| বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-১৮: বাদরায়ণের দার্শনিকমত- মুক্তি বা মোক্ষ |
রণদীপম বসু
…
২.২.০৬. মুক্তি :
ব্রহ্মপ্রাপ্তির পর আত্মা যখন স্বরূপে প্রকটিত হয় তখনই তাকে মুক্তি বলে। যেমন, শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে-
রণদীপম বসু
…
২.২.০৬. মুক্তি :
ব্রহ্মপ্রাপ্তির পর আত্মা যখন স্বরূপে প্রকটিত হয় তখনই তাকে মুক্তি বলে। যেমন, শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে-
‘জ্ঞাত্বা দেবং সর্ব-পাশ-অপহানিঃ ক্ষীণৈঃ ক্লেশৈঃ জন্ম-মৃত্যু-প্রহাণিঃ।
তস্য অভিধ্যানাৎ তৃতীয়ং দেহভেদে বিশ্বৈশ্বর্যং কেবল আপ্তকামঃ’।। (শ্বেতাশ্বতর-১/১১)।।
অর্থাৎ :
যখন কেউ পরমাত্মার সঙ্গে তাঁর একাত্মতা উপলব্ধি করেন তখনি অবিদ্যাজনিত সকল বন্ধন থেকে তিনি মুক্ত হয়ে যান; তখন আর তিনি জন্মমৃত্যুর নিয়মে বাঁধা নন। কিন্তু কেউ যদি শুধু পরমাত্মার ধ্যানই করে যান, তাহলে মৃত্যুর পর তিনি তৃতীয় স্তরে উঠে যান- সেখানে তিনি এবং ঈশ্বর অভিন্ন। তখন তিনি পরম পরিতৃপ্ত, আপ্তকাম। তখন তিনি অনুভব করেন তাঁর যা কিছু পাওয়ার, সব পাওয়া হয়ে গেছে। তখন তিনি মুক্ত। (এভাবে ধাপে ধাপে সাধক পরম লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান) (শ্বেতাশ্বতর-১/১১)।
মূল কথা হলো- পরমেশ্বরের স্বরূপ সম্পর্কে অজ্ঞতাই হলো বন্ধনের কারণ, এবং তাঁর সম্পর্কে জ্ঞানই মুক্তির হেতু। তাই সূত্রকার বাদরায়ণ বেদান্তসূত্রে বলেন-
‘পরাভিধ্যানাৎ তু তিরোহিতম্, ততো হি অস্য বন্ধবিপর্যয়ৌ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/৫)।।
‘অতো অনন্তেন, তথা হি লিঙ্গম্’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/২৬)।।
ভাবার্থ :
পরমেশ্বরের ধ্যানের দ্বারা পরমাত্মার সঙ্গে জীবের ঐক্যভাবের অনুভবের আবরণটি (অজ্ঞান) দূর হয়; পরমেশ্বরই জীবের বন্ধন এবং মুক্তির হেতু (তাঁর ইচ্ছায়ই তা হয়) (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/৫)। (অজ্ঞান দূর হলে) জীব যে ব্রহ্মের সাথে লীন হয়ে অভিন্নত্ব অবস্থা প্রাপ্ত হয় তা শ্রুতিতে আছে (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/২৬)।
অতএব, আত্মার স্বীয় রূপের উপর অবিদ্যার যে আচ্ছাদন থাকে, তাকে উন্মুক্ত করার জন্য উপনিষদ-বিদ্যার একান্ত প্রয়োজন। তাহলেই মুক্তির সাধন হবে। কেননা-
‘দেহযোগাৎ বা সঃ অপি’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/৬)।।
ভাবার্থ : দেহের সাথে সম্বন্ধহেতু (সসীম) জীবের সত্য সঙ্কল্পাদি শক্তি তিরোহিত হয় (ব্রঃ-৩/২/৬)।
No comments:
Post a Comment