| আমাদের 'ব্যা-করণ' শিক্ষা !
রণদীপম বসু
(০১)
পড়ার সামর্থ যতটুকুই থাক, পাঠক হিসেবে নিজেকে কখনোই খাটো করে দেখি না আমি। আর আমিই বা কেন ! নিজের ক্ষেত্রে কেউই তা দেখেন না। কারণ এটা একটা স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া, স্রোতের মতো। স্রোত ভারী হলে গন্তব্য দূরবর্তী হবে, নয়তো নিকটবর্তী। তবে পাঠ যেটুকুই হোক, পাঠকের মৌলিক চরিত্র একটাই, পাঠের আগ্রহ।
যেহেতু আমি বহুভাষী নই, অন্য কোন ভাষা আমি জানি না বা বুঝি না, তাই মাতৃভাষা বাংলাই শেষ ভরসা আমার। অনেকটা অসহায়ত্বে আক্রান্ত নিরূপায় মানুষের ঈশ্বর-ভরসার মতো। ভিন্নভাষী কোন বই নিয়ে যদি কোথাও কোন তোলপাড় উঠতে শুনি, তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো সেটার অনুদিত বাংলার অপেক্ষাতেই থাকতে হয় আমাকে। সে অপেক্ষা সার্থক হোক বা না হোক। তৃষ্ণাও কখনো মেটে, কখনো মেটে না। যেটুকু না মেটে সেটা আমারই সীমাবদ্ধতা হিসেবে মেনে নেই। এছাড়া কিছু তো করার নেই। যাদের নির্ভর করার মতো একাধিক ভাষা-বিকল্প থাকে তাঁরা হয়তো আমার মতো এতোটা অসহায় নন। তবে এ নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই। আফসোস যেটা, সেটা অন্য জায়গায়।
যেহেতু আমি বহুভাষী নই, অন্য কোন ভাষা আমি জানি না বা বুঝি না, তাই মাতৃভাষা বাংলাই শেষ ভরসা আমার। অনেকটা অসহায়ত্বে আক্রান্ত নিরূপায় মানুষের ঈশ্বর-ভরসার মতো। ভিন্নভাষী কোন বই নিয়ে যদি কোথাও কোন তোলপাড় উঠতে শুনি, তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো সেটার অনুদিত বাংলার অপেক্ষাতেই থাকতে হয় আমাকে। সে অপেক্ষা সার্থক হোক বা না হোক। তৃষ্ণাও কখনো মেটে, কখনো মেটে না। যেটুকু না মেটে সেটা আমারই সীমাবদ্ধতা হিসেবে মেনে নেই। এছাড়া কিছু তো করার নেই। যাদের নির্ভর করার মতো একাধিক ভাষা-বিকল্প থাকে তাঁরা হয়তো আমার মতো এতোটা অসহায় নন। তবে এ নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই। আফসোস যেটা, সেটা অন্য জায়গায়।
আমার প্রয়াত পিতার পরিশুদ্ধ বাংলায় কতোটা দখল ছিলো তা জানার বা দেখার সুযোগ আমার হয় নি। তবে দু’কলম ইংরেজী লিখলে ওখানের পিছলে যাওয়া বানান-ত্রুটিগুলো যে তাঁর তীক্ষ্ণ চোখে এড়াতো না ঠিকই, সাথে এটাও বুঝিয়ে দিতে কার্পণ্য করতেন না, সেকালের এন্ট্রান্স পাশ চাট্টিখানি কথা নয় ! এই প্রবণতা কেবল যে আমার পিতারই ছিলো তা নয়। সে আমলের শিক্ষিত ও প্রায়-শিক্ষিত অধিকাংশ মুরব্বীদের ক্ষেত্রেই কম-বেশি প্রযোজ্য ছিলো। হতে পারে ঐতিহাসিকভাবে এটা তাঁদের একাধারে ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের ত্রিভঙ্গ সময়-ভ্রমণের এক অদ্ভুত আপতিক ফলাফল, যা তাঁদের মানসিক জগতটাকে সেভাবেই গড়ে দিয়েছিলো। তাই বলে বাংলা ভাষাটা যে এতো অপয়া ছিলো তাও নয়। আমাদের ধর্ম-স্যারের মতো আকাট মূর্খ-পরিবেষ্টিত সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতজনের পাল্লায় পড়ে এটাও বুঝতে বাকী ছিলো না যে, নিরেট মূর্খ আমরা কোনোভাবে ছাব্বিশটা ইংরেজী অক্ষর শিখে একটু গড়াগড়ি দিতে পারলে আমাদের দ্বারা ইংরেজীটা শিখে ফেলা অসম্ভব নয়। কিন্তু শুদ্ধভাবে বাংলা শেখা মামার বাড়ির আবদার নাকি ! কারণ সংস্কৃত ভাষার পর বাংলাই হচ্ছে পৃথিবীর জটিলতম ভাষা। আর তাই আমরা মূর্খরা আসলে বাংলা ব্যাকরণ শিখতে গিয়ে ব্যাকরণ তো শিখি না, দড়ি ছেঁড়া বকনা-বাছুরের মতো ব্যা-করণটাই শিখি। বাংলা ব্যাকরণ শিখতে হলে আগে যে সংস্কৃত ব্যাকরণটা ভালোভাবে শিখতে হবে, এই কথাটা মূর্খরা বুঝবে কী করে ! নইলে আমাদের বাংলাভাষা ব্যবহারের এই ছিড়িদশা হবে কেন ! পণ্ডিত স্যারের বিরক্তি-মাখানো কথাগুলো আমরা একসময় ভুলে যাই। হয়তো আবার ভুলিও না, মনের গোপনে কোথায় কিভাবে যেন আটকে থাকে।
(০২)
ব্যাকরণ মানে কী ? ছোটবেলায় পাঠ্যপুস্তকে শিখেছিলাম- ‘যে পুস্তক পাঠ করিলে ভাষা শুদ্ধরূপে লিখিতে, বলিতে ও পড়িতে পারা যায় তাহাকে ব্যাকরণ বলে।’ পরীক্ষা পাশের জন্য সংজ্ঞাটা যে ভালোভাবে মুখস্থ করেছিলাম তাতে কোন সন্দেহ নেই। নইলে এখনো অক্ষরে অক্ষরে মনে আছে কী করে ! এখানেই শেষ নয়, পরীক্ষা পাশের আয়োজনে অতঃপর পদ, প্রকরণ, বাক্য, সন্ধি, প্রত্যয়, কারক, বিভক্তি, বাগধারা, নত্ব-বিধান, ষত্ব-বিধান, কিছু ভাব সম্প্রসারণ, সারাংশ, পত্র আর গুটিকয় রচনা মুখস্থ করে রীতিমতো গুডবয় হয়ে পরীক্ষা পাশও করে ফেললাম ঠিকই। কিন্তু শুদ্ধরূপে ভাষা শিক্ষা কি হয়েছে আদৌ ? বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিটা হাতে নিয়েও একদিন নিজের দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়ে গেলাম- বাংলায় শুদ্ধভাবে একটি বাক্যও বলতে পারি না ! লিখবো আর কী ?
এরপর মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে শেখার জন্যে লাইব্রেরি লাইব্রেরি ঘুরে আমাকে আদর্শ বাংলা ব্যাকরণের খোঁজ করতে দেখে বন্ধুরা অনেকেই হাসাহাসি করলো- ‘বেটা বলদ, হাহ্ ! মাতৃভাষা শিখবে ব্যাকরণ পড়ে !’ সত্যিই তো ! অবোধ শিশুরা ব্যাকরণ শিখে এসে কথা বলা শুরু করে নাকি ! আমার কোন জবাব থাকে না। কেননা কাউকে এটা বুঝাতে পারি না যে, ব্যাকরণ তো ভাষার মধ্যে নতুন করে কিছু আরোপ করে না, বরং ভাষার অন্তর্নিহিত নিয়মগুলোকে শ্রেণীবদ্ধভাবে প্রকাশ করে মাত্র। এতে ভাষা ব্যবহারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি সেই নিয়মগুলো জানতেই আগ্রহী হয়েছি কেবল। কোন কোন কবিবন্ধু তো আরো এক কাঠি সরেস- যাও, ব্যাকরণ শিখে তর্কালঙ্কার হয়ে এসে দেখি দু’কলম ব্যাকরণিক কাব্য রচনা করো ! আমি হাঁ-না কিছুই বলতে পারি না। তারুণ্যের একটা বিশেষ বয়সে নাকি বাঙালি সন্তান মাত্রেই কবি হয়ে উঠে। আমিও তো এর বাইরে নই। তাই ‘ব্যাকরণ মেনে কবিতা চলে না’ জাতীয় কথাগুলো শুনে মনে মনে যে বেশ পুলকিত বোধ করতাম তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে ! তারপরও নিজের কাছেই প্রশ্নমুখি হয়ে উঠি- তাহলে কবিতা বা কাব্যভাষা কি ভাষারীতির বাইরের কিছু ?
বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা ও বাচনভঙ্গির যে বৈচিত্র্য, তারও একটি আদর্শ-রীতি রয়েছে যা শিখতে ওই ভাষার ব্যাকরণের দরকার পড়ে। তাহলে মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে জানতে ব্যাকরণের গুরুত্ব কম কিসে ! আসলে ব্যাকরণের কাজটা কী তা বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের অমনোযোগ বা অস্পষ্টতাই আমাদেরকে ব্যাকরণ-বিমুখ করে রেখেছে। তাই, শেষপর্যন্ত বইয়ের দোকান বা লাইব্রেরিগুলোতে ব্যাকরণের নামে যে সব বই হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়, তা হচ্ছে পরীক্ষাপাশের কতকগুলো গাইডবুক। মন-মতো আদর্শ ব্যাকরণ আর পাওয়া হয় না। এ অতৃপ্তিটা থেকেই গেলো। হয়তো অনেকেরই থেকে যায়। নইলে বিভিন্ন অফিস-আদালতের চিঠি-চালাচালি ও নথিপত্রে এবং কখনো কখনো পত্র-পত্রিকা ম্যাগাজিন বই-পত্রে এমন কি পাঠ্যপুস্তকেও বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষা ও বানানে যে তুঘলকি রামলীলায় হাবুডুবু খেতে হয় আমাদেরকে, এর মূল কারণ বা উৎস কী হতে পারে বলে মনে হয় ? বিশেষ করে বানান নৈরাজ্যের যে চেহারা, তাতে মনে হয় না শুদ্ধরীতি ব্যবহারে আমরা কেউ খুব বেশি আন্তরিক। ব্যবহারিক অভিধান উল্টে উল্টে বানান সংশোধনের কাজ হয়তো এগিয়ে নেয়া সম্ভব, কিন্তু প্রকৃতই ভাষার শুদ্ধরীতি ও বানান-বিভ্রাট থেকে মুক্ত হতে ব্যাকরণের আবশ্যকতাকে খাটো করে দেখার কোন উপায় আছে কি ? এই দুর্ভাগ্যের কারণ কি বাংলা ভাষায় একান্ত নির্ভর করার মতো আদর্শ ব্যাকরণ গ্রন্থের অপ্রতুলতা ? না কি শূন্যতা !
এরপর মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে শেখার জন্যে লাইব্রেরি লাইব্রেরি ঘুরে আমাকে আদর্শ বাংলা ব্যাকরণের খোঁজ করতে দেখে বন্ধুরা অনেকেই হাসাহাসি করলো- ‘বেটা বলদ, হাহ্ ! মাতৃভাষা শিখবে ব্যাকরণ পড়ে !’ সত্যিই তো ! অবোধ শিশুরা ব্যাকরণ শিখে এসে কথা বলা শুরু করে নাকি ! আমার কোন জবাব থাকে না। কেননা কাউকে এটা বুঝাতে পারি না যে, ব্যাকরণ তো ভাষার মধ্যে নতুন করে কিছু আরোপ করে না, বরং ভাষার অন্তর্নিহিত নিয়মগুলোকে শ্রেণীবদ্ধভাবে প্রকাশ করে মাত্র। এতে ভাষা ব্যবহারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি সেই নিয়মগুলো জানতেই আগ্রহী হয়েছি কেবল। কোন কোন কবিবন্ধু তো আরো এক কাঠি সরেস- যাও, ব্যাকরণ শিখে তর্কালঙ্কার হয়ে এসে দেখি দু’কলম ব্যাকরণিক কাব্য রচনা করো ! আমি হাঁ-না কিছুই বলতে পারি না। তারুণ্যের একটা বিশেষ বয়সে নাকি বাঙালি সন্তান মাত্রেই কবি হয়ে উঠে। আমিও তো এর বাইরে নই। তাই ‘ব্যাকরণ মেনে কবিতা চলে না’ জাতীয় কথাগুলো শুনে মনে মনে যে বেশ পুলকিত বোধ করতাম তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে ! তারপরও নিজের কাছেই প্রশ্নমুখি হয়ে উঠি- তাহলে কবিতা বা কাব্যভাষা কি ভাষারীতির বাইরের কিছু ?
বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা ও বাচনভঙ্গির যে বৈচিত্র্য, তারও একটি আদর্শ-রীতি রয়েছে যা শিখতে ওই ভাষার ব্যাকরণের দরকার পড়ে। তাহলে মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে জানতে ব্যাকরণের গুরুত্ব কম কিসে ! আসলে ব্যাকরণের কাজটা কী তা বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের অমনোযোগ বা অস্পষ্টতাই আমাদেরকে ব্যাকরণ-বিমুখ করে রেখেছে। তাই, শেষপর্যন্ত বইয়ের দোকান বা লাইব্রেরিগুলোতে ব্যাকরণের নামে যে সব বই হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়, তা হচ্ছে পরীক্ষাপাশের কতকগুলো গাইডবুক। মন-মতো আদর্শ ব্যাকরণ আর পাওয়া হয় না। এ অতৃপ্তিটা থেকেই গেলো। হয়তো অনেকেরই থেকে যায়। নইলে বিভিন্ন অফিস-আদালতের চিঠি-চালাচালি ও নথিপত্রে এবং কখনো কখনো পত্র-পত্রিকা ম্যাগাজিন বই-পত্রে এমন কি পাঠ্যপুস্তকেও বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষা ও বানানে যে তুঘলকি রামলীলায় হাবুডুবু খেতে হয় আমাদেরকে, এর মূল কারণ বা উৎস কী হতে পারে বলে মনে হয় ? বিশেষ করে বানান নৈরাজ্যের যে চেহারা, তাতে মনে হয় না শুদ্ধরীতি ব্যবহারে আমরা কেউ খুব বেশি আন্তরিক। ব্যবহারিক অভিধান উল্টে উল্টে বানান সংশোধনের কাজ হয়তো এগিয়ে নেয়া সম্ভব, কিন্তু প্রকৃতই ভাষার শুদ্ধরীতি ও বানান-বিভ্রাট থেকে মুক্ত হতে ব্যাকরণের আবশ্যকতাকে খাটো করে দেখার কোন উপায় আছে কি ? এই দুর্ভাগ্যের কারণ কি বাংলা ভাষায় একান্ত নির্ভর করার মতো আদর্শ ব্যাকরণ গ্রন্থের অপ্রতুলতা ? না কি শূন্যতা !
(০৩)
বাংলাভাষার ইতিহাস অনেক পুরনো হলেও বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস খুব পুরাতন নয়। বাংলা ব্যাকরণ রচনার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে বিদেশীরাই প্রথম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনায় উদ্যোগী হয়েছিলেন। জানা যায় ভাওয়াল পরগণার একটি গীর্জায় বসে পর্তুগীজ ধর্মযাজক মনোএল অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে (১৭৩৪-১৭৪২) বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। ল্যাটিন গ্রামার অনুসরণে পর্তুগীজ ভাষায় রচিত এই বইটি ১৭৪৩ সালে ছাপা হয় পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে। পরবর্তীতে ১৭৭৮ সালে ইংরেজী ভাষায় ‘A Grammar of the Bengal Language’ রচনা করেন নাথানিয়াল ব্রাসি হ্যালহেড। বইটি রচনায় তিনি আবার ইংরেজী গ্রামারের রীতি নীতি অনুসরণ করেন।
আরো পরে বিদেশীদের বাংলা ভাষা শিখানো এবং দেশীয় ছেলেমেয়েদের ভাষার লিখন পদ্ধতি শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজনে বেশ কিছু ব্যাকরণ গ্রন্থ রচিত হয়। সম্ভবত রাজা রামমোহন রায়’ই প্রথম এ কাজটি করেন। তিনি সংস্কৃত ও অন্যান্য ভাষার ব্যাকরণ থেকে নিজেকে মোহমুক্ত রেখে বাংলাভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন, যদিও তা ইংরেজী ভাষায়। এরপর ১৮৫৩ সালে প্রকাশিত হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’। এর কিছুকাল পর চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার রচনা করেন ‘কাব্যতন্ত্র ছন্দ:প্রক্রিয়া’। পরবর্তীতে অবশ্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বিকাশে অবদান রাখতে শুরু করে।
বিংশ শতকে এসে ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড.সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ বাংলাভাষার আধুনিক রীতিনীতির বিকাশ ঘটাতে সক্রিয় ভূমিকা নেন। ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা একাডেমী কর্তৃক গৃহীত ব্যবহারিক বাংলা অভিধান প্রকল্পের সংকলন ও সম্পাদনার প্রাথমিক পর্যায়ে (১৯৬১-১৯৬৪) প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এক্ষেত্রে বাংলা ভাষা বিকাশে বাংলা একাডেমী যথেষ্ট অবদান রাখার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে ব্যবহারিক বাংলা অভিধান রচনার মধ্য দিয়ে প্রমিত বানানরীতি প্রচলনে বাংলা একাডেমী যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। কিন্তু বাংলা আদর্শ ব্যাকরণ গ্রন্থের শূন্যতা বোধ করি এখনো পূর্ণ হয় নি।
আর তাই বেশ ক’দিন আগে পত্রিকায় (ইত্তেফাক) খবরটা পড়ে খুবই স্বস্তি অনুভব হলো যে, বাংলা ভাষার আদর্শ ব্যাকরণ রচনার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বাংলা একাডেমী। এ লক্ষ্যে দু’দিনের এক কর্মশালাও নাকি হয়ে গেছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন পরবর্তী বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার প্রয়াস হিসেবে ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমী বোধ করি এই প্রথমবারের মতো বাংলাভাষার আদর্শ ব্যাকরণ রচনার উদ্যোগ নিলো। দেরিতে হলেও এই উদ্যোগকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। এতোদিনে অন্তত একটা চোখ-টাটানো গভীর শূন্যতা পূরণের আশাবাদ জেগে উঠলো বৈ কি ! এই প্রকল্পের চূড়ান্ত সফলতার মধ্য দিয়ে আশা করি বাংলা একাডেমী তার নামটিকে আরো উজ্জ্বল বিভায় রাঙিয়ে তুলবে। এখানে তো কারো আন্তরিকতায় ঘাটতি থাকার কথা নয়, এ যে আমাদের মাতৃভাষা, আ-মরি বাংলা ভাষা !
...আরো পরে বিদেশীদের বাংলা ভাষা শিখানো এবং দেশীয় ছেলেমেয়েদের ভাষার লিখন পদ্ধতি শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজনে বেশ কিছু ব্যাকরণ গ্রন্থ রচিত হয়। সম্ভবত রাজা রামমোহন রায়’ই প্রথম এ কাজটি করেন। তিনি সংস্কৃত ও অন্যান্য ভাষার ব্যাকরণ থেকে নিজেকে মোহমুক্ত রেখে বাংলাভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন, যদিও তা ইংরেজী ভাষায়। এরপর ১৮৫৩ সালে প্রকাশিত হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’। এর কিছুকাল পর চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার রচনা করেন ‘কাব্যতন্ত্র ছন্দ:প্রক্রিয়া’। পরবর্তীতে অবশ্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বিকাশে অবদান রাখতে শুরু করে।
বিংশ শতকে এসে ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড.সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ বাংলাভাষার আধুনিক রীতিনীতির বিকাশ ঘটাতে সক্রিয় ভূমিকা নেন। ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা একাডেমী কর্তৃক গৃহীত ব্যবহারিক বাংলা অভিধান প্রকল্পের সংকলন ও সম্পাদনার প্রাথমিক পর্যায়ে (১৯৬১-১৯৬৪) প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এক্ষেত্রে বাংলা ভাষা বিকাশে বাংলা একাডেমী যথেষ্ট অবদান রাখার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে ব্যবহারিক বাংলা অভিধান রচনার মধ্য দিয়ে প্রমিত বানানরীতি প্রচলনে বাংলা একাডেমী যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। কিন্তু বাংলা আদর্শ ব্যাকরণ গ্রন্থের শূন্যতা বোধ করি এখনো পূর্ণ হয় নি।
আর তাই বেশ ক’দিন আগে পত্রিকায় (ইত্তেফাক) খবরটা পড়ে খুবই স্বস্তি অনুভব হলো যে, বাংলা ভাষার আদর্শ ব্যাকরণ রচনার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বাংলা একাডেমী। এ লক্ষ্যে দু’দিনের এক কর্মশালাও নাকি হয়ে গেছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন পরবর্তী বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার প্রয়াস হিসেবে ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমী বোধ করি এই প্রথমবারের মতো বাংলাভাষার আদর্শ ব্যাকরণ রচনার উদ্যোগ নিলো। দেরিতে হলেও এই উদ্যোগকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। এতোদিনে অন্তত একটা চোখ-টাটানো গভীর শূন্যতা পূরণের আশাবাদ জেগে উঠলো বৈ কি ! এই প্রকল্পের চূড়ান্ত সফলতার মধ্য দিয়ে আশা করি বাংলা একাডেমী তার নামটিকে আরো উজ্জ্বল বিভায় রাঙিয়ে তুলবে। এখানে তো কারো আন্তরিকতায় ঘাটতি থাকার কথা নয়, এ যে আমাদের মাতৃভাষা, আ-মরি বাংলা ভাষা !
[sachalayatan]
No comments:
Post a Comment