ছুটে যায় গভীরে আরো
মিটমিটে চাহনীর গভীর গভীরে খুব
জ্বলে ওঠে দাবানল
সহস্র বর্তিকা হয়ে বয়ে যায়
দাবিয়ে দাবিয়ে যায় অনিবার্য আগামীর দিকে।

একটাই আঙুল তার অনন্তে আসীন
যেখানে আকাশ-পায়রারা এসে বুকের পালক খুলে
মুছে দ্যায় নিরন্তর স্বপ্ন-শিশির।


শুয়ে আছেন তিনি

এই বুকের কফিনে শুয়ে আছেন তিনি
আশ্চর্য প্রশান্তি তাঁর
ছুঁয়ে আছে শরীরে বিশাল।

এতো যে অমল স্রোত বয়ে গেছে
বুকের মৌচাক থেকে
বাংলার প্রতিটি স্রোতস্বিনীর কোলে
জলল সূর্যের মতোন উজ্জ্বল হাসি তাঁর
পরম বাৎসল্যে স্নাত হয় অবিরল
উদ্বেল মৃত্তিকায়।
শুয়ে আছেন তিনি অপরূপ কফিনে এক
দরাজ বুকের কোণে নিভৃতে রেখেছিলেন তুলে
সেই স্বপ্নের পালকে মুড়ে উদাত্ত আকাশ-
এখন তা নুয়ে আছে উন্মুক্ত শিয়রে তাঁর,
বৃক্ষেরা স্নিগ্ধ শিশির জলে ধুয়ে দেয় তাঁকে
ধুয়ে দেয় সযত্নে শ্যামল
এতোকার পরিচিত নগ্ন নিথর পা ;
আর কালের সফেদ ছোঁয়ায়
নক্ষত্রেরা মুছে নেয় নিজস্ব কলঙ্ক সব

পতাকার রঙ মেখে শুয়ে আছেন তিনি
বাঙালীর হৃদয়-অতলে অনন্য বিধুর শয্যায়।
(১৯/০৮/১৯৯৬)
[sachalayatan]



ওরা মানুষ ছিলো না

তাঁকে হত্যা করার আগে
একটুও কেঁপে উঠেনি ওদের হৃদয়
কেনো না ওরা তো মানুষ নয়
মানুষ ছিলো না কোনোদিন।
তাঁর ভালোবাসায় উপচে পড়া বুকে
বুলেটের নির্দয় নগ্নতাকে তাক করার আগে
দ্বিধান্বিত হয়নি একবারও তাদের হিংস্র নখর
কারণ, ওরা মানুষ ছিলো না কখনোই
মানুষের কোনো নখর থাকে না,
মানুষের গর্বিত আঙুলে জড়ানো থাকে মোহন স্নিগ্ধতা।

ঘাতকেরা মানুষ হয় না কখনো
ঘাতকের কোনো জাতিসত্তা নেই।
(১৫/০৮/১৯৯৬)

[pechali]
[somewherein]
[amarblog]
[mukto-mona]
[khabor.com]
[sa7rong]

No comments: