Friday, September 12, 2008

@ মূর্খ...(গালগল্প)













মূর্খ...
-রণদীপম বসু


কম্পিউটর মনিটরে চৌকস সচলদের কেরামতিগুলো উপভোগ করছিলাম। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে ওঠলো। সৌদি আরব থেকে কল। মোবাইলের মনিটরে ভেসে ওঠা নম্বরের শুরুতে প্লাস নয় ছয় ছয় দেখে তাই ধারণা করলাম।
স্লামালিকুম ? প্রশ্নবোধক সম্ভাষণ জানালাম।
রাকিব নি রে ? ওপাশ থেকে সরাসরি প্রশ্ল।
জ্বী না, আপনি নাম্বার ভুল করেছেন।
আমি সৌদি আরব থাইকা বলতেছি। আপনি কে ? ধমকের সুরে তার পাল্টা প্রশ্ন। যেন কোন্ ভয়াবহ অপরাধ করে ফেলেছি আমি ! সবিনয়ে বললাম, দেখুন আমি কে সেটা জরুরি নয়। আপনি কাকে খুঁজছেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
এইটা কোন্ জায়গা ? আবার প্রশ্ন তার।
কিঞ্চিৎ বিরক্তই হলাম এবার। বললাম, দেখুন, ব্যক্তিগত মোবাইলের আবার কোন্ জায়গা কী ? এটা বাংলাদেশের যে কোন জায়গাই হতে পারে। আপনি যাকে চাচ্ছেন তাকে খুঁজুন।

এ মুহূর্তে হয়তো লাইনটা কেটে দেয়া উচিৎ। আমি তা করলাম না। কেননা কলটা আমি করি নি। অসৌজন্যতা দেখাই কী করে।
ওপাশ থেকে এবার নির্দেশের স্বর, আমি জানতে চাইছি এইটা কোন্ জায়গা ?
গুঁজো হয়ে বসে কম্পিউটারে ঘুরাঘুরির ঢিলেঢালা ভাবটা কেটে গেলো। টানটান হয়ে ওঠলাম। আপনি সম্ভবত ব্যক্তিসীমা লঙ্ঘন করছেন, শীতল কণ্ঠে জবাব দিলাম।
ওই মিয়া, আমি কি ডাকাইত, না ছিনতাইকারী ? এইটা কোন্ জায়গা কইলে কি আপনের মুখ খইস্যা পড়বো ? এক অর্থহীন তীব্র কটাক্ষ ঝরে পড়লো !

আমিও ততোধিক বিস্মিত ! একটা অদেখা অচেনা লোকের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়, মিনিমাম ভদ্রতাও খুইয়ে বসে আছে ! আমারও রাগ চাপা থাকলো না।
আপনি তারচে’ও গুরুতর অপরাধ করে ফেলেছেন। কারো ব্যক্তিগত অধিকারবোধকে তোয়াক্কা না করাটা ডাকাতির চে’ও বড় ডাকাতি।
ওই মিয়া, আমারে জ্ঞান দিতে আইছো ? কী করো তুমি ?
আরে বলে কী ! এ রকম পাল্টা উত্তরে একেবারে হতবাক হয়ে গেলাম ! অপমানবোধ এতোটাই তীব্র হয়ে ওঠলো যে, এখন তো আর মোবাইল বন্ধ করে দেয়া যায় না, হেস্তনেস্ত একটা করতেই হবে ! কণ্ঠে যতোটা সম্ভব দৃঢ়তা এনে কঠিন মেজাজে উত্তর করলাম, আমি কোন মূর্খ লোককে জ্ঞান দিতে যাই না কখনো।
কী কইলা ?
আমার তখন রোখ চেপে গেছে। ওপাশের বক্তব্যে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই বলে চললাম, মূর্খদের সমস্যা হচ্ছে এরা জানেই না যে এরা মূর্খ। খুব জ্ঞানীর ভাব নিয়া যেসব নির্লজ্জ মূর্খামী দেখায়, যারা তা দেখে, তারাও লজ্জায় মরে যায়। অথচ এই মূর্খরা বুঝতেই পারে না যে তার কাছা খুলে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
অই শালার পুত থামবি ? না পাছায় লাত্থি দিমু ?
ঠাশ করে কে যেনো চড় মারলো গালে আমার ! বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলাম। এমন তীব্রস্পর্শী গালির ল্ক্ষ্য ইতিপূর্বে আর কখনো হয়েছি কিনা মনে করতে পারছি না। লজ্জায় অপমানে কান দুটো ঝা ঝা করতে লাগলো। এরকম হতবুদ্ধিকর তিক্ত অভিজ্ঞতায় এক্কেবারে বাকরহিত হয়ে গেলাম। ফেলফেল করে চেয়ে রইলাম মোবাইলটার মনিটরের দিকে।

হঠাৎ বিদ্যুচ্চমক খেয়ে গেলো। আরে, তা কী করে সম্ভব ! ওটা কি আমারই নম্বর !
(১১/০৯/২০০৮)

[sachalayatan]

No comments: