|বেদান্তদর্শন-অদ্বৈতবেদান্ত-০৪ : অদ্বৈতমতে জগৎ|
রণদীপম বসু
…
২.২ : অদ্বৈতমতে জগৎ
রণদীপম বসু
…
২.২ : অদ্বৈতমতে জগৎ
বেদান্তদর্শনের সূত্রগ্রন্থ ব্রহ্মসূত্র বা শারীরকসূত্রের দ্বিতীয় সূত্রটি হলো-
‘জন্মাদ্যস্য যতঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-১/১/২)
ভাবার্থ : জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-লয় যা থেকে হয় (তাহাই ব্রহ্ম)।
এই সূত্রটির ভাষ্য রচনা করতে গিয়ে অদ্বৈতবেদান্তের প্রধান প্রবর্তক শঙ্করাচার্য বলেন-
‘অস্য জগতো নামরূপাভ্যাং ব্যাকৃতস্য অনেক কর্ত্তৃভোক্তৃসংযুক্তস্য প্রতিনিয়িত দেশকালনিমিত্ত ক্রিয়াফলাশ্রয়স্য মসসা অপি অচিন্ত্যরচনারূপস্য জন্মস্থিতিভঙ্গং যতঃ সর্ব্বজ্ঞং সর্ব্বশক্তেঃ কারণাৎ ভবতি তদব্রহ্ম ইতি বাক্য শেষঃ’। (শাঙ্করভাষ্য : ব্রহ্মসূত্র-২)
অর্থাৎ :
এই জগৎ সৃষ্টির পূর্বে অব্যক্ত ছিলো, কিন্তু সৃষ্টিদশায় সেই অব্যক্তই নাম ও রূপ এই দ্বিবিধ উপাধি দ্বারা ব্যক্ত বা ব্যবহারগোচর হয়েছে। এই জগতের ভোক্তা এবং কর্তা অসংখ্য। এই জগতের অন্তঃপাতি প্রত্যেক বস্তুই নিয়ত দেশে, নিয়ত কালে এবং নিয়ত নিমিত্তের দ্বারা উৎপন্ন হয়ে থাকে; এবং প্রত্যেক বস্তুরই ফল নিয়ত দেশে ও নিয়ত কালেই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। কী উপাদান থেকে- কী ভাবে এই জগতের উৎপত্তি প্রভৃতি হয়ে থাকে, তা মনে মনে ভেবেও স্থির করবার কোন সম্ভাবনা নেই। এই (বিচিত্র কৌশলময়) জগতের উৎপত্তি, স্থিতি এবং প্রলয়ের যা একমাত্র কারণ- সেই সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিসম্পন্ন কারণই- ব্রহ্ম। এটাই হলো এই (সূত্রদ্বারা সূচিত) বাক্যের অবশিষ্ট অংশ (শাঙ্করভাষ্য : ব্রহ্মসূত্র-২)
আবার, প্রমাণ শাস্ত্রের দৃষ্টিতে বিচার করলে বোঝা যায় যে জগৎ দৃশ্যমান কিন্তু তা শুধু বর্তমানের মধ্যেই। জগতের পরিবর্তনশীলতা প্রমাণ করে যে পূর্বে তা কখনও ছিলো না, ভবিষ্যতেও থাকবে না। এইভাবে- সর্বকালের মধ্যে তার অস্তিত্ব আছে- এই তত্ত্ব ভুল মনে হয়। তাই শঙ্করাচার্য মাণ্ডুক্য-কারিকাকার গৌড়পাদের এই মতকেই মেনে নিয়েছেন যে-
‘আদৌ অন্তে চ যৎ নাস্তি বর্তমানোৎপি তৎ তথা। (আগমশাস্ত্র-৪/৩১)
অর্থাৎ : যদি এমন বস্তু থেকে থাকে যা শুরুর আগেও ছিলো না, আবার শেষ হয়ে গেলেও থাকবে না, তবে তাকে মিথ্যা বলে ধরে নিতে হবে।
বস্তুত শঙ্করের মতে ত্রিকালের মধ্যে জগৎ নেই। তিনি বলেন, ‘জগৎ আছে’- এই বাক্যের মধ্যে জগতের কল্পনা ভ্রান্তিমূলক, এবং ‘আছে’ (=সৎ) ব্রহ্মের মৌলিক স্বরূপ। সৎ না থাকলে যা জগতের ছলনা তাও থাকে না, এজন্যই ব্রহ্ম জগতের ভ্রান্তির অধিষ্ঠান বা ভ্রমস্থান, যেমন রজ্জুতে সর্পভ্রমের ক্ষেত্রে সর্পের ভ্রান্তির অধিষ্ঠান রজ্জু।
শঙ্করাচার্যের মতে যেহেতু নির্গুণ ব্রহ্ম একমাত্র সত্তাবিশিষ্ট, সেহেতু জগত বা জগতের বিষয়গুলি মিথ্যা। অর্থাৎ, যেহেতু এক অদ্বয় ব্রহ্মই সত্য সেহেতু বহুত্ব সত্য নয়। কিন্তু যদি একমাত্র এক অদ্বয় ব্রহ্মই সত্য হয়, তাহলে তো জগতের বিষয়গুলির জ্ঞান হওয়া উচিত নয়। কিন্তু ঐ বিষয়গুলির যেহেতু জ্ঞান হয় সেহেতু অদ্বৈতমতে ঐ জ্ঞান কিভাবে হয় তা ব্যাখ্যার প্রয়োজন।
অদ্বৈতবেদান্ত বিবর্তবাদী। বিবর্তবাদ অনুযায়ী অধ্যাস বা ভ্রান্তিবশত অবস্তু বস্তুরূপে প্রতীয়মান হয়। যেভাবে ভ্রান্তিবশতই রজ্জুতে সর্প প্রতীয়মান হয়, অনুরূপভাবে ব্রহ্মে এই জগৎ-প্রপঞ্চ অধ্যস্ত হয়। চৈতন্যে অচৈতন্যের, আত্মা বা বিষয়ীতে বিষয়ের, আরোপই অধ্যাস। অধ্যাসই মিথ্যাকে উৎপন্ন করে। রজ্জুতে সর্পের অধ্যাস যেমন মিথ্যা, ব্রহ্মে জগৎ-প্রপঞ্চের অধ্যাসও তেমনি মিথ্যা। অদ্বৈতবেদান্তীর পক্ষে বিবর্তবাদের মাধ্যমেই জগতের গ্রহণযোগ্য ও সুসংগত ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
বেদান্তদর্শনে অসৎকার্যবাদ ও পরিণামবাদ বেদান্তের দ্বৈতবাদ ও বিশিষ্টাদ্বৈতবাদের নির্দেশক। অসৎকার্যবাদ অনুযায়ী পূর্বস্থিত উপাদান থেকেই চেতন-কর্তা কার্য উৎপন্ন করে। সুতরাং এই মতবাদ দ্বৈতবাদের নির্দেশক। আর পরিণামবাদ অনুযায়ী কারণ বাস্তবিকই কার্যে পরিণত হয়। সুতরাং এই মতে কারণ পরিণামী ও কার্যসমসত্তাবিশিষ্ট। ফলে শঙ্করাচার্য বিবর্তবাদের সাহায্যে জগৎ ও জীবকে ব্রহ্মে লীন করে অদ্বৈতব্রহ্মবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই অদ্বৈতবেদান্তীর পক্ষে বিবর্তবাদ অনিবার্য বলেই মনে হয়।
অদ্বৈতবাদীদের বিবর্তবাদের উৎস খুঁজতে হলে আমাদেরকে একটু পেছনে যেতে হয়। বেদান্ত প্রস্থানের উৎসগ্রন্থ বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্রে বলা হয়েছে-
‘প্রকৃতিশ্চ প্রতিজ্ঞাদৃষ্টান্ত-অনুপরোধাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-১/৪/২৩)
ভাবার্থ : ব্রহ্ম জগতের শুধু নিমিত্ত-কারণ নন, উপাদান-কারণও, এইরূপ সিদ্ধান্তেই শ্রুতির প্রতিজ্ঞা ও দৃষ্টান্তের সামঞ্জস্য হয়।
এখানে যে দৃষ্টান্তের কথা বলা হয়েছে তা হলো- ‘হে সৌম্য, যেমন একটি মৃত্তিকাপিণ্ডের দ্বারা মৃত্তিকার পরিমাণ-ভূত সমস্তই জানা যায় যেতে পারে (কারণ) সমস্ত বিকারই বাচাবলম্বনে অবস্থিত নাম মাত্র, কেবল মৃত্তিকাই সত্য;… হে সৌম্য, এইরূপেই উক্ত উপদেশ হয়ে থাকে।’ (ছান্দোগ্য-উপনিষদ-৬/১/৪-৬)। শ্রুতি এখানে ‘বিকার’ শব্দটি ব্যবহার করে বোঝাতে চেয়েছেন যে, মূল উপাদান মৃত্তিকা ছাড়া ঘটাদির পৃথক কোন সত্তা নেই। এরা পৃথক কোন বস্তু নয়, তা বিভিন্ন অবস্থা মাত্র, যেমন একই দেবদত্তের বাল্য, যৌবন ইত্যাদি অবস্থা মাত্র কিন্তু এদের কোনটাই সত্য নয়। সুতরাং মৃৎপিণ্ডের জ্ঞানলাভ করেই ঘটাদির আসল স্বরূপকে জানতে হয়। বিভিন্ন রূপকে জানতে না পারলেও কিছু ক্ষতিবৃদ্ধি নেই, কারণ এরা অসৎ বলে জ্ঞাতব্যই নয়। যদিও ঘটাদি বস্তুগুলি আমাদের ইন্দ্রিয়ের বিষয়, তথাপি বিচার করে দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে, মৃত্তিকা ছাড়া অন্য কোন সত্য এদের মধ্যে নেই। এরা বাক্য থেকে উদ্ভূত কতকগুলি নামমাত্র- এর বেশি কিছু নয়। যেহেতু এগুলি অবিদ্যার মাধ্যমেই জ্ঞাত হয়- সেজন্যে এরা অসৎ। অপরপক্ষে মৃৎপিণ্ডকে নাম এবং রূপ থেকে পৃথকভাবেও জানা যায়, সুতরাং তা সত্য। একইভাবে একমাত্র ব্রহ্মই সত্য এবং এই জগৎ অসৎ। জগৎ তার কারণ ব্রহ্ম থেকে অভিন্ন বলে সত্য হলো এই যে, তা এক, অদ্বিতীয় ব্রহ্মই- ‘একমেবাদ্বিতীয়ম্’। তাই ব্রহ্মসূত্রকার বাদরায়ণ বলেন-
‘তৎ অনন্যত্বম্ আরম্ভণশব্দাদিভ্যঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-২/১/১৪)
ভাবার্থ : ‘বাচারম্ভণ’ ইত্যাদি শব্দ থেকে অবগত হওয়া যায় যে, এই কার্যভূ জগৎ তৎ-কারণ ব্রহ্ম থেকে পৃথক নয়।
ভারতীয় আচার্যরা উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে ধাপে ধাপে শিষ্যকে চরম সত্য উপলব্ধির দিকে নিয়ে যান, এটাই প্রচলিত রীতি। এই সর্বসম্মত রীতি অনুসরণ করে সূত্রকার বাদরায়ণ তাঁর ব্রহ্মসূত্রে বিভিন্ন সূত্রে ব্রহ্মকে পরিণাম মতানুসারে জগৎকারণ বলে বর্ণনা করে উপরিউক্ত সূত্রের মাধ্যমে বিবর্তমতের প্রতিষ্টা করেছেন বলে মনে করা হয়। কেননা এই সূত্রগুলি থেকেই আচার্য শঙ্কর তাঁর বেদান্তসূত্রভাষ্য বা শারীরকভাষ্যে ব্রহ্ম এবং মায়া উভয়কে জগতের কারণ বলে নির্দেশ করেছেন। ব্রহ্ম বিবর্তের মাধ্যমে এবং মায়া পরিণামের মাধ্যমে জগৎরূপ কার্যে বর্তমান, কারণ তাদের উভয়ের গুণগুলিই কার্যে দৃষ্ট হয়। তাই অদ্বৈতবাদের মূল সূত্র হিসেবে শঙ্কর বলেন- ‘ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ’ অর্থাৎ, ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা এবং জীব ও ব্রহ্ম হলেন অভিন্ন।
অদ্বৈতমতে জগৎ মিথ্যা। কিন্তু জগৎকে মিথ্যা বললেই জগতের ব্যাখ্যা দেওয়া হয় না। তাহলে ‘জগৎ মিথ্যা’- এ কথার অর্থ কী ? জগৎ কি আকাশকুসুমের ন্যায় অসৎ, না স্বপ্নের ন্যায় প্রতিভাস ? অদ্বৈতমতে জগৎ এই দুই-এর কোনটিই নয়। এই মতে জগৎ সদসৎ-বিলক্ষণ অনির্বচনীয়। জগতের যথার্থ স্বরূপ বোঝার জন্য অদ্বৈতবেদান্তীর সত্তাত্রৈবিধ্যবাদ বা ত্রিবিধ সত্তা জানা দরকার। সত্তার ত্রৈবিধ্য অর্থাৎ তিনপ্রকার সত্তা সম্বন্ধে জানলেই অদ্বৈতবেদান্তীর জগতের প্রকৃতস্বরূপ ও মিথ্যাত্বের যথার্থ তাৎপর্য পরিস্ফুট হতে পারে।
সত্তাত্রৈবিধ্যবাদ :
অদ্বৈতবেদান্ত মতে আকাশকুসুম বা বন্ধ্যাপুত্রের ন্যায় অলীকের কোন সত্তা নেই। অলীক নিঃস্বভাব অসৎ। অসৎ কখনো ভাবরূপে প্রতিভাত হয় না। কিন্তু যা কিছু ভাবরূপে প্রতিভাত হয়, তা-ই সমানসত্তাবিশিষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গে শঙ্করাচার্য তিনপ্রকার সত্তা বা দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেছেন- পারমার্থিক, ব্যবহারিক ও প্রাতিভাসিক।
ব্রহ্মজ্ঞান অর্থাৎ, ব্রহ্ম বিষয়ে সাক্ষাৎ উপলব্ধি হলে যার সত্যতা জানা যায়, সেই পদার্থ পারমার্থিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সৎ। এই দৃষ্টিতে বিভু, নিত্য ও যাবতীয় বস্তুর স্বরূপ-সত্তারূপে ব্রহ্ম পারমার্থিক সৎ। অপরপক্ষে ব্রহ্মজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত যে সকল পদার্থ সত্যরূপে প্রতীয়মান হয়, তার সত্যতা হলো ব্যবহারিক সত্যতা। তার মানে, প্রতীয়মান সকল বস্তুই সেই বস্তুরূপে ব্যবহারিক সৎ, যেমন, রজ্জুরূপে রজ্জু। আর ভ্রমজ্ঞানের বিষয় হলো প্রাতিভাসিক সত্তা। প্রাতিভাসিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তা সত্য। রজ্জুতে যখন সর্পভ্রম হয়, তখন সর্পের সত্তাটি প্রাতিভাসিক।
অদ্বৈতমতে কেবল ব্রহ্মের পারমার্থিক সত্যতা আছে। জগতের ব্যবহারিক সত্যতা আছে, কিন্তু পারমার্থিক সত্যতা নেই। রজ্জুতে যখন সর্পভ্রম হয়, তখন সর্পের সত্তাটি প্রাতিভাসিক। আবার যখন সর্পের যথার্থ জ্ঞান হয়, তখন সর্পের সত্তাটি ব্যবহারিক। বস্তু বিষয় না থাকলে বিষয়ের জ্ঞান হয় না। যেমন আকাশকুসুমের জ্ঞান হয় না। সেহেতু আকাশকুসুম নেই। কিন্তু প্রাতিভাসিক ও ব্যবহারিক জগতের জ্ঞান আমাদের হয়। সুতরাং, প্রাতিভাসিক এবং ব্যবহারিক দুটি জগৎ আছে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই যে যদি একমাত্র এক অদ্বয় ব্রহ্মই সত্য হয়, তাহলে প্রাতিভাসিক এবং ব্যবহারিক জগতের বিষয়গুলির জ্ঞান কিভাবে হয় ?
উত্তরে শঙ্করাচার্য এবং তাঁর অনুগামী অদ্বৈতবাদীরা বলেন, প্রাতিভাসিক এবং ব্যবহারিক জগৎ হলো অবিদ্যার রূপান্তর। ব্যবহারিক ও প্রাতিভাসিকের ভেদ হলো যথার্থ জ্ঞান বা প্রমা ও ভ্রমের ভেদ। অবিদ্যা বা মায়ার দ্বারা এই ব্যবহারিক জগৎ সৃষ্টি হয়েছে। রজ্জুকে যখন রজ্জুরূপে জানা হয়, তখন রজ্জুর ব্যবহারিক সত্তা সমষ্টিগতভাবে স্বীকৃত হয় অর্থাৎ ঐ সত্তা অন্যেরাও স্বীকার করেন। কিন্তু রজ্জুকে যখন সর্পরূপে জানা হয়, তখন সর্পের প্রাতিভাসিক সত্তা সমষ্টিগতভাবে স্বীকৃত হয় না। রজ্জুতে সর্পের প্রতিভাস সর্পের সত্তা অবিদ্যাগ্রস্ত ব্যক্তি বিশেষের নিকটই স্বীকৃত। রজ্জুতে যখন সর্পভ্রম হয়, তখন সেই সর্পের কোন অস্তিত্ব থাকে না। কেবলমাত্র রজ্জুর বা মিথ্যা সর্পের অধিষ্ঠানটির অস্তিত্ব থাকে। এক্ষেত্রে সর্পটি হলো রজ্জুর প্রতিভাস, বিবর্ত বা অসত্য রূপান্তর। অনুরূপভাবে ব্যবহারিক জগৎ ব্রহ্মের সত্য পরিণাম নয়, ব্রহ্মের বিবর্তমাত্র। মায়া বা অবিদ্যার প্রভাবে জগতের প্রকৃত অধিষ্ঠানটিকে আমরা জানতে পারি না, কেবলমাত্র জগৎ প্রপঞ্চকেই জানতে পারি। এভাবে ব্যবহারিক ও প্রাতিভাসিক সত্তার ভেদের মাধ্যমে অদ্বৈতবেদান্তী সর্বজনসিদ্ধ ভ্রমের বিষয় ও প্রমার বিষয়ের ভেদকেই ব্যক্ত করেছেন। ভ্রমের বিষয় প্রাতিভাসিক সৎ, কিন্তু প্রমার বিষয় ব্যবহারিক সৎ।
আবার প্রাতিভাসিক সত্তা ও ব্যবহারিক সত্তা ভিন্ন হলেও উভয় সত্তাই সৎ ও অসৎ থেকে ভিন্ন। যা সৎ ও অসৎ থেকে ভিন্ন , তাকেই অদ্বৈতবেদান্তী মিথ্যা বলেন। তাই প্রাতিভাসিক ও ব্যবহারিক সত্তাবিশিষ্ট উভয়প্রকার বিষয়ই অদ্বৈতমতে মিথ্যা। উভয়প্রকার সত্তাই পরবর্তীকালে বাধিত বা খণ্ডিত হয়। অন্যদিকে অসৎ ভাবরূপে প্রতিভাতই হয় না। যা চৈতন্যের সঙ্গে কোনভাবে যুক্ত নয়, তা প্রতিভাত হতে পারে না। কিন্তু মিথ্যা বিষয় ভাবরূপে প্রতিভাত হয়। মিথ্যা বিষয় চৈতন্যময় ব্রহ্মে অধ্যস্ত এবং ব্রহ্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে মিথ্যা বিষয়ের মধ্যে প্রমার বিষয় (ব্যবহারিক সৎ) সমষ্টিগতভাবে সমর্থিত, কিন্তু ভ্রমের বিষয় (প্রাতিভাসিক সৎ) একান্তই ব্যক্তিগত। মিথ্যামাত্রই অবিদ্যাজন্য, তাই ব্যবহারিক ও প্রাতিভাসিক উভয় সত্তাই অবিদ্যাজন্য। ব্যবহারিক সত্তার জনক অবিদ্যাকে বলা হয় মূলাবিদ্যা এবং প্রতিভাসিক সত্তার জনক অবিদ্যাকে বলা হয় তুলাবিদ্যা।
এবার প্রশ্ন হলো, অদ্বৈতমতে কী অর্থে জগৎ মিথ্যা ?
সাধারণ চিন্তার যে আকার তা শঙ্করাচার্যের জগৎ সম্পর্কিত বক্তব্যকে ধারণ করতে পারে না। কেননা আমরা যখন কোন বিষয় সম্পর্কে চিন্তা করি, তখন সেই চিন্তার অন্তর্নিহিত বিশ্বাসটি এরকম যে, হয় সেই বিষয়টির অস্তিত্ব আছে, কিংবা সেই বিষয়টির অস্তিত্ব নেই। অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব পরস্পরবিরোধী। এই কারণে একটি বিষয় আছে আবার নেই, এরূপ চিন্তা আমরা করতে পারি না। কিন্তু শঙ্করাচার্যের মতে এই জগৎ আছে আবার নেইও, এই জগৎ কাল্পনিক, আবার কাল্পনিক নয়। যতদিন আমরা বদ্ধ অবস্থায় থাকি, ততদিন আমাদের আত্মোপলব্ধি হয় না। অর্থাৎ, ততদিন আমরা এই জগৎ সংসারকে তুচ্ছ বলে ভাবতে পারি না। শঙ্করাচার্য একমাত্র ব্রহ্মকেই সৎ বলেছেন। একমাত্র ব্রহ্মেরই প্রকৃত সত্তা আছে। জগতের ব্যবহারিক সত্যতা আছে; কিন্তু পারমার্থিক সত্যতা নেই।
তিনি আরো বলেন, যা সৎ বা সত্য তা কোন দেশে এবং কোন কালেই বাধিত হয় না। যা অসৎ বা তুচ্ছ, আকাশকুসুমের মতো কোন কালেই জ্ঞানের বিষয় হতে পারে না। বদ্ধ অবস্থায় মোক্ষলাভ না হওয়া পর্যন্ত এই জগতকে কেউ অসৎ বা তুচ্ছ মনে করতে পারে না। তাই জগৎকে অসৎরূপে বর্ণনা করা যায় না। মোক্ষলাভ বা ব্রহ্মলাভ হবার পরেই এই জগৎ অন্তর্হিত হয়। যেহেতু এই জগৎ সর্বস্তরে থাকে না এবং সর্বকালেও থাকে না, সেহেতু এই জগতকে সৎ বলাও যায় না। পারমার্থিক সত্তায় জগৎ নেই, কেবল ব্যবহারিক সত্তাতেই জগৎ থাকে। যেহেতু ব্রহ্মজ্ঞানের পরবর্তীকালে জগতের অস্তিত্ব থাকে না; ফলে জগতকে সৎ বলা যায় না। আবার অসৎও বলা যায় না। সুতরাং, জগৎ অনির্বচনীয়। ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জগৎ সৎ, কিন্তু পারমার্থিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জগৎ অসৎ।
উপরিউক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে, জগৎ মিথ্যা হলেও আকাশকুসুমের ন্যায় অসৎ নয়। আবার ব্রহ্মের ন্যায় অবাধিত ত্রিকালসৎও নয়। জগৎ তথা জাগতিক বিষয় ভাবরূপে প্রতীত হয়ে ব্যবহৃত হয়। অথচ ব্রহ্মোপলব্ধিতে জগৎ বাধিত ও খণ্ডিত হয়। জগতের সত্তা ব্রহ্ম-সাপেক্ষ। ব্রহ্ম-সংশ্লিষ্ট হয়েই জগৎ সত্তাযুক্ত হয়। শুদ্ধচৈতন্যই একমাত্র নিরপেক্ষ সৎ। জগৎ তাই নিরপেক্ষ সৎ নয়। জগৎ ব্রহ্মে অধ্যস্ত অর্থাৎ শুদ্ধচৈতন্য নামক সৎ অধিষ্ঠানে জগৎ আরোপিত। সৃষ্টির অর্থ এখানে আরোপ। অদ্বৈতবেদান্তে সৃষ্টি মানে উৎপন্ন নয়, সৃষ্টি বলতে আরোপ বা প্রক্ষেপকে বোঝানো হয়। তাই অদ্বৈতবেদান্তে জগতের সৃষ্টি বলতে ব্রহ্মে জগতের আরোপকে বোঝানো হয়েছে। রজ্জুর অধিষ্ঠানে সর্প যেমন আরোপিত হয়ে প্রতিভাত হয়, তেমনি জগৎ ব্রহ্মে আরোপিত হয়ে সৎ রূপে প্রতিভাত হয়। রজ্জুর জ্ঞানে সর্প যেমন মিথ্যা বলে জ্ঞাত হয়, তেমনি ব্রহ্মের জ্ঞানে জগৎ মিথ্যা বলে জ্ঞাত হয়। রজ্জুতে সর্পের আবির্ভাবের কারণ হলো অজ্ঞান বা অবিদ্যা। এই অবিদ্যার ফলেই ব্রহ্মের অধিষ্ঠানে ব্রহ্মের জ্ঞান না হয়ে ঘট-পটাদি জাগতিক বস্তু সৎরূপে আবির্ভূত হয়। অদ্বৈতমতে এরই নাম জগৎ-সৃষ্টি, যা বস্তুত অজ্ঞান, অবিদ্যা বা মায়ার ফল।
তবে এই অবিদ্যা বা মায়ার প্রেক্ষাপটে জগতের সংস্থান সম্পর্কে অদ্বৈত বৈদান্তিক দার্শনিকদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যায়। এ বিষয়ে দুটি মতের পরিচয় পাওয়া যায়। একটি সৃষ্টিদৃষ্টিবাদ এবং অপরটি হলো দৃষ্টিসৃষ্টিবাদ।
সৃষ্টিদৃষ্টিবাদ : সৃষ্টিদৃষ্টিবাদের প্রবক্তা হলেন অদ্বৈতবেদান্ত দর্শনের বিবরণ সম্প্রদায়ের দার্শনিকরা। তাঁদের মতে জগতের ভিত্তি মায়া বা অবিদ্যার অধিষ্ঠান হলো ব্রহ্ম। মায়া ঈশ্বরের সৃষ্টিশক্তি এবং বিকার বা বিভিন্ন প্রকারের পরিবর্তন সাধনে সমর্থ। এই জগৎ জীবাশ্রয়ী অবিদ্যার পরিণাম নয়, এই জগৎ হলো ঈশ্বরের সৃষ্টিশক্তির বা মায়ার পরিণাম। সুতরাং, সৃষ্টি কোন অর্থেই জীবের উপর নির্ভর করে না। ঈশ্বরের জড়াত্মিকা শক্তি মায়া এই জগৎকে সৃষ্টি করে। ফলে বদ্ধ জীবের কাছে এই ব্যবহারিক জগৎ সত্য ও প্রদত্ত বলে মনে হয়। ঈশ্বর বদ্ধজীবদের নিয়ন্ত্রণ করেন। এইজন্য ব্যবহারিক জগতে একজন ব্যক্তির জন্য ঈশ্বর যা সৃষ্টি করেছেন তা সেই ব্যক্তির অভিজ্ঞতার বিষয় হয়। ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টিশক্তি মায়ার দ্বারা জগতের যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করেছেন। বেদান্তসূত্রেও বলা হয়েছে-
‘দেবাদিবৎ অপি লোকে’। (ব্রহ্মসূত্র-২/১/২৫)
ভাবার্থ : দেবতা এবং পৃথিবীর বহু সিদ্ধপুরুষও ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে সৃষ্টি করতে পারেন। ব্রহ্মও সেরূপ পারেন।
জগৎকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা যায়। শ্রুতি ও জ্ঞানের দৃষ্টিতে জগৎ তুচ্ছ ও অসৎ। ব্যবহারিক যুক্তি পদ্ধতির বিচারে জগৎ অনির্বচনীয় এবং ব্যবহারিক জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জগৎ সত্য ও সৎ। অর্থাৎ, জগতের সত্তা ও অস্তিত্ব আছে- মায়ার সত্তা। মায়া জগতের আকারে পরিণত হয়, কিন্তু জগৎ মায়ার উপর নির্ভর করে না। ব্রহ্মই জগতের একমাত্র অবলম্বন। যেমন, প্রথমে তুলো থেকে সুতো প্রস্তুত হয়। তারপর সুতোগুলি কাপড়টি উৎপন্ন করে। সুতোগুলি কাপড়ের অধিষ্ঠান নয়, কাপড়ের প্রকৃত অধিষ্ঠান হলো তুলো। জগতের সৃষ্টির সঙ্গে জীবের কোন সম্পর্ক নেই। তাই এই জগৎ জীবের উপর কোনভাবেই নির্ভর করে না। ঈশ্বরের সাক্ষাৎ তত্ত্বাবধানে তাঁর মায়াশক্তি জগৎ সৃষ্টি করে। বেদান্তসূত্রানুযায়ী-
‘কৃৎস্নপ্রসক্তিঃ নিরবয়বত্ব শব্দকোপো বা’। (ব্রহ্মসূত্র-২/১/২৬)
ভাবার্থ : জগৎ-কারণ ব্রহ্ম হয় সম্পূর্ণভাবেই জগতে পরিণত হয়েছেন- তা মানতে হয়, অথবা শাস্ত্রের বিরোধিতা করতে হয়- যেহেতু শাস্ত্র বলেছেন ব্রহ্ম অংশরহিত।
কিন্তু অদ্বৈতমতে জগতের ব্যবহারিক সত্তা অস্বীকার করা না গেলেও জগতের পারমার্থিক সত্তা থাকতে পারে না। কারণ জগতের বিষয়মাত্রই স্ববিরোধী। ব্যবহারিক স্তরে কোন অভিজ্ঞতার বিষয়েই সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। যেমন, ‘লাল ফুল’ একটি ব্যবহারিক স্তরের অভিজ্ঞতার বিষয়। এখানে ‘লাল’ এবং ‘ফুল’ সম্পূর্ণ এক ও অভিন্ন নয়। কারণ ‘লাল’ ও ‘ফুল’- এই দুটি সম্পূর্ণ পৃথক শব্দ। আবার দুটি যে সম্পূর্ণ পৃথক, তাও বলা যায় না। কারণ ‘লাল রং’ অবলম্বনহীন অবস্থায় থাকতে পারে না। আবার লাল ও ফুলের সম্পর্কটি একটি গরুর সঙ্গে একটি ঘোড়ার বিজাতীয় সম্পর্কের মতোও নয়। লাল ও ফুল পরস্পরের সঙ্গে সমবায় সম্পর্কেও যুক্ত নয়। কারণ দুটির মধ্যে যদি সমবায় সম্বন্ধ স্বীকার করা হয়, তাহলে সেই সমবায় ‘লাল’ ও ফুলের সঙ্গে যুক্ত করতে আরেকটি তৃতীয় সম্বন্ধের প্রয়োজন হবে এবং এই প্রক্রিয়া অন্তহীনভাবে চলতে থাকবে। সুতরাং, ‘লাল ফুল’ এর প্রকৃতি কী তা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। যেহেতু স্ববিরোধী কোন বিষয়ের পারমার্থিক বা আধিবিদ্যক সত্তা থাকতে পারে না, সুতরাং, জগতের ব্যবহারিক সত্যতা আছে কিন্তু পারমার্থিক সত্যতা নেই। তাই জগৎকে মিথ্যা বা অধ্যস্ত বলার তাৎপর্য হলো এই যে, জগৎ অনির্বচনীয়।
শ্রুতিতে এই জগতের কারণ মায়াকেও ‘সদসৎ-বিলক্ষণানির্বচনীয়া’ বলা হয়েছে। যেহেতু মায়া সৎ থেকে পৃথক এবং অসৎ থেকেও পৃথক, সেহেতু অনির্বচনীয়। মায়া এই জগতের কারণ এবং জগৎ মায়ারই পরিণাম। সুতরাং, জগৎ সৎও নয়, অসৎও নয়, অতএব, সদসৎ বিলক্ষণ অনির্বচনীয়া।
দৃষ্টিসৃষ্টিবাদ : এই প্রসঙ্গে দ্বিতীয় মতবাদ অর্থাৎ, দৃষ্টিসৃষ্টিবাদের প্রবর্তক হলেন ভামতী সম্প্রদায়। বাচস্পতিমিশ্র এই মতের প্রবক্তা। তিনি বলেছেন যে, জীব যেহেতু বহু, অবিদ্যাও বহু। জীবই অবিদ্যার আশ্রয় বা অধিষ্ঠান এবং এই জগৎ ঐ জীবাশ্রয়ী অবিদ্যারই পরিণাম। জীব ও অবিদ্যা যেহেতু বহু, সেহেতু জগতে এতো বৈচিত্র্য। ব্রহ্ম জীবমাত্রেরই অধিষ্ঠান বলে অবিদ্যাগুলিরও অধিষ্ঠান এবং এই কারণে জগতেরও অধিষ্ঠান। এই কারণেই শ্রুতিতে ব্রহ্মকে জগতের উপাদানকারণ বলা হয়েছে। এবং এই একই কারণে শঙ্করাচার্য অবিদ্যাকে ‘পরমেশ্বরাশ্রিতা’ রূপে বর্ণনা করেছেন।
বাচস্পতিমিশ্র আরো বলেন যে অবিদ্যা দু’প্রকার- মূলাবিদ্যা এবং তুলাবিদ্যা। মূলাবিদ্যা হলো ঈশ্বরের উপাধি এবং তুলাবিদ্যা জীবাত্মায় অধিষ্ঠিত। বস্তুত তুলাবিদ্যাই জগৎ সৃষ্টি করে থাকে। অনাদিকাল থেকে জীবের সঞ্চিত সংস্কারই তুলাবিদ্যা। জগতের বহুত্ব তুলাবিদ্যারই সৃষ্টি, জীবাশ্রিত তুলাবিদ্যা বহুত্বকে ব্রহ্মের উপর আরোপ করে থাকে। ব্যবহারিক জগতের বহুত্বের ব্যাখ্যার জন্য বাচস্পতিমিশ্র মায়া বা মূলাবিদ্যার উপর গুরুত্ব দেননি। তাঁর মতে মূলাবিদ্যা জগৎ সৃষ্টির সহকারি কারণ, মূল কারণ নয়। প্রতিটি জীব তার নিজস্ব অবিদ্যা সংস্কার অনুসারে নিজের জ্ঞানের ও ভোগের বিষয় সৃষ্টি করে থাকে।
এই মতে আমাদের অভিজ্ঞতার বিষয় যে জগৎ, তা সত্য নয়। কারণ পারমার্থিক সত্তায় এই জগৎ বাধিত হয়। বাচস্পতিমিশ্রের মতে যতক্ষণ একটা বিষয়ের জ্ঞান হয়, ততক্ষণ সেই বিষয়টির সত্তা প্রতীয়মান হয়। এক অর্থে জ্ঞানের প্রতিটি বিষয়েরই কেবল প্রাতিভাসিক সত্তা আছে। তুলাবিদ্যার ক্রিয়ার ফলে জ্ঞান ও জ্ঞানের বিষয়ের উৎপত্তি হয়। ভ্রান্তপ্রত্যক্ষের বিষয়টি, উদাহরণস্বরূপ রজ্জুতে সর্পভ্রমে সর্পটি যেমন ব্যবহারিক জগতের অভ্রান্ত প্রত্যক্ষের দ্বারা বাধিত হয়, তেমনি সেই অভ্রান্ত প্রত্যক্ষটিও পারমার্থিক জ্ঞানের দ্বারা বাধিত হয়। কোন জ্ঞানের বিষয়েরই জ্ঞানাতিরিক্ত সত্তা বা অপ্রতীয়মান সত্তা নেই। সুতরাং, পারমার্থিক বিচারে সৃষ্টি নেই, ধ্বংস নেই, জন্ম নেই, মৃত্যু নেই। জগৎ হলো জীবের অন্তর্ভুক্ত এক বিরাট ভ্রম। এইজন্যই জগৎ একটি অনির্বচনীয় প্রপঞ্চ।
সুতরাং, এই মতে জীবাশ্রিত তুলাবিদ্যা হলো মূলাবিদ্যারই একটি অবস্থা বা কার্য। তুলাবিদ্যাগুলি মূলাবিদ্যা থেকে উদ্ভূত। ধ্বংসের পর তার আবার মূলাবিদ্যায় লীন হয়ে যায়। তুলাবিদ্যা এবং মূলাবিদ্যার মধ্যে সম্পর্কটি হলো যথাক্রমে অংশ এবং সমগ্রের সম্বন্ধ। অংশের ক্রিয়া বা ধর্মকে সমগ্রের ক্রিয়া বা ধর্মরূপ গণ্য করা হয়। যেমন একটা সাদা কাপড়ের কোন একটা অংশে একটা কালো দাগ থাকলে আমরা সমস্ত কাপড়টাকেই দাগযুক্ত মনে করি এবং ঐ দাগের জন্য সমস্ত কাপড়টিই অব্যবহার্য হয়ে যায়।
বস্তুতপক্ষে পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকেই জগৎ ও জাগতিক বিষয়কে মিথ্যা বলা যায়। এই মতবাদীরা সমষ্টিগত অনুভবসিদ্ধ, তা অবিদ্যাজন্য হলেও, জাগতিক বিষয়ের দৈনন্দিন ব্যবহারকে কখনোই অস্বীকার করেননি। উচ্চতর স্তর থেকেই জাগতিক বিষয়ের সত্তাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি। এই উচ্চতর স্তর হলো পারমার্থিক স্তর। ব্যবহারিক স্তর থেকে জাগতিক বস্তুর ব্যবহারকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। এজন্যই এই মতে ব্যবহারিক সত্তার জনক অবিদ্যা মূলাবিদ্যাকে প্রাতিভাসিক সত্তার জনক অবিদ্যা তুলাবিদ্যা থেকে পৃথক করা হয়েছে। তুলাবিদ্যার বিনাশে মূলাবিদ্যার বিনাশ হয় না। বরং মূলাবিদ্যার দ্বারাই তুলাবিদ্যা খণ্ডিত হয়। একমাত্র নিত্য, শুদ্ধ, চৈতন্যের উপলব্ধিতেই তুলাবিদ্যার সঙ্গে মূলাবিদ্যাও বিনষ্ট হয় এবং জগৎ ও জাগতিক বস্তু ব্রহ্মে বিলীন হয়ে এক ও অদ্বিতীয় ব্রহ্মই সৎরূপে বিরাজ করে। পারমার্থিক জ্ঞানের দ্বারা জগৎ বাধিত হয় বলেই জগৎকে মিথ্যা বলা হয়- ‘জ্ঞানান্তরম্ বাধিতত্বম্ মিথ্যাত্বম্’।
জগৎ-সৃষ্টির প্রক্রিয়া :
অদ্বৈতমতে জগতের যেহেতু ব্যবহারিক সত্যতা আছে, সেহেতু তাঁরা জগতের সৃষ্টির পর্যায়গুলির বর্ণনাও দিয়েছেন। আগেই বলা হয়েছে, অদ্বৈতবেদান্তী বিবর্তবাদী। জগৎ ব্রহ্মের বিবর্ত। অজ্ঞান বা মায়াশক্তি আবরণরূপে ব্রহ্মকে আবৃত করে এবং বিক্ষেপ রূপে নশ্বর জগৎ-প্রপঞ্চ সৃষ্টি করে।
শুদ্ধ চৈতন্য ব্রহ্ম নিষ্ক্রিয়। উপাধি মায়া, ব্রহ্মকে আবৃত করে নিজের রূপকে ব্রহ্মে আরোপ করে। মায়া-উপাধিযুক্ত হয়ে ব্রহ্ম তখন সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, সর্বনিয়ন্তা, সর্ববীজস্বরূপ জগৎ-কারণ ঈশ্বররূপে আবির্ভূত হন। ঈশ্বর ব্রহ্মাণ্ডের অব্যক্ত অন্তর্যামী কারণ। ক্রমশ তিনি ব্যক্ত, সূক্ষ্ম কারণ রূপ পরিগ্রহ করে হিরণ্যগর্ভ হন। তারপর তিনি ব্যক্ত স্থূলরূপ পরিগ্রহ করে বৈশ্বানর বা বিরাট হন। বিরাটরূপে তিনি স্থূলজগৎকে বিকশিত করেন।
অবিদ্যা-উপহিত ঈশ্বর চিৎ ও অচিৎবিশিষ্ট। সর্বপ্রথম ঈশ্বর মায়ার সহযোগে নামরূপ সমন্বিত সমগ্র বিশ্বের ধারণা সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি সংকল্প করেন যে তিনি বহু হবেন। ঐ সংকল্পে অবিদ্যা-উপহিত ঈশ্বর থেকে ক্ষিতি (পৃথিবী বা মাটি), অপ্ (জল), তেজ (অগ্নি), মরুৎ (বায়ু), ব্যোম (আকাশ)- এই পাঁচটি অপঞ্চীকৃত মহাভূত উপাদান বা তন্মাত্রের আবির্ভাব হয়। ব্যোমের ধর্ম হলো শব্দ। মরুতের ধর্ম হলো শব্দ এবং স্পর্শ। তেজের ধর্ম হলো শব্দ, স্পর্শ ও বর্ণ। অপ্-এর ধর্ম হলো শব্দ, স্পর্শ, বর্ণ ও স্বাদ। ক্ষিতির ধর্ম হলো শব্দ, স্পর্শ, বর্ণ, স্বাদ এবং গন্ধ। অবিদ্যাপ্রসূত বলে এই পঞ্চতন্মাত্র ত্রিগুণাত্মক বা সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ গুণবিশিষ্ট। সত্ত্বপ্রধান তন্মাত্র থেকে আবার পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় আবির্ভূত হয়- আকাশ থেকে শ্রোত্র বা কর্ণ, বায়ু থেকে ত্বক্, তেজ থেকে চক্ষু, অপ্ থেকে রসনা এবং ক্ষিতি থেকে নাসিকা।
পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় ও সত্ত্বপ্রধান পঞ্চতন্মাত্র মিলিত হয়ে মন, বুদ্ধি, অহংকার ও চিত্ত উৎপন্ন হয়। অন্তঃকরণের এই চারটি অংশ হলো প্রকাশাত্মক অর্থাৎ, স্বচ্ছ। সুতরাং, এই অংশগুলিকে স্বত্ত্বগুণের কার্যরূপে গণ্য করতে হবে। অন্তঃকরণের নিশ্চয়াত্মক বৃত্তি হলো বুদ্ধি। যেমন একই ব্যক্তি পাচক, ছাত্র, শিক্ষকরূপে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে থাকে, তেমনি একই অন্তকরণকে তার কাজের ভিন্নতা অনুসারে মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার বলা হয়।
আবার রজোগুণপ্রধান পঞ্চতন্মাত্র থেকে বাক্, পাণি, পাদ, পায়ু ও উপস্থ- এই পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয় উৎপন্ন হয়। রজঃপ্রধান পঞ্চতন্মাত্র ও পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় মিলিতভাবে প্রাণ, অপান্, ব্যান, উদান ও সমান- এই পাঁচটি প্রাণ উৎপন্ন করে। আর তমোগুণপ্রধান পঞ্চতন্মাত্র থেকে উৎপন্ন হয় সূক্ষ্ম-শরীর ও আকাশাদি পঞ্চস্থূলভূত। স্থূলভূতগুলি পঞ্চীকৃত অর্থাৎ পঞ্চীকরণ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন। পঞ্চীকৃত ভূতগুলি হলো যৌগিক উপাদান।
অদ্বৈত-বেদান্ত যেহেতু উপনিষদানুসারী দর্শন, তাই এর দার্শনিক ধারণাগুলির উৎস কিন্তু প্রাচীন উপনিষদগুলিই, যেমন-
‘তমেকনেমিং ত্রিবৃতং ষোড়শান্তং শতার্ধারং বিংশতিপ্রত্যরাভিঃ।
অষ্টকৈঃ ষড়ভিঃ বিশ্বরূপঃ একপাশং ত্রিমার্গভেদং দ্বিনিমিত্তঃ একমোহম্’।। (শ্বেতাশ্বতর-১/৪)
‘পঞ্চস্রোতঃ অম্বুং পঞ্চযোন্যুগ্রবক্রাং পঞ্চপ্রাণোর্মিং পঞ্চবুদ্ধ্যাদিমূলাম্ ।
পঞ্চাবর্তাং পঞ্চদুঃখৌঘবেগাং পঞ্চাশদ্ভেদাং পঞ্চপর্বামধীমঃ’।। (শ্বেতাশ্বতর-১/৫)
অর্থাৎ :
ব্রহ্মচক্রের সাধারণ পরিধি বা প্রান্তভাগ হলো মায়া বা সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিন গুণের দ্বারা আবৃত। এর যোলটি অঙ্গ বা কলা (যথা- মন, পঞ্চমহাভূত, পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়)। এই ব্রহ্মচক্রের পঞ্চাশটি দণ্ড বা শলাকা (অর্থাৎ, মায়াজনিত প্রমাদ ও বৈকল্য), কুড়িটি খিল বা খোঁটা, ছয় শ্রেণীর বৈচিত্র যার প্রতিটি আবার আট প্রকারের (অষ্টসিদ্ধি অলৌকিক শক্তি- অণিমা, লঘিমা, প্রাপ্তি, প্রাককাম্যম্, মহিমা, ঈশিত্বম্, বশিত্বম্ ও কামাবসায়িত)। এইসব দণ্ড, খিল ও বিভিন্ন অংশ যেগুলি বহুবিধ বন্ধনের প্রতীক, তারই উপর ব্রহ্মচক্র দাঁড়িয়ে আছে। এই চক্রের বিচরণভূমি তিনটি (পুণ্য বা ধর্ম, পাপ বা অধর্ম এবং জ্ঞান)। ইন্দ্রিয়ের প্রতি দুই আসক্তিই (সুখ-দুঃখের) মূল কারণ। আমরা সেই ব্রহ্মচক্রের ধ্যান করি (শ্বেতাশ্বতর-১/৪)।
পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক) যে নদীর পাঁচটি ধারা। পঞ্চভূত (আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মাটি) জ্ঞানেন্দ্রিয়-রূপ নদীকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে আঁকাবাঁকা ও খরস্রোতা করে তোলে। পঞ্চপ্রাণ (প্রাণ, অপান, ব্যান, উদান ও সমান) এই নদীর ঢেউ। পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় (বাক্, পাণি, পাদ, উপস্থ ও পায়ু) এই নদীর তরঙ্গ এবং ইন্দ্রিয়জ জ্ঞানের উৎস যে মন, সেই মনই আবার এই নদীর উৎসমুখ। পাঁচটি গুণ (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ) যেন এই নদীর আবর্ত এবং পাঁচ রকমের দুঃখ (মাতৃগর্ভে থাকা, জন্ম, জরা, ব্যাধি এবং মৃত্যু) এই নদীর তরঙ্গ-সংক্ষুব্ধ ঢাল। এই নদীর পাঁচটি ভাব (অবিদ্যা বা অজ্ঞানতা, আমিত্ব বা অহঙ্কার, আসক্তি, দ্বেষ বা বিতৃষ্ণা, এবং কোনকিছু নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি) এবং পঞ্চাশ রকম রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এর গতি। তবে একথা ভুললে চলবে না মনই বিচিত্র ইন্দ্রিয়জ জ্ঞান, যাকে আমরা জগৎ বলি, তার কারণ (শ্বেতাশ্বতর-১/৫)।
অদ্বৈতমতে পঞ্চীকরণ প্রক্রিয়া হলো প্রতিটি স্থূলভূতেই পঞ্চভূতের সংমিশ্রণ। এই সংমিশ্রণ একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে হয়ে থাকে। প্রতিটি স্থূলভূতে সেই সূক্ষ্মভূতের অর্ধাংশ এবং অপর চারটি সূক্ষ্মভূতের এক-অষ্টমাংশ করে থাকে। অর্থাৎ স্থূল আকাশ = ১/২ সূক্ষ্ম আকাশ + ১/৮ সূক্ষ্ম বায়ু + ১/৮ সূক্ষ্ম অগ্নি + ১/৮ সূক্ষ্ম জল + ১/৮ সূক্ষ্ম পৃথিবী। এভাবে স্থূল বায়ু = ১/২ সূক্ষ্ম বায়ু + ১/৮ সূক্ষ্ম আকাশ + ১/৮ সূক্ষ্ম অগ্নি + ১/৮ সূক্ষ্ম জল + ১/৮ সূক্ষ্ম পৃথিবী ইত্যাদি। বিভিন্ন স্থূলভূত থেকে উৎপন্ন হয় চতুর্দশ ভুবন বা লোক (ভুঃ, ভুবঃ, স্বঃ, মহঃ, জনঃ, তপঃ, সত্য- এই সপ্ত উর্ধ্বলোক এবং অতল, বিতল, সুতল, রসাতল, তলাতল, মহাতল এং পাতাল- এই সপ্ত নিম্নলোক), চতুর্বিধ স্থূলশরীর (জরায়ুজ, অণ্ডজ, স্বেদজ ও উদ্ভিজ্জ) এবং এই সব শরীরের উপযোগী অন্নপানাদি।
যৌগিক বা স্থূলভূতগুলির তমোগুণ প্রাধান্য পেলে সেগুলি বিশ্বের বস্তুতে পরিণত হয় এবং স্থূল শরীরগুলি গঠিত হয়। সরল ভূতগুলি থেকে সূক্ষ্ম শরীরগুলির সৃষ্টি হয়। সূক্ষ্ম শরীর দুই প্রকার, যথা- হিরণ্যগর্ভের সূক্ষ্ম শরীর এবং জীবের সূক্ষ্ম শরীর। হিরণ্যগর্ভের সূক্ষ্ম শরীর উৎকৃষ্ট এবং একে বলা হয় মহৎ তত্ত্ব। অপরপক্ষে জীবের সূক্ষ্ম শরীর হলো নিকৃষ্ট। ঈশ্বর হলেন পাঁচটি সূক্ষ্মভূতের অর্থাৎ, পঞ্চতন্মাত্র, পঞ্চমহাভূত, সপ্তদশ উপাদানবিশিষ্ট সূক্ষ্ম শরীর এবং হিরণ্যগর্ভের স্থূলশরীর উৎপাদনের অপরোক্ষ কারণ। বিশ্বের অন্যান্য বিষয়ের সৃষ্টি তিনি হিরণ্যগর্ভ, প্রজাপতি প্রভৃতির মাধ্যমে করেন।
পঞ্চতন্মাত্র থেকে শুরু করে যাবতীয় উৎপন্ন দ্রব্যই অবিদ্যাসৃষ্ট, ব্রহ্মের উপাধি। এই সব উপাধি দ্বারা উপহিত ব্রহ্মই ‘জীব’ নামে অভিহিত। ব্রহ্মজ্ঞানে সকল উপাধি বিনষ্ট হয় এবং শুদ্ধচৈতন্য ব্রহ্ম আবরণমুক্ত হয়ে পুনঃপ্রকাশিত হন। তাছাড়া অদ্বৈতবেদান্তীরা সৃষ্টি ও ধ্বংসের পুনরাবৃত্তিতে বিশ্বাস করেন। ধ্বংসের প্রক্রিয়া সৃষ্টি প্রক্রিয়ার ঠিক বিপরীত। মূর্ত প্রপঞ্চ, অমূর্ত প্রপঞ্চে লীন হয়ে যায় এবং অমূর্ত প্রপঞ্চ অব্যাক্তৃত প্রপঞ্চে লীন হয়। অব্যাক্তৃত অর্থাৎ, অপ্রকাশিত অবশ্য অন্য কিছুতে লীন হয় না। কারণ তার কোন উপাদান কারণ নেই। একমাত্র মোক্ষলাভের সময়েই অবিদ্যা সম্পূর্ণরূপে নাশ হয়। উপনিষদীয় শ্রুতিতেও শাঙ্করদর্শনের এই প্রাক-ধারণাটুকু পাওয়া যায়-
‘জ্ঞ অজ্ঞৌ দ্বৌ অজৌ ঈশ-অনীশৌ অৎা হি একা ভোক্তৃভোগ্যার্থযুক্তা।
অনন্তঃ চ আত্মা বিশ্বরূপঃ অকর্তা ত্রয়ং যদা বিন্দতে ব্রহ্মং এতৎ’।। (শ্বেতাশ্বতর-১/৯)
অর্থাৎ :
সর্বজ্ঞ ঈশ্বর এবং অজ্ঞ জীব উভয়ই অজাত (জন্মরহিত)। জীবের ভোগের জন্য মায়া-প্রকৃতি নানাবিধ ভোগ্যবস্তু সৃষ্টি করেন। কিন্তু পরমাত্মা অসীম, তাই তিনি সাক্ষীস্বরূপ। ভোক্তা, ভোগ্যবস্তু এবং ভোগ স্বয়ং- অর্থাৎ ‘জীব’, ‘প্রকৃতি’ (মায়া) এবং ঈশ্বর (পরমাত্মা)- এই তিনই ব্রহ্মে একাত্ম। এই সত্য উপলব্ধি করতে পারলে জীব মুক্ত হয় (শ্বেতাশ্বতর-১/৯)।
…
(চলবে…)
…
[আগের পর্ব : অদ্বৈতমতে ব্রহ্ম] [*] [পরের পর্ব : অদ্বৈতমতে মায়া বা অবিদ্যা]
…
(চলবে…)
…
[আগের পর্ব : অদ্বৈতমতে ব্রহ্ম] [*] [পরের পর্ব : অদ্বৈতমতে মায়া বা অবিদ্যা]
…
No comments:
Post a Comment