‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Tuesday, May 20, 2008
# যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(১৮)
যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(১৮)
তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল,১৯৯৩)
‘তুমি মোর পাও নাই পাও নাই পরিচয়,
তুমি যারে জানো সে যে কেহ নয় কেহ নয়।’... (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।
রক্ত মাংশের শরীরের অবদমিত কামনা বড় ভয়ঙ্কর জিনিস রূপা। সেটা নিজের মধ্যে নিজের প্রচণ্ড অনুভূতি বলেই অন্য কেউ বুঝতে পারে না খুবই নিকট সংস্পর্শে না এলে। তাই তো মেয়েটিও যুবকটির এই সংহারক পরিচয় পায়নি কখনো। রক্ত-মাংশের তীব্রতর সংঘর্ষে সৃষ্ট এ তীব্রতম উত্তাপ সামাজিক স্বীকৃতি না পেলে মানুষ পদবাচ্যের কোন সভ্য প্রাণীই তার সঙ্গি/সঙ্গিনিকে বোঝাতে পারে না এটা। বৈধতার সীমানা ডিঙিয়ে যারা পারস্পরিক উত্তাপ বিনিময় করে তাদের ব্যাপারে মন্তব্য করতে যাওয়াটা নিস্প্রয়োজন। তা ছাড়া স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এই বৈধতার সংজ্ঞাও পাল্টে যায়। কিন্তু এই উত্তাপ অস্বীকার করবে কে। যে করে সে হয় প্রচণ্ড মিথ্যেবাদী, আত্মপ্রতারক ; নয়তো ধরে নিতে হবে প্রকৃতির নির্দয়তায় তার স্বাভাবিকতার বিচ্যুতি ঘটেছে বলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার ক্ষমতার বিলুপ্তি ঘটেছে। এখানে রক্তমাংশহৃদয়মননে গড়া দুটি নরনারীর মধ্যে সত্যিকারের প্রেম চলে না। কেননা জীবনের সৃষ্টি রহস্য এখানেই।
যা বাস্তব তা-ই সত্য, তাই বাস্তবতাকে অস্বীকার মানে নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা নয় কি ? যুবকের এই দিকটাকে দেখে কি খুব আশ্চর্য হচ্ছো রূপা ? যৌবনে এটাই তো স্বাভাবিক। তুমি কি তোমার এমোন অস্তিত্বকে সত্ত্বাকে অস্বীকার করতে পারো ? সৃষ্টি রহস্যে কী বলা আছে জানো ? উষ্ণ হৃদয়কে ধারণ করে উদ্দীপ্ত দুটি দেহ যখন পারস্পরিক উত্তাপ বিনিময়ে বাধাগ্রস্ত হয়, তখনই আসে বিরহ-যন্ত্রণা। যে-ই সৃজনকর্তা হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়েছেন, তিনিই দিয়েছেন দেহের উত্তাপ, পরিপূর্ণ হতে। দেহের উত্তাপ আনে কামনা, হৃদয়ের উষ্ণতা আনে বাসনা, আর দুয়ে মিলে আনে প্রেম- ভালোবাসার প্রচণ্ড যন্ত্রণা ! তা বিশ্বাস করে বলেই এই যুবক নিজের উদ্দীপ্ত সত্ত্বাকে-শরীরকে অস্বীকার করে না।
কেনই বা করবে বলো ? তার মধ্যেও তো রক্তে মাংশে সংঘর্ষ ঘটে। মাঝেমধ্যে ঝলসে ওঠে অবাধ্য কামনার অবদমিত ইচ্ছা, সুতীব্র ! থরোথরো কামদাহে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় সে নিজে, আর তার আগ্নেয় বুকের তলায় ভয়ঙ্করভাবে পিষ্ট হয়, নির্দয়ভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তারই কল্পনার প্রিয়তমা নারী ! ভয়াবহ রকমের শূন্য ঐ পৃথিবীটাতে তখন একটিমাত্র প্রাণীযুগল পরস্পরে জড়িয়ে এলিয়ে থাকে নিবিড়ভাবে। এ-কে তুমি কী বলবে রূপা ? এ কী লজ্জা ! এ কী পাপ ! অবশ্যই তা হতে পারে না। প্রাণী মাত্রেই এমন চূড়ান্ত পরিণতি খুবই স্বাভাবিক এবং সত্য বলেই কল্পনায় ঐ যুবক কিছুটা সংকোচ বোধ করলেও লজ্জা পায় না একটুও। প্রিয়তমার কাছে তো ঐ যুবকের কোন কিছুই গোপনীয় নয়। তার ভালোবাসা যেমন নিখাদ সত্যি, তার সমগ্র সত্ত্বার বিচিত্র অস্তিত্বও তেমনি অবিশ্বাস্য রকমের সত্যি।
রূপা, তোমার ভেতরে আমার এই যুবকসত্ত্বার বিচিত্র কাছে আসায় আশ্চর্য হয়ো না তুমি। পৃথিবীতে নিরেট আশ্চর্য বলে তো কিছুই নেই। আশ্চর্য হচ্ছে ভালোবাসা নামক এই বিচিত্র অনুভূতিটাই !
চলবে...
আগের পর্ব (১৭):
পরের পর্ব (১৯):
R_d_B
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment