| যে ডায়েরীটা লেখা হবে না আর...| ২৬ |
রণদীপম বসু
...
তারিখ: নেই (অনুমান এপ্রিল,১৯৯৩)
...
রূপা, অনেকদিন পর আজ হঠাৎ করে শরীরটা অসুস্থ বোধ করছে ভীষণ ! সকাল থেকেই মাথাটা কেমোন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। দৈনন্দিন কাজকর্মে আজ তো তেমন পরিশ্রমের কোন কাজ করি নি ! তবু দিনের শেষে শক্ত-সমর্থ এই দেহটা ভেঙ্গে পড়তে চাইছে কেন ? মাংস-পেশীগুলোতে চাপা ব্যথা, আর মাথাটা যেন ঘাড়ের উপর থাকতেই চাইছে না। একটা উক্তি আমার বেশ প্রিয়- প্রত্যেকেরই মাঝেমধ্যে অসুস্থ হওয়া উচিৎ, নইলে সুস্থ থাকার আনন্দটা ঠিক ঠিক উপলব্ধি করা যায় না। নিষ্ঠুর সত্য বলেই হয়তো এ মুহূর্তে কথাটা খুব অপ্রিয় ঠেকছে। কী লজ্জার কথা দেখো, আর একটা দিন পেরিয়ে নতুন শতাব্দীতে পা দেবো একটা ক্রীড়ানুষ্ঠানের মাধ্যমে, বার্ষিক ক্রীড়া। তার একদিন পরই আমার এখানে আবার সাতদিনের একটা কর্মশালার আয়োজন হতে যাচ্ছে, যখন দু’মিনিটের জন্যেও হয়তোবা মরারও সময় পাবো না। এরকম একটা সময়ে এটা খুবই লজ্জার কথা হবে আমার পরিচিত গণ্ডিতে অস্বাভাবিক সুস্থ ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত আমি যদি এমন বেমক্কা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
বিশ্বাস করো, এই অপরিহার্য সুস্থ থাকার সময়টাতে এরকম বিব্রতকর অবস্থাটা আমার জন্যে খুবই লজ্জার হবে। এই অসুস্থতার কষ্টটাও আমার এ অনিবার্য লজ্জাবোধের কাছে নগন্য ঠেকছে। আমি খুব সঙ্কোচ বোধ করছি রূপা। তোমাকে যে বলে ফেললাম এতেও ভয় পাচ্ছি, যদি এ আপাত অসুস্থতার খবর শুনে তুমি আবার অহেতুক কষ্ট পেয়ে আমার যন্ত্রণা ও লজ্জা বাড়িয়ে দাও আরো।
জানো তো রূপা, বিদেশ-বিভুঁইয়ে মানুষ অসুস্থ হলে যন্ত্রণার চেয়ে বেশি করে বাজে তার অসহায়ত্বটুকু, যদি না পাশে এমন কেউ থাকে যার কাছে নিজকে পরম নির্ভরতায় সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে পড়ে থাকতে পারে। এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে তোমাকেই। আত্মীয় নয়, পরিজন নয়, বন্ধু-বান্ধব কেউ নয়, শুধুই তোমাকে। পুরনো বিশ্বস্ত শরীরটা নিয়ন্ত্রণের বাইরেই চলে যেতে চাইছে বলেই কি ? আমার সবটুকু আত্মবিশ্বাস আর মনোবল এক করে ভীষণভাবে চাইছি আমি, এমন অবমাননাকর অসুস্থতার হাতে কোনোভাবেই নিজকে সঁপে দেয়া চলবে না। বিশ্বস্ত সুস্থতায় কোন আঁচড়ও লাগা চলবে না এখন।
এ মুহূর্তে আমার কোন কিছু ভাবতে বা লিখতেও কষ্ট হচ্ছে রূপা। কিন্তু পৃথিবীতে যা-ই ঘটুক তোমাকে না বলেও যে রেহাই নেই। মধ্যরাতের বাতি নিভে গেলে ঝুপ করে ঢেকে দেয়া গাঢ় অন্ধকারে সমগ্র আবহ জুড়ে তখন তোমাকেই টের পাই আমি। দিনের আলোয় তোমার আর আমার মাঝে যারা বিঘ্নতার দেয়াল তুলে রাখে, রাত্রির একাগ্রতায় ওরা ভেসে যায় সব। তখন শুধু তুমি আর আমি। দু’জনের পৃথিবীতে ঈশ্বরের মতোন আমি তখন তোমাকে শুধুই ভাঙচুর করি। তারপর গড়ে তুলি আবার। ফের ভাঙচুর করি। আবার গড়ি। ভাঙাগড়ার এই শব্দহীন খেলায় খেলতে খেলতে কখন যে কিভাবে কোন্ চৈতন্যের আড়ালে হারিয়ে যাই টেরও পাই না।
তুমিই যে আমার এ মগ্ন অস্তিত্বের একান্ত খেলার সাথী রূপা !
...জানো তো রূপা, বিদেশ-বিভুঁইয়ে মানুষ অসুস্থ হলে যন্ত্রণার চেয়ে বেশি করে বাজে তার অসহায়ত্বটুকু, যদি না পাশে এমন কেউ থাকে যার কাছে নিজকে পরম নির্ভরতায় সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে পড়ে থাকতে পারে। এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে তোমাকেই। আত্মীয় নয়, পরিজন নয়, বন্ধু-বান্ধব কেউ নয়, শুধুই তোমাকে। পুরনো বিশ্বস্ত শরীরটা নিয়ন্ত্রণের বাইরেই চলে যেতে চাইছে বলেই কি ? আমার সবটুকু আত্মবিশ্বাস আর মনোবল এক করে ভীষণভাবে চাইছি আমি, এমন অবমাননাকর অসুস্থতার হাতে কোনোভাবেই নিজকে সঁপে দেয়া চলবে না। বিশ্বস্ত সুস্থতায় কোন আঁচড়ও লাগা চলবে না এখন।
এ মুহূর্তে আমার কোন কিছু ভাবতে বা লিখতেও কষ্ট হচ্ছে রূপা। কিন্তু পৃথিবীতে যা-ই ঘটুক তোমাকে না বলেও যে রেহাই নেই। মধ্যরাতের বাতি নিভে গেলে ঝুপ করে ঢেকে দেয়া গাঢ় অন্ধকারে সমগ্র আবহ জুড়ে তখন তোমাকেই টের পাই আমি। দিনের আলোয় তোমার আর আমার মাঝে যারা বিঘ্নতার দেয়াল তুলে রাখে, রাত্রির একাগ্রতায় ওরা ভেসে যায় সব। তখন শুধু তুমি আর আমি। দু’জনের পৃথিবীতে ঈশ্বরের মতোন আমি তখন তোমাকে শুধুই ভাঙচুর করি। তারপর গড়ে তুলি আবার। ফের ভাঙচুর করি। আবার গড়ি। ভাঙাগড়ার এই শব্দহীন খেলায় খেলতে খেলতে কখন যে কিভাবে কোন্ চৈতন্যের আড়ালে হারিয়ে যাই টেরও পাই না।
তুমিই যে আমার এ মগ্ন অস্তিত্বের একান্ত খেলার সাথী রূপা !
(চলবে...)
পর্ব:[২৫] [*] [২৭]
...
No comments:
Post a Comment