|প্রসঙ্গ: ইয়োগা ও টুটুল ভাই, মতামত পোস্ট|
রণদীপম বসু
...
সচল আহমেদুর রশীদ টুটুল, তাঁর অন্য পরিচয় হলো তিনি একজন নিষ্ঠাবান কবি, ইয়োগা প্রেমিক, স্বনামধন্য ‘শুদ্ধস্বর’ প্রকাশনার গর্বিত সত্ত্বাধিকারী এবং একজন জনপ্রিয় সচল-প্রকাশকও। গায়ের রঙ অন্ধকারে বিভ্রান্ত হওয়ার মতো মিশমিশে কালো এবং মিটমিটিয়ে হাসতে খুব পছন্দ তাঁর। গায়ের রঙ আদৌ কালো কিনা, না কি আমারই সাময়িক দৃষ্টিবিভ্রম, জানি না। তবে তাঁকে ফর্সা গৌড়বর্ণ বললে খুব খুশি হন তিনি। তাঁর আরেকটি বিখ্যাত হবি হলো ছিটগ্রস্ত মানুষকে গ্যাড়াকলে ফেলে অসহ্যরকমের মজা লুটা। দীর্ঘ তালিকায যুক্ত হওয়ার যোগ্য এসব বহু গুণেই গুণান্বিত তিনি। যেমন ৯২ আজিজ কোঅপারেটিভ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার স্বল্পপরিসর জায়গা জুড়ে তাঁর প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরে গিয়ে কখনো কেউ অতি ভাগ্যবলে তাঁকে হাতেনাতে পেয়ে গেলে তিনি চা-বিড়ি না খাইয়ে ছাড়েন না বলে শুনেছি, কিংবা সবজান্তা, পান্থ বা তাঁদের মতো দুষ্টু ছেলেদের হাতে বিড়ি টানার সম্ভ্রান্ত কোন পাইপ দেখলে তো এদের অকালপক্কামী দেখে তাঁর মাথাটাই আউলে যায় ! মুরব্বি হিসেবে তা সহ্য করবেন কিভাবে ! তাই ছোঁ মেরে পাইপটি নিয়ে তিনি নিজেই পাইপের পাছায় আগুন লাগানোর অসাধ্য কাজটি সফল না হওয়াতক চালাতেই থাকেন চালাতেই থাকেন। এসব গুণের কথা বলতে লাগলে আমার আসল কথাটিই আর বলা হবে না !
প্রখ্যাত ব্লগার কাম অনেক অনেক পদবীধারী মাহবুব লীলেন অসংখ্য অকামের মধ্যেও সেদিন একটা কামের কথা বলেছিলেন আড্ডাচ্ছলেই- এক পলক দেখেই কীসে নাকি কী চিনে ফেলে ! অত্যন্ত ফেবারিট হবি হিসেবে টুটুল ভাইও যে এই আমাকে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব না করে নিমেষেই ছিটগ্রস্ত হিসেবে ঠাউরে নিলেন, তাতে যতো না আশ্চর্য হয়েছি, বিস্মিত হয়েছি আরও বেশি। শেষপর্যন্ত আমাকেই গ্যাড়াকলে ফেললেন তিনি ! গত মধ্য-এপ্রিল থেকে জুন জুলাই আগস্ট পেরিয়ে সেপ্টেম্বর,২০০৯-এর গতকাল পর্যন্ত রাত-দিনের বিভেদ ভুলিয়ে একনাগাড়ে আমাকে যে ইয়োগা পাণ্ডুলিপি তৈরির জোয়ালের তলে ঢুকিয়ে দিলেন তিনি, একবারও ভাবলেন না যে মানুষের একটু-আধটু সাধ-আহাদও থাকতে পারে এবং এর জন্যে একটুকু বিশ্রামেরও দরকার পড়ে। গত মে,০৯-এর ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির কারণে প্রায় মাসখানেক বাদ দিলে বাকি সময়টা অনেক ঘুমের দেনায় জর্জরিত আমি একদিকে টুটুল ভাই’র বংশ উদ্ধার করেছি আর অন্যদিকে বাংলায় ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়ামের জটিল ও হৃষ্টপুষ্ট একটা পাণ্ডুলিপি তৈরির কাজে কষ্টে-আনন্দে মগ্ন থেকেছি। ছিটগ্রস্ততার কারণে ফাঁকে-ফুঁকে হিজরা, সাহিত্যের দিনমজুর, অমর্ত্য সেন বা প্রফেসর ইউনূস কিংবা বাজেট বা পে-স্কেল, বিষয়ক কিছু কাজ ছাড়াও গল্প বা রম্যরচনা জাতীয় কাজ এবং ফাঁকে ফাঁকে অন্যান্য পাঁচমেশালি কাজও করে গেছি চেপে বসা একঘেয়েমি থেকে মুক্ত হবার লক্ষ্যে। ব্যক্তিগত চরিত্রে বাদাইম্যা স্বভাবধারী আমার এই সময়কালে হয়নি অনলাইনে ঘুরাঘুরি পাছড়া-পাছড়ি কিছুই। এবং যে সচলায়তনে একদিন ঢুঁ না মারলে আমার ব্যক্তিগত ক্যালেন্ডার থেকে ঐ দিনটাই মুছে যায়, সেখানেও চরম অনিয়মিত হয়েছি কেবল ঢুকলে আর সহজে বেরিয়ে অন্য কাজ করার মতো সময় ও ফুরসৎ থাকে না বলে। সময়ের বুড়ি ছুঁয়ে যাচ্ছে বলে টুটুল ভাই’র ক্রমাগত তাড়া খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত আশ্চর্য়ের সাথে খেয়াল করলাম যে, যে আমি লগ-ইন না করে সচলের প্রথম পেজের চেহারাটা অন্তত একবার হলেও ঢুঁ মেরে দেখার মলম মেখে এসে আসল কাজে লেগে যেতাম, সেই আমিই কিনা গত সপ্তা-দুয়েক কাল (হিসেবও গুলিয়ে গেছে হয়তো) সচলে কোনো ক্লিকই করি নি ! অন্য সাইট তো দূরের কথা ! গতকাল আপাত শেষ মেইলে গোটা পাণ্ডুলিপির শেষ অংশটুকুও পাঠানোর পর টুটুল ভাইকে কথাটা বলতেই তিনি কিনা অত্যন্ত পরিতৃপ্ত ভঙ্গির হাসি রিলিজ করতে করতে বলেন কিনা- ‘হেহ্ হেহ্ হে, এটার কারণ ব্যাখ্যা করে একটা পোস্ট দিয়ে দেন সচলে!’ বলে কী ! আপনারাই বলেন, এমন কথা শুনলে কার না পিত্তি জ্বলবে !
অতঃপর ভাবছি, ইয়োগা-পোস্ট আর দেবো না সচলে। সম্ভবত পয়ত্রিশ-ছত্রিশটা পোস্ট ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে। একটা পরিপূর্ণ পাণ্ডুলিপি বানাতে গিয়ে যে পরিমাণ কাজ করেছি এটার উপর, এমন এক-রৈখিক মেগা সিরিয়াল চালিয়ে আদৌ কি ফায়দা আছে কোনো ? পাঠকই বা কিভাবে নিজস্ব প্রয়োজনে এর যথাযথ সমন্বয় করবেন ? ই-বুক বা এ জাতীয় কোন সমন্বিত ব্যবস্থা না থাকলে আগ্রহী পাঠক তার জরুরি প্রয়োজনে কিভাবে দরকারি আসন বা মুদ্রা বা প্রাণায়াম বা ধৌতি বা আর্টিক্যাল কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী বাছাই ও নির্বাচনের কাজটুকু দ্রুত সময়ে করতে সক্ষম হবেন ? যেহেতু আগামী বইমেলার আগেই তা গ্রন্থাকারে প্রকাশের কাজ জোরেসোরে চালানো হচ্ছে, তাই ই-বুক বা এ জাতীয় কিছু করার ইচ্ছাও আপাতত নেই বা করা সঙ্গতও হবে না এখন। কিন্তু অসমাপ্ত কাজ ফেলে রাখাও নীতিগতভাবে মেনে নিতে পারছি না আমি। এ মুহূর্তে সচলদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত কামনা করছি। ইয়োগা এবং পাণ্ডুলিপির কাজ করতে গিয়ে আরেকটি যে কাজ করেছি, একটা স্বতন্ত্র ইয়োগা সাইট তৈরি করেছি আমি। ইয়োগা বিষয়ক শেষতম আগামী একটি মাত্র ছোট্ট পোস্টের মধ্যে কিভাবে সমগ্র ইয়োগাটাকে তার যাবতীয় আর্টিক্যাল, শতাধিক আসন, বহু মুদ্রা প্রাণায়াম ধৌতি বা রোগনিরাময় তথা প্রাসঙ্গিক সমস্ত বিষয়াদিকে ধারণ করিয়ে সচলে সংরক্ষণ করা যায়, তার একটা ধারণা নিয়ে ভাবছি। এতে করে এতো বড়ো ও বহু বহু ছবিসহ বিচিত্র কাজের বোঝা দীর্ঘকাল বয়ে যাবার হুজ্জত যেমন থাকবে না, তেমনি আগ্রহী পাঠকও একটা পোস্ট সংরক্ষণ করলেই যেন বিশাল একটা অন্তর্জালিক গ্রন্থকেই নাগালে রাখতে সক্ষম হন সে ব্যবস্থাও হয়ে যায়। জনৈক সচলের উক্তি অনুযায়ী সচলে নাকি সিলেটি, আবাদি ও টেকি সচলের অভাব নেই। তাঁরা কে কী ভাবেন এটাও জানা আবশ্যক বৈ কি !
এটুকু পড়েই নিশ্চয়ই প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল ভাইয়ের গ্যাঁড়াকলে ফেলার রাডারটা ফের সচল হয়ে উঠছে এতোক্ষণে ! তাই এখনই তাঁর হুমকী-ধামকী পৌঁছার আগেই সচল ভ্রাতা ও বহিনেরা, আপনারা কি আমাদের জন্য কার্যকর কোন সৎ-পরামর্শ ও মতামত দান করায় আগ্রহী হবেন ? রীতিমতো বর্তে যেতাম !
[sachalayatan]
No comments:
Post a Comment