Monday, December 24, 2012

| স্বগত প্রশ্নগুলি…|


.
| স্বগত প্রশ্নগুলি…|
রণদীপমবসু

‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার
সবাই বলে মিথ্যেবাদী বকিসনে আর খবরদার !…’
সুকুমার রায়ের এই ছড়াটাকে যতোই শিশুতোষ বলি না কেন, এটা কি আসলে শুধুই শিশুতোষ সমস্যা ? মোটেই তা নয়। আমাদের চারপাশে কিলবিল করা মুখ আর মুখোশের বৈপরিত্যের বিপুল ছড়াছড়িতে ফুঁসে উঠা প্রাত্যহিক অসংখ্য প্রশ্নগুলো যে কতো বেশি যৌক্তিক হয়ে ওঠে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এগুলোর উত্তর হয়তো আমরা জানি, সবাই জানে। কিন্তু এর জবাব দেবে না কেউ। কেন দেবে না ? সেটাও হয়তো জানি। এটা কি আমাদের ভয়, ভণ্ডামি, না কি অন্য কিছু ? তাকেও মাঝে মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ইচ্ছে হয়।
এই ইচ্ছেটাকেই নাড়াচাড়া করার ইচ্ছেতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘স্বগত প্রশ্ন’ নামে তাৎক্ষণিক ভাব প্রকাশের একটা প্রয়াস শুরু করি। হঠাৎ খেয়াল হলো, এই এলোমেলো প্রয়াসটাকে এখানে নিয়মিত আপডেটসহ একে একে সাজিয়ে রাখি না হয়। একসময় তা-ই যদি সময়ের নিজস্ব চিৎকার হিসেবে উৎকীর্ণ হয়ে থাকে, মন্দ কী !!



স্বগত প্রশ্ন : ০১
(২৬-১১-২০১২)
যে দেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ, সেদেশের সামরিক বা বেসামরিক বাহিনীর হাতে বন্দুকের বদলে কি গোলাপ ফুল থাকে !
স্বগত প্রশ্ন : ০২
(৩০-১১-২০১২)
ম্যাডাম খালেদা জিয়া’র কথিত মহাসমাবেশের বক্তব্যের লেজ ধরে মহামহিম এবিএম মুসা-আসিফ নজরুল গং হঠাৎ করেই জরুরি অবস্থার ধূয়া তোলে টকশোগুলি ভাসিয়ে দিচ্ছেন !
এটা কি কোন পাগলকে নাও না-ডুবানোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া !!
স্বগত প্রশ্ন : ০৩
(৩০-১১-২০১২)
জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না আজকের ‘কালের কণ্ঠে’র প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি কলামে বলছেন- ‘যেকোনভাবেই হোক একটি হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী, যেটা প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য, সামরিক কিংবা বেসামরিক, দেশি কিংবা বিদেশি, তা বলতে পারবো না। এই দুই প্রচণ্ড জেদি নেত্রী যে রকম ‘ষাঁড়ের লড়াইয়ের’ প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাতে কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া নিস্পত্তির সম্ভাবনা আমি দেখি না।’
আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, সুশীল রাজনীতিবিদ মান্না সাহেব আসলে কাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন !!
স্বগত প্রশ্ন : ০৪
(৩০-১১-২০১২)
কতোটা বয়স পর্যন্ত মানুষ ভীমরতি-মুক্ত থাকে ?
স্বগত প্রশ্ন : ০৫
(০২-১২-২০১২)
আইনের ভাষায় যা ‘মানবতা বিরোধী অপরাধ’, আমরা সাধারণ পাবলিকরা তাকেই সরাসরি ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবেই উদ্ধৃত করি। কেননা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধই এর প্রতিপাদ্য বিষয়।
কিন্তু এটাতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে উল্লেখ করে যাঁরা টকশোগুলোতে বিভ্রান্তি ছড়ান, তাঁরা কি বুঝতে পারেন যে আমরা তাঁদের বেরিয়ে পড়া গোপন লেজটা ঠিকই দেখে ফেলছি !!
স্বগত প্রশ্ন : ০৬
(০২-১২-২০১২)
কোন রাজনৈতিক আদর্শের সাথে ভিন্নমত পোষণ ও তার সমালোচনা করাকে সবাই নাগরিক অধিকার বলেই স্বীকার করেন।
তাহলে ধর্মকে রাজনীতির মাঠে নামানোর কারণে সংশ্লিষ্ট ধর্মের সমালোচনা ও বিরুদ্ধাচরণ করলে ধর্মের অবমাননা হয় কী করে !!
বগত প্রশ্ন : ০৭
(০৩-১২-২০১২)
নিজেরা যুদ্ধাপরাধী রাজাকার এক্টিভিটির পক্ষে না বিপক্ষে, তা নিয়ে চিন্তায় সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে যায় কারা !?!
স্বগত প্রশ্ন : ০৮
(০৪-১২-২০১২)
যারা এদেশের সংবিধানকেই তোয়াক্কা করেনি, সেই যুদ্ধাপরাধী জামায়েত ইসলামীকে সাংবিধানিক অধিকার দেয়ার জন্য যে সব সুশীল মহাজন হাতে-মুখে তুবড়ি ছুটিয়েছেন, এটা আপনাদেরই বিশাল কৃতিত্ব যে এই বিজয়ের মাসেই যুদ্ধাপরাধীদেরকে চলমান বিচারের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকার স্পর্ধা জুগিয়েছেন। ইতিহাস বলে, এমনিতেই বাঙালি নাকি শংকর জাতি। তাই বেজন্মা হওয়ার মধ্যেও নতুন করে আর লজ্জার কী !
.
এখন জানতে ইচ্ছে করছে, আপনাদের গোপন খায়েশ ষোলআনা পূর্ণ করতে এবার কি ষোল ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় দিবসেও হরতাল ডাকা হবে !?!
স্বগত প্রশ্ন : ০৯
(০৫-১২-২০১২)
জামায়াতের হরতালে তাদের দ্বারা মার্কিন দূতাবাসের গাড়ি ভাংচুরের দায় কাঁধে নিয়ে আফসোস ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার অঙ্গিকারের মাধ্যমে জামায়াত-মার্কিন সম্পর্কের মধু-মাখানো গাঁটছড়াটা যেমন স্বীকৃত হলো,
তেমনি জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক লেবাস ধারণের ফলে এখন কি ফেসবুক ইত্যাদি থেকে মুমিন-বান্দাদের অলৌকিক ঘটনাপুঞ্জিসহ ঈমান-আকিদা রক্ষার ডিজিটাল পাঠশালাগুলি বন্ধ হয়ে যাবে ?
স্বগত প্রশ্ন : ১০
(০৬-১২-২০১২)
ছোটবেলায় একটা কৌতুক-গল্প শুনতাম এভাবে- ‘মাগো মা, তোমাকে বিক্রি করে ফেলবো, তয় এমন দাম চাইবো যাতে কেউ কিনতে না পারে !’
জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক গঠনতন্ত্র সংশোধনীটা কি এরকম মনে হয় না, নিচের দুটো ধারার বক্তব্য পাশাপাশি আমলে নিলে !?!-
ধারা ৭-এর ১, ২, ও ৩ উপধারা বিলুপ্ত করে ৪ উপধারায় দলের সদস্য হওয়ার শর্তাবলির মধ্যে বলা হয়, ব্যক্তিগত জীবনে ফরজ ও ওয়াজিবগুলো আদায় করেন এবং কবিরা গুনাহ হতে বিরত থাকেন।
ধারা ১১-এ অমুসলিম নাগরিকদের জামায়াতে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে সংশোধনীতে বলা হয়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচির সহিত একমত পোষণ করিলে বাংলাদেশের যেকোনো অমুসলিম নাগরিক ইহার সহযোগী সদস্য/সদস্যা হইতে পারিবেন।
[ সূত্র : নয়াদিগন্ত http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=57593 ]
স্বগত প্রশ্ন : ১১
(০৮-১২-২০১২ : রাত ১০.২৫)
বাঙালির বিজয়ের আনন্দ কি বিএনপি-জামায়াত গং-এর জ্বালা ধরিয়ে দিলো !
নইলে আনন্দে উদ্বেল উচ্ছল যাত্রী-ঠাসা ফিরতি বাসের মধ্যে এরা এই মুহূর্তে আগুনে-ককটেল ছুঁড়ে মারছে কেন !?!
স্বগত প্রশ্ন : ১২
(১০-১২-২০১২)

সাংবাদিকতার আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের মুখপত্র বিএনপিপন্থী পত্রিকা ‘আমার দেশ’কে আইনানুগ বিচারের সম্মুখীন করা কি রাষ্ট্রের জরুরি দায়িত্ব নয় ? এটাও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নয় কি ??
স্বগত প্রশ্ন : ১৩
(১০-১২-২০১২)

ছাত্রলীগের নির্বোধেরা কি এখনো বুঝতে পারছে না যে, তাদের ভেতরেই তাদেরকে গর্দভ বানিয়ে খুব কৌশলে সৎলোকের শাসন কায়েম করে ফেলা হচ্ছে…!! এখন কি নারায়ে তকবির শ্লোগানটি প্রকাশ্যে দেয়ার বাকি !!
.
সহসূত্র :
[ একের পরে এক ছাত্রলীগের হাতে খুন হওয়ার,আগুন লাগানোর, পিটানোর ভিডিও দেখতেছি। এমন সব ভিডিও, যেগুলির এরেঞ্জমেন্ট যেকোনো বিয়েবাড়ির এরেঞ্জমেন্ট থেকেও বেশি ভালো। বেশ উচ্চ রেজলিউশন, সুন্দর সাইট থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে ভিডিও গুলি করা হয়।
এই ভিডিও গুলি সাধারন জনগণের হাতে থাকলেও ওভার নাইট মিডিয়ার হাতে চলে আসে। মাঝে মাঝে ফেসবুকের কিছু পেইজেও চলে আসে মিডিয়ার আগেই।
এ থেকে সিদ্ধান্তে আশা যায় ছাত্র লীগ এমন এক
টা দল, যারা নিজেদের অপকর্মের ভিডিও বানিয়ে বাজারে ছাড়তে পছন্দ করে।
এতক্ষন যা বললাম, এইগুলা খুব জরুরী কথা বার্তা।
আসল কথা হইলো, পূর্বের প্রস্তুতি ছাড়া এই ভিডিও গুলা করা মোটেই সম্ভব না। আর ছাত্র লীগ একই গর্দভের দল যে, নিজেদের অপকর্মের ভিডিও নিজেরা মার্কেটিং করে।
আরেক বিষয় হইলো, আইজ পর্যন্ত শিবিরের একটা ভিডিওও বাইর হয়নাই। তার মানে ইসলামী ছাত্র শিবির কোন ধরণের খুন, বা পিটাপিটির সাথে জড়িত নয়।
ধুর শালার, দেশরে ডিজিটাল বানাইল কে, আর গাছের আম খাইতেছে কে।]- কপিরাইট : ইশতিয়াক রউফ।

স্বগত প্রশ্ন : ১৪
(১২-১২-২০১২)

যে ১২-১২-১২ তারিখটা আজ পেরোচ্ছি, প্রচলিত বর্তমান অংকের হিসাবে আগামী একশ বছরের মধ্যে তা আর পাবো না।
ঠিক তেমনি আজকের তারিখে যেসব ভণ্ড রাজনীতিক আর বুদ্ধি-বেশ্যাদের দেখছি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিডিয়া পর্দায় ও বিচিত্র মঞ্ঝে, তাদের মুখগুলিও যদি আগামী একশ বছরের মধ্যে আর দেখতে না হতো, আমাদের সমাজ জাতি আর রক্তাক্ত বিবেক কি এদের বুদ্ধিবৃত্তিক ধর্ষণ থেকে রক্ষা পেতে পারতো না ? নিজেকে অন্ধ বধির করে রাখাটাই কি আমাদের ভবিতব্য !!
স্বগত প্রশ্ন : ১৫
(১৩-১২-২০১২)

অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষ্যে এতোকাল জানতাম যে, কোন খুনি বা অপরাধী সচেতনভাবে তার কৃতকর্মের আলামত বা প্রমাণ রাখতে চায় না। সে কারণে সাংবাদিককে মারধর করা বা ক্যামেরা কেড়ে নেয়া খুব স্বাভাবিক বিষয় ছিলো বলে অনেকটা নিরাপদ দূরত্ব থেকেই তারা জুম করে ঘটনার প্রামাণ্য ধারণ করতেন। অথচ বিশ্বজিৎ হননের ঘটনায় সবকিছু উল্টে গেলো ! কোন কোন ফুটেজে দেখা গেলো, দু’-তিন হাত ব্যবধান থেকে আমাদের মহান সাংবাদিক ভাইরা কী অবিশ্বাস্য নিরাপত্তায় ঝুঁকিমুক্তভাবে বিরতিহীন ছবি তুলে যাচ্ছেন ! কেউ তাদেরকে একটা ফুলের টোকাও দিচ্ছে না !
তাহলে কি নির্বোধ আমাকে এটাই বিশ্বাস করতে হবে যে, হঠাৎ করেই খুনি অপরাধীরা মিডিয়া-প্রীতির পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে অপরাধ বিজ্ঞানকে ভুল সাব্যস্থ করলো !!
স্বগত প্রশ্ন : ১৬
(১৪-১২-২০১২)

লক্ষ লক্ষ নিরীহ নারী-পুরুষ হত্য ও ধর্ষণ এবং জাতির মেধাবী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের হোতা সেই জঘণ্য যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সহযোগীদের বিচার যারা চায় না বা বাধাগ্রস্ত করে কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক ভণ্ডামি দিয়ে এড়িয়ে যেতে চেয়ে মানবতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তারা আসলে কার জন্ম ! তাদেরকে কি মানুষের জন্ম বলে স্বীকার করা যায় ?
এই অমানুষরা অন্য যেকোন হত্যা বা অপরাধের বিচার চাইবার নৈতিক অধিকার কি পেতে পারে ? এদের যারা আইনজীবী বা আদালতের সাথে সম্পৃক্ত, পবিত্র বিচারাঙ্গনে পা রাখার অধিকার কি তাদের আছে ? কোনো সভ্য জাতি কি পারে তাদেরকে কোন বিচারালয় অপবিত্র করার সুযোগ দিতে !?!
স্বগত প্রশ্ন : ১৭
(১৪-১২-২০১২)

ইনিয়ে-বিনিয়ে ‘যদি’ ‘কিন্তু’ এইসব বিভ্রান্তিকর শব্দ ছাড়া যারা স্পষ্ট করে গলা ছেড়ে জোরালোভাবে একাত্তরের এতো এতো মেধাবী বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার চাইতে পারে না, তাদের মুখেই বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার চাওয়া বিশ্বজিৎ ও তার পরিবারের সাথে এমনকি জাতির সাথেও নির্মম কৌতুক করা নয় কি !?!
মায়াকান্না মুখর এই জঘণ্য কৌতুককারীদেরকে কী বলে ?
স্বগত প্রশ্ন : ১৮
(১৬-১২-২০১২)

আমি আমার দেশকে আমার মায়ের মতো ভালোবাসি, কিন্তু দৈনিক পত্রিকা ‘আমার দেশ’কে নয়। যুদ্ধাপরাধের সহযোগী যে পত্রিকাটি তার ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমার দেশকে অপমান ও লাঞ্ছিত করেছে এবং করছে তাতে কি মনে হয় না, তারা খুব সচেতনভাবেই এই নামটি পছন্দ করেছে দেশপ্রেমিক নাগরিকদেরকে আহত রক্তাক্ত করার দুরভিসন্ধি নিয়ে !?!
তাই রাষ্ট্রিয়ভাবে এমন নিয়ম থাকা কি বাঞ্ছনীয় নয়, কোন পত্রিকা, মিডিয়া, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বা অন্য যেকোন কিছুর এমন নাম রাখা যাবে না যা কখনো দেশ ও জাতির নিজস্ব ভাবমূর্তি দেশপ্রেমিক ভাবাবেগের জন্য বিব্রতকর হওয়ার সুযোগ বা আশঙ্কা তৈরি করতে পারে ?

No comments: