| মতিউর ও হামিদুর,
স্মৃতিস্তম্ভের ভিন্নতা নিয়ে পাশাপাশি শুয়ে থাকা বীরশ্রেষ্ঠ দু’জন |
-রণদীপম বসু
…
১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বরে সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ ও অদম্য সাহসিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতির সেরা বীর সন্তানদেরকে শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় সম্মান ও উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এদের মধ্যে মরণোত্তর সাতজন সর্বশ্রেষ্ঠ উপাধি ‘বীরশ্রেষ্ঠ’, ৬৮ জন ‘বীর উত্তম’, ১৭৫ জন ‘বীর বিক্রম’ এবং ৪২৬ জন ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন।
স্মৃতিস্তম্ভের ভিন্নতা নিয়ে পাশাপাশি শুয়ে থাকা বীরশ্রেষ্ঠ দু’জন |
-রণদীপম বসু
…
১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বরে সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ ও অদম্য সাহসিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতির সেরা বীর সন্তানদেরকে শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় সম্মান ও উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এদের মধ্যে মরণোত্তর সাতজন সর্বশ্রেষ্ঠ উপাধি ‘বীরশ্রেষ্ঠ’, ৬৮ জন ‘বীর উত্তম’, ১৭৫ জন ‘বীর বিক্রম’ এবং ৪২৬ জন ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন।
শহীদ সাত বীরশ্রেষ্ঠরা (Virashreshtha) হলেন বাংলাদেশ রাইফেলস-এর ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ও সিপাহি মোহাম্মদ হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান । বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এরা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত আছেন। খুলনায় রূপসার তীরে শুয়ে আছেন রুহুল আমিন, মোস্তফা কামালের সমাধি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গঙ্গাসাগরে, মুন্সী আবদুর রউফ পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির নানিয়ার চরে শায়িত, মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের সমাধি রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে এবং নূর মোহাম্মদ শেখের সমাধি রয়েছে সম্ভবত যশোরের গোয়ালহাটিতে। উল্লিখিত এই পাঁচজন বীরশ্রেষ্ঠকে তাঁদের স্ব স্ব যুদ্ধক্ষেত্রের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের স্থানেই সমাহিত করা হলেও বাকি দু’জন বীরশ্রেষ্ঠর ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়নি। তাঁরা হচ্ছেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমান ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান। বর্তমানে এ দু’জনের সমাধিসৌধ রয়েছে ঢাকার মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিক্ষেত্রে।
.
.
শহীদ হামিদুর রহমানের (Hamidur Rahman) যুদ্ধক্ষেত্র ছিলো সিলেটের সীমান্তবর্তী শ্রীমঙ্গল থানার ধলাই গ্রামে। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিক্ষেত্রে স্থাপিত তাঁর সমাধিসৌধের স্মৃতিফলকে উদ্ধৃত রয়েছে- ‘১৯৫৩ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার খোরদা খালিশপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদেন। ১৯৭১ সালে ২৮ অক্টোবর তারিখে শ্রীমঙ্গলে ধাপাই সীমান্ত এলাকায় শত্রুর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড যুদ্ধ করে তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন।’
.
.
অন্যদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান (Motiur Rahman) পশ্চিম পাকিস্তানের করাচী শহরে চাকুরীরত অবস্থায় একাত্তর সালের ২০ আগস্ট অবাঙালি পাইলট অফিসার মিনহাজ রশীদের কাছ থেকে একটি টি-৩৩ বিমান ছিনতাই করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উড়ে যাবার সময় থাট্টার অদূরে ভারতীয় সীমান্ত থেকে ৩৫ মাইল দূরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং মতিউর রহমান শহীদ হন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালের ২৪ জুন তাঁকে শত্রুভূমি পাকিস্তান থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এনে স্বাধীন বাংলার মাটিতে সমাহিত করা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিক্ষেত্রে।
.
.
উল্লেখ্য যে, এই সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর স্মৃতিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহিমান্বিত করে রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁদের স্ব স্ব সমাধিক্ষেত্রে এক অভিন্ন আকার ও ডিজাইনে ভিন্ন ভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সে মোতাবেক বিভিন্ন অঞ্চলে সমাহিত বীরশ্রেষ্ঠদের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলেও মিরপুর বুদ্ধিজীবী সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের ক্ষেত্রে সে মর্যাদা রক্ষিত হয়নি বলেই মনে হয়েছে। এখানে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শহীদ মতিউর রহমান ও শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমানের সমাধি পাশাপাশি থাকায় যথাযথ ডিজাইনে নির্মিত মতিউরের স্মৃতিস্তম্বের পাশে অবস্থিত খুব সাধারণ কবরের মতো পড়ে থাকা হামিদুরের সমাধিটি সচেতন নাগরিকদের দৃষ্টিতে শুধু যে মানসিকভাবে পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে ত-ই নয়, বুকের ভেতরে একটা লজ্জাতুর অপরাধবোধও জেগে উঠে। এই যথাযথ অভিন্ন ডিজাইনে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের স্মৃতিস্তম্ভ আর কোথাও কি নির্মিত হয়েছে ? যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে আমাদের একান্ত শ্রদ্ধার এই জায়গাটাকে এভাবে আর কতোদিন লজ্জায় আক্রান্ত করে রাখবো আমরা ? যত দ্রুত সম্ভব এ লজ্জার অবসান হোক- মহান স্বাধীনতার মাসে আমাদের এই নাগরিক মিনতিটুকু কার কাছে জানাবো আমরা ?
…
…
(আরো ছবি এখানে: বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান )
…[ The Daily Ittefaq - March 19, 2011 ]
...
No comments:
Post a Comment