Sunday, February 16, 2014

| বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-১০ : বাদরায়ণের দার্শনিক মত- জগৎ |

.
| বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-১০ : বাদরায়ণের দার্শনিক মত- জগৎ |
রণদীপম বসু
২.২.০৩. জগৎ :

বাদরায়ণের মতে জগৎ হলো ব্রহ্মের শরীর, কেননা জগতের উপাদান-কারণ ব্রহ্ম। উভয়ের মধ্যে বৈলক্ষণ্য আছে, কিন্তু কার্য-কারণের এই অসাম্য যে বাদরায়ণ স্বীকার করেছেন তা ইতঃপূর্বেই বলা হয়েছে। জগৎকে ব্রহ্মের শরীর হিসেবে স্বীকার করেই বাদরায়ণ জগৎকে কোথাও মারা বা কাল্পনিক বলে মানেননি। বেদান্তসূত্রে বলা হয়েছে-


‘যথা চ প্রাণাদি’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/১/২০)।।
‘কৃৎস্নপ্রসক্তির্নিরবয়বত্বশব্দকোপো বা’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/১/২৬)।।
ভাবার্থ :
মুখ্য প্রাণে যেমন প্রাণ, অপান প্রভৃতি বায়ুসকল লীন থাকে, তেমনি জগৎও ব্রহ্মে লীন থাকে (ব্রহ্মসূত্র-২/১/২০)।  জগৎ-কারণ ব্রহ্ম হয় সম্পূর্ণভাবেই জগতে পরিণত হয়েছেন- তা মানতে হয়, অথবা শাস্ত্রের বিরোধিতা করতে হয়- যেহেতু শাস্ত্র বলেছেন ব্রহ্ম অংশরহিত (ব্রহ্মসূত্র-২/১/২৬)।
আবার, জগৎ ব্রহ্মে লীন থাকলেও জগৎ কিন্তু উৎপত্তিশীল। এবং পৃথিবী, জল, তেজ, বায়ুই শুধু নয়, আকাশও উৎপত্তিশীল। অন্যান্য দর্শনের মতো বাদরায়ণ আকাশকে উৎপত্তিরহিত বলে মানেননি, এবং একে তিনি উপনিষদীয় শ্রুতি বাক্যসমূহ, যেমন- ‘…সেই আত্মা থেকে আকাশ সৃষ্ট। আকাশ থেকে বায়ু, বায়ু থেকে অগ্নি, অগ্নি থেকে জল, জল থেকে পৃথিবী, পৃথিবী থেকে উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম, উদ্ভিদাদি থেকে খাদ্য এবং খাদ্য থেকে আসে মানুষ।…’-(তৈত্তিরীয়-২/১) এর দ্বারা সিদ্ধ করেছেন। তাই বেদান্তসূত্রে বলা হয়েছে-
‘যাবৎ-বিকারং তু বিভাগো লোকবৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৭)।।
‘এতেন মাতরিশ্বা ব্যাখ্যাতঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৮)।।
‘তেজোহতঃ তথা হ্যাহ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/১০)।।
‘আপঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/১১)।।
‘পৃথিবী, অধিকাররূপশব্দান্তরেভ্যঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/১২)।।
ভাবার্থ :
শ্রুতি প্রমাণে আকাশাদি সব বিকারই ব্রহ্মেরই অভিন্ন রূপ। বিকার উৎপত্তিশীল হওয়ায় তা ব্রহ্মেরই বিকার বা কার্যবস্তু (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৭)।  যে যুক্তি বলে আকাশের উৎপত্তি সিদ্ধ হলো, বায়ু সম্পর্কেও সেই যুক্তি প্রযোজ্য। অর্থাৎ আকাশ থেকে বায়ু সৃষ্ট (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/৮)।  বায়ু থেকে তেজের উৎপত্তি, তা শ্রুতিশাস্ত্রে বলা হয়েছে (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/১০)।  তেজ বা অগ্নি থেকে জলের উৎপত্তি (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/১১)।  জল থেকে পৃথিবীর উৎপত্তি। প্রকরণ বা রূপ থেকে এবং অন্য শ্রুতি থেকেও জানা যায় যে, অন্ন শব্দও পৃথিবী-বোধক (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/১২)।
তবে শ্রুতি-বচন বা বেদান্তসূত্রের উক্ত উদ্ধৃতি থেকে সৃষ্টিক্রমে এই যে আকাশ, বায়ু, তেজ, জল, পৃথিবী বা অন্নের উৎপত্তি বর্ণিত হয়েছে, তাতে মনে হতে পারে, কোন কোন পদার্থ স্বাধীনভাবেই কোন কোন পদার্থকে সৃষ্টি করে। এই বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে বাদরায়ণ বলেন, ব্রহ্ম বা ঈশ্বরই এইসব পদার্থে অন্তর্নিহিত থেকে ধীশক্তির দ্বারা কিছু কার্য উৎপাদন করে থাকেন। যেমন, শ্রুতিতে এরকম বলা হয়েছে-
‘সেই তেজ ঈক্ষণ করলেন- আমি বহু হবো, আমি প্রকৃষ্টরূপে জাত হবো… সেই জল ঈক্ষণ করলেন…’ ইত্যাদি ইত্যাদি।- (ছান্দোগ্য-৬/২/৩-৪)।

এই ‘ঈক্ষণ’ (ধ্যান-মনন) অচেতন পদার্থের পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং এখানে বুঝতে হয় যে, পরমেশ্বরই এই পদার্থসমূহের অন্তর্বর্তী অধিদেবতারূপে থেকে ‘ঈক্ষণ’ করে কার্য উৎপাদন করেন। অর্থাৎ এই পদার্থসমূহ তাদের অন্তর্বর্তী পরমেশ্বরের কর্তৃত্বের মাধ্যমেই কারণরূপে বর্তমান থাকতে পারে। এই বক্তব্যই অন্য আরেক শ্রুতিতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়-

‘যঃ পৃথিব্যাং তিষ্ঠন্ পৃথিব্যা অন্তরো যং পৃথিবী ন বেদ। যস্য পৃথিবী শরীরং যঃ পৃথিবীমন্তরো যময়ত্যেষ ত আত্মা অন্তর্যামী, অমৃতঃ’।। (বৃহদারণ্যক-৩/৭/৩)।।
অর্থাৎ : যিনি পৃথিবীতে থেকেও পৃথিবী থেকে ভিন্ন, পৃথিবীর অন্তরে থাকলেও পৃথিবী যাঁকে জানে না, স্থূল সূক্ষ্ম সবকিছু নিয়ে পৃথিবী যাঁর শরীর এবং সেই শরীরের অভ্যন্তরে নিত্য জাগরূক থেকে যিনি তাকে নিয়ন্ত্রিত করছেন, তিনিই আপনার আত্মা। তিনিই অন্তর্যামী, অমৃত (বৃহদারণ্যক-৩/৭/৩)।
তাই বেদান্ত সূত্রকার বাদরায়ণ সিদ্ধান্ত করেন-
‘তদভিধ্যানাদেব তু তল্লিঙ্গাৎ সঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৩/১৩)।।
ভাবার্থ : পরমেশ্বরের ধ্যানের দ্বারাই সৃষ্টি-ক্রমের ধারা চলছে। ব্রহ্মই আকাশাদির অন্তরাত্মারূপে বর্তমান থেকে পর পর সৃষ্টি রচনা করেন। ব্রহ্মেরই একমাত্র সৃষ্টিকর্তার লক্ষণ আছে, আকাশাদির নেই। আকাশাদির স্রষ্টৃত্ব মূলত ব্রহ্মেরই কর্তৃত্ব (ব্রঃ-২/৩/১৩)।
আকাশের মতো অন্যান্য মহাভূত- যেমন পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু এর ন্যায় ইন্দ্রিয় এবং মনও একইভাবে উৎপন্ন হয় এবং তার কারণও সেই ব্রহ্মই। কেননা, শ্রুতিতেই বলা হয়েছে-
‘এতস্মাজ্জায়তে প্রাণো মনঃ সর্বেন্দ্রিয়াণি চ।
খং বায়ুর্জ্যোতিরাপঃ পৃথিবী বিশ্বস্য ধারিণী’।। (মুন্ডকোপনিষদ-২/১/৩)।।
অর্থাৎ : সেই আত্মা বা ব্রহ্ম থেকেই প্রাণ, মন ও সকল ইন্দ্রিয়, আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল এবং সর্ববস্তুর আশ্রয় পৃথিবী সম্ভূত হয়েছে (মুন্ডক-২/১/৩)।
অতএব, বাদরায়ণের সিদ্ধান্ত হলো-
‘তথা প্রাণাঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৪/১)।।
‘গৌণ্যসম্ভবাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৪/২)।।
‘তৎপূর্বকত্বাদ্বাচঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/৪/৪)।।
ভাবার্থ :
পরব্রহ্ম থেকে আকাশাদির ন্যায় ইন্দ্রিয়াদিও উৎপন্ন হয়েছে (ব্রহ্মসূত্র-২/৪/১)।  ব্রহ্ম থেকে ইন্দ্রিয়াদির উৎপত্তি গৌণ অর্থে বলা হয়নি। কারণ এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট শ্রুতি বাক্য আছে (ব্রহ্মসূত্র-২/৪/২)।  বাক্য ও মন ব্রহ্ম থেকেই সৃষ্ট, এরূপ উক্ত হওয়ায় বাক্য ও মনের ন্যায় প্রাণের জন্মও মুখ্য বলেই বুঝতে হবে (ব্রহ্মসূত্র-২/৪/৪)।

(চলবে…)

[আগের পর্ব : সৃষ্টিকর্তা] [*] [পরের পর্ব : জীব বা আত্মা]

3 comments:

sadiphasan said...

Thanks a lot for taking the time to share your experiences with so much detail. It’s clear and up to the point, full of real life examples. I do not offer any type, I think this information will be useful office rent

litonhasan said...

তাজা বা টাটকা খাবার কে না পছন্দ করে। বর্তমানে ফরমালিনের ছড়াছড়ি, সব খাবারেই ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। টাটকা মাছ, শাকসবজি সাবাই ভালোবাসে। আপনি কি সামুদ্রিক মাছ, গলদা চিংড়ি, চিংড়ি, তাজা জল-মাছ, কাঁকড়া, ইত্যাদি দরণের মাছ খোঁজ করছে? তাহলে ভিজিট করুন freshfishbd.

আজকের রাশিফল said...

আজকের রাশিফল
মেষ: (২১ মার্চ – ২০ এপ্রিল)
দিনটি আপনার জন্য রোম্যান্টিক। তবে নতুন প্রেমের চেয়ে আপনার ক্ষেত্রে পুরনো প্রেম ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশি শক্তিশালী। আর্থিকযোগ শুভ। পথে বাধার সম্ভাবনা আছে।

শুভ রং : লাল, শুভ সংখ্যা : ৬

বৃষ: (২১ এপ্রিল – ২১ মে)
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। বেশ কিছুদিন ধরে চলা পারিবারিক কোনো সমস্যা মিটে যাবে। বেড়াতে গিয়ে নতুন বন্ধুত্ব হতে পারে। অর্থযোগে বাঁধা থাকলেও সেটা খুব খারাপ নয়।
আজকের রাশিফল