‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Thursday, May 22, 2008
# মায়াবী জলের খেলায়- ০২ (কবিতাগুচ্ছ)
মায়াবী জলের খেলায়- ০২ (কবিতাগুচ্ছ)
-রণদীপম বসু
সেইণ্ট ভ্যালেণ্টাইন
অনিবার্য মৃত্যুকে সামনে রেখে ভালোবেসেছিলেন তিনি
অবিনশ্বর, আজো তাই
আমাদের বুকের ভেতরের সেই অন্ধ মেয়েটি
কান্নায় ককিয়ে ওঠে তাঁর নামে।
এবং গুঁজে রাখা তার বুকের খোপ থেকে
একটি পালক খুলে
উড়িয়ে দেয় সম্মিলিত আকাশের গায়ে-
এই দিনে।
আকাশেরা ধরে রাখতে পারে না কিছুই ;
সে পালক উদ্ভাসিত আলোয় ভেসে
উড়ে যায় দেশ কাল পাত্রের সীমানা মুছে
একাকার- যে আলোয় স্নান করে
আমরাও হয়ে ওঠি শুদ্ধ সতেজ !
সেইণ্ট ভ্যালেণ্টাইন-
মৃত্যু আর ভালোবাসায় যিনি
ফারাক রাখেন নি কিছুই !
(১৫/০২/২০০৬)
মোনালিসা
(১)
তোমার হাসি আধেক হাসি
তাতেই এতো অর্থ !
বাকি আধেক পূর্ণ হলে
না জানি কী ঘটতো অনর্থ !
(২)
ত্রিকোণ হাসির এককোণে রয়
ঘাতক মোহের ফাঁদ
আরেক কোণে উপহাসের
দুরন্ত বিস্বাদ !
অন্য যে কোণ আচ্ছন্নতায় অন্ধ প্রতিভাস
নবীন চোখের করুণ হাসি ঝরায় দীর্ঘশ্বাস।
(৩)
কেউ বুঝে না হাসি তা নয়
চতুর ধাঁ ধাঁ
মধ্যে বাঁধা
নির্বোধের আশ্রয়
গভীর তলের কূট শিকারি উপর তলে
হাসির ছলে
কারুকার্যময়।
আধেক হাসির অপূর্ণতায় যে খোঁজে তার অর্থ
জানে না কি, অর্ধসত্য নহে সত্য- ঘটায় অনর্থ ?
(১৫/০২/২০০৬)
[amarblog]
ভোরের সৈকতে
ভোরের নির্জনে দেখি
রতিতৃপ্ত রমণীর মতো
সৈকত শুয়ে আছে সাগরের কোলে
নগ্ন মসৃন
এতটুকু টোল নেই মোহন শরীরে তার
জোয়ারের এলোচুলে সমুদ্র বুলায় হাত ভালোবেসে
আমিও এগিয়ে যাই-
ইচ্ছে নয় ওদেহে বসাতে আঁচর কোনো
তবু অনায়াসে টের পাই
ভেতরে আমার জেগে ওঠে তৃষ্ণারা আবার...
তারপর শরীরী অক্ষরে এঁকে
এভাবেই লিখা হয় কোন এক আত্মবিনাশী নাম !
(১৪/০২/২০০৬)
তৃষ্ণা নয় গর্জন কেবল
খুব বেশি তৃষ্ণা নিয়ে যেতে নেই সমুদ্রের কাছে
বহ্নিমান তৃষ্ণাকে নেভাতে জানে না সে-
উস্কে দেয় আরো।
আগ্রাসী তৃষ্ণারা সমুদ্রের মতোই ব্যপ্তমান বলে
সমুদ্রের কাছে এলে
নিজস্ব তৃষ্ণাগুলো সযত্নে ঢেকে নিয়েই
ছুঁতে হয় অবিনাশী জল।
মানুষের কষ্ট সমুদ্র বুঝে কি না কে জানে
তবু সারাদিন কষ্টগুলো ধানের বীজের মতো
ছিটিয়েছি আপ্লুত সৈকতে সৈকতে
যেখানে সমুদ্র-সারসেরা নির্জন কোলাহলে
মেতেছিলো জোয়ারের স্বভাবে ভীষণ।
কোন কোন আত্মবিনাশের কালে
নিজস্ব আয়নায় এসে মানুষেরা থমকে দাঁড়ায় নিশ্চয়ই ;
কেউ তো বুঝেনি কিছুই
সমুদ্র সম্মুখে রেখে করজোড়ে মিনতি করেছি-
তার বিশাল মুঠোয় তুলে নিতে কষ্টগুলো সব ;
নিঃসঙ্গ আগত আমি নিঃস্ব হয়েই না হয় ফিরবো এবার।
সেই থেকে এই বুকে সমুদ্রের গর্জন কিছু
থেকে থেকে ডেকে যায় আগ্রাসি ক্ষুধায় !
(১৪/০২/২০০৬)
কষ্টের জলছাপ
চলে যাওয়াই সংসারের শুদ্ধ নিয়ম
তবু পারে না কি অশুদ্ধ প্রত্যাবর্তন হতে ?
পাললিক সুখে ডুবে যুবতী রাতের শেষে
যে নারী ঢু মারে স্বপ্নের সুমন্ত ভিটায়
দিনের স্বচ্ছতায় নিজেকে লুকায় সেও-
কাল্পনিক পদছাপ আসে না ফিরে আর ;
আহা ! যদি ফিরে আসতো ?
নদীর পাঁজরে থাকে বৃক্ষের শিকড় গাথা।
কষ্টের জলছাপে যে নারী আর্দ্র হয়
প্রিয়তম পুরুষের শোকে
উন্মূল বৃক্ষের মতো সেও কি ঠিকানা হারা-
অবশেষে পেয়ে যায় নদীর স্বভাব ?
নদীরা মরে না জানি-
মরে গেলে বৃক্ষের প্রতিরূপে জেগে ওঠে ফের।
চলে যাওয়াই সংসারের শুদ্ধ নিয়ম,
নিয়মের খণ্ডন করে আহা
একটুকু ভুল হতো যদি !
(১১/০৪/২০০৬)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment