Wednesday, May 14, 2008

# উল্টোস্রোতের কূল-ঠিকানা,প্রসঙ্গ- লিটল ম্যাগাজিন...(দুই)



উল্টোস্রোতের কূল-ঠিকানা,
প্রসঙ্গ- লিটল ম্যাগাজিন...(দুই)


- রণদীপম বসু
[প্রথম পর্ব (০১): এখানে]

‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই, তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’
--- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস
(৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)


ছড়াসাহিত্যে লিটল ম্যাগাজিন

ছড়াসাহিত্যকে অবহেলা করতে পারে কেবল নিরেট মূর্খ আর নির্বোধরাই। পিতার পরিচয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু মা-কে অস্বীকার করার কোন কি উপায় আছে? আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা ছড়াসাহিত্যের এই বিশাল বিস্তৃতিকে উপেক্ষা করার কোনই উপায় নেই। এ যাবৎ আবিষ্কৃত বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যার দোহায় জীবনমনস্কতা থেকে শুরু করে লোকায়ত জীবনযাত্রার প্রতিটা ধাপ অতিক্রম করে বাঁকে বাঁকে সাহিত্যের বিভিন্ন পথের সৃষ্টি হতে হতে ছড়াসাহিত্য আজ যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তাতে এর বিষয় বক্তব্য আঙ্গিক উপস্থাপন প্রকরণে বহু পরিবর্তনের ছোঁয়া টের পাওয়া গেলেও সাথে সাথে কিছু নিরীক্ষাহীন অনড়তা আমাদের নজর এড়িয়ে যায় না। সম্ভবত এ অনড়তাই ছড়ার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা।

সাহিত্যের নতুন নতুন পরিবর্তনের সাথে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সংশ্লিষ্টতা ওতপ্রোত। অন্যান্য সাহিত্যমাধ্যম বিবেচনায় সৃজনশীলতায় উৎকর্ষতার শীর্ষ মাধ্যম কবিতার ইতিহাসই হলো কালে কালে পরিবর্তন আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ইতিহাস। তাই কবিতাকে ঘিরে সব সময়ই সমান্তরিক একটা চলমান আন্দোলন হিসেবে লিটল ম্যাগাজিনের যে ব্যাপক চর্চা ও সাগ্রহ আয়োজন চোখে পড়ে আমাদের, সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমে তা অনেকটা স্তিমিত। ছড়াসাহিত্যে তো প্রায় নাই বললেই চলে। এটা কি আমাদের সাহিত্যবোদ্ধাদের অনাগ্রহ, অমনযোগ, না কি সংশ্লিষ্ট অঙ্গনে সৃজনশীল মেধার অভাব তা বিবেচনার দাবি রাখে।

হতে পারে ছড়া আমাদের লৌকিক বাংলার প্রবহমান সংস্কৃতির সাথে স্বতঃস্ফূর্ত জনভাষ্যে নিহিত বলে এর সহজ সরল প্রকরণে নিরীক্ষাধর্মীতার তেমন বিকাশ ঘটে নি। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যথাশিক্ষিত ও মেধাবীদের বিচরণ বলেই হয়তো ছড়া থেকে ভিন্ন হয়ে যাওয়া কবিতার রাজ্যে ছন্দ মাত্রা ভাষা প্রকরণ বিষয় বক্তব্য ও তত্ত্বের সংশ্লেষণ বিয়োজনের ক্রমাগত রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃজনের বাঁকে বাঁকে লিটল ম্যাগাজিনের আত্মপ্রকাশ ও বিকাশের ধারা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ছড়াসাহিত্যের আরেকটি যে ধারা শিশুসাহিত্যে নাক গলিয়ে দিলো? মূলত প্রথমদিকের যা কিছু মেধাবী বিবর্তন, এ ধারাটিতেই দেখি আমরা। যোগীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ, সুকুমারের হাত ধরে ছড়ার এ ধারায় যে চমৎকারিত্ব ও আধুনিকতা দেখা দিলো, তাঁদের ও সমকালীনদের হাতে পড়ে তা-ই আবার শিশুতোষ ছড়া-কবিতা-পদ্য ও কিশোর কবিতার মতো নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টির মাধ্যমে এর বিস্তৃতি বহুগুনে বাড়িয়ে দিলো। একই সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্ভাব্য ক্ষেত্রটাকেও বিচিত্র সম্ভাবনায় প্রসারিত করলো। এ সময়কালটাকে আধুনিক ছড়াসাহিত্যের রেনেসাঁকাল হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। পরবর্তীতে এখানে আরো অনেকেই আঙ্গিকগত পরীক্ষা নিরীক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। বিশেষ করে কাজী নজরুল, আহসান হাবীব, আল মাহমুদ, হুমায়ুন আজাদ, জয় গোস্বামী প্রমুখ কবিদের উজ্জ্বল উপস্থিতি নতুন সম্ভাবনায় উজ্জীবিত করে। তবে প্রকৃত ছড়ার ক্ষেত্রে খুব একটা মাত্রিক পরিবর্তন আমাদের চোখে পড়ে না।

ছড়াসাহিত্যের আরেকটি যে ধারা অন্নদা শংকর রায়ের হাতে সামাজিক রাজনৈতিক ধারায় বিকশিত হয়ে উঠলো, তারই ধারাবাহিকতায় সবতোষ ছড়া নামে একটি সামাজিক ছড়াসাহিত্যের ধারা বেগবান হয়ে ওঠলো। এ ধারাটা এমনই গ্রহণযোগ্যতা পেলো যে, কালে কালে মেধাবীদের মেধা বিকাশের চমৎকার জনপ্রিয় একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গেলো। ছড়ার ক্ষেত্রে এটাকেই আমরা আধুনিক ধারা বলতে পারি, যেখানে বক্তব্য প্রকাশে ঋজুতা, প্রতীকী ব্যঞ্জনার মাধ্যমে ব্যক্তিক ও সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভে বিক্ষোভে বিদ্রুপ আক্ষেপ ঘৃণা বা ইত্যকার আবেগ প্রকাশে অব্যর্থতা, জীবনের চলমান অসংগতিগুলোকে কটাক্ষ করার কৌতুকময় উপস্থাপনের মাধ্যমে স্বতস্ফূর্ত হিউমার প্রদর্শনের উপযুক্ততা তৈরি হয়ে যায়। এ ধারার আদিপুরুষ সুকুমার রায়কে তাঁর ননসেন্স রাইমের স্বীকৃতির মাধ্যমেই আধুনিক প্রকরণে এসে আবদার রশিদ, সুকুমার বড়ুয়া, ফারুক নওয়াজ, লুৎফর রহমান রিটন প্রমুখ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে ভাষা প্রকরণে কোথাও কোন নতুনত্ব না থাকলেও স্রেফ হিউমার ব্যবহারের দক্ষতার কারণেই এরা সফল হয়েছেন বলে ধরে নেয়া যায়। তাদের সব লেখাই যে সফল হয়েছে তাও নয়। একই প্রকরণে আরো অনেক লিখিত হলেও যেখানেই হিউমারবোধের অভাব ঘটেছে সেখানেই রচনাগুলো ছড়া পদবাচ্যের কিছু পদ্য হয়েছে হয়তো, নিপুন ছড়া আর হয়ে ওঠেনি। তবে পূর্বাপর অনেকের লেখাতেই এমন কি অনেক নবীনদের মধ্যেও মাঝেমধ্যে এরকম হিউমারের ব্যবহার ল্ক্ষ্য করা যায়। এটাই আশার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নৈরাশ্যজনক বৈপরিত্যই চোখে পড়ে। প্রচলিতের বাইরে কারো ক্ষোভেই স্বতন্ত্র কোন শিল্পভাষা নজরে আসে না।

যদিও ছড়াসাহিত্যে পূর্বে উল্লেখিত শিশুতোষ ছড়া-কবিতা-পদ্য ও কিশোরকবিতা এবং সামাজিক বা পরিপক্ক ছড়ার কতকগুলো ধারা তৈরি হয়ে আছে, তবু এখনও ছড়াসাহিত্য বলতে সবাই উপরোক্ত সবগুলো ধারাকে একত্রেই বুঝে থাকেন। এবং এই বুঝাটা তাদের এতোই সংশ্লেষিত যে, প্রতিটা ধারাই যে একেকটা স্বতন্ত্র ধারা এবং তা স্বতন্ত্রভাবেই বিশ্লেষণের দাবি রাখে, এটা জেনে বা না জেনে কেউ এখনও মানেন বলে মনে হয় না। এজন্যেই প্রয়োজন ছিলো ছড়াসাহিত্যে বিশেষ কিছু লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের, যা এ সবকিছু সবার কাছে স্পষ্ট করে দেয়ার পাশাপাশি নতুন কোন ধারার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখার প্রয়াসও পেতো। সে রকম কোন উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা কি আদৌ হয়েছে? এগুলো বিবেচনায় রেখে ইতোমধ্যে প্রকাশিত আমাদের ছড়াসাহিত্যে গুঞ্জন তোলা কিছু লিটল ম্যাগাজিনের হয়ে ওঠা বা হয়ে না ওঠা নিয়ে আলোকপাত করা দরকার।


নাম ধরে ডাকে কি কেউ?

বিপণনের সুতীব্র মোহে বিজ্ঞাপনের আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে কোন বই বা সংকলনের আগাম জন্ম ঘোষণা প্রায়শই জেনে যাই আমরা। কিন্তু চারিত্র্য বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী লিটল ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে তা হবার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ এবং নাই বললেই চলে। জন্মসাফল্যই একে পরিচিত করে তোলে এবং পাঠকের মনে বিষয়নিষ্ঠ নতুন ভাবনার জন্ম দেয়ার কার্যকরিতা তাকে করে তোলে কৌতূহলী ও আকর্ষণীয়। সন্ধানী চোখ ও সামর্থের সীমাবদ্ধতা মেনেই ছড়াসাহিত্যের মহাফেজখানা ঘাটলে সুদীর্ঘ ইতিহাসে শিশুসাহিত্যকে ভিত্তি করে নানান ধরনের সংকলনের তালিকা দীর্ঘ হবে নিঃসন্দেহে ; ছড়া নিয়ে কুলঠিকানার খোঁজে গবেষণাগ্রন্থও আছে বেশ। কিন্তু কোন লিটল ম্যাগাজিন কি আদৌ চোখে পড়ে ? হয়তো ছড়া নিয়ে সমালোচনা সাহিত্যটাই এযাবৎ গড়ে ওঠেনি বলে সমান্তরিক অবস্থানে লিটল ম্যাগাজিন চর্চাটাও সেভাবে আর হয়ে ওঠেনি।

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে প্রায় দু’যুগ পরে এসে নিজেকে ছড়া বিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে যে পত্রিকাটির আত্মপ্রকাশ ঘটে সেটা ‘ছড়া পত্রিকা’। ঘোষণা অনুযায়ী সম্ভবত ছড়া পত্রিকাই বাংলাদেশে ছড়া বিষয়ক প্রথম লিটল ম্যাগাজিন, যদিও এক্ষেত্রে তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। একই দাবি নিয়ে পরবর্তীতে আরো যারা এসে মাঠে নামলো তারা হচ্ছে- প্রতীকী, ছড়াড্ডা, অন্ত্যমিল, চমচম, চমক, নকশি, ছড়াপত্র ইত্যাদি। মানুষ নিজের সম্পর্কে নিজেই নাকি সবচেয়ে বেশি ভালো জানে। কিন্তু মানুষ তো হচ্ছে এক অপ্রকাশিত মহাগ্রন্থ। আর পত্রিকা বা ম্যাগাজিন হলো হাটে ছেড়ে দেয়া বই। অতএব পাঠক হিসেবে আমরা তো এদের দাবিকে একটু যাচাই বাছাই করে নিতেই পারি। এক্ষেত্রে লিটল ম্যাগাজিনের মৌলিক চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য কী হবে তা যেহেতু মোটামুটি চিহ্নিত করা গেছে, সে আলোকেই আমরা আমাদের চিন্তাসূত্রটাকে চারিয়ে দিতে পারি। আলোচনার সুবিধার্থে আলোচ্য পত্রিকাগুলোর সর্বশেষ সংখ্যা যা এ নিবন্ধকারের কাছে রয়েছে , তাকেই সর্বশেষ নমূনা হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়েছে।


ছড়া পত্রিকা

প্রচলিত সংকলন পত্রের প্রথাগত মেড়মেড়ে পাঁচমেশালির ভীড়ে আচমকা ছড়া বিষয়ক বিচিত্র সব প্রবন্ধ নিবন্ধ আলোচনায় সমৃদ্ধ হয়ে যে পত্রিকাটির উপস্থিতি সংশ্লিষ্ট অঙ্গনের লিখিয়েদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুলতে সক্ষম হলো শুরুতেই, তা হচ্ছে ছড়া পত্রিকা। ছড়াকার মাহবুবুল হাসানের আন্তরিক ও মেধাবী সম্পাদনায় ১৯৯৩- এ আত্মপ্রকাশের পর থেকে মহান একুশে বইমেলাকে সামনে রেখে প্রতিবছর পত্রিকাটির একটি করে সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে আসছে। সে ক্ষেত্রে সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সংখ্যাটি ক্রমানুসারে পঞ্চদশ হবার কথা থাকলেও বোধ করি বিচ্ছিন্নভাবে দু’টো বছর মাঝে থেকে বাদ পড়ায় চলমান সংখ্যাটি হচ্ছে ত্রয়োদশ সংখ্যা। পত্রিকার আকারে বিশেষত্ব , রুচিশীল অবয়ব ও অঙ্গসৌষ্ঠব , প্রকাশনার গুনগত মান ও দু’মলাটের ভেতরে ঠাসা ভাবুক শব্দরাশির ঝংকারে পত্রিকাটি এতোটাই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে যে, এতগুলো বছর পেরিয়ে এসেও তার আকর্ষণ এ অঙ্গনে এতটুকুও হ্রাস পায় নি। বরং পরবর্তী সংখ্যার জন্য পাঠকের দীর্ঘ প্রতীক্ষা আরও কষ্টকর হয়ে ওঠে। এই জনপ্রিয়তা অক্ষু্ণ্ন রাখা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের ব্যাপার। কিন্তু এখন বিবেচনার বিষয় লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে এই পত্রিকা আসলে কতোটা উত্তীর্ণ হতে পেরেছে।

সংকলিত গদ্যরচনার মধ্য দিয়েই একটি ম্যাগাজিনের আদর্শ উদ্দেশ্য ল্ক্ষ্য ও দর্শন চিহ্নিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি এ আদর্শের বাস্তব উদাহরণ বা নমূনা হিসেবে উপস্থাপিত হয় প্রস্তাবিত মৌলিক রচনার নিদর্শনগুলো। এখানে ছড়া পত্রিকায় কী দেখতে পাই আমরা ? চলতি এ সংখ্যায় প্রকাশিত প্রথম গদ্যটি মুহাম্মদ নিযামুদ্দীনের ‘শামসুর রাহমান; ছড়াতেও যিনি শক্তিমান’। আলোচনায় ছড়াতে কবি শামসুর রাহমানের শক্তিমত্তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যে চমৎকার উদ্ধৃতিগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে, প্রায় সবই মূলত শিশু-কিশোর কবিতা বা পদ্য। এখানে পদ্য ও কবিতার শক্তি দিয়ে কি ছড়ার শক্তিমত্তা প্রমাণের নতুন কোন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা হলো ? না কি ছড়া ও কবিতার পার্থক্যটাকেই গুবলেট করে ফেলা হয়েছে ? ভাবনা উদ্রেক করার মতো লিটল ম্যাগিয় কোন নতুন চিন্তা-দর্শন কি এ রচনাটিতে প্রকাশ পেয়েছে ? এটা কি ভুতের পা দিয়ে একশ’ বছর পেছনে হাঁটা হয়ে গেলো না !

এমরান চৌধুরীর ‘ছড়া হয়ে ওঠা’ বা রণদীপম বসুর ‘চারুপাঠের মগ্নকিশোর ও আমাদের কিশোর কবিতা’ শিরোনামে সময়োপযোগী নিবন্ধগুলো যে দৃষ্টিভঙ্গিতে চয়ন করা হয়েছে, ছড়া পত্রিকায় সংকলিত ছড়া বা কবিতা নামের রচনাগুলো কি একই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে ? লিটল ম্যাগীয় বৈশিষ্ট্যের সাথে তা মেলানো সত্যি দুরুহ।

আর সতীশ বিশ্বাসের ‘উত্তর আধুনিক ছড়া’ নামের রচনাটিকে যে আজগুবি যুক্তিহীন মনে হয়েছে, ছড়াতে অন্ত্যমিল উঠিয়ে দেয়ার প্রস্তাবের জন্য নয়, উত্তর-আধুনিক নাম ব্যবহারের উদ্ভট স্টান্টবাজি করার জন্য। অন্ত্যমিল ওঠিয়ে দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ছড়ার চর্চা করা যেতেই পারে। কিন্তু উত্তর-আধুনিক নাম ব্যবহারের আগে ভাবা উচিৎ ছিলো যে উত্তর-আধুনিকতা কী আর লিটল ম্যাগীয় চরিত্রই বা কী। গৃহিত হোক বা না হোক, সাহিত্যের বৃহত্তর চিন্তাক্ষত্রে উত্তর-আধুনিকতার দর্শন নিয়ে যেখানে রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ চলছে সেখানে কোন দর্শনবিবর্জিত মামুলি একটা প্রকরণের সম্ভাব্য পরিবর্তন প্রস্তাবের কপালে প্রচলিত এই মতবাদের সীল ব্যবহার করার আগে তা নিয়ে অন্তত সাতবার ভাবা উচিৎ ছিলো না কি ?

বেশ কতকগুলো বইয়ের আলোচনা রয়েছে এ সংখ্যাটিতে। আলোচকরা বইগুলোর বিস্ময়কর সর্বগুনে এতোটাই বিভোর হয়ে গেলেন যে, ভুলে গেলেন সবাই- গুণকীর্তণের জন্য বরাদ্দ জায়গা নিয়ে বহু সংকলন পত্রিকা তাদের তৈলাক্ত জমিন বিছিয়ে রেখেছেন অপেক্ষায় অপেক্ষায়। কিন্তু লিটল ম্যাগ তো কোন ব্যক্তিকীর্তণের জায়গা নয়। এটা একটা আদর্শের জায়গা, আদর্শ প্রচারের জায়গা। ছড়া পত্রিকার পূর্ববর্তী সংখ্যাগুলোতেও দেখা গেছে যে, যার কোন স্বতন্ত্র শিল্পভাষাই তৈরি হয়নি বা দুয়েকটা শিল্পহীন অশিষ্ট পদ রচনার স্টান্টবাজি করে ক্ষমতাসীনের পদলেহনে কৃতিত্ব দেখিয়ে যে কিনা প্রাতিষ্ঠানিকতার সর্বোচ্চ পুরস্কার বাগিয়ে নিতে পারে, তাদের নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে এস্টাব্লিস্টম্যান্টের পায়ে নিজকে বিলিয়ে দিয়ে আদর্শহীনতার পরাকাষ্ঠা দেখাতে। তবে চলতি সংখ্যায় সম্পাদক বরাবরে চিঠির ঘোমটায় ইলতুৎ আলীদের দীর্ঘ প্রতিক্রিয়াটিকে একটা সমালোচনামূলক গদ্য হিসেবে অনায়াসে চালিয়ে দেয়া যেতো, যাতে পাঠকরা কিছুটা হলেও লিটল ম্যাগাজিনের ঘ্রাণ পেতো।

শ্রমসাধ্য পত্রিকাটির আদ্যোপান্ত বিন্যাস ও অবয়ব দেখলে সম্পাদকের সুরুচির প্রশংসা করতেই হয়। তবে সুনির্দিষ্ট কোন শিল্পাদর্শ এতে প্রতিফলিত হয়নি, যা একটা লিটল ম্যাগাজিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আর যদি গণতান্ত্রিক তরল প্রক্রিয়ার উৎকৃষ্ট নিদর্শন হিসেবে দেখি, তবে এ পত্রিকা তা যথাযথ পূরণ করেছে বলে মনে হয়। কিন্তু শুকতলায় ভেংচিকাটা অবাধ্য পিনের মতো অস্বস্তিটাও থেকেই গেলো- এতোটা ইর্ষণীয় সমৃদ্ধি ও যোগ্যতা থাকার পরেও এটা পুরোপুরি লিটল ম্যাগাজিন হতে পারলো না বলে। পনের বছর খুব অল্প সময় নয়। শুধু আদর্শটা পরিষ্কার নয় বলেই এটা হতে চাওয়া লিটল ম্যাগাজিনের একটা প্রতিরূপ হিসেবেই রয়ে গেলো। তবু এখনো তো সময় ফুরিয়ে যায় নি।


প্রতীকী
লিটল ম্যাগাজিন বিষয়ক আলোচনায় যে পত্রিকাটির নাম আদৌ প্রযোজ্য হবে কি না সন্দেহ, কিন্তু সর্বশেষ পনেরতম ফেব্রুয়ারি/মার্চ ২০০৮ সংখ্যাটি প্রকাশের মধ্য দিয়েই একটি নতুন সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত করে দিলো ছড়ার কাগজ ‘প্রতীকী’। নিজেকে ছড়া সাহিত্য বিষয়ক ষান্মাসিক লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে দাবি করা ছড়াকার মিজানুর রহমান শামীম সম্পাদিত এই প্রতীকীও প্রকাশিত হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকেই। সম্ভাবনা বলার অর্থ এই নয় যে এটাকে আমরা লিটল ম্যাগাজিনের পঙক্তিভুক্ত করে ফেলছি। বরং তুলনামূলক মানদণ্ডের নিক্তিতে যাচাই করার সম্ভাব্যতা বুঝানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সেই একইভাবে বলতে হয় যে, ভেতরে যতক্ষণ না মূল আদর্শ দানা বেঁধে না ওঠবে ততক্ষণ তার ল্ক্ষ্যহীন নাবিকের মতো অথৈ জলক্ষেত্র ঘুরে বেড়ানোই সার হবে, কাজের কাজ কিছুই হবে না। সর্বসাধারণের জন্য না পেলো বিনোদনধর্মীতা, না হলো ছড়া-সাহিত্য নিয়ে ভাবুকদের নতুন কোন চিন্তার খোরাক দেয়া। মধ্যপন্থা মানেই যে কোন পন্থা নয়, দিকভ্রষ্টতা, আমাদের লিটল ম্যাগ কর্মিদের মধ্যে এ বোধটা যত দ্রুত বিকশিত হয়ে ওঠবে ততই লিটল ম্যাগের জন্য তথা ছড়া সাহিত্যের জন্য মঙ্গল।

প্রতীকী’র চলমান সংখ্যাটিকে দু’টো অংশে ভাগ করা হয়েছে। ছড়াসাহিত্যে যাঁর বিশেষ অবদান অনস্বীকার্য, স্বনামধন্য ছড়াকার ফারুক নওয়াজের পঞ্চাশে পা দেয়াকে প্রয়োজনীয় সম্মান দেখানোর প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে তাঁর সাহিত্য কীর্তি নিয়ে আলোচনা সাক্ষাৎকার ফারুক নওয়াজ অংশ এবং সামগ্রিক ছড়াসাহিত্য নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা ছড়া কবিতা ইত্যাদি নিয়ে সাধারণ অংশ। ফারুক নওয়াজ অংশে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের যেসব রচনালেখ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা থেকে একজন ফারুক নওয়াজের বিস্তৃত প্রোফাইলই পাই আমরা। লেখক ফারুক নওয়াজ এখানে অনুপস্থিত ; লিটল ম্যাগাজিনের স্বরটা অনুপস্থিত বলেই হয়তো। অথচ তাঁর লেখক সত্তার সন্ধানটাই এখানে জরুরি ছিলো। ওটাই কি তাঁর আসল পরিচয় নয় ?

সাধারণ অংশে অনেকগুলো ছড়া কবিতার পাশাপাশি বেশ ক’টি গদ্য-রচনা স্থান পেয়ে ম্যাগাজিনটি সমৃদ্ধ হয়েছে। তবে গদ্যের কপালে ইচ্ছেখুশি প্রবন্ধ নিবন্ধ ইত্যাদি ভারি ভারি নামবাচক শব্দের বাছ-বিচারহীন তকমা এঁটে দেয়ার প্রবণতা থেকে আরো অনেক ম্যাগাজিনের মতোই প্রতীকীও মুক্ত হতে পারেনি। যে রচনা পাঠকের মনে কোন প্রশ্নই জাগাতে পারে না, কোন মননশীল প্রশ্ন উত্থাপন করলো না, তাকেও প্রবন্ধের ভেলায় চড়িয়ে তরুণ কৌতূহলী পাঠককে কি বিভ্রান্তিতে ফেলা হয় না ? রবীন্দ্র-নজরুল আমাদের সামগ্রিক সাহিত্যেই গভীর বিস্তৃত মহীরুহ। নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাঁদের সৃষ্টিকর্মের উপর বহু গবেষণা অভিসন্দর্ভ রচনা হয়েছে হচ্ছে এবং হবেও। প্রসঙ্গ-সংশ্লিষ্টতায়ও আমরা তাঁদের রচনার কাছে অকৃপণ হাত বাড়াবো সন্দেহ নেই। কিন্তু ছড়া-কবিতায় নজরুলের শিশু কিশোর ‘প্রবন্ধে’ নতুন কোন্ দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষ ঘটানো হলো যে পাঠককে নতুন করে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করবে ? ঠিক এ ধরনের রচনাটি যদি সমকালীন কোন মেধাবী লেখকের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে বিশ্লেষণী হয়ে ওঠতো, লিটল ম্যাগীয় দৃষ্টিতে তাই যথাযথ হতো। একইভাবে বই আলোচনাতেও প্রাতিষ্ঠানিক বৃত্তাবদ্ধতার বাইরে কেউ যেতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে না। মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন তো সম্ভাবনার একটু ঝিলিক দিয়ে আবার দ্রুতই পাততারি গুটিয়ে ফেললেন। আর মেধাবী আলোচক ইলতুৎ আলীদের স্বভাবসুলভ লেখাটি এখানে পাওয়া গেলো কি না নিবন্ধকারের বোধের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেও প্রশ্নটি থেকে গেলো এজন্যেই যে, নতুন রূপে প্রতীকী হয়তো লিটল ম্যাগাজিন হতে চেয়েছিলো। তবে চন্দন চৌধুরীর শিশুতোষ লোকছড়া: ঐতিহ্যে ও অধুনায় প্রবন্ধটিতে মননশীল পরিশ্রমের ছোঁয়া টের পাওয়া যায়। তবু ছোট্ট একটা খটকা লাগলো- প্রবন্ধের প্রথম পৃষ্ঠার শেষ বাক্যটিতে। এখানে বলা হয়েছে-‘বাংলার লোকছড়ার প্রথম সংকলনটি প্রকাশ করেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী ‘খুকুমণির ছড়া’ নামে।’ কিন্তু আমরা যতটুকু জানি এ কাজটি প্রথম করেন ‘খুকুমণির ছড়া’ নামে যোগীন্দ্রনাথ সরকার। কোনটি সঠিক? তবে এর ভুমিকা লিখেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী।

চলমান নিবন্ধের স্বভাব-ধর্ম অনুযায়ীই আমাদেরকে অনিবার্য প্রশ্নটা যে করতেই হবে- প্রতীকী কি লিটল ম্যাগাজিন ? উপরোক্ত আলোচনা-পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে উত্তর নির্ধারণের ভার আপাতত পাঠকের বিবেচনায় রেখে দেয়া হলো। তবে নিবন্ধকারের দৃষ্টিতে প্রতীকী লিটল ম্যাগের কিছুটা পরিচিত ঘ্রাণ পেলেও তা এখনো লিটল ম্যাগাজিন হয়ে ওঠতে পারে নি। হয়ে ওঠার এই সম্ভাবনাটাকে আমরা জিইয়ে রাখতে চাই।


অন্ত্যমিল

লিটল ম্যাগাজিনের যা স্বভাব-বৈশিষ্ট্য, তা বিবেচনায় নিলে ‘অন্ত্যমিল’কে প্রথমে লিটল ম্যাগের পঙক্তিভুক্ত করেই অবশেষে তার ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করার প্রয়াস নেয়াটা বোধয় অধিকতর যুক্তিযুক্ত হবে। মুখে আগুন থাকলে জ্বালিয়ে দেয়া যায় সব। কিন্তু বুকে যার আগুন থাকে, সেই পারে আগুনের ফুল ফোটাতে। এটাই লিটল ম্যাগাজিন। তরুণ কবি ও ছড়াকার রহমান তাওহীদ সম্পাদিত বগুড়া থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘অন্ত্যমিল’ কিশোর কবিতা সংখ্যা (৪ বর্ষ ৩ সংখ্যা) টি হাতে নিলেই সে আগুনের আঁচ টের পাওয়া যায়। আমাদের ছড়া ও কিশোরকবিতা অঙ্গনে এই ‘অন্ত্যমিল’ই সম্ভবত প্রথম কোন সাহসী ও মেধাবী কাজ। অন্ত্যমিলের পূর্ববর্তী সংখ্যাগুলোও নানান ধরনের বিশেষ সংখ্যা হলেও লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে পরিপক্কতা দানা বাঁধতে শুরু করেছে সর্বশেষ এই কিশোর কবিতা সংখ্যাটিতে এসে। স্পষ্টতঃই একটা আদর্শ দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে এতে। কিশোর কবিতা কী কেন এবং সমকালীন প্রবণতা কোন্ উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতা বহন করছে তা খোঁজার যে প্রয়াস, এটাই তাকে লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছে। কিশোর কবিতার ইতিহাস ঐতিহ্য ও সাম্প্রতিকতা নিয়ে মননশীলতায় সমৃদ্ধ ছ’টি আকর্ষণীয় প্রবন্ধ নিঃসন্দেহে পাঠকের সামনে এই জগতটিকে নতুনভাবে উন্মোচিত করে পাঠককে ভাবায় বৈ কি। এগুলো লিখেছেন হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী, ইলতুৎ আলীদ, মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন, জাকির আবু জাফর, জুলফিকার শাহাদাৎ ও মাহফুজুর রহমান আখন্দ। এ ছাড়া তপন বাগচীর মতামতটিও সমৃদ্ধ মনে হয়েছে। তবে কিশোর কবিতার বিভিন্ন বইয়ের ওপর পাঁচটি আলোচনা মানসম্মত হলেও প্রচলিত একমুখীনতা থেকে খুব একটা উত্তীর্ণ হওয়া গেছে বলে মনে হয় নি।

সাইত্রিশজন কবির তিপ্পান্নটি কবিতা ও পদ্য স্থান পেয়েছে ম্যাগাজিনটিতে। বিশাল ব্যাপার। ম্যাগাজিনের গুনগতমান অক্ষুণ্ন রাখতে কবিতা-পদ্য বাছাইয়ে সম্পাদকের আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি ছিলো না বুঝা যায়। কিন্তু কিশোরকবিতার এই নিদান সময়ে সম্পাদকের মনঃকষ্টটাও বুঝতে পারি আমরা। জুলফিকার শাহাদাৎ, নাসিরুদ্দীন তুসী, সাজ্জাদ বিপ্লব, জসীম মেহবুব, মাসুদ আনোয়ার, কামাল হোসাইন, শাকিল ফারুক, মাসুদ কামাল, জুবাইদা গুলশান আরা ফেনসী, জোবায়ের আসাদ ও আবদুল মতিন রিপনের লেখায় কবিতার ঘ্রাণ টের পাওয়া যায়। জুলফিকার শাহাদাৎ ও মাসুদ আনোয়ারের লেখায় কাব্যময়তা আর স্বরের ভিন্নতায় বিশিষ্টতা রয়েছে। বাকীগুলোকে গড়পড়তা বলে চালিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে দু-একটা যে কবিতার মান বিচারে ঝুলে গেছে তা বললেও সম্পাদকের যোগ্যতা বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কেননা সবচেয়ে আকর্ষণীয়, ঝাঁঝালো ও সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বর্তমান কিশোরকবিতার প্রতিনিধিত্বশীল চারজন কবিকে একসাথে অভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি করে যেভাবে সাক্ষাৎকার বিতর্কে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাতে করে সম্পাদকের চমৎকার উদ্ভাবনা শৈলীর প্রশংসা করতে হয়। এই কবিরা হলেন আখতার হুসেন, সুজন বড়ুয়া, রাশেদ রউফ ও জুলফিকার শাহাদাৎ। কিশোর কাব্যাঙ্গনে এই বিতর্কটা হয়তোবা জরুরি ছিলো। মেড়মেড়ে প্রথামাফিক “আপনার ক’টি বই বেরিয়েছে, আপনি এখন কী লিখছেন, আপনার স্ত্রী আপনাকে কতোটা ভালোবাসেন, আপনার অনুপ্রেরণা কে, ক’বছর বয়েস থেকে লিখছেন, আপনার ছেলে মেয়ে ক’জন, কোন্ রঙ আপনার প্রিয়, এখন যারা লিখছেন তাদের প্রতি আপনার সদয় উপদেশ কী” এসব ফালতু বস্তাপচা প্রশ্নে না গিয়ে গতানুগতিকতার বাইরে করা অত্যন্ত যুগোপযোগী প্রশ্নের মাধ্যমে যেভাবে নাড়ি ধরে টান দেয়া হয়েছে, তাতে করে পাঠকের কাছে বিষয়টি উপভোগ্য। সাক্ষাৎকারটি পড়ে মজা পাওয়ার সাথে সাথে কৌতুকও বোধ করা যায় একেকজনের উত্তরের ভণিতা দেখে, লেজেগোবড়ে অবস্থা দেখেও।

তবে এখানে সম্পাদকীয় সীমাবদ্ধতাও চোখে পড়ে। সাক্ষাৎকার প্রদানকারী প্রত্যেক কবির কিছু নমূনা কবিতা পত্রস্থ করা হলে তাঁদের বক্তব্য বিশ্লেষণের সাথে নিজের নিজের সৃজনশীলতার তুলনা ও পারষ্পরিক প্রতিতুলনা করার সুযোগ পাওয়া যেতো। যদিও জুলফিকার শাহাদাৎ-এর পাঁচটি চমৎকার কবিতার পাশাপাশি রাশেদ রউফের একটি রচনা পত্রস্থ হয়েছে, যা আদৌ কবিতা হয়েছে কিনা পাঠক সেটা বিবেচনা করবে, সংখ্যাটা সমতাসূচক হলে হয়তোবা রাশেদ রউফের কোন কবিতা পড়ার সৌভাগ্য হতো আমাদের। কিন্তু অধিকতর প্রবীণ হিসেবে আখতার হুসেন ও সুজন বড়ুয়ার কোন লেখা না পাওয়ায় পাঠকের অতৃপ্তির পাশাপাশি লিটল ম্যাগিয় স্বচ্ছতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।

তবে রহমান তাওহীদ লিটল ম্যাগাজিন ‘অন্ত্যমিল’-এর হঠাৎ স’মিল চালিয়ে আমাদের চমকে দিলেন বৈ কি।


ছড়াড্ডা

রাজশাহী থেকে প্রকাশিত আরিফ বখতিয়ার সম্পাদিত ছড়া বিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন ‘ছড়াড্ডা’। সর্বশেষ সংখ্যা ৬ষ্ঠ বর্ষ ১৩ তম সংখ্যা। ঠাসবুনুনি লেখা-সমৃদ্ধ দুই ফর্মার এ কাগজটিও অনেকটা যোদ্ধার মতোই লিটল ম্যাগের মেজাজ ধারণ করার চেষ্টা করেছে। তবে কোন একটা পরিবর্তনের মিশন নিয়ে কিছু একটা করে দেখানোর লিটল ম্যাগিয় মৌলিক বৈশিষ্ট্য এখনো দানা বেঁধে ওঠেনি। গদ্য ও পাঠ-আলোচনা লিখেছেন মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন ‘ছড়ার শক্তি এবং শত্র“-মিত্র’, জসীম মেহবুব ‘ছড়া নিয়ে দু’চার কথা’, মনজু রহমান ‘প্রসঙ্গ: সংবাদপত্রের সাহিত্য প্রকাশনা সংকট এবং দুটি ছড়াগ্রন্থ’, মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন ‘জি.এম.হারুন এর লিমেরিক: একটি পাঠ-প্রতিক্রিয়া’, ইলতুৎ আলীদ ‘একটি অসমাপ্ত ছড়ার গল্প’, মাহফুজুর রহমান আখন্দ ‘ছড়াচর্চা-সম্পাদনা: দুই কৃষকের চাষবাস’, জুলফিকার শাহাদাৎ ‘ছড়া, পদ্য, বিবৃতি ও কিশোর কবিতা: একটি নির্মোহ ব্যবচ্ছেদ’, মাসুদ কামাল ‘ছড়ায় ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা বা লোকমুখীতা’, ফজলুল হক তুহিন ‘কল্পনা ও বাস্তবের রূপকার’, সতীশ বিশ্বাস ‘ছড়াক্কা কী এবং কেন?’, রর্হমান তাওহীদ ‘ছড়াপত্রের সাম্প্রতিক পাঠ: একটি প্রতিক্রিয়া’, মাসুম আওয়াল ‘এই আলোচনা দুটি বই নিয়ে’ এবং সাজ্জাদ বিপ্লবের নেয়া মুহাম্মদ নাসির উদ্দিনের একটি সাক্ষাৎকার। প্রকাশনা উৎসব সংবাদ ও চিঠিপত্র বিভাগও রয়েছে। গদ্যে তেমন একটা মৌলিকত্ব না থাকলেও জুলফিকার শাহাদাৎ ও রহমান তাওহীদের লেখা দুটোতে সমালোচনার তীব্র ঝাঁঝ ল্য করা যায়। তবে ছড়া বিষয়ক ম্যাগাজিন হিসেবে গ্রন্থিত ছড়ার নির্বাচনে সম্পাদকের দুর্বলতা ল্ক্ষ্যণীয়। বিষয় প্রকরণ ও উপস্থাপন শৈলী বিবেচনায় পদ্য বা কবিতাকে কিছুতেই ছড়া বলার কোন সুযোগ নেই, তাও আবার লিটল ম্যাগাজিনে। অথচ গড়পড়তা ছড়ার সাথে কিছু চমৎকার ছড়ার পাশাপাশি কতকগুলো শিশু-কিশোর কবিতা ও পদ্য মিশিয়ে ফেলার কোন মানে নেই। তারুণ্যই শক্তি। সে ক্ষেত্রে বিনয়ী তারুণ্য মানে এই নয় যে প্রবীণ বলে উৎপল কান্তি বড়ুয়ার ‘যুদ্ধে গেছে ভাইয়া আমার’ এর মতো ব্যাক-ডেটেড মেড়মেড়ে পদ্য জাতীয় রচনাও লিটল ম্যাগের পাতায় ছাপতে হবে। প্রয়োজনে লিটল ম্যাগাজিনের একটা বিশেষ পদ্য-সংখ্যা করে শ্রদ্ধেয় পদ্যকারদের সম্মান জানানোর একটা উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

বিশেষ সংখ্যা ছাপানোর আগে আমাদের লিটল ম্যাগ সম্পাদকরা যদি ছড়া, পদ্য ও কবিতার পার্থক্যটা সবাইকে বুঝিয়ে দিতে খড়গ-হস্ত হয়ে ওঠতে না পারেন, তবে ম্যাগাজিনের কপালে লিটল ম্যাগাজিন শ্লোগানের লোগো এটে দিলেও তা সত্যিকার লিটল ম্যাগাজিন হয়ে ওঠা সুদূরপরাহতই থেকে যাবে। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর তারুণ্যকে তারপরেও অভিনন্দন জানাই। নতুন কিছু করার জন্য এরাই যে আমাদের আশা ভরসার উৎস।


চমচম

প্রতীক ওমর সম্পাদিত গাইবান্ধা থেকে প্রকাশিত ছড়া বিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন ‘চমচম’ দুইফর্মার পাতলা লিকলিকে অবয়বের একটা ম্যাগাজিন। বাইরে থেকে দেখলে হয়তো মন কাঁড়বে না। কিন্তু একবার হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলেই বুঝতে আর কারো বাকি থাকবে না যে অক্ষরের ঝনঝনানি কাকে বলে। সর্বশেষ চলমান সংখ্যা হচ্ছে দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা মার্চ,২০০৮। ভেতরে কোথাও বিশেষ সংখ্যা হিসেবে চিহ্নিত করা না হলেও কৃশানু বসু’র ‘নির্বাচনী ছড়ায় সরল রাজনীতি থাকে, বাচালতাও থাকে’ এবং ইলতুৎ আলীদের ‘মানুষ ও একটি না-এর সংক্ষিপ্ত পঞ্জিকা’ শিরোনামের ভিন্ন প্রসঙ্গের মানসম্পন্ন লেখা দুটো না থাকলে হয়তো সম্পাদক এটাকে লিমেরিক সংখ্যা হিসেবেই চিহ্নিত করতেন। এতে অন্যান্য গদ্য প্রবন্ধ আলোচনাগুলো লিখেছেন- অনিল চক্রবর্তী : লিমেরিকেও সমান দক্ষ/ মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন, এডওয়ার্ড লিয়ার যেভাবে বাংলাদেশে এসে নিহত হলেন !/ জুলফিকার শাহাদাৎ, লিমেরিক : আদি ছড়ার অনাদি ভবিষ্যৎ/ এফ শাহজাহান, বাংলার লিয়র/ মাহফুজুর রহমান আখন্দ, আমার যত দুঃখ কথা : প্রসঙ্গ লিমেরিক/ রহমান তাওহীদ ও লিমেরিকের মাঝে খুঁজে দেখা রহমান তাওহীদ/ প্রতীক ওমর। মান বিচারে বলতেই হবে লেখাগুলো ভালো। এ থেকে আমরা এডওয়ার্ড লিয়ারের লিমেরিক সম্পর্কে বহু বিচিত্র কিছু জানতে পারি এবং আমাদের দেশে লিমেরিক চর্চার একটা খতিয়ানও সংক্ষপে পেয়ে যাই। কিন্তু লিটল ম্যাগিয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যে জিনিসটি আমাদের জানা হয় না তা হলো আমরা আদৌ সত্যিকারের লিমেরিক চর্চা করছি কি না। শুধু জুলফিকার শাহাদাৎ-এর গদ্যটি থেকে আমরা এই লিটল ঘ্রাণ পেয়ে বুঝতে পারি যে এডওয়ার্ড লিয়ার বুঝি সত্যিই বাংলাদেশে এসে নিহত হয়ে গেছেন। এখানেই বোধ করি চমচমের লিটল ম্যাগিয় চরিত্রটি কিছুটা রক্ষা পেয়েছে। তবে ম্যাগাজিনটিতে প্রকাশিত যে সব নমূনা লিমেরিক উপস্থাপন করা হয়েছে তাও জুলফিকারের মন্তব্যের সত্যতাকে জোরদার করেছে।

সমস্যা হলো ছড়াকাররা যদি লিমেরিক না-ই লিখেন সম্পাদকের আর কী করার থাকতে পারে। তবে তো ম্যাগাজিন প্রকাশনাই বন্ধ করে দিতে হয়। কিন্তু এটা তো আমাদের কখনোই কাম্য নয়। আগুন দেখা না গেলেও ধোঁয়া দেখেই আমাদেরকে বুঝতে হয় চমচম আমাদেরকে আশাবাদি করে তোলায় তার আন্তরিকতায় ঘাটতি রাখছে না। এখন কেবল লিটল ম্যাগিয় ধ্যান-ধারণা নিয়ে একটা ধারালো গোষ্ঠী দাঁড়ানোর অপোয়।
আমরা সে আশায় রইলাম।


একফর্মা ছড়াপত্র

শ্রীমঙ্গল থেকে অবিনাশ আচার্য ও চন্দন কৃষ্ণ পাল সম্পাদিত একফর্মা ছড়াপত্র পঞ্চম সংখ্যা (বৈশাখ ১৪১৫) টি আগের সংখ্যাগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখলে একটু চমকে যেতে হয় বৈ কি ! নামে একফর্মা হলেও চলতি সংখ্যায় আর একফর্মা নেই, বেড়ে গেছে। কিন্তু চমকে ওঠার কারণ অন্যত্র। সত্যি কি লিটল ম্যাগের ঘ্রাণ পেয়ে যাচ্ছে ! তার ছোট্ট উঠোনে তিনটি গদ্য আর গুচ্ছ গুচ্ছ ছড়া ও পদ্যের সমাহার ! তবে গদ্যগুলোই ছড়াপত্রকে লিটল ম্যাগের উন্মাদনা এনে দিয়েছে যেন। কোন এস্টাব্লিশম্যান্ট ঘেষা ম্যাগাজিন কি এমন গদ্য ছাপানোর দুঃসাহস দেখানোর ক্ষমতা রাখে ? এ তো পারে কেবল লিটল ম্যাগই। সেটাই করেছে ছড়াপত্র। গদ্যগুলো হচ্ছে- ছড়া আর অছড়া/ জুলফিকার শাহাদাৎ, ‘ছড়া পত্রিকা’ ত্রয়োদশ সংখ্যা- ‘উল্টা বুঝলি রাম’!/ রণদীপম বসু এবং যে বই পড়েছি’তে ‘ব্যবচ্ছেদ : টাকুম টুকুম’/ কমলকলি চৌধুরী। প্রকাশিত ছড়া পদ্যগুলোর মধ্যে ল্ক্ষ্যণীয় যে বিষয়টিকে খুবই উল্লেখযোগ্য মনে হয়েছে, নবীন প্রবীণ লেখকের ছড়াছড়ি ; কিন্তু ছড়াপত্র এমন সব নবীনদেরকে উপস্থাপন করেছে যে তাদের লেখার কাছে কী বিস্ময়করভাবে প্রবীণদের লেখাগুলো কেমন ম্লান হয়ে যাচ্ছে ! বিশেষ করে আবিদ আজম আর মুহিব নেছার, একেবারে নবীন এই দু লিখিয়ের লেখা পড়ে তো রীতিমতো চমকেই ওঠতে হয়। আমাদের আগামী প্রজন্মের এমন সম্ভাবনাময় সৃষ্টি দেখেও যদি আমাদের প্রবীণ লিখিয়েরা নিজেদেরকে এখনো নবায়নযোগ্য করে তুলতে না পারেন, তাহলে ছড়াসাহিত্যের মোহন সৃষ্টি-স্রোতের জন্য আমাদেরকে প্রবীণদের থেকে নির্ভরতা গুটিয়ে কেবল সেই নবীনদের দিকেই আশাবাদী দৃষ্টি নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে যে বিষয়টি উল্লেখ না করলেই নয়, কোন কোন নবীন লিখিয়ের একই ছড়া বা ছড়াগুচ্ছ একাধিক ম্যাগাজিনে রি-প্রিন্ট হতে দেখা যায়। একাধারে দু-তিনটি বা তারও বেশি ম্যাগাজিনে পত্রিকায় একই লেখার এই ঘোষণাহীন পুনঃপুন রি-প্রিণ্ট লেখকের লজ্জাহীনতা বা নিঃস্বতাকেই ইঙ্গিত করে। আর তা যদি নবীন লেখকের বেলায় দেখা যায়, তাহলে পাঠকের নির্ভর করার মতো আগামীর স্বপ্নে দুষ্টক্ষত তৈরি করে বৈ কি। লিটল ম্যাগের সম্পাদকদেরও এ ব্যাপারে আরেকটু বোধোদয় হওয়া উচিৎ। এসব নিঃস্ব লিখিয়েদেরকে বর্জন করাটাই সাহিত্যের জন্য মঙ্গল।

লেখা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরেকটু আন্তরিক হয়ে আশা করি ছড়াপত্র আমাদেরকে সেই আশাবাদে উজ্জীবিত করে তুলবে।


এবং...

এ মুহূর্তে হাতের কাছে না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও চমক, পাঁপড়, নকশি বা ধাক্কা’র মতো আরো যে সব ম্যাগাজিন নিয়ে আলোচনা করা গেলো না, এটা এ নিবন্ধকারের অনৈচ্ছিক সীমাবদ্ধতা হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে যেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো, তা যে লিটল ম্যাগিয় চিন্তাসূত্রকে ধারণ করে পূর্বসূরীয় লিটল ম্যাগার ব্যক্তিত্বদের ভাবনার সাথে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির নির্দ্বিধ ও সংশ্লেষিত প্রকাশ, তা নিশ্চয় বলার অপো রাখে না। দু-একটা ভাত টেপার সামঞ্জস্যতা দিয়ে গোটা হাড়ির খবর নেয়ার মতোই এখানে মূলত ছড়া-সাহিত্যের গুটিকয় কথিত লিটল ম্যাগাজিনের নমূনা ব্যবচ্ছেদ করে শুধু যে আলোচনাকৃত ম্যাগাজিনগুলোকেই বিশ্লেষণ করা হয়েছে তা নয়, সার্বিকভাবে লিটল ম্যাগাজিন কী, কেন, কীভাবে এবং এর চরিত্র বা উদ্দেশ্য, আদর্শ, লক্ষ্য ও প্রচলিত প্রবণতাকেও খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আর তা করতে গিয়ে প্রাসঙ্গিক চাহিদা পূরণে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসত্তা নয়, ব্যক্তি-স্রষ্টার সৃষ্টির সাফল্য ব্যর্থতাকে কখনো কখনো তুলে আনার নির্মোহ প্রয়াস নেয়া হয়েছে। এটাকে ব্যক্তি-আক্রোশ হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই, বরং এস্টাব্লিশম্যান্ট বিরোধি তত্ত্ব-তালাশে ল্যস্থিত হওয়াটাই মুখ্য।

ব্যক্তির চিন্তারাজ্যের সার্বভৌমত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার যেমন কোন উপায় থাকে না, তেমনি ব্যক্তিক চিন্তা-বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করারও কোন উপায় নেই। অভিন্ন আদর্শ লালন করেও এই ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য অত্যন্ত বাস্তব ও সতত ক্রিয়াশীল। এটাই সৃষ্টি-স্রোতের অনিবার্যতা। তাই ভিন্নমতের অবকাশ যত বেশি বাধাহীন উন্মুক্ত হবে, সৃষ্টি-বৈচিত্র্যও ততোধিক আকর্ষণীয় মৌলিক ও সুদূরপ্রসারী আশির্বাদ হয়ে আমাদের সমৃদ্ধিকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করে যাবে। অতএব আমরা আমাদের এই স্বপ্নাতুর চাওয়াটাকে কি এভাবেই রাঙিয়ে তুলতে পারি না আজ ?

লিটলম্যাগাজিনই পারে এ কাজটাকে অত্যন্ত সুষ্টুভাবে ল্ক্ষ্যস্থিত সেই স্বচ্ছ-বিন্দুতে নিয়ে যেতে। ##

(১১/০৫/২০০৮)

No comments: