Thursday, March 20, 2008

# প্রথম আকাশ-০২ (কবিতাগুচ্ছ)


প্রথম আকাশ-০২ (কবিতাগুচ্ছ)

- রণদীপম বসু



পরকীয়া


কী করে এড়াবে সে,
আসক্তি প্রোথিত তার সমান্ত শরীরে;
ঘরে তো থাকাই দায়
নেশাহত চোখে ফের বিনাশী জলের ডাক, বারবার
গৃহের আড়াল ভেঙে ছুটে যাবে দিগবিদিক-
জলের সঙ্গমে নত শীতল উষ্ণতা নিয়ে
অতঃপর তৃপ্ত চোখের ভাজ
খুলে নেবে একে একে
মানবীয় সমাজ সংসার সব।

স্রোতের উন্মূল টানে
এভাবেই ভেসে যেতে যেতে
একদিন
কোন এক হল্ল দুপুরে যদি
ছেটে দেয়া গ্রন্থির হারানো সুলুক খোঁজে,
সে কি জানে, ওখানে সে আদৌ আবশ্যক কি না?

ভেঙে যাওয়া পাড় খুঁজে কে জানে
কতোটা এগোয় পথ,
ঘরে কি ফিরবে আর-
অবাধ্য নদীর সাথেই পরকীয়া হয়েছে যার?

(৩১/১২/২০০৭)



একটি অসমাপ্ত সমাবেশ


এখানে যে ভাঙাচোরা মানুষগুলো একত্রিত হয়েছেন,
প্রত্যেকেই অসম্পূর্ণ-
এক অদ্ভুত জৈবিক মোহে তাড়িত সবাই;
অথচ ভুলেও উচ্চারণ করবেন না সে কথা।
নিজেকে আবৃত রেখে অন্যের নগ্নতা দেখায়
কতোটা আগ্রহী হলে
কামার্ত ষাঁড়ের জিহ্বার মতো
মানুষের চোখে চোখে নেচে ওঠে আঠালো অক্ষরের ক্ষত-
নিরন্তর চোখাচোখি করে কেউ কেউ জেনে যাবেন ঠিকই।
এবং এ কথাগুলো জেনে গেলে
হয়তো অপাঙ্গে কেউ নিজকেই খুঁজবেন আবার,
দেখে নিতে- পোশাকের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
কতোটা অটুট এখনো।

সংজ্ঞাহীন তুলনামূলক প্রাণীর কোন অবয়ব থাকে না;
মানুষের ভেতরেও তাই মানুষের ছবি নেই-
একগাদা প্রাণী আর অপ্রাণীর ব্যাখ্যাহীন স্বভাব নিয়ে
নিরন্তর ছুটাছুটি শুধু।

এখানে এসেছেন যারা-
সবাই পকেটে ভরে এনেছেন কিছু না কিছু;
জোনাকির গুঞ্জন নিয়ে এসেছেন কেউ-
নীরবতার নতুন কোন অর্থ খোঁজবেন এরা;
কারো বা পকেটে আছে ভ্রুণ হত্যার বৈধ প্রত্যয়ন।
এইমাত্র খুন হলো যার অবারিত শৈশব
কিংবা যে কিনা অজান্তেই ফিরে গেছে
কোন এক ভুল কৈশোরে
তারুণ্যের হৈ চৈ চোখে এসে গেছে সেও
সঙ্গী শরীরীর খোঁজে।

এমনো আছেন কেউ- নিজস্ব পকেট ভুলে
নির্দ্বিধায় ঢুঁ দেবেন অন্য কারো পকেটে পকেটে;
এবং আমার মতো নির্বোধ এসেছেন যারা-
এখনো সত্যিই পকেটহীন,
সদ্যজাত নগ্নতার ভাবার্থ খুঁজে খুঁজেই
কাটাবেন আরো কিছুকাল।
আর যারা রয়েছেন পকেটের অজ্ঞাত খবর নিয়ে-
হতে পারে কোন এক মাহেন্দ্র-মুহূর্তে
ঝাঁপি খুলে চমকে দেবেন!

তবে সবারই লক্ষ্য আজ
মাননীয় প্রধান অতিথির সুদৃশ্য পকেটের ভাজে-
যেখানে এক অভূতপূর্ব দক্ষতায়
মানুষের বিবিক্ত অনুবাদ হবে!

যদি একান্তই এসে পড়েন তিনি-
সময়ের দুষ্ট-ক্ষেপনে ঘৃণা করতে করতে
উঠে আসবেন মঞ্চে
এবং একযোগে অবাক হয়ে দেখবে সবাই
মাননীয় অতিথির বুকে- কোথায় সে পকেট?
ওখানে বিশাল ক্ষত!
কারণ, এরই মধ্যে সর্বত্র গুঞ্জন হচ্ছে-
তিনি নাকি এখন এক তুমুল ছিনতাইয়ের কবলে!

অতএব আজকের এ সমাবেশ
অসমাপ্ত রইলেও
যারা এসেছেন আজ- অন্তত জেনে যাবেন এটুকুই-
মানুষের পরিচয় একমাত্র মানুষই ছিনতাই করে। #

(১৫/০১/২০০৮)



ভেনাস

ডিমলাইট জ্বাললেই
পাথরের পেলব শরীর খুলে
বিস্রস্ত কাপড়টাকে
ফেলে দেয় নীচে, প্রতিরাত ;
এবং আমিও তলিয়ে যাই
লালাভ মৃদুল আলোয় নীরব গভীর ঘুমে।

বুক-সেল্ফের আদরে রাখা
ভেনাসের সযত্ন মূর্তিটা
নিয়মের ব্যত্যয় করে
কেনো যে হঠাৎ সেদিন কিছুই করলো না আর-
ঘুমোতে পারিনি আমি সারারাত !

পাথর-মগ্নতা ফেলে
ভাবনায় পাথরের রুক্ষতা নিয়ে
কেউ কি ঘুমোতে পারে !

বাকি যে রাতগুলো একে একে...
শেষতক যদি সে পাথরই থেকে যায় শুধু,
আমি কি জেগেই যাবো নিরন্তর ?

ভেনাস , সত্যিই নিরুত্তর। #
(২৭/০৭/২০০৭)
[amarblog]


রাধা

তুমি নাকি
অজানার বাঁশি থেকে
সুর নিয়ে খেলো ?
ভালোই তো !
রাধা নামের বাঁশিটিকে
বাজাতে পেরেছো তুমি ?
পারোনি।

ওটা তো নিজে নিজেই বেজেছিলো ;
চিরকাল বাজে এমনিই।
অথচ চারদিকে চাউর হলো
তোমারই নাম। #
(০৪/০৬/২০০৭)
[somewherein]


মেয়েটি

বাইরে অঝোর বৃষ্টি-
মেয়েটা কি জানলো তা ?
ছেটে দেয়া ভ্রুর নতুন মানচিত্র খুঁজে
কাটিয়েছে সারাদিন-
আয়নাটাই প্রতিদ্বন্দ্বী তার !

পর্দা সরিয়ে শেষে
যে ছেলেটি দৃশ্যমান হলো
তার বুকে
তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে অন্য কেউ ;
মেয়েটা কি জানে না তাও !

ভূমির বিস্তৃতি পেলে গালের তিলটাও কেমোন
অবসন্ন ধীরতায়
তালের মতো লাল হয়ে যায়-
এমোন আচানক আবিষ্কারে উল্লসিত
না কি বিষণ্ন হতে হয়,
তা ভেবে ভেবে
সারারাত অধীর হবে সে-

ছেলেটা কি জানবে তা ? #

(০২/০৭/২০০৭)
[sachalayatan]

No comments: