Sunday, October 12, 2008

# যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(২৫)














যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...(২৫)
তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল,১৯৯৩)

রূপা,এখন আমি যে কথাটা বলতে চাচ্ছি , তা ভালো না লাগলে ফেলে রাখতে পারো। কিন্তু আমাকে তা বলতেই হবে। বাস্তবতাকে কীভাবে অস্বীকার করবো আমি ! আর আমার ভালোবাসাও তো অবাস্তব নয়। তাই এ দুই বাস্তবতাকে মিলিয়ে নিয়েই যে আমাকে এগুতে হবে, কোন অবাঞ্চিত স্ববিরোধিতায় আক্রান্ত না হয়ে।

আমি বিশ্বাস করি রূপা, যুথবদ্ধ মানব মানবী বাঁধা থাকে হৃদয়ের গেরোয়। অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের নিশ্চয়তা শারীরিক অস্তিত্বকে নিরাপদ করে বটে, কিন্তু যেখানে ভালোবাসা নেই, নেই কোন কষ্টের বন্ধন, সেখানে দাম্পত্য জীবন মানেই কি পাশাপাশি দুটো শরীর শুধু শুয়ে থাকা নয় ? এতো কাছাকাছি থেকেও আমৃত্যু অপরিচয়ের নাত্রিক দূরত্বের যোজনা শুধুই। আবার যেখানে নেই খাওয়া পরার এতটুকু নিশ্চয়তা, সেখানেও কি ভালোবাসা থাকে আদৌ ? ঘৃণার সজোর ধাক্কায় প্রকাশিত স্বরূপ দেখে আমরাই কি বলবো তবে, আহা ভালোবাসা, সত্যি কি ঘৃণারই অপর নাম ! তবুও হাজার বছরের চেনা দুটি সত্ত্বা পারে কি একে অপরকে ছেড়ে যেতে ? আমি জানি না।

আমি এও জানি না, লোকে কেন বলে যে অভাব দরজায় এলে ভালোবাসা জানালায় পালায়। এমন নিষ্ঠুর বক্তব্য মেনে নিলে জগৎ সংসারে হৃদয়ের প্রণয়ী অস্তিত্ব থাকে কী করে ! ভালোবাসা যদি কষ্টই হয়, তবে কষ্টকে ভালোবাসতে না পারলে তা কিসের ভালোবাসা, কিসের প্রেম ! আদৌ কি ভালোবাসা হয় ? তেল-নুন-চাল-আটার বস্তুগত হিসাবটাই জীবন হলে এই হিসেবি যান্ত্রিকতায় বেহিসেবি ভালোবাসা আসবে কেন ! শরীরগত অস্তিত্বেই ভালোবাসার প্রকাশ। হয়তো এই নিকষতার প্রয়োজনও উড়িয়ে দেয়া চলে না। কিন্তু এই হিসেবি জীবনের মধ্যেই বেহিসেবি তিক্তমধুরতা আছে বলেই তো জীবন এতো মধুর, এত বেদনার, এতো আকর্ষণীয়। রূপা যাঁরা ভালোবাসতে পারেন, তাঁরা সমগ্রকেই ভালোবাসেন, রসকষহীন রুক্ষ হিসাবের মধ্যেও হৃদয়কে ভালোবাসার কষ্ট দিয়ে অনুভব করেন। নইলে তো পৃথিবীটাই ধূয়া !

ভালোবাসা একপেশেও হতে পারে রূপা। কিন্তু এতে কোন সার্থকতা নেই, দ্বৈত কষ্ট ছাড়া। এবং, এ কষ্ট কি প্রণয়ের কষ্ট ? না কি প্রেমহীনতার ? এর উত্তরটা খুঁজতে পারি আমরা। তবে তা জবাবের জন্য নয়..।


(চলবে...)

[আগের পর্ব:২৪]
[পরের পর্ব:২৬]

No comments: