‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Sunday, July 20, 2008
# সাহিত্যে ছড়ার অবদান কতটুকু, সংশয় কোথায় ?
সাহিত্যে ছড়ার অবদান কতটুকু, সংশয় কোথায় ?
-রণদীপম বসু
সাহিত্যে ছড়ার অবদান কী, বা এর অবস্থান কোথায় ? এ রকম বালখিল্য প্রশ্ন শুনে আঁতেল ব্যক্তিরা হয়তো এক চিমটি মুচকি হাসি দুলিয়ে চলে যাবেন প্রসঙ্গান্তরে। আর আমার মতো মোটাবুদ্ধির লোকেরা ? হয়তো চেয়ে থাকবেন হতভম্ব হয়ে প্রশ্নকর্তার মুখের দিকে। কিন্তু কেউ কি একবারও ভেবে দেখেছেন, হাজার বছরের শ্রুতি-পরিক্রমায় এসেও সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন আর মাটিবর্তী লোকায়ত এ মাধ্যমটিকে নিয়ে এরকম প্রশ্নের সংযোগ সূত্রটি কোথায় লুক্কায়িত ? মাটিলগ্ন গণমানুষের জনভাষ্যের প্রতীকী বিন্যাসে উপস্থাপিত জ্যান্ত ছড়াকে নিয়ে এরকম ধোয়াশা সাহিত্যের কুলীন অঙ্গনে যতোই অস্পষ্টতা ছড়াক না কেন, ব্রাত্যজনের প্রাণের সম্পদ টিকে থাকার চাবিকাঠিটা যে ব্রাত্যজনগোষ্ঠীর হাতেই চিরকাল থেকে যায়, এটা আমরা অনেকেই ভুলে যাই। কিন্তু মহাকাল ভুলে না ঠিকই। আর ভুলে না বলেই শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে মেনে নিতেই হয় যে, সাহিত্যের পালকিটাকে সম্মুখবর্তী হতে হলে ওই ব্রাত্যজনের কাঁধে চড়েই এগুতে হয় তাকে।
কাসুন্দি
ছড়া সাহিত্যের সম্প্রতি প্রকাশিত দু’পাতার একটা প্রকাশনা ‘নিব’ ওল্টেপাল্টে দেখছিলাম। এক জায়গায় এসে চোখ আটকে গেলো। চার লাইনের ছোট্ট একটা ছড়া। ‘ভাতের বদলে আলু / বাবার বদলে খালু / এর চেয়ে তো ভালোই ছিলো / তারেক জিয়া, ফালু।’
একবার পড়েই গেঁথে গেলো মনে। ছড়াটা ছোট্ট, কিন্তু এর ইফেক্টটা কি ছোট্ট রইলো ? মাথার ভেতরে ঢুকে রিনিরিনি বাজাতে লাগলো। দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় আমাদের বহুমাত্রিক নিষ্পেষণের চিত্রগুলোর একটা লিঙ্ক কী চমৎকার ইঙ্গিতময় দক্ষতায় জুড়ে দেয়া হলো ! যেগুলো আনন্দচিত্র নয়, কষ্টচিত্র। ভুক্তভোগী মানুষের বুকের ভেতরে জমে থাকা কষ্টক্ষত। সামান্য ক’টা অক্ষরের যাদুতে ছবির পর ছবি হয়ে যেন ভেসে ওঠতে লাগলো। কৌতুহলী হয়ে মনে করতে চেষ্টা করলাম, মুহিববুল্লাহ জামী নামের এই লেখক বা ছড়াকারের অন্য কোন লেখা আগে পড়েছি কি না। মনে করতে পারলাম না। সম্পূর্ণ অপরিচিত এই ছড়াকারের নাম আগে কোথাও শুনেছি বলেও মনে হলো না। হতে পারে আমার সীমাবদ্ধতা এটা। কিন্তু বিষয়টা উত্থাপিত হলো ক’দিন যাবৎ সাহিত্যে ছড়ার অবস্থান বা অবদান নিয়ে ভাবনার সূত্র ধরে।
বিকেলের এক চায়ের আড্ডায় প্রসঙ্গক্রমেই ছড়াটা আউড়ালাম আবার। এবং উপস্থিত যারা ছিলো, লুফে নিলো সবাই ! যদিও এরা সাহিত্য জগতের কেউ নন বা সাহিত্য রসিকও বলা যাবে না, তবু ছড়াটার প্রতি তাদের আগ্রহে একটুও কমতি দেখলাম না। অখ্যাত হবার কারণে ছড়াকারের নামটা তাদের মনে না থাকলেও ছড়াটা ভুললো না কেউ। বোধ করি সহজে ভুলবেও না। হয়তো বা মুখে মুখে ছড়িয়ে যাবে আরো। মুখোমুখি অভিজ্ঞতায় বিষয়টা আমার কাছে খুবই উল্লেখযোগ্য মনে হলো। এখানেই প্রশ্ন আসে, সাহিত্যে ছড়ার অবস্থান কতোটা ব্যাপৃত, কতোটা গভীর !
ছড়াটার শিল্পব্যাকরণ বিশ্লেষণ করলে এতে যে ইঙ্গিতময়তায় স্থূলতা রয়েছে বোঝাই যায়। তবু জনমানুষের বহমান দুঃখ কষ্ট অক্ষমতা জীবন সংগ্রামের অনিশ্চয়তা প্রতীকী ব্যঞ্জনায় ধারণ করতে পেরেছে বলেই কি এটা সাধারণ শ্রোতা বা পাঠকের কাছে সময়ের সাহিত্য প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে গেছে ? হয়তো। হিউমার আশ্রয়ী প্রচণ্ড রাজনীতি সংশ্লিষ্ট সামাজিক এ ছড়াটিকে কিছুতেই ছেলেভুলানো ছড়া বলা যাবে না। বরং সুনিশ্চিৎভাবেই বুড়ো জাগানো ছড়া এটা। সফলভাবেই যে কাজটা করলো, খোঁচা দেয়া। কবিতায় যা কখনোই সম্ভব হতো না। এখানেই কবিতা ও ছড়ার মধ্যকার মৌলিক পার্থক্য। বলা হয় কবিতা সাহিত্যের উৎকর্ষ মাধ্যম। যার সম্ভ্রান্ত অবস্থান সাহিত্যের শীর্ষে। তা হলে ছড়ার অবস্থান কোথায় ? এর সুলুক-সন্ধানে যাবার আগে একটু স্মৃতিচারণ করে নেয়া যাক ?
এ প্রসঙ্গে আমাদের শৈশবে বা কৈশোরে পঠিত এবং সবার মুখে মুখে চর্চিত সেই ছেলেভুলানো ছড়াগুলোর উদাহরণও টানতে পারি, যেগুলোর রচনাকার অজ্ঞাত এবং যাকে এখন লোকছড়া বা আদিছড়া নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। যেমন- ‘খোকন খোকন ডাক পারি / খোকন গেলো কার বাড়ি / আয়রে খোকন ঘরে আয় / দুধমাখা ভাত কাকে খায়।’ শৈশবের কল্পচোখে এ ছড়াটার যে নির্দোষ ব্যঞ্জনায় আপ্লুত হয়েছি আমরা, বড় হতে হতে জেনে গেছি এটা সে অর্থে নির্দোষ ছড়া নয় কিছুতেই। এখানে দুর্দান্ত প্রতীকাশ্রয়ে আমাদের শত শত বছরের জাতিগত ইতিহাস বিধৃত। যুগে যুগে বহিশত্রু অপশক্তির কালো থাবা থেকে মায়ের সন্তান যে খোকনরা বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের প্রাণ বাজী রেখে দেশকে আগলে রেখেছে, মাকে নিরাপদ রেখেছে, সে মায়ের সন্তানরা আজ কোথায় ? সন্তানের জন্য মায়ের নিভৃত আঁচলে রাখা স্নেহের সম্পদ দুধমাখা ভাতের প্রতীকী আশির্বাদ গ্রাস করছে আজো কতো অপশক্তি। মা যে আজ অরক্ষিত। কিন্তু সেই খোকনরা কোথায়, যারা মাকে নির্ভয় নিরাপদ করে তুলবে ? এগুলো ঘুম পাড়ানো ছড়া নয়, ঘুম ভাঙানো ছড়া।
অথবা ধারণামতে নবাব আলীবর্দী খাঁ’র আমলের দুঃসহ সময়কে ধরে রাখা সেই বুকে ইতিহাস উৎকীর্ণ করা ছড়াটি ? ‘ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে/ বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দেবো কিসে ?/ ধান ফুরুল, পান ফুরুল খাজনার উপায় কি ?/ আর কটা দিন সবুর কর, রসুন বুনেছি।’ এগুলো যদি শুধুই ছেলে ভুলানো ছড়া হতো, জীবনের অবিচ্ছিন্ন কষ্ট ধারণ করে জনমানুষের প্রাণের আকুতি না হতো, তবে শুধুমাত্র মুখে মুখে প্রচলিত শ্রুতিনির্ভর এই লোকায়ত শ্লোকসদৃশ ছড়াসম্পদ শত শত বছর পরিভ্রমন করে একালে এসে পৌঁছা কি চাট্টিখানি কথা ? বিপুল অহঙ্কার নিয়ে বুকের মানিক এই ছড়াগুলোকে আজ আগলে রাখছি আমরা একান্ত আপন সম্পদ হিসেবে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের হলেও আমরা জানি না এগুলো আমাদের কোন্ স্বজনরা রচনা করেছিলেন। মহাকাল আড়ালে নিয়ে গেছে তাঁদের। হয়তো আর কখনোই জানবো না আমরা তাঁদের নাম ধাম পরিচয়। আরাধনা বা বিনোদনের নিমিত্তে গীত হবার জন্য রচিত চর্যার দোহাকারদের মতো কাহ্ণুপা শবরপা কুক্কুরিপা বা আমাদের আদি কৃষিজীবী সমাজের নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে প্রয়োজনীয় প্রকৃতিলব্ধ বচন রচনাকার খনার মতো প্রতীকী নামও নেই এই লোকমুখে প্রচলিত লোকায়ত ছড়া রচয়িতাদের। এগুলোই আজ আমাদের অমূল্য সাহিত্যসম্পদ। সাহিত্যের আদি উৎস হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছি আমরা। সে বিবেচনায় এসব আদি ছড়া থেকে উৎসারিত পরবর্তী সাহিত্যস্রোতধারার গর্বিত অংশ আমরা কী করে অস্বীকার করবো যে এই ছড়াই বর্তমান বাংলা সাহিত্যের আদি মাতা !
একই অঙ্গে এতো রূপ
ইদানিং পত্র-পত্রিকা-সংকলন-ম্যাগাজিনগুলো খুললেই যে পাতাটাকে বর্জ্যের জাহাজ বললেও অত্যুক্তি হবে না, সেটা হচ্ছে ছড়া বা শিশুসাহিত্যের পাতা। এ পাতাটা শিশুরা লেখে না। লেখে বুড়োরা, শিশুর বাবা-চাচা-দাদারা। যারা ছড়া কী, কবিতা কী বা পদ্য কী এটা বুঝেন কি না, তা বিশ্লেষণ করতে গেলে সাতকাণ্ড রামায়ন রচনা হয়ে যেতে পারে, কিন্তু কুম্ভকর্ণের ঘুম আদৌ ভাঙানো যাবে কি না সন্দেহ। সম্ভবত এঁরা বর্জ্য কী, তাও বোধ করি বোঝেন না। নইলে আমাদের আগামী প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের জন্য এমন পরিত্যক্ত ছেলেমী করেন কী করে ! দুর্ভাগ্যজনকভাবে এদের বালখিল্যতার দায়ভার নিতে হচ্ছে এই ছড়া বা শিশুসাহিত্যকে, নাবালক সাহিত্যের কলঙ্ক ধারণ করে। আর এ জন্যেই মূল সাহিত্যধারায় আজকাল যারা সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গনে কাজ করছেন, ছড়ার প্রসঙ্গ তুললেই কুঞ্চিত কপালে ‘হুঁম, ছড়া’ বলে এমন এক বিশেষ ধরনের ভাব দেখান যে, মনে হয় ব্রাত্যজনের ছোঁয়ায় উচ্চমার্গীয় শরীরে কোথায় যেন চোট লেগে যাচ্ছে। তাঁদেরই বা দোষ দেব কী, সাহিত্যের বিশাল অঙ্গনে ছড়া যে এক ঈর্ষণীয় ঐতিহ্য ও ক্ষমতা নিয়ে ক্রমবর্ধিষ্ণু স্থানটি দখল করে আছে, এটা যেন ছড়ার অপরাধ হয়ে গেছে। হয়তো এঁরা রবীন্দ্রনাথের ‘ছেলে-ভুলানো ছড়া’ প্রসঙ্গে উদ্ধৃত উক্তিটাকেই চূড়ান্ত বলে ধরে নিয়েছেন- ‘আমি ছড়াকে মেঘের সহিত তুলনা করিয়াছি। উভয়েই পরিবর্তনশীল, বিবিধ বর্ণে রঞ্জিত, বায়ুস্রোতে যদৃচ্ছ ভাসমান। দেখিয়া মনে হয় নিরর্থক। ছড়াও কলাবিচারে শাস্ত্রের বাহির, মেঘবিজ্ঞানও শাস্ত্র নিয়মের মধ্যে ভাল করিয়া ধরা দেয় নাই। অথচ জড় জগতে এবং মানব জগতে এই দুই উচ্ছৃঙ্খল অদ্ভুত পদার্থ চিরকাল মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করিয়া আসিতেছে।’
বর্তমান ছড়াকাররা এই মহৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে কতটুকু অবগত জানি না। তবে শত বর্ষ পূর্বের এই উক্তি থেকে এটা বুঝা যায় যে ছড়া তখনও সাহিত্যের কোন শাস্ত্র নিয়মে অন্তর্ভূক্ত হয় নি। অথচ খুব কাছাকাছি সময়ে যোগীন্দ্রনাথ সরকার ‘খুকুমনির ছড়া’ নামে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছড়াগুলোকে সংগৃহিত সংকলনে প্রকাশ করে শিশুসাহিত্যের যে ভিত রচনা করেছিলেন, তারই পথ ধরে রবীন্দ্রনাথই প্রচুর শিশুতোষ ছড়া রচনা করে শিশুসাহিত্যে ছড়াকে এক নতুন মাত্রা দিয়ে গেছেন। আর সুনির্মল বসু তো তাঁর ‘আমার ছড়া’ গ্রন্থের ভূমিকায় ছড়ার প্রভাব বিষয়ে স্পষ্ট স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এভাবে- ‘আগে বিশেষ কিছু ছড়া লিখি নাই। কিন্তু আমার এই কাব্য জীবনের মূল উৎস হচ্ছে আমার সেই বাল্য-জীবনের মা-ঠাকুমার মুখে শোনা মধুঝরানো সুরেলা ছড়াগুলি। ঐ ছড়াগুলির কাছে আমি বিশেষভাবে ঋণী, ...-কারণ আমার মনে হয় ছড়া লেখা সহজ নয়। ছড়া লিখবার রীতি-নীতি ও পদ্ধতি সাধারণ রচনা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।’
হতে পারে বুদ্ধি ও বিচার অপেক্ষা রসের প্রাধান্যের কারণেই শিশুতোষ ছড়াকে সাহিত্যে স্থান দিতে এতোটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন তখনকার সাহিত্যকুলীন ব্যক্তিরা। তাতে করে এই দ্বিধাটাই কালের অক্ষরে চিহ্নিত হয়েছে, কিন্তু ছড়া তার একই অঙ্গে বহু রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঠিকই। কালে কালে নিজকে শোভিত করেছে যাপিত জীবনের নানান অসঙ্গতি তুলে ধরে এর বিরূদ্ধে গড়ে তোলা হাস্যরস, স্যাটায়ার, কটাক্ষ, শ্লেষ, ঘৃণা, ক্ষোভ, কষ্ট ইত্যাদি বিচিত্র অনুভূতির শিল্পীত প্রকাশের মাধ্যমে। এগুলো তখন আর নিছক ছেলে-ভুলানো ছড়া নেই, সবার মনের কথাকেই ধারণ করেছে স্পষ্টভাবে। হয়তো কালের বিচিত্র পরিহাস হিসেবে এখন প্রকৃত ছড়াকারের একটা নিদানকাল চলছে। কিন্তু আমাদের সুকুমার রায় থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ হয়ে নজরুল, অন্নদা শংকর রায়, আহসান হাবীব, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, এখলাসউদ্দিন আহমদ, সুকুমার বড়ুয়া, আবদার রশীদ, রফিকুল হক দাদুভাই, শাহাবুদ্দীন নাগরী, ফারুক নওয়াজ তথা লুৎফর রহমান রিটন পর্যন্ত আরো অনেক কবি ছড়াকারদের খন্ড খন্ড অবদানে সমৃদ্ধ ছড়ার ঐতিহ্য ও বৈচিত্রে টইটম্বুর থাকার পরেও কি ছড়াকে সাহিত্য হিসেবে মেনে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধার অবকাশ আছে ?
রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্যসৃষ্টি নামক প্রবন্ধে বলছেন- ‘সাহিত্যে লেখক যাহার কাছে নিজের লেখাটি ধরিতেছে, মনে মনে নিজের অজ্ঞাতসারেও, তাহার প্রকৃতির সঙ্গে নিজের লেখাটি মিলাইয়া লইতেছে। দাশু রায়ের পাঁচালি দাশরতির ঠিক একলার নহে; যে সমাজ সেই পাঁচালি শুনিতেছে, তাহার সঙ্গে যোগে এই পাঁচালি রচিত। এইজন্য এই পাঁচালিতে কেবল দাশ রথির একলার মনের কথা পাওয়া যায় না; ইহাতে একটি বিশেষ কালের বিশেষ মণ্ডলীর অনুরাগ-বিরাগ শ্রদ্ধা-বিশ্বাস রুচি আপনি প্রকাশ পাইয়াছে।
এমনি করিয়া লেখকদের মধ্যে কেহ বা বন্ধুকে, কেহ বা সম্প্রদায়কে, কেহ বা সমাজকে, কেহ বা সর্বকালের মানবকে আপনার কথা শুনাইতে চাহিয়াছেন। যাহারা কৃতকার্য হইয়াছেন তাহাদের লেখার মধ্যে বিশেষভাবে সেই বন্ধুর, সম্প্রদায়ের, সমাজের বা বিশ্বমানবের কিছু-না-কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। এমনি করিয়া সাহিত্য কেবল লেখকের নহে, যাহাদের জন্য লিখিত তাহাদেরও পরিচয় বহন করে।’
এটা সত্য যে, সাহিত্য হচ্ছে মানুষের অন্তর্জগতের সাথে বহির্জগতের সমন্বয়কৃত এক সৃষ্টিশীল দলিল। যেখানে মানুষ ও তার পারিপার্শ্বিক জগতের মধ্যে টানপোড়েন নেই, জীবনের গূঢ় বাস্তবতার দর্শনগত রেখাচিত্র নেই, সমকালীনতা নেই, তা কী করে সাহিত্য হবে ? সাহিত্য মানেই তো জীবনের রেখাচিত্র। ‘সহিত শব্দ হইতে সাহিত্য শব্দের উৎপত্তি। অতএব ধাতুগত অর্থ ধরিলে সাহিত্য শব্দের মধ্যে একটি মিলনের ভাব দেখিতে পাওয়া যায়। সে যে কেবল ভাবে-ভাবে ভাষায়-ভাষায় গ্রন্থে-গ্রন্থে মিলন তাহা নহে; মানুষের সহিত মানুষের, অতীতের সহিত বর্তমানের, দূরের সহিত নিকটের অত্যন্ত অন্তরঙ্গ যোগসাধন সাহিত্য ব্যতীত আর কিছুর দ্বারাই সম্ভবপর নহে। যে দেশে সাহিত্যের অভাব সে দেশের লোক পরস্পর সজীব বন্ধনে সংযুক্ত নহে; তাহারা বিচ্ছিন্ন।
পূর্বপুরুষদের সহিতও তাহাদের জীবন্ত যোগ নাই। কেবল পূর্বাপর প্রচলিত জড়প্রথাবন্ধনের দ্বারা যে যোগসাধন হয় তাহা যোগ নহে, তাহা বন্ধন মাত্র। সাহিত্যের ধারাবাহিকতা ব্যতীত পূর্বপুরুষদিগের সহিত সচেতন মানসিক যোগ কখনো রক্ষিত হইতে পারে না।’
আমাদের দেশের প্রাচীনকালের সহিত আধুনিককালের যদিও প্রথাগত বন্ধন আছে, কিন্তু এক জায়গায় কোথায় আমাদের মনের মধ্যে এক একটা নাড়ীর বিচ্ছেদ ঘটিয়াছে যে, সেকাল হইতে মানসিক প্রাণরস অব্যাহতভাবে প্রবাহিত হইয়া একাল পর্যন্ত আসিয়া পৌঁছিতেছে না। আমাদের পূর্বপুরুষরা কেমন করিয়া চিন্তা করিতেন, কার্য করিতেন, নব তত্ত্ব উদ্ভাবন করিতেন- ...... কী ভাবে সমাজ প্রতিদিন বৃদ্ধিলাভ করিত, পরিবর্তন প্রাপ্ত হইত, আপনাকে কেমন করিয়া চতুর্দিকে বিস্তার করিত, নূতন অবস্থাকে কেমন করিয়া আপনার সহিত সম্মিলিত করিত- তাহা আমরা সম্যকরূপে জানি না।’......
... এইরূপে সাহিত্যের অভাবে আমাদের মধ্যে পূর্বাপরের সজীব যোগবন্ধন বিচ্ছিন্ন হইয়া গেছে।’
রবীন্দ্রনাথের উপরোক্ত আক্ষেপ যথার্থ ছিলো এজন্যেই যে, আমাদের হাজার বছরের বাংলা সংস্কৃতির ছিটেফোঁটা যেটুক জানি আমরা তা নগন্য বৈ কি। আমাদের সংস্কৃতির বয়স কি হাজার বছর ? কেন এর বেশি নয় ? কারণ আদি নিদর্শন হিসেবে আমাদের চর্যাপদই তার সাক্ষ্য। এর আগের কোন নমূনা আমাদের হাতে নেই। কিন্তু এই হাজার বছরের মধ্যেও একটা বিরাট সময় অন্ধকারে রয়ে গেছে। যেগুলো আলোকিত, তা আমরা তৎকালীন সাহিত্যকৃতির মধ্যে দিয়েই দেখছি বলে। আর এই সাহিত্যকৃতি মানেই আমাদের লোকসাহিত্য। এবং এটা তো স্বীকৃত যে লোকসাহিত্যের উজ্জ্বল নিদর্শনগুলোই হচ্ছে আমাদের লোকায়ত ছড়াগুলো।
টালত মোর ঘর নাহি পড়বেসী/ হাড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী/ বেঙ্গস সাপ চঢ়িল জাই/ দুহিল দুধু কি বেণ্টে সামাই/ বলদ বিআএল গবিআ বাঁঝে/ পীঢ়া দুহিআই এ তীনি সাঝে/ জো সো বুধী সোহী নিবুধী/ জো সো চোর সোহি সাধী/ নিতি নিতি সিআলা সিহে সম জুঝই/ ঢেণ্ঢণ পাএর গীত বিরলে বুঝই।
(চর্যাপদ ৩৩ / ঢেণ্ঢণপাদানাম )
[বস্তিতে আমার ঘর, প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নেই, (অথচ) প্রেমিক (ভিড় করে)। ব্যাঙ কর্তৃক সাপ আক্রান্ত হয়। দোয়ানো দুধ কি বাঁটে প্রবেশ করে ? বলদ প্রসব করল, গাই বন্ধ্যা, পাত্র (ভরে তাকে) দোয়ানো হ’ল এ তিন সন্ধ্যা। যে বুদ্ধিমান, সেই নির্বোধ, যে চোর সেই সাধু। নিত্য নিত্য শৃগাল যুদ্ধ করে সিংহের সঙ্গে। ঢেণ্ঢণপাদের গীত অল্প লোকেই বুঝে।]
অথবা,
‘...... অপনা মাঁসে হরিণা বৈরী/ খনহ ণ ছাড়ই ভুসূকু অহেরী।’
-(চর্যাপদ/ ভুসূকুপাদ)
[আপন মাংসের জন্য হরিণ সকলের শত্রু। এক মুহূর্তের জন্যেও শিকারী ভুসূকু (তাকে) ছাড়ে না।]
দোহার আড়ালে এর অন্তর্নিহিত ভাব যাই হোক, হাজার বছর আগের আমাদের পূর্বপুরুষদের সামাজিক অবস্থাটা যে এখানে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় স্পষ্টই আঁকা হয়ে আছে তা আমাদেরকে বুঝে নিতে খুব বেগ পেতে হয় না।
ঘুমপাড়ানো ছড়া হিসেবে বহুল উদ্ধৃত ছড়া ‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো..’ তে নবাব আলীবর্দী খাঁর সময়কালে বর্গীদের যখন তখন উৎপাতে তটস্থ এই বাংলার জনপদে রাতের নির্জনে শিশুকে ঘুম পাড়াতে গিয়েও যখন বর্গীর ভয় দেখানো হয়, তখন কি আর বোঝার বাকি থাকে আমাদের সে আমলের পূর্বপুরুষদের সামাজিক অবস্থা কী ছিলো ?
‘ডেকে ডেকে খনা গান/ রোদে ধান ছায়ায় পান।’ বা ‘ষোল চাষে মূলা/ তার অর্ধেক তূলা/ তার অর্ধেক ধান/ বিনা চাষে পান।’ খনার বচন থেকে প্রাপ্ত এরকম আরো বহু ছড়া কি সাক্ষ্য দেয় না একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে আমাদের কৃষিভিত্তিক সমাজের দৈনন্দিনতায় ধান পানের মতো অত্যাবশ্যকীয় উপকরণগুলোর মাজেজা ?
আধিপত্যবাদী বৃটিশকে এই উপমহাদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠি যে কখনোই ভালোভাবে গ্রহণ করেনি তার নজির ইতিহাসের পাতায় পাতায় উৎকীর্ণ আছে। যদিও এ ইতিহাস রচয়িতারা কোন সাধারণ মানুষ নন। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তির আঁচটুকু পেয়ে যাই আমরা শ্রুতিনির্ভর ছড়ার মধ্য দিয়েই। অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই সহজ সরল মানুষগুলো বৃটিশদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে কী চোখে দেখতো তার একটি নমূনা এই ছড়াটি, যা আমাদের শিশুপাঠ্যও ছিলো। ‘রেলগাড়ি ঝমাঝম/ পা পিছলে আলুর দম।’ এটা সেই সময়কালটাকেই ধারণ করে আছে যখন এদেশে প্রথম রেলগাড়ির প্রচলন হচ্ছিলো।
একইভাবে বাঙালীর নিজস্ব প্রচলিত ফসলি ধানের উপর জেঁকে বসা ইরি ধানের আগমনকেও যে কৃষক সম্প্রদায় খুব স্বাভাবিকভাবে নেয়নি তার প্রমাণ রয়ে গেছে এরকম ‘দেশে আইলো ইরি ধান/ আউলা ঝাউলা পাকিস্তান ’ জাতীয় প্রচলিত ছড়ায়।
এভাবে বিয়ের ছড়া, ঝাড়-ফুকের মাধ্যমে চিকিৎসার ছড়া, কন্যাবিদায়ের ছড়া, বৃষ্টির ছড়া, ফসলের ছড়া ইত্যাদির মতো শত শত হাজারো ছড়ায় চিত্রিত হয়ে আছে আমাদের গ্রাম বাংলার জীবন যাত্রার প্রতিটা পালা-পার্বন উৎসব অনুষ্ঠানে প্রচলিত সামাজিক ক্রিয়া বিক্রিয়াগুলো ছন্দে ছন্দে পঙক্তির সমাহারে। ওগুলোই আমাদের সমাজের টুকরো টুকরো হাজারো আয়না। আমাদের আপন চেহারা। আমাদের সামাজিক রাজনৈতিক ইতিহাস। আমাদের বিচিত্রতর দুঃখ আনন্দের জীবন্ত দলিল। ওগুলোই আমাদের সংস্কৃতি, আদি ও অকৃত্রিম সাহিত্য।
অতএব ছড়া সাহিত্য কি না, এরকম বালখিল্য জিজ্ঞাসার চাইতে বরং আমাদের সাহিত্যে ছড়ার অবস্থান বা অবদান কোথায় এর উত্তরে যদি পাল্টা প্রশ্ন ওঠে আমাদের শরীরে রক্তের অবস্থান বা অবদান কোথায়, তবে উত্তর দাতার নীরবতাই বুঝিয়ে দেবে প্রশ্নকর্তার হঠকারী দৃষ্টিভঙ্গির সাযুজ্য কতটুকু। একান্ত নির্জ্ঞান বা জ্ঞানপাপী ছাড়া এমন হঠকারী বিতর্কের সূচনা প্রয়াস আজ এই সময়কালে এসে আর কারো দ্বারা কি সম্ভব ? এর পরেও যখন এই প্রশ্ন উত্থিত হতে দেখা যায় কোথাও, তার প্রেক্ষিত আসলে অন্যত্র। এ জন্য একমাত্র দায়ী হতে পারে আমাদের বর্তমান মেধাশূন্য ছড়াকাররাই। তা বলে সবাই কি মেধাশূন্য ? অবশ্যই নয়। অনেক মেধাবী ছড়াকার আমাদের দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিন্তু চাল ডাল তেল মায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণকারী জনস্বার্থ বিরোধী সিন্ডিকেটের মতো আমাদের সাহিত্যজগৎটাও আজ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। অতএব ছড়াসাহিত্যই বা বাদ যাবে কেন ! গোষ্ঠীপ্রীতির তৈলাক্ত মর্দনে অনভ্যস্ত আমাদের মেধাবী ছড়াকাররা তাই আজ মিডিয়ার অন্তরালে প্রতিভার শলতে জ্বালিয়ে চর্চা করে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু এই আলোর রেশ বেশিদূর যাবার সুযোগ না পেয়ে প্রকৃত অর্থে সাহিত্যকেই বঞ্চিত করছে। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য।
যা সত্যি, তাই বাস্তব
যদিও এটা সুস্থমস্তিষ্কধারী কারোরই কাম্য হতে পারে না, তবু কথার কথা হিসেবে যদি বলা হয় যে, হঠাৎ কোন মহাবিপর্যয়ে যদি মানুষের এই ঝলমলে সভ্যতা হঠাৎ একদিন ধ্বংস হয়ে যায় ! কিছু সংখ্যক মানুষই বেঁচে থাকে শুধু, আর কিছু নয় ! এবং সমস্ত লিখিত সাহিত্য ইতিহাস নিশ্ছিন্ন হয়ে যায়, কী হবে তখন এ জাতীর সাহিত্য ভাগ্য ? একটা যুক্তিসঙ্গত কাল পেরিয়ে এসে পুনরায় লিখিত হবে যা, তা কি আমাদেরকে ফের সেই শ্রুতি ও স্মৃতিনির্ভর লোকসাহিত্যধারার কথাই মনে করিয়ে দেবে না ? গল্প উপন্যাস হারিয়ে যাবে, কবিতার করুণ কান্নাও হয়তো শোনা যেতে পারে ; একমাত্র ছড়াই তার পূর্ণ অস্থিত্ব নিয়ে এগিয়ে আসবে জনমানুষের একান্ত আপন অনুভূতি আর নিজস্ব আয়না হয়ে। যদিও এই আশঙ্কা এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে সত্যি হবে না বলেই বিশ্বাস, তবু এটা তো ঠিক যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে আশ্রয় প্রশ্রয়ে যা থেকে যায়, বেড়ে ওঠে, পল্লবিত হয়, শেষ পর্যন্ত তাই টিকে থাকে। এটাই নিয়তি। সময়ের চূড়ান্ত জাজমেন্ট। আর এ ক্ষেত্রে ছড়াই পারে এই দাবী মেটাতে পূর্ণভাবে।
তোমার আমার ঠিকানা/ পদ্মা মেঘনা যমুনা, অথবা বীর বাঙালী অস্ত্র ধর/ বাংলাদেশ স্বাধীন কর, এই জাতীয় শ্লোগাণগুলো কি স্মৃতিবিচ্যুত হবার কোন সম্ভাবনা আছে ? এক নিমেষেই আমাদেরকে নিয়ে যায় আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর্যবান সময়কালটাতে। ভেসে ওঠে ইতিহাস, আমাদের অহঙ্কারী ঐতিহ্যের উজ্জ্বল প্রেক্ষিত। অথবা ‘এক দফা এক দাবী/ এরশাদ তুই কবে যাবি’ বা নুর হোসেনের উদোম বুকে পিঠে আঁকা বাংলাদেশের হৃদয় ঝরানো পঙক্তি, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক/ গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। নব্বই এর স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নিখাদ চেহারাটা কি লাফ দিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় না ? এগুলো কি শুধু শ্লোগান ? জনমানুষের কাঙ্ক্ষিত ভাষা শ্লোগান হয়ে যায় তখনই, যখন ছড়া ও ছন্দ মিশে চেতনার মনভূমিকে আন্দোলিত করে তোলে। এটাই সাহিত্য। কারণ, সাহিত্য হচ্ছে জীবনের প্রতিচ্ছবি। সময়ের একান্ত দলিল। মূলত এটাই সাহিত্যের প্রকৃত সংজ্ঞা।
ছড়ার সুদীর্ঘ ঐতিহ্য, প্রভাব ও ক্ষমতা বিশ্লেষণ করলে সমকালীন সাহিত্যে এর অবস্থানকে এতো হেলাফেলার চোখে দেখা হবে কেন ? আসলে গলদ এই প্রশ্নটার মধ্যেই। সাহিত্যে ছড়াকে কখনোই অবহেলা করা হয় নি। অবহেলা বলতে যে বিষয়টিকে বোঝানো হয়ে থাকে, তা মূলত কিছু সংখ্যক ব্যক্তির কারণে কিছু সংখ্যক ব্যক্তির দ্বারা প্রকৃত বিষয় চিহ্নিতকরণে সীমাবদ্ধতার ফলে বিষয়-বিশ্লিষ্ট হয়ে যাওয়া। ছড়ার নাম দিয়ে যা ইচ্ছে তা ছন্দে ছন্দে বসিয়ে দিলেই যদি ছড়া হয়ে যেতো, তাহলে সমিল কবিতা, পদ্য বা গীত হওয়ার জন্য লিখিত গানের নামে আলাদা কোন সাহিত্য বিভাগই সৃষ্টি হতো কি না সন্দেহ। যার চিকিৎসা যথাসময়ে মহাকালই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করে নেয়। কাউকে না কাউকে দিয়ে করিয়ে নেয়। এখানেই ছড়াসাহিত্যে সমালোচনা সাহিত্যের প্রয়োজনীতা ও গুরুত্বও টের পেয়ে যাই আমরা। যদিও এই সমালোচনা আমাদের ছড়াসাহিত্যে উল্লেখযোগ্যভাবে গড়ে ওঠেনি এখনো। তা গড়ে ওঠলেই বরং নিঙড়ানো আগাছার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত ছড়াগুলো। তাই যারা ছড়ার নাম দিয়ে অছড়ার চাষ করছেন প্রতিনিয়ত হাজারে-গণ্ডায়, প্রকৃত অর্থে এরাই ছড়াকে ঠেলে দিচ্ছেন অবহেলার শুকনো উঠোনে। এর সাথে সাথে পাঠক বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত ছড়া থেকে, আর সাহিত্য হারাচ্ছে তার মেধাবী ছড়াকারদের নতুন নতুন উৎস সন্ধানের সম্ভাবনাকেও।
এর পরেও কি আমাদের তথাকথিত সামগ্রিক পাঠাভ্যাসহীন ছড়াকারদের বোধোদয় হবে না ?
[muktangon-nirmaanblog]
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment