Friday, December 10, 2010

| ছবির গল্প | আহত প্রজাপতি: নাগরিক প্রকৃতির বহমান প্রতীক |

 
| ছবির গল্প | আহত প্রজাপতি:
নাগরিক প্রকৃতির বহমান প্রতীক |
-রণদীপম বসু

প্রকৃতি তাকে বহুবর্ণিল অপূর্ব সুন্দর দুটো পাখা দিয়েছিলো। মধুর সন্ধানে দিনের বেলা ফুল থেকে ফুলে উড়ে বেড়ায়। পৃথিবীর সর্বত্রই রঙিন পাখাওয়ালা প্রজাপতি দেখা যায়। ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে পৃথিবীতে। বলা হয়, কল্পনায় যত রঙ আঁকা যায়, তত রঙেরই প্রজাপতি হতে পারে। আকৃতিও বিভিন্ন। পৃথিবীর বৃহত্তম প্রজাপতি ‘রাণী আলেকজান্দ্রার বার্ডউইং’। পাখা দুটোর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত এটি প্রায় পঁচিশ সেন্টিমিটার লম্বা। আর ক্ষুদ্রতম প্রজাপতিটির নাম ‘ওয়েস্টার্ন পিগমি ব্লু;। লম্বায় মাত্র এক সেন্টিমিটার। এতো সুন্দর যে পতঙ্গ, ভাবতে কষ্ট হয়, বেশির ভাগ প্রজাপতির স্বাভাবিক জীবনকাল মাত্র এক থেকে দুই সপ্তাহ। কোন কোনটা আবার আঠারো মাস পর্যন্ত বাঁচতে পারে। কিন্তু এতো স্বল্পায়ু হয়েও এই সুন্দর পতঙ্গ কি তার স্বাভাবিক জীবনকাল অতিক্রম করতে পারে, বিশেষ করে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণে আক্রান্ত এই নগরীতে ?

মিরপুর এক নম্বর গোলচক্করের পাশে সনি সিনেমা হলের ঠিক সামনে দিয়ে যেতে এই বেমানান পরিবেশে চোখে পড়লো প্রজাপতিটা। কেমন ছন্দহীনভাবে উড়ছে, যেন পড়ে যেতে চাইছে। অনুসরণ করলাম ওটাকে। একটা লেবুর ডালে বসলো পাখা দুটো মেলে রেখেই। মধু খেতে নয়, বুঝি কান্ত অবসন্ন, এবং আহতও ! ঘোলা দৃষ্টিতে দেখি তার ছেঁড়া-ফাড়া ছিদ্রাহত পাখা। মোহন প্রকৃতি তার সবটুকু দরদ দিয়ে পাখা দুটোর যে বিস্তৃত অংশ সাজিয়ে দিয়েছিলো অপরূপ রঙিন করে, সে অংশটুকু ছিঁড়েখুড়ে পড়ে গেছে নির্দয়ভাবে। সে কি ভুল করে ভুল জায়গায় এসে গেছে ! হতে পারে কোন শিকারি পাখির থাবা, কিংবা ক্রমাগত বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠা বিপর্যস্ত নগর-পরিবেশের ভয়াল নিষ্ঠুরতা, অথবা অন্যকিছু। এর কিছুই জানি না আমি। ক্যামেরার ছোট্ট মনিটরে আমি শুধু দেখছিলাম তার বিত পাখায় লেগে থাকা সেই রঙিন টুকরোটা, যেখানে চিরায়ত প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্য্য তখনো শেষ চিহ্ন হয়ে ঝলমল করছে…!

No comments: