.
তবে মীমাংসকদের পরমাণুবাদ এতো সূক্ষ্ম বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তাঁদের মতে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ত্রসরেণুই বস্তুর সূক্ষ্মতম অংশ, অতএব এগুলিকেই পরমাণু বলা হবে। এর চেয়ে সূক্ষ্ম কোনো অংশের কথা কল্পনামাত্র। মীমাংসকেরা এভাবেই পরমাণুবাদ গ্রহণ করেছেন।
জৈমিনি’র মীমাংসাসূত্রে পদার্থের উল্লেখ নেই। শবরভাষ্যে (১০/৩/৪৪) দ্রব্য, গুণ, কর্ম ও অবয়বের উল্লেখ থেকে অনুমান হতে পারে যে শবরস্বামী চারটি পদার্থ স্বীকার করেছিলেন। তবে শবরের কাছে পদার্থের আলোচনা বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেনি। কিন্তু প্রভাকর ও কুমারিল বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব বিষয়ে ন্যায়-বৈশেষিকদের সাথে একমত হয়েছিলেন বলেই তাদের কাছে ন্যায়-বৈশেষিক প্রতিপাদ্য পদার্থ-তত্ত্ব সবিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছিলো। তবে বহির্জগতের বস্তুগুলিকে ঠিক কয়টি পদার্থের অন্তর্গত করা হবে- এ বিষয়ে উভয়ে একমত নন।
অন্যদিকে কুমারিল ভট্ট প্রভাকরের এই তিনটি নতুন পদার্থ স্বীকার করেন নি; এবং তিনি বৈশেষিক প্রতিপাদ্য বিশেষ এবং সমবায়ও প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে কুমারিল-মতেও অভাব একটি পদার্থ। অতএব ভাট্টমত বিচারে পদার্থ মোট পাঁচ প্রকার- দ্রব্য, গুণ, কর্ম, জাতি বা সামান্য এবং অভাব।
কুমারিল শক্তি, সাদৃশ্য ও সংখ্যাকে পদার্থ বলে মনে করেন না। শক্তি ও সংখ্যা কুমারিলের মতে পদার্থ নয়, দ্রব্যের গুণ। সাদৃশ্য হলো দুই বা ততোধিক বস্তুর বৈশিষ্ট্য।
কুমারিল শব্দ, ধর্ম ও অধর্মকে গুণ বলে স্বীকার করেন নি। তিনি ধ্বনি, প্রাকট্য ও শক্তিকে গুণ বলে স্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, ধ্বনি বায়ুর গুণ এবং নিত্য শব্দের প্রকাশক। বস্তু প্রাকট্যের আশ্রয় স্বরূপ। বস্তুর জ্ঞান হবার পর সেই বস্তুর গুণ হলো প্রাকট্য। শক্তি কোনো স্বতন্ত্র পদার্থ নয়, শক্তি দ্রব্যের গুণ। দ্রব্য, গুণ, সামান্য ও কর্মকে আশ্রয় করে শক্তির উদ্ভব হয়। ভাট্ট-মতে শক্তি দুই প্রকার- লৌকিক ও বৈদিক। লৌকিক শক্তি অর্থাপত্তির সাহায্যে জানা যায় এবং বৈদিক শক্তি বেদের মাধ্যমে জানা যায়। শক্তি প্রত্যক্ষ করা যায় না, কার্য থেকে এর অনুমান করে নিতে হয়। কিন্তু প্রভাকরের মতে শক্তি ও সংখ্যা গুণ নয়, স্বতন্ত্র পদার্থ।
| মীমাংসা দর্শন-১২ : প্রমেয় পদার্থ |
রণদীপম বসু
…
৩.৫ : প্রমেয়
…
মীমাংসা দর্শন মতে, সমস্ত বস্তুই হয় প্রমাণ অথবা প্রমেয়ের অন্তর্গত। এই মতে, প্রমাণ হলো প্রমা বা যথার্থ জ্ঞানের করণ বা উপায়, আর প্রমেয় হলো যথার্থ জ্ঞানের বিষয়। আর প্রমেয়ভূত মূল বিষয়কে বলা হয় পদার্থ।
রণদীপম বসু
…
৩.৫ : প্রমেয়
…
মীমাংসা দর্শন মতে, সমস্ত বস্তুই হয় প্রমাণ অথবা প্রমেয়ের অন্তর্গত। এই মতে, প্রমাণ হলো প্রমা বা যথার্থ জ্ঞানের করণ বা উপায়, আর প্রমেয় হলো যথার্থ জ্ঞানের বিষয়। আর প্রমেয়ভূত মূল বিষয়কে বলা হয় পদার্থ।
এখানে উল্লেখ্য, বস্তুস্বাতন্ত্র্যবাদী মীমাংসকরা প্রধাণত বেদের প্রামাণ্য
বা স্বতঃসিদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে দার্শনিক বিচারের আওতায় এসে ভাববাদ
খন্ডনে বাহ্যবস্তুবাদী ন্যায়-বৈশেষিকদের মতো যেমন প্রমাণতত্ত্বের নানা
মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন ও বিচার করতে বাধ্য হয়েছেন, তেমনি তাঁরা প্রমেয়ভাবে
ন্যায়-বৈশেষিকদের বাহ্যবস্তুবাদসম্মত বহির্জগতের ব্যাখ্যাও বহুলাংশেই গ্রহণ
করেছেন। এ কারণে তাঁরা বস্তু যেসব মৌলিক উপাদান দ্বারা গঠিত হয় সেসবের
শ্রেণীবিন্যাস করার পাশাপাশি বৈশেষিকদের পরমাণুবাদও গ্রহণ করতে দ্বিধা
করেননি। কিন্তু মীমাংসকদের পরমাণুবাদ বৈশেষিকদের মতো সূক্ষ্ম নয়।
বৈশেষিক
মতে, কোনো বস্তুকে বিভাগ করতে করতে শেষ পর্যন্ত যে-সর্বসূক্ষ্ম অংশের কথা
স্বীকার করতে হবে তারই নাম পরমাণু। বস্ত্র সূত্র-গঠিত, সূত্র অংশু গঠিত,
অংশু তদংশ গঠিত- এভাবে অবয়বী-অবয়ব বিভাগের যেখানে শেষ বা বিশ্রাম তারই নাম
পরমাণু। পরমাণুর আর অবয়ব নেই, পরমাণুতেই ক্ষুদ্রতা বিশ্রান্তির বা বিভাগ
নিবৃত্তির শেষ। পরমাণু অতীন্দ্রিয়; ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সূক্ষ্মতম অংশের নাম
ত্রসরেণু। দুটি পরমাণুর সংযোগে একটি দ্ব্যণুক সৃষ্টি হয় এবং তিনটি
দ্ব্যণুকের সংযোগে একটি ত্রসরেণু সৃষ্টি হয়। বলা হয়,- ‘গবাক্ষরন্ধ্রে
সূর্যকিরণের মধ্যে গতিশীল সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম যে রেণু দেখা যায়, তারই নাম
ত্রসরেণু’।
তবে মীমাংসকদের পরমাণুবাদ এতো সূক্ষ্ম বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তাঁদের মতে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ত্রসরেণুই বস্তুর সূক্ষ্মতম অংশ, অতএব এগুলিকেই পরমাণু বলা হবে। এর চেয়ে সূক্ষ্ম কোনো অংশের কথা কল্পনামাত্র। মীমাংসকেরা এভাবেই পরমাণুবাদ গ্রহণ করেছেন।
পদার্থ
উপলব্ধির বিষয় হিসেবে জগতে বহু বস্তু প্রতীত হয়, ন্যায়-বৈশেষিকেরা এগুলিকে ‘পদার্থ’ নামে কয়েকটি মূল শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। যা জ্ঞেয়, যা প্রমেয় এবং যা অভিপ্রেয় তা-ই পদার্থ। বৈশেষিক মতে সমস্ত পদার্থকেই প্রথমত দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়- ভাবপদার্থ ও অভাবপদার্থ। ভাবপদার্থ ছয় প্রকার- দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ, সমবায়। এর সঙ্গে অভাব সংযুক্ত করে মোট সপ্ত পদার্থের উল্লেখ করা হয়।
উপলব্ধির বিষয় হিসেবে জগতে বহু বস্তু প্রতীত হয়, ন্যায়-বৈশেষিকেরা এগুলিকে ‘পদার্থ’ নামে কয়েকটি মূল শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। যা জ্ঞেয়, যা প্রমেয় এবং যা অভিপ্রেয় তা-ই পদার্থ। বৈশেষিক মতে সমস্ত পদার্থকেই প্রথমত দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়- ভাবপদার্থ ও অভাবপদার্থ। ভাবপদার্থ ছয় প্রকার- দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ, সমবায়। এর সঙ্গে অভাব সংযুক্ত করে মোট সপ্ত পদার্থের উল্লেখ করা হয়।
জৈমিনি’র মীমাংসাসূত্রে পদার্থের উল্লেখ নেই। শবরভাষ্যে (১০/৩/৪৪) দ্রব্য, গুণ, কর্ম ও অবয়বের উল্লেখ থেকে অনুমান হতে পারে যে শবরস্বামী চারটি পদার্থ স্বীকার করেছিলেন। তবে শবরের কাছে পদার্থের আলোচনা বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেনি। কিন্তু প্রভাকর ও কুমারিল বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব বিষয়ে ন্যায়-বৈশেষিকদের সাথে একমত হয়েছিলেন বলেই তাদের কাছে ন্যায়-বৈশেষিক প্রতিপাদ্য পদার্থ-তত্ত্ব সবিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছিলো। তবে বহির্জগতের বস্তুগুলিকে ঠিক কয়টি পদার্থের অন্তর্গত করা হবে- এ বিষয়ে উভয়ে একমত নন।
প্রভাকরের
মতে প্রমেয় পদার্থ আটটি- দ্রব্য, গুণ, কর্ম, জাতি বা সামান্য, সমবায় বা
পরতন্ত্রতা, শক্তি, সাদৃশ্য এবং সংখ্যা। এর মধ্যে প্রথম পাঁচটি বৈশেষিক
স্বীকৃত। কিন্তু প্রভাকর বৈশেষিকদের অভাব এবং বিশেষ পদার্থ স্বীকার করেন
নি। তার পরিবর্তে শক্তি, সাদৃশ্য এবং সংখ্যা নামের তিনটি পদার্থের উল্লেখ
করেছেন।
অন্যদিকে কুমারিল ভট্ট প্রভাকরের এই তিনটি নতুন পদার্থ স্বীকার করেন নি; এবং তিনি বৈশেষিক প্রতিপাদ্য বিশেষ এবং সমবায়ও প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে কুমারিল-মতেও অভাব একটি পদার্থ। অতএব ভাট্টমত বিচারে পদার্থ মোট পাঁচ প্রকার- দ্রব্য, গুণ, কর্ম, জাতি বা সামান্য এবং অভাব।
প্রভাকর
অভাব বলে কোনো স্বতন্ত্র পদার্থের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। তাঁর মতে,
অভাব অতিরিক্ত পদার্থ নয়, অভাব অধিকরণ স্বরূপ। যেমন অন্ধকারে আলোর অভাব।
অন্ধকার দ্রব্য নয়, তা অধিকরণ স্বরূপ। প্রভাকর বৈশেষিকদের বিশেষ নামের
পদার্থ প্রত্যাহার করেছেন। তাঁর যুক্তি হলো, আকাশ পরমাণু প্রভৃতি
নিত্যবস্তুর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করবার উদ্দেশ্যেই বৈশেষিকরা বিশেষ বলে
পদার্থ স্বীকার করেন; কিন্তু গুণের সাহায্যেই এই পার্থক্য নির্ণয় সম্ভব,
তাই বিশেষ বলে স্বতন্ত্র কোনো পদার্থ স্বীকারের প্রয়োজন নেই। অপরপক্ষে,
শক্তিকে একটি স্বতন্ত্র পদার্থ বলতে হবে। কেননা, পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুতেই
শক্তি বিদ্যমান- যেমন অগ্নির মধ্যে শক্তি বিদ্যমান বলেই তার পক্ষে দহনকার্য
সম্ভব। এই শক্তি প্রত্যক্ষগোচর নয়, কিন্তু অনুমানসিদ্ধ। প্রভাকর স্বীকৃত
সংখ্যা নামের স্বতন্ত্র পদার্থ-বিষয়ে প্রাভাকর-সম্প্রদায়ের পরবর্তী
দার্শনিকেরা মতভেদ প্রকাশ করেছেন। যেমন প্রকরণ-পঞ্চিকায় বলা হয়েছে, সংখ্যা
একটি গুণ; তাকে স্বতন্ত্র পদার্থ বলা যায় না। প্রভাকরের মতে সংখ্যা গুণ হতে
পারে না। সংখ্যা একটি স্বতন্ত্র পদার্থ। গুণের মধ্যেও সংখ্যা থাকতে পারে
যেমন ‘দুরকমের গন্ধ’, ‘তিন রকমের স্পর্শ’। প্রভাকরের মতে সাদৃশ্যও একটি
স্বতন্ত্র পদার্থ। প্রত্যক্ষ দ্বারা সাদৃশ্যের জ্ঞান হয় না। অনুমান ও উপমান
দ্বারা সাদৃশ্যের জ্ঞান হয়। প্রভাকর বৈশেষিক সম্মত সমবায়ের নাম দেন
‘পরতন্ত্রতা’।
অন্যদিকে
কুমারিল ভট্ট সমবায়কে স্বতন্ত্র পদার্থ বলে গ্রহণ করার বিরোধিতা করেছেন।
বৈশেষিক-মতে সমবায়-সম্বন্ধ নিত্য, কিন্তু তা হতে পারে না। তাঁর মতে বিভিন্ন
বস্তুর মধ্যেই সম্বন্ধ থাকে। অবিচ্ছেদ্য বস্তুর মধ্যে সম্বন্ধকে সমবায়
বলে। যেমন জাতি ও ব্যক্তির মধ্যে সম্বন্ধ সমবায়-সম্বন্ধ; কিন্তু ব্যক্তির
সঙ্গে এই সম্বন্ধের উৎপত্তি এবং ব্যক্তির বিনাশের সঙ্গে এই সম্বন্ধও বিনষ্ট
হয়।
কুমারিল শক্তি, সাদৃশ্য ও সংখ্যাকে পদার্থ বলে মনে করেন না। শক্তি ও সংখ্যা কুমারিলের মতে পদার্থ নয়, দ্রব্যের গুণ। সাদৃশ্য হলো দুই বা ততোধিক বস্তুর বৈশিষ্ট্য।
দ্রব্য
পরিমাণগুণাধারকেই ভাট্টরা দ্রব্য বলেছেন। অর্থাৎ যার পরিমাণ আছে এবং যা গুণের আধার তাকে দ্রব্য বলে। পরিমাণ ও গুণ সকল দ্রব্যেই থাকে এবং দ্রব্য ভিন্ন কোন পদার্থে থাকে না। ভাট্ট-মতে দ্রব্য এগারোটি- ক্ষিতি বা পৃথিবী, অপ বা জল, তেজ, মরুৎ বা বায়ু, ব্যোম বা আকাশ, কাল, দিক্, আত্মা, মন, শব্দ ও অন্ধকার। এদের মধ্যে ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও অন্ধকার সাবয়ব দ্রব্য অর্থাৎ প্রত্যক্ষের বিষয়। পরমাণু তাদের অবয়ব। যাবতীয় যৌগিক পদার্থ পরমাণু দ্বারা গঠিত।
পরিমাণগুণাধারকেই ভাট্টরা দ্রব্য বলেছেন। অর্থাৎ যার পরিমাণ আছে এবং যা গুণের আধার তাকে দ্রব্য বলে। পরিমাণ ও গুণ সকল দ্রব্যেই থাকে এবং দ্রব্য ভিন্ন কোন পদার্থে থাকে না। ভাট্ট-মতে দ্রব্য এগারোটি- ক্ষিতি বা পৃথিবী, অপ বা জল, তেজ, মরুৎ বা বায়ু, ব্যোম বা আকাশ, কাল, দিক্, আত্মা, মন, শব্দ ও অন্ধকার। এদের মধ্যে ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও অন্ধকার সাবয়ব দ্রব্য অর্থাৎ প্রত্যক্ষের বিষয়। পরমাণু তাদের অবয়ব। যাবতীয় যৌগিক পদার্থ পরমাণু দ্বারা গঠিত।
আকাশ,
কাল, দিক্, আত্মা, মন ও শব্দ এই ছয়টি দ্রব্য নিত্য, নিরবয়ব ও সর্বব্যাপী।
এই দ্রব্যগুলিকে অনুমানের দ্বারা জানা যায়। তাদের প্রত্যক্ষ হয় না।
কুমারিলের মতে অন্ধকার দ্রব্য, কারণ অন্ধকারের গুণ ও ক্রিয়া আছে। চোখের
দ্বারা অন্ধকারের জ্ঞান লাভ হয়। শব্দ ধ্বনির দ্বারা প্রকাশ হতে থাকে। শব্দ
শ্রবণেন্দ্রিয় গ্রাহ্য। শব্দ আকাশের গুণ নয়। ভাট্ট-মতে বর্ণাত্মক শব্দ
সর্বগত বিভু দ্রব্য। আত্মা এক নিত্য দ্রব্য। আত্মা শরীর ভেদে ভিন্ন। তা দেহ
ইন্দ্রিয়াদির অতিরিক্ত সত্তা। আত্মার বিশেষ গুণগুলি হলো বুদ্ধি, সুখ,
দুঃখ, ইচ্ছা, দ্বেষ প্রভৃতি। মন হলো অন্তরীন্দ্রিয়, যার মাধ্যমে আত্মার
গুণগুলি প্রত্যক্ষ হয়। দেহের দ্বারা মন সীমিত। আত্মা ও মন উভয়ই সর্বগত এবং
উভয়ের সংযোগ স্বাভাবিক।
জাতি
প্রভাকর ও কুমারিল উভয়েই জাতি বা সামান্যকে স্বতন্ত্র পদার্থ হিসেবে স্বীকার করেন। এই মতে জাতি ব্যক্তিতে বর্তমান, নিত্য ও প্রত্যক্ষযোগ্য। ব্যক্তির বাইরে জাতির অস্তিত্ব নেই। জাতি ব্যক্তিতে বর্তমান, জাতি নিত্য এবং ব্যক্তি থেকে ভিন্ন এবং অভিন্ন উভয়ই। জাতির সঙ্গে ব্যক্তির সম্বন্ধ হলো তাদাত্ম্য। জাতি সর্বগত ও ব্যক্তিগত উভয়ই। তবে ব্যক্তিই জাতির ব্যঞ্জক।
প্রভাকর ও কুমারিল উভয়েই জাতি বা সামান্যকে স্বতন্ত্র পদার্থ হিসেবে স্বীকার করেন। এই মতে জাতি ব্যক্তিতে বর্তমান, নিত্য ও প্রত্যক্ষযোগ্য। ব্যক্তির বাইরে জাতির অস্তিত্ব নেই। জাতি ব্যক্তিতে বর্তমান, জাতি নিত্য এবং ব্যক্তি থেকে ভিন্ন এবং অভিন্ন উভয়ই। জাতির সঙ্গে ব্যক্তির সম্বন্ধ হলো তাদাত্ম্য। জাতি সর্বগত ও ব্যক্তিগত উভয়ই। তবে ব্যক্তিই জাতির ব্যঞ্জক।
গুণ
যা কর্মভিন্ন, অবান্তর জাতিবিশিষ্ট এবং উপাদান কারণ থেকে ভিন্ন, তাই গুণ। বৈশেষিক-মতে গুণ চব্বিশ রকমের, যথা- রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, সংখ্যা, পরিমাণ, পৃথকত্ব, সংযোগ, বিভাগ, পরত্ব, অপরত্ব, বুদ্ধি, সুখ, দুঃখ, ইচ্ছা, দ্বেষ, প্রযত্ন, গুরুত্ব, দ্রবত্ব, স্নেহ, সংস্কার, ধর্ম, অধর্ম এবং শব্দ।
যা কর্মভিন্ন, অবান্তর জাতিবিশিষ্ট এবং উপাদান কারণ থেকে ভিন্ন, তাই গুণ। বৈশেষিক-মতে গুণ চব্বিশ রকমের, যথা- রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, সংখ্যা, পরিমাণ, পৃথকত্ব, সংযোগ, বিভাগ, পরত্ব, অপরত্ব, বুদ্ধি, সুখ, দুঃখ, ইচ্ছা, দ্বেষ, প্রযত্ন, গুরুত্ব, দ্রবত্ব, স্নেহ, সংস্কার, ধর্ম, অধর্ম এবং শব্দ।
কিন্তু
মীমাংসক প্রভাকরের মতে গুণ বাইশ রকমের- রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, পরিমাণ,
পৃথকত্ব, সংযোগ, বিভাগ, পরত্ব, অপরত্ব, বুদ্ধি, সুখ, দুঃখ, ইচ্ছা, দ্বেষ,
প্রযত্ন, গুরুত্ব, দ্রবত্ব, স্নেহ, সংস্কার, শব্দ এবং ধর্ম। প্রভাকর সংখ্যা
ও অধর্মকে গুণ হিসেবে স্বীকার করেন না। তাঁর মতে সংখ্যা একটি স্বতন্ত্র
পদার্থ, তা গুণ হতে পারে না। প্রভাকর অধর্মকেও গুণ স্বীকার করেন না। অধর্ম
হলো ধর্মের অভাব, অধিকরণ স্বরূপ। প্রভাকর স্বীকৃত বাকি সব গুণের বৈশিষ্ট্য
বৈশেষিক ব্যাখ্যার অনুরূপ।
অন্যদিকে
কুমারিল বৈশেষিক সম্মত শব্দ, ধর্ম ও অধর্মকে গুণ থেকে প্রত্যাহার করে
অতিরিক্ত হিসেবে ধ্বনি, প্রাকট্য ও শক্তিকে গুণ বলে সংযোজন করে চব্বিশটি
গুণ স্বীকার করেছেন। এই চব্বিশটি গুণ হলো- রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, সংখ্যা,
পরিমাণ, পৃথকত্ব, সংযোগ, বিভাগ, পরত্ব, অপরত্ব, বুদ্ধি, সুখ, দুঃখ, ইচ্ছা,
দ্বেষ, প্রযত্ন, গুরুত্ব, দ্রবত্ব, স্নেহ, সংস্কার, ধ্বনি, প্রাকট্য এবং
শক্তি।
কুমারিল শব্দ, ধর্ম ও অধর্মকে গুণ বলে স্বীকার করেন নি। তিনি ধ্বনি, প্রাকট্য ও শক্তিকে গুণ বলে স্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, ধ্বনি বায়ুর গুণ এবং নিত্য শব্দের প্রকাশক। বস্তু প্রাকট্যের আশ্রয় স্বরূপ। বস্তুর জ্ঞান হবার পর সেই বস্তুর গুণ হলো প্রাকট্য। শক্তি কোনো স্বতন্ত্র পদার্থ নয়, শক্তি দ্রব্যের গুণ। দ্রব্য, গুণ, সামান্য ও কর্মকে আশ্রয় করে শক্তির উদ্ভব হয়। ভাট্ট-মতে শক্তি দুই প্রকার- লৌকিক ও বৈদিক। লৌকিক শক্তি অর্থাপত্তির সাহায্যে জানা যায় এবং বৈদিক শক্তি বেদের মাধ্যমে জানা যায়। শক্তি প্রত্যক্ষ করা যায় না, কার্য থেকে এর অনুমান করে নিতে হয়। কিন্তু প্রভাকরের মতে শক্তি ও সংখ্যা গুণ নয়, স্বতন্ত্র পদার্থ।
কর্ম
কর্ম হলো সংযোগ ও বিভাগের কারণ। কর্ম প্রত্যক্ষযোগ্য এবং অ-বিভূদ্রব্যে আশ্রিত। ন্যায়-বৈশেষিকের মতো মীমাংসা-মতেও কর্ম পঞ্চবিধ- উৎক্ষেপণ, অবক্ষেপণ, আকুঞ্চন, প্রসারণ ও গমন।
কর্ম হলো সংযোগ ও বিভাগের কারণ। কর্ম প্রত্যক্ষযোগ্য এবং অ-বিভূদ্রব্যে আশ্রিত। ন্যায়-বৈশেষিকের মতো মীমাংসা-মতেও কর্ম পঞ্চবিধ- উৎক্ষেপণ, অবক্ষেপণ, আকুঞ্চন, প্রসারণ ও গমন।
অভাব
প্রাভাকর-মীমাংসকরা অভাবকে স্বতন্ত্র পদার্থ স্বীকার না করলেও ন্যায়মত অনুসরণ করে ভাট্ট-মীমাংসকরা অভাবকে স্বতন্ত্র পদার্থ বলেছেন। অভাব দ্বিবিধ- সংসর্গাভাব ও অন্যোন্যাভাব। সংসর্গাভাব আবার তিন প্রকার- প্রাগভাব, ধ্বংসাভাব ও অত্যন্তাভাব। ভাট্টরা অভাবকে অনুপলব্ধি নামক ষষ্ঠ প্রমাণযোগ্য বলেছেন।
…
(চলবে…)
…
[আগের পর্ব : ভ্রম জ্ঞান] [*] [পরের পর্ব : তত্ত্ববিদ্যা- নীতি ও ধর্মতত্ত্ব]
…
প্রাভাকর-মীমাংসকরা অভাবকে স্বতন্ত্র পদার্থ স্বীকার না করলেও ন্যায়মত অনুসরণ করে ভাট্ট-মীমাংসকরা অভাবকে স্বতন্ত্র পদার্থ বলেছেন। অভাব দ্বিবিধ- সংসর্গাভাব ও অন্যোন্যাভাব। সংসর্গাভাব আবার তিন প্রকার- প্রাগভাব, ধ্বংসাভাব ও অত্যন্তাভাব। ভাট্টরা অভাবকে অনুপলব্ধি নামক ষষ্ঠ প্রমাণযোগ্য বলেছেন।
…
(চলবে…)
…
[আগের পর্ব : ভ্রম জ্ঞান] [*] [পরের পর্ব : তত্ত্ববিদ্যা- নীতি ও ধর্মতত্ত্ব]
…
No comments:
Post a Comment