‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
Saturday, November 28, 2009
অদৃশ্য বাতিঘর-০৯ (কবিতাগুচ্ছ)
অদৃশ্য বাতিঘর-০৯ (কবিতাগুচ্ছ)
-রণদীপম বসু
...
অন্তর্লীন বৃক্ষ এক
...
(প্রয়াত কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-কে শ্রদ্ধার্ঘ)
এখনো শৈত্য ঝরে কবোষ্ণ মাটিতে
অন্ধকারে।
কোথাও শব্দ নেই কোনো অথবা শিশির;
দরদর ঘামে ঝরে বৃক্ষপত্রেরা তবু।
বাতাসে কিসের ওম ?
পরস্পর চাওয়া-চাওয়ি মুখে
জটলাটা ফিকে হয়ে এলে
তখনো পড়ে থাকেন শরীরসুদ্ধ তিনি।
কষ্ট ঝেরে নির্বিকার জীবিত বাতাসে
একটি কথাই কেবল ঘোরে আর ফিরে-
আরেকটু সময় ছিলো বড়ো বেশি প্রয়োজন খুব।
অফুরন্ত এতো যে সময় পচে এতোসব নষ্ট বিবরে
হায়, কারো কারো রয়েই যায়
চিরন্তন আকাল প্রহর...।
অন্তর্লীন বৃক্ষ হলে ধমনীতে বয়ে যায় মৃত্তিকার রস;
আজন্ম বৃক্ষই তো, ওভাবেই পড়ে থাকেন
আমাদের প্রিয়জন তিনি...
আর চেনা কিছু শব্দে বিষাদ মেখে
জটলাটা ফের খোলা হয়ে যায়...।
এবং প্রতিটা দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে
প্রতিটা বৃক্ষের গায়...।
...
(১৯৯৭)
অমর্ত্য মোহ
...
হেমলক বুঝে গ্যাছে ক্ষমতা কেবল তার
স্বেচ্ছাঘাতী দেহে
তাই অকারণে বারবার জাগায় প্রণয়-ঠোঁট;
যে পারো চুমুক দাও অমর্ত্য মোহে
পেয়ে যাবে প্রাণের ভেতরে প্রাণের
অন্তহীন খোঁজ।
বেরিয়েছি উৎসে যাবো
সঙ্গী তাই সঙ্গী আজো হেমলক বোধ।
...
বিষাদ
...
অনড় গাণ্ডীব আজ ছুঁয়েছে পাতালের তল
আহা সখী কোথা তুই
তোরে ছাড়া কী করে নাড়াবো বল ?
জিতেন্দ্রীয় আমিতো নই-
আহুপাশে জড়সড়ো আর
জানিনা যে তোর সেই বৈকুণ্ঠের পথ,
কে আর বইবে এই সুমেরুর ভার
নে সখী ফিরিয়ে হায়
দিয়েছিলি অভিশপ্ত রথ !
...
এক ঝলক রৌদ্র
...
(শ্রদ্ধেয় সিদ্দিকুর রহমানকে)
কতো যে বিভ্রান্ত সময় কিছু কেটে গেলো
অর্থহীন বিলাপে শুধুই
হলো না সংলাপ গাঁথা
আগামীর নিষ্কণ্টক ভূমির উপরে রেখে
আমাদের স্বপ্নময় হাত।
ধারাপাত খুলে তবু প্রাত্যহিক জালবোনা, আর
নিজস্ব উচ্চতা মাপা ভূমি থেকে
ভাসমান হাওয়ার ফিতায়।
একদিন অকস্মাৎ জাতিতে উত্তরিত মানুষ
বোঝে না সে পুনরায় পতিত এখোন
স্বেচ্ছাকৃত কোন এক অন্ধ প্রজাতি শুধুই,
অথবা আরো বেশি অধোগামী দর্পিত বুদ্ধিতে মননে
এবং অশ্লীল শুদ্ধতায়-
প্রজন্মের রক্তে আঁকা শ্বাপদ মুঠোয় তার
ঝুলে থাকা নষ্ট কীটে ভ্রূণের বিকার।
কেটে যায় সভ্যতার অনেকটা সময়...
হলো নাতো আলোকিত সংলাপ কিছুই।
শতাব্দীর রৌদ্র-খামে কে যেনো পাঠিয়ে দেয়
ভূমিপুত্র মার্ক টোয়েনের চিঠি-
বড়ো বেশি আদিম ধারালো আর নির্মম উজ্জ্বল !
খুলে খুলে ভাজের ফলায় অতঃপর ব্যবচ্ছিন্ন হলে
তার অক্ষর-দর্পণে দেখি
চেহারার আদলে ধরা চিরচেনা আমাদেরি শ্বাপদের মুখ !
ধ্বসে পড়ে চালচিত্র এতোকার
অথবা ধ্বসে না কিছুই;
জানা হয় এটুকু কেবল- মানুষের স্বনির্মিত সত্যেরা
জন্মেই কলঙ্কিত সব।
এবং স্বেচ্ছাবন্দী আমি-
বহুদিন পরে আজ এক ঝলক রৌদ্রে ভিজি
বুজে আসা অথৈ চোখে।
...
(১৯৯৭)
চক্ষুষ্মান
...
অন্ধরা দেখতে পায় জীবনের ভেতর গভীর
চক্ষুষ্মান পারেনা তা- কখনোবা
খোলসের উজ্জ্বল ফাঁদে আটকে পড়ে এরা
মেতে উঠে প্রায়ান্ধ আতুর প্রশংসায়।
অন্ধরা নিরন্ধ্র বলে- দৃশ্যহীন আলোর ফলায় চিরে
দেখে নেয় অন্ধকার সব
আর বেদনার কৌতুকে নিজেতে নিজেকে খুঁজে
অন্তহীন অদৃশ্য ভাষায়।
হতে পারে, অন্ধরা অন্ধ নয় কখনোই,
চক্ষুষ্মান হয়ে যায় অন্ধ ভীষণ।
...
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment