Thursday, March 20, 2008

# প্রথম আকাশ-০৩ (কবিতাগুচ্ছ)






প্রথম আকাশ-০৩ (কবিতাগুচ্ছ)

- রণদীপম বসু



প্রথম আকাশ


প্রথম যে আকাশটা দেখেছিলে
সেটা উড়ে গেছে-
এটা তার ছায়া

নদীটার মতোই।

যেভাবে মানুষগুলো দেখছো-
এ দেখাটা ছায়া ছায়া,
মানুষকে এভাবে দেখতে নেই
তাঁর দুঃখ এবং বিষাদগুলো
ছায়া হয়ে যায়;
ওগুলো ছায়া নয়-
প্রকৃতই দুঃখ এবং বিষাদ! #
(১১/০৬/২০০৭)
[somewherein]

আকাঙ্ক্ষা


জলকেলি সেরে উঠে প্রমত্ত ঈশ্বরী
অঙ্গ-আভা বলে দেয়- আগুন নেভাতেই জানে,
গাঢ় উত্তাপ নিরস্ত করা জলের কর্ম নয়
বলা যায় পৃথিবীটা থাকবে আরো কিছুকাল
মোহাচ্ছন্ন, অস্থির।

বাষ্পীত ভাবনার সরল অনুষঙ্গ হয়ে
বুকের হরিদ্রা জমিন খুঁড়ে
কে যেন বানিয়েছে জলাশয়
নিবিড় তরঙ্গ দেবে এই ভেবে
জলপাই গাছে গাছে ছায়াময় পাড় বেধে
বর্ণালী মাছের চোখে দিয়েছে দুষ্টুমী এঁকে
সংগোপনে গুঁজে রাখা আকাশটা খুলে খুলে
দুহাতে উড়িয়ে দিয়ে প্রহরায় রেখে গেছে
প্রতীক্ষার হিমায়িত মেঘ-
সে ঈশ্বরী এলে প্রাণখুলে সিক্ত হবে
যাবে না ফিরে আর অহেতুক সন্তাপ নিয়ে।

শৃঙ্গারের ঘুম ভেঙ্গে অহল্যা জাগবে বলে
ঈশ্বর নেমেছেন বুঝি অন্য কোন উপবনে,
ঈশ্বরী কোথায়? #

(১৮/০৫/২০০৭)



সাক্ষী তিতাস
[কবি আল মাহমুদ-কে]

এখনো তিতাস সাক্ষী
এই মাটির কবন্ধ ঘেটে লেখোনি কি যোনিগন্ধা
উদ্ভ্রান্ত দলিল- দীর্ঘ গোপন হাতে?
বিষদগ্ধ করে করে
পানোখী আঙুলের বলিষ্ঠ ফণায় ফণায়
কৌমের শাসন ভেঙে শুনাওনি কি
আদিমাতা টোটেমের গান;
না কি মন্ত্রপূতঃ মহুয়ার ছল?

চুলের স্তবক খোলে যে দেহে ভাসিয়েছিলে
পবনের নাও, এখনো মরেনি সেই
ক্লিষ্ট তিতাস সাক্ষী-
মোহরের দেনা নয়, কী করে শোধবে এই মৃত্তিকার
খাঁজে খাঁজে গুঁজে রাখা বিষলক্ষী মনসার পণ?
তবে কি লখিন্দর হবে?

যে বেহুলা ছেড়ে গেছো সেই কবে
পরবাসী মোহনার চকচকে মোহে
জন্মিয়েছো অন্ধশ্লোক- বলেছে কি কবুল কবুল?
আহারে শব্দের চাষী ভুলে যাও কেন
বেহুলারা মরে না কখনো, উঠে না সাজানো কোন
বৈধব্য চিতায়;
এখনো তিতাস সাক্ষী-
জলের অক্ষরে আঁকা সোনালী কাবিন। #
(২৫/০৯/২০০৭)
[somewherein]


শ্রাবণ

মেঘের কোন এনাটমি নেই
শাওনের সন্ধ্যারঙ বিকেল ভেঙে আগে আগে
খুনে যে মেয়েটি হেঁটে গেলো অতিধীর
উন্মুক্ত মেঘেদের কাছে,
সারি সারি লাশ আর সংসার পেছনে ফেলে
দেখালো কি ভেজা পা-
পাজামা ইষৎ তুলে?
যদিও দেখেনি কেউ; সবাই দেখলো শুধু-
জলের স্বাচ্ছন্দ্য মেখে শেমিজের লাল এনাটমি
কী ভয়ানক মিশে গেলো
ঈভের স্তব্ধ শরীরী ছাঁদে!

সে কি জানে-
শ্রাবণের ডাঙর জলে
কখনো অবজ্ঞা দেখাতে নেই?
চৈতণ্যের কার্নিশ ভেঙে শিরশিরে চোখে তখন
কবিও পুরুষ হয়,
আদিম! #
(২৬/০৭/২০০৭)
[somewherein]
[amarblog]
[pechali]


একটি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট

এক জীবনে পূর্ণতা নেই
শূণ্যতাও নেই-
একদলা মাটি গুটিকয় বীজ আর
একটু আর্দ্রতা
স্থাপনের উপযোগী ভূমিটাকে
নিরাপদ খুঁজে খুঁজে
এবং খুঁজতে খুঁজতে
লিকলিকে চারাটাতে হরিদ্রার বসত;
এভাবেই জন্ম খোঁজে আরেকটি জীবন।

একেই কি স্বপ্ন বলে?

একটি আত্মহত্যার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে
প্রাথমিক মন্তব্যটা লিখা হয় এভাবে-
লক্ষণ- হৃদযন্ত্রের মাত্রাতিরিক্ত অবসাদ
কারণ- অতিমাত্রায় প্রাপ্তিশূন্যতা
ফলাফল- স্বপ্নের জটিল বিষক্রিয়া

মন্তব্যের ফুটনোট ছিলো-
নমূনা এখনো হস্তান্তরযোগ্য নয়
চূড়ান্ত রিপোর্ট অসম্পূর্ণ। #
(২৭/০৭/২০০৭)
[somewherein]

No comments: