Wednesday, May 28, 2008

# কলম (ইহা গল্প)



কলম (ইহা গল্প)

-রণদীপম বসু


সকালে অফিসে ঢুকেই জরুরি ফাইলটা নিয়ে বসের রুমে দৌঁড় দেবো প্রায়, কলমটা আর খুঁজে পাচ্ছি না। তালাহীন ড্রয়ারটা হাতরে তন্ন তন্ন করেও কলমটা খুঁজে পেলাম না। আগে টেবিল থেকে কলম হারিয়ে যেতো বলে এখন ড্রয়ারেই রেখে যাই। এখানেও তথৈবচ ! অন্যের বই বউ আর কলম, এই তিনের প্রতি শিক্ষিত বাঙালির আদি ঝোঁক যে এখনও অত্যন্ত প্রবল আবারো তার নমূনা এই জরুরি মুহূর্তে তারিয়ে তারিয়ে অনুভব করবো কী, সামনে পিয়ন কাউকে না পেয়ে নিজেই ছুটলাম দোকানের উদ্দেশ্যে। জরুরি ফাইল ; হয়তো এক্ষুনি এটা নিয়ে বসদের দৌঁড় ঝাঁপ শুরু হয়ে যাবে।

পাঁচ টাকা দামের বলপেন হাতে নিয়ে ফের অফিসে ঢুকেই দেখি পরিস্থিতি জটিল। পিয়নের বাঁকা চোখের ইঙ্গিত বসের রুমের দিকে। এরই মধ্যে দু দুবার জরুরি তলব হয়ে গেছে। প্রথমবারের নিম্নচাপ দ্বিতীয়বারে ঘূর্ণিঝড় হয়ে বয়ে গেছে এক দফা। এখন যে কী আছে কপালে, বিধাতাই জানেন। ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের নাম জপতে জপতে সোজা বসের রুমে।

অফিস ক’টায় ? বজ্রহুঙ্কারে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত !
স্যার, আমি অফিসে একবার এসে গেছি ; কলমটা...
অফিসে একবার মানে ? অফিস দিনে ক’বার...?
না.. মানে.. স্যার.. কলমটা...
অফিসটা কি শ্বশুরবাড়ির আড্ডাখানা...
আচমকা এমন তীব্রগতির বিরতিহীন বজ্রঝড়ে আমার তখন টালমাটাল অবস্থা। বিপজ্জনকভাবে হাইপ্রেশারের রুগী অফিস-বসের এই এলার্মিং অবস্থায় আমি আর আত্মপক্ষ সমর্থন করবো কী, প্রথম কথাটাই তো বলা হয়নি। ইতোমধ্যে যা-ই বলতে উদ্যত হচ্ছি, না মা-মা-মানে ইয়ে স্যা-স্যার আ-আমি ক-কলমটা.. আমার এসব আমতা আমতা অর্থহীন তোতলামোতে ঘূর্ণিঝড় প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে হ্যারিকেনের মাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। শেষপর্যন্ত বাঁচার আশা বাদ দিয়ে এই অদৃষ্ট-ঝড়ের হাতেই নিজেকে ছেড়ে দিলাম।

বাতাসের তোড়ে জীবিত না মৃত জানি না, বিধ্বস্ত অবস্থায় এক দায়িত্বহীন অপদার্থ অফিসারে পরিণত হয়ে আমি যখন ক্ষোভ দুঃখ অপমান নিয়ে বেরিয়ে এলাম, অসংখ্য কৌতুকপ্রিয় কৌতূহলী দৃষ্টির কেন্দ্র বানিয়ে বেআদব পিয়নটা হাজিরা খাতাটা বাড়িয়ে ধরলো আমার সামনে। আমি তখন প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছি শুধু। দেখি খাতাটায় আমার নামের পাশে আজকের তারিখের স্বাক্ষরবিহীন ফাঁকা ঘরটাতে হাতে আঁকা এক রক্তাক্ত বৃত্তের মধ্যে একটা বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন, অসভ্য লাল !

(২৮/০৫/২০০৮)
R_d_B

No comments: