Monday, June 20, 2011

| এন্থনি উইলসন, কিডনি ছাড়াই ঘুরে বেড়ান গোটা পৃথিবী !

 
| এন্থনি উইলসন,
কিডনি ছাড়াই ঘুরে বেড়ান গোটা পৃথিবী !
- রণদীপম বসু
 বাইশ বছর আগে তাঁর দু’টো কিডনিই ফেলে দেয়া হয়েছে। ইউরিনারী সিস্টেমও নাই। মি. এন্থনি উইল্সন, বয়স ৪২, অষ্ট্রেলিয়ার নাগরিক। কিডনি ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন এদেশ থেকে ওদেশ। অষ্ট্রেলিয়ার অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা তাঁর ভেড়ার খামার থেকে পশম উৎপাদন ও পোশাক প্রস্তুত করা। আয় করেন প্রচুর। ব্যয় করার সামর্থ ও ইচ্ছা দু’টোই রয়েছে তাঁর যথেষ্ট; কিন্তু…?
 
বাইশ বছরে কখনোই মূত্র-ত্যাগ করেন নি- এটাও কি সম্ভব! এরকম কৌতুহল উদ্দীপক তথ্য পেয়ে ছুটে গেলাম ঢাকার মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। দুর্ভাগ্য, ততক্ষণে ফিরে গেছেন তিনি দেশের উদ্দেশ্যে। দেখা হয়নি। ইচ্ছে থাকলেও কোথাও দু’দিনের বেশি থেকে যাবার জো নেই তাঁর! সেই সতের বছর বয়সে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর চূড়ান্ত পর্যায়ে অপারেশন করে ইউরিনারী সিস্টেম সহ দু’টো কিডনি ফেলে দেয়ার সাথে সাথে জীবন থেকে পুরো খাদ্য তালিকাটাই বাতিল হয়ে গেছে মুহূর্তে। অবিশ্বাস্য! তবে কি কিছুই খান না তিনি! আসলেই তাই। শরীরের অতি আবশ্যকীয় পরিপাকতন্ত্রটাকে সচেতন স্পন্দনে জীইয়ে রাখতেই হয়তো অবশিষ্ট জীবনের জন্য একমাত্র বরাদ্দ তিনবেলা তিনটি আপেল । সাথে অনধিক চার আউন্স পানি। কী অদ্ভুত ব্যাপার! প্রচলিত ধারণায় এটাকে খাবার বলি কী করে! এতে কি একটা মানুষ বেঁচে থাকতে পারে? আসলে মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই। এর প্রমাণ মি. এন্থনি উইলসন। প্রতি দু’দিন অন্তর অবধারিত এবং অতি ব্যয়বহুল ডায়ালোসিসের মাধ্যমে ব্লাড-সাকশন করে রক্তের মধ্যে জমে ওঠা অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য সরিয়ে পরবর্তি তিনদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি-উপাদান রক্ত-শরীরে জমা করে নিতে হয় যাঁকে। এজন্যে প্রতি সপ্তাহে পে’ করতে হয় আড়াই হাজার ইউ এস ডলার। পৃথিবীর যেখানেই যান না কেন, এ কারণেই দু’দিনের বেশি কোথাও অবস্থান করতে পারেন না তিনি।
.
 সামর্থের তুলনায় অর্থটা তাঁর কাছে কিছুই নয় হয়তো। তবু জলজ্যান্ত এই পৃথিবীর যাবতীয় উপভোগের সবক’টা দরজা যখন নিরূপায় অনধিগম্য হয়ে ওঠে, মানুষ বাঁচে কী করে ! দেখতে শুনতে চমৎকার গড়নের এন্থনিকে দেখে নাকি বুঝার কোন উপায়ই নেই যে এ পৃথিবীর জল হাওয়ায় বিচরণ করেও কিছুই তাঁর ইন্দ্রীয়ভোগ্য নয়।
.
 মানুষের জীবন কত্তো ছোট। এন্থনির ভাষ্যে, সতেরোর পরেই ‘এক্সটেনশন লাইফ’ কাটাচ্ছেন তিনি। আর কতদিন কাটাতে পারবেন তা জানেন না। তবু এটুকু দিয়েই মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চান। এ জন্যেই চষে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীটা। বাংলাদেশেও এসেছেন। গিয়েছেন আমাদের প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ মানুষগুলোর কাছেও। অফার করেছেন- কী চায় তারা। কিন্তু কী আশ্চর্য! নিরন্তর অভাব যাঁদের নিত্য সঙ্গি, আমাদের বাঙালী-মনের সেই গরীব মহিলারা তাঁর পারসোনাল প্রোফাইল জানার পর আর কিছুই চায় নি তাঁর কাছে। তাঁর ইচ্ছেকে সহানুভূতি সাধুবাদ জানিয়েছে শুধু, আর প্রাণভরে ‘দোয়া’ করেছে তাঁর জন্যে। এন্থনি কি অভিভূত? আবারো আসবেন তিনি বাংলাদেশে। ফের কখনো দেখা হলে তাঁর উপলব্ধির কাছেই হয়তো জানতে চাইবো- সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে একটা মানুষের কী কী একান্ত আবশ্যক।
.
 অষ্ট্রেলিয় নাগরিক এন্থনি উইলসনের সাথে দেখা হয়নি আমার। তবুও বিষয়টা কি সত্যি বিশ্বাসযোগ্য? ইচ্ছে করেই তাঁর রেখে যাওয়া এড্রেস- Anthony Wilson, E-mail: awilson(at)executiveinfluence.com -এ ঢুকা হয়নি, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হওয়ায় যদি আহত বোধ করেন তিনি, কিংবা আহত হই নিজেই ! আশা করছি কোন পাঠকও তাকে অযথা বিব্রত করবেন না। Don’t mail to Anthony, Please ! তবু এন্থনিকে নিয়ে লিখছি শুধু নিজস্ব আত্মোপলব্ধিটুকু জাগিয়ে তুলতেই। আহা, আমাদের কত রকমের চাওয়া-পাওয়া, কত অতৃপ্তি !

(২০০৯)

[পুনশ্চঃ দু’বছর আগে এই লেখাটা একটা ব্লগে পোস্ট দেয়ায় অকৃত্রিম আগ্রহ ও আন্তরিক কৌতুহল নিয়ে এন্থনিকে মেইল করেছিলেন অনেকেই। তিনি নাকি এতে বিব্রত ও মনঃক্ষুণ্ন হয়েছিলেন খুব। এ খবর পেয়ে বিব্রত আমি পোস্টটাকে নামিয়ে ফেলেছিলাম। আজ আর জানি না এন্থনি কোথায় কেমন আছেন। তবু পাঠকদের কাছে সানুনয় অনুরোধ, দয়া করে কেউ তাঁকে মেইল করে ফের বিব্রত করবেন না। তাতে বিষয়টা খুবই অবিবেচনাপ্রসূত হয়ে যেতে পারে। তাঁর জন্য আমাদের সর্বোচ্চ শুভকামনা রইলো।]

No comments: