‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Tuesday, May 13, 2008
# যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(১১)
যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(১১)
তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল,১৯৯৩)
রূপা, সহজভাবে বাঁচতে হলে প্রত্যেকেরই কোন না কোন ঈশ্বর থাকতে হয় একজন। জীবনের অতিরিক্ত অমার্জনীয় বোঝা তার ঈশ্বরকে সঁপে দিয়ে হালকা হয়ে চলার শক্তি ফিরে পায়। নাস্তিকেরা বড়ই দুর্ভাগা। কোন ঈশ্বরই তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন না বা দিতে পারেন না বলে যা কিছু সব একাই বইতে হয় ওদের। ওদেরকে অবহেলা কোরো না রূপা। ধর্ম-পুরাণের তত্ত্ব-গাথার স্থুলতায় ওদের কৌতূহলি প্রশ্নবাণ নিয়ত আঘাত করে যায় বলেই সবাই ওদেরকে নিষেধের দেয়াল তুলে আটকে রাখতে চায়। ওরা খুবই একা। ওদের কষ্টের বোঝায় শুধু শুধু অবহেলায় আরো কষ্ট দিয়ে বোঝা বাড়িয়ে কী লাভ বলো ? ওরা তো কখনও অনুযোগ করে না।
ঐ যুবকটি কি নাস্তিক ছিলো এমন ? তাইলে মেয়েটিও যখন তাকে নাস্তিক বলে ফেললো, কেন সে এতো দুঃখ পেলো ? পৃথিবীতে বোধ করি পুরোপুরি নাস্তিক বলে কেউ নেই, থাকে না। থাকতে পারে না। যুবকটিও নাস্তিক থাকে নি। ভালোবাসাকেই সে তার ঈশ্বর বানিয়ে নিয়েছিলো। তার সব দুঃখ কষ্ট আনন্দ বেদনা হাসি কান্নার, তার জীবনের অস্তিত্বের সমস্ত সত্তার সাথি করে নিয়েছিলো। তাই মেয়েটির দেয়া নাস্তিক আখ্যায় সে চমকে ওঠলো, আহত হলো। মনে হলো কে যেনো তার ভালোবাসাকে তার ঈশ্বরকে কেঁড়ে নিতে উদ্যত। তবুও কোন অনুযোগ এলো না মুখে। কেননা যেখানে তার ভালোবাসা তার ঈশ্বর অধিষ্ঠিত, সেটা যে আর সবার ধরা-ছোঁয়ার একেবারে উর্ধ্বে ! সেটা তো এমোন ঠুনকো হতে পারে না। কী জানি ভাবতে থাকে সে। জানো, যুবকটি বড় অস্থির। তার ভাবনা তার চেয়েও অস্থির, অন্তত সেই মুহূর্তে। মেয়েটির সামনে এলে যুবকটি কোন ভাবনার ভেতরেই বেশিক্ষণ থিতু হতে পারে না। তবু সে ভাবে, কেন এমোন করে চমকাবে ? আত্মবিশ্বাস কি এতোই দুর্বল তার ! কেন এমোন হারানোর ভয় ? তবে কি সে এখনো তার ঈশ্বরের চৌকাঠে পৌঁছুয় নি ?
‘পথের কাঁটায় পায়ে রক্ত না ঝরালে, কি করে এখানে তুমি আসবে !...’
তার ভালোবাসা তার ঈশ্বরকে ধারণ করে আছে যে নারী, তাঁর অবয়বে আত্মস্থ যুবক, পুরুষের অবয়বহীন মগ্নতায় কী যেনো খুঁজতে থাকে অবিরাম !
‘পহুঁচা জো আপকো তো ম্যঁয় পহুঁচা খুদাকে তঈঁ,
মালুম তব হুয়া কেহ্ বহুত ম্যঁয় ভী দূর থা।’
( নিজের মধ্যে যখন প্রবেশ করলাম তখন ঈশ্বরের কাছে পৌঁছলাম,
তখন টের পেলাম আমিও কত দূরে ছিলাম।)- ...- মীর তকী মীর।
[ ‘মুক্তবুদ্ধির যুক্তিবাদী মানষ না হলে কেউ উদার ও মানবতাবাদী হতে পারে না।’
‘ আস্তিকেরা ঈশ্বর বা অতিপ্রাকৃতিক শক্তির ভয়ে ভালো কাজ করেন কিন্তু নাস্তিকেরা নিজের বিবেক ও মানবিক মূল্যবোধ থেকেই সৎ ও মহৎ হন।’ ]
চলবে...
আগের পর্ব (১০):
পরের পর্ব (১২):
R_d_B
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment