Wednesday, November 5, 2008

@ ‘ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট’











‘ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট’
রণদীপম বসু

গল্পটির নাম খুব সম্ভবত ‘ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট’। ছোট্ট, এখন যাকে অণুগল্প বলা হয়। বেশ ক’বছর আগে কোথায় যেন পড়েছিলাম। কিন্তু অনুতাপ হচ্ছে, গল্পকার বা বইটির (বই নাকি ম্যাগাজিন নিশ্চিত নই) নাম এখন মনে পড়ছে না। একান্তই স্মৃতিনির্ভর হয়ে উঠার এই এক হ্যাপা।

গল্পের বিষয়বস্তু সাধারণ, কিন্তু ভাব অসাধারণ। সারাৎসার অনেকটা এরকম, অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েটি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করে অনিবার্য প্রয়োজনেই চাকরির বাজারে পা দিলো। কিন্তু যেখানেই আবেদন করুক, প্রচলিত নিয়মে আবেদনপত্রে যাবতীয় সার্টিফিকেটের সাথে একটা ক্যারেক্টার সার্টিফিকেটও জমা দিতে হয়। তার যে স্বভাব-চরিত্র অতিউত্তম, রাষ্ট্র বা সমাজবিরোধী কোন সন্ত্রাসী বা অবৈধ কর্মকাণ্ডে যে সে কখনোই জড়িত ছিলো না, একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক প্রত্যয়ন না পেলে চাকুরিদাতা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিন্ত হয় কী করে ! এটা প্রমাণ করতেই মেয়েটি ইতোমধ্যে বারকয়েক চেষ্টা করেও একটি সার্টিফিকেট পেতে ব্যর্থ হলো। একে তো অভাবী, তাও আবার অপরিচিতা, এরকম মেয়েকে সরকারের কোন দায়িত্ববান কর্মকর্তা না জেনে না শুনে প্রত্যয়ন দেবেন কী করে ! অত্যন্ত সঙ্গত কারণ। অথচ এই একটি সার্টিফিকেটের অভাবে তার সবকিছু যে ভেস্তে যায় যায়। অতঃপর একজন নিকটাত্মীয়ের চ্যানেল ধরে কোন এক ভীষণ ব্যস্ত সরকারি কর্মকর্তার অফিসে গেলো সে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও সিরিয়াল পাচ্ছে না। বেলা গড়িয়ে অবশেষে যখন ডাক পড়লো, সার্টিফিকেট নেবে কী, প্রথম প্রশ্নেই মেয়ে কুপোকাৎ ! সেই একই সমস্যা। ‘তোমাকে আমি কতোটুকু চিনি যে সার্টিফিকেট দেবো ? তোমার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে আমি নিশ্চিৎ হবো কী করে ?’ মেয়ে আর কী বলবে, ফেলফেল করে অসহায় চেয়ে থাকে। হয়তো কর্মকর্তার একটু দয়াও হলো, ‘ঠিক আছে, অমুক যখন বলেছে, দেখা যাক্‌ কী করা যায়। তুমি পাশের রুমে গিয়ে বসো।’

ছোট্ট এ গল্পটির শেষটুকু সম্ভবত এরকম ছিলো যে, ভিজিটরদের সাক্ষাৎদান শেষে দায়িত্ববান কর্মকর্তা উঠে ধীরে ধীরে পাশের রুমে ঢুকলেন এবং ভেতর থেকে দরজাটি বন্ধ হয়ে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ পর দরজাটি আবার খুলে গেলো। উস্কুখুস্কু চুল আর বিস্রস্তপ্রায় পোশাকে উদ্ভ্রান্তের মতো যে তরুণীটি বেরিয়ে এলো, তার হাতে একটি ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট। ওটাতে স্পষ্টাক্ষরে ইংরেজিতে জ্বলজ্বল করছে, ‘ ...... সে আমার পূর্ব পরিচিত। তার স্বভাব চরিত্র ভালো। ব্যক্তিগত জীবনে সে অত্যন্ত সৎ, কর্মঠ ও পরিশ্রমী। আমার জানামতে সে সমাজ বা রাষ্ট্রবিরোধী কোন অবৈধ কর্মকাণ্ডে কখনোই জড়িত ছিলো না। আমি তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।’

সমকালীনতার সংজ্ঞা আমি কেন যেন মাঝে মাঝেই ভুলে যাই। আমাদের এই সমাজ বা রাষ্ট্রে ‘ক্যারেক্টার’ নামীয় জিনিসটার দরকার আদৌ আছে কিনা তাও আমার জানা নেই। কিন্তু ‘ক্যারেক্টারের’ দরকার না থাকলেও ‘ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট’-এর প্রয়োজন যে এখনো ফুরিয়ে যায় নি, এটা কি আমাদের পরিচয়, না পরিহাস ?

[sachalayatan]

No comments: