‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Friday, May 16, 2008
# যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(১৫)
যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(১৫)
তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল,১৯৯৩)
‘খেল লড়কোঁকা সমঝতে যে মুহব্বতকে তৈঁ,
হ্যয় বড়া হৈফ হমেঁ অপনী ভী নাদানীকা।’
(প্রেমকে আমি ছেলেখেলা ভেবেছিলাম, আজ বড় আশ্চর্য লাগছে নিজের বোকামীর কথা ভেবে।)
-মীর তকী মীর।
কথাটি বড় বেশী করে সত্য রূপা। ঐ যুবকটির ভাবনাও তো একই সমান্তরালেই চলে। কিন্তু সে তা প্রকাশে অক্ষম বলেই ‘মীর’-এর কাছে ঋণী হয়ে যায়। তার মনের কথা তো মীর’ই বলে দেন এভাবে-
‘হোশ ও সব্র্ ও খ্যয়র ও দীন ও হরাস ও দিল ও তাব,
উসকে এক আনেমেঁ কেয়া কেয়া নহ্ গয়া মৎ পুছো।’
(শুধু তাঁর আসাতেই আমার যে কী কী গেলো জানতে চেও না, আমার শান্তি ও ধৈর্য, শক্তি ও স্বাস্থ্য, যৌবন ও উদ্যম, আরো কত কী !)
তাই বুঝি হারানোর কষ্টে মীর কেঁদে ওঠেন ঐ যুবকের মনে-
‘দিলকী বিরানীকা কেয়া মজকুর হ্যয়,
ছহ্ নগর সও মরতয়া লূটা গয়া।’
(আমার উজাড় হৃদয়ের কথা কী আর বলব, এই নগরীটি বার বার লুণ্ঠিত হয়েছে।)
এ কী সত্যিই হারানোর কষ্ট ? না কি অন্য কিছু !
জানো রূপা, যে যুবকটি তার প্রিয়তমের কাছে কখনও অভিনয় করেনি বা করতে পারতো না, হয়তো করার ক্ষমতাও রাখে না, সেও কিন্তু একটা দুর্দমনীয় অনুভূতি বহু কষ্টে গোপন করার চেষ্টা করে এসেছে- এরিয়ে যেতে চেয়েছে। সেটা তার ঈর্ষা। কত যন্ত্রণার হলাহলে মন্থিত হয়ে ঈর্ষার জন্ম আমি জানি না। হয়তো মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়লেই ঈর্ষাতুরতায় আক্রান্ত হয়, কিছুই আর পাবার নেই বলে। কেন এমন হয় বলো তো ? আমি ঠিক বুঝাতে পারছি না রূপা, তুমিই বুঝে নিও। যুবকটি যখন দেখে তার প্রিয়তমের একটি অলৌকিক হাসি স্বয়ং ঈশ্বরকেও কিনে নেয়ার ক্ষমতা রাখে, সেখানে সমস্ত পৃথিবীটাই তার দিকে আকৃষ্ট হলেও দোষের তো কিছু নয়। তবু সে কেন এমোন ঈর্ষার আগুনে পুড়ে যায়, যদি কেউ একজনও তার প্রিয়তমের দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায় ! খুব কষ্ট হয় যুবকের তখন। খুব কষ্ট ! এ জন্যেই কি মীর বলেন-
‘হমারে আগে জব কিসীনে তেরা নাম লিয়া,
দিল-এ সিতম জ্দহ কো হমনে থাম থাম লিয়া।’
(আমার সামনে যখন কেউ তোমার নাম মুখে আনল, এই নিপীড়িত হৃদয়কে আমি দুই হাতে চেপে ধরলাম।)
ভালোবাসা তাকে এ কী বানালো, রূপা ! পৃথিবীর আর কিছুই যেখানে তার ঈর্ষাকে ছুঁতে পেলো না কোনদিন, ভালোবাসায় এ কী হাল তার ! ভালোবাসাই কি ঈর্ষার জন্ম দেয় ! কষ্ট পেয়ো না রূপা, তুমিই তো আমাকে এই ঈর্ষার দাহনে পুড়াচ্ছো। তাই-
‘য়সীয়ৎ মীরনে মুঝকো য়হী কী
কেহ্ সব কুছ হোনা তূ, আশিক নহ্ হোনা।’
(মৃত্যুকালে মীর আমাকে সাবধান করে দিয়ে গেল ; আর যা কিছু হতে চাও হোয়ো, কিন্তু প্রেমিক কিছুতেই নয়।)...--মীর তকী মীর।
চলবে...
আগের পর্ব (১৪):
পরের পর্ব (১৬):
R_d_B
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment