Tuesday, February 4, 2014

| বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-০১ : ভূমিকা |

.
| বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-০১ : ভূমিকা |
রণদীপম বসু

১.০ : ভূমিকা
ভারতীয় ছয়টি আস্তিক দর্শনের মধ্যে ভাববাদী মতে বেদান্তদর্শনকে শ্রেষ্ঠ দর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা ভাববাদের চূড়ান্ত রূপ এই বেদান্তদর্শনের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। ব্যুৎপত্তিগত অর্থে ‘বেদান্ত’ বলতে বোঝায় বেদের অন্ত বা শেষ। বৈদিক সংস্কৃতির ধারক হিসেবে হিন্দুদের কাছে বেদ সকল জ্ঞানের আকর বলে বিবেচিত। বলা হয়ে থাকে, প্রাচীন মুনি-ঋষিরা তাঁদের উপলব্ধ সত্যকে যে সাহিত্য-ভাণ্ডারে সঞ্চিত করে রেখেছেন, তা-ই বেদ। বেদই আস্তিক ষড়দর্শনের ভিত্তি ও উৎস। বেদের চারটি অংশ- মন্ত্র বা সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। সুতরাং বেদের অন্ত অর্থাৎ উপনিষদকেই মুখ্যত বেদান্ত নামে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ, উপনিষদ তত্ত্বের দার্শনিক ব্যাখ্যা ও সমর্থনই বেদান্তদর্শন।


বেদের চারটি অংশের মধ্যে সংহিতা ও ব্রাহ্মণকে কর্মকাণ্ড এবং আরণ্যক ও উপনিষদকে জ্ঞানকাণ্ড বলা হয়। কর্মকাণ্ড ক্রিয়া-প্রধান। এতে মন্ত্রের সংকলন ও বিভিন্ন যাগযজ্ঞের বর্ণনা রয়েছে। অপরদিকে জ্ঞানকাণ্ড বিচার-প্রধান। বেদের বিভিন্ন মন্ত্র ও ক্রিয়াকর্মের তাৎপর্য বিচারই এই অংশের প্রধান আলোচ্য বিষয়। এই বিচার চরম পরিণতি লাভ করেছে উপনিষদ অংশে। উপনিষদ বিভিন্ন কালে রচিত হয়েছে এবং তা সংখ্যায় বহু। এযাবৎ ১১২ খানা উপনিষদের উল্লেখ পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে প্রধান প্রধান উপনিষদগুলি হলো ঈশ, ছান্দোগ্য, বৃহদারণ্যক, ঐতরেয়, তৈত্তিরীয়, প্রশ্ন, কেন, কঠ, মুণ্ডক, মাণ্ডূক্য, কৌষীতকি, মৈত্রী, শ্বেতাশ্বতর প্রভৃতি।
উপনিষদের অর্থ হলো গুরু কর্তৃক শিষ্যের নিকট বর্ণিত রহস্য। ঈশ ব্যতীত সর্বপ্রাচীন (আনুমানিক ৭০০ খ্রীষ্টপূর্ব) উপনিষদ ছান্দোগ্য এবং বৃহদারণ্যক গদ্যে রচিত, তার পরবর্তী উপনিষদসমূহ কেবল পদ্যে অথবা গদ্য-পদ্যের সংমিশ্রণে রচিত। বিভিন্ন উপনিষদে বেদের অন্তর্নিহিত দার্শনিক তত্ত্বকে বিভিন্নভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন খ্যাত-অখ্যাত দার্শনিক কর্তৃক উপনিষদের ব্যাখ্যায় যথেষ্ট পার্থক্য আছে। উপনিষদগুলির মুখ্য বিষয় ছিলো লোক বা জগৎ, ব্রহ্ম, আত্মা বা জীব, পুনর্জন্ম এবং মুক্তি।

বৈদিক সাহিত্যের কালানুক্রমিক বিচারে উপনিষদ হলো বেদের সর্বশেষ স্তর। আবার পাঠক্রমের দিক থেকে উপনিষদকে সর্বশেষ স্তরের পাঠ বলা হয়। উৎকর্ষের দিক থেকেও উপনিষদ বৈদিক সাহিত্যের সর্বোচ্চ স্তর বা পরিপূর্ণ বিকাশ বা সর্বশেষ পরিণতি বলা যায়। প্রাচীন আর্য বা হিন্দু সমাজ কর্তৃক প্রবর্তিত বর্ণাশ্রম ধর্মে মানুষের জীবনকাল চারটি আশ্রমে বিভক্ত, যথা- ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস। ব্রহ্মচর্য জীবনে বেদের মন্ত্রভাগ বা সংহিতা পাঠ করতে হয়। গার্হস্থ্য জীবনে ব্রাহ্মণ পাঠ এবং ব্রাহ্মণোক্ত যাগযজ্ঞাদি অনুষ্ঠান করতে হয়। বানপ্রস্থকালে কর্ম হতে অবসর প্রাপ্তি এবং এই সময়ে আরণ্যকই হলো পঠনীয় শাস্ত্র। শেষ পর্যায়ে ভোগ-বিরতির সন্ন্যাস জীবন। সন্ন্যাস আশ্রমে উপনিষদ পাঠের নির্দেশ রয়েছে। উপনিষদে বৈদিক চিন্তাধারার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে বলে উপনিষদভিত্তিক এই তত্ত্বদর্শনই বেদান্তদর্শন নামে পরিচিত।

(চলবে…)

[*] [পরের পর্ব : বেদান্তের উৎপত্তি ও উপনিষদীয় ক্রমবিকাশ]

2 comments:

limonhasan said...

ধন্যবাদ,লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো | আমি আপনাকে কোন প্রকার অফার করছি না। আমার মানে হয় এই ছোট তথ্যটি আপনার উপকারে আসতে পারে বাড়ী ভাড়া।

kaisarahmed said...

তাজা বা টাটকা খাবার কে না পছন্দ করে। বর্তমানে ফরমালিনের ছড়াছড়ি, সব খাবারেই ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। টাটকা মাছ, শাকসবজি সাবাই ভালোবাসে। আপনি কি সামুদ্রিক মাছ, গলদা চিংড়ি, চিংড়ি, তাজা জল-মাছ, কাঁকড়া, ইত্যাদি দরণের মাছ খোঁজ করছে? তাহলে ভিজিট করুন freshfishbd.